17/12/2020                                                                            
                                    
                                                                            
                                             #রূপচর্চায় চালের গুঁড়া
খাবার উপাদান হিসেবেই নয়, রূপচর্চার পাথেয় হিসেবে স্বীকৃত চালের গুঁড়া। চকচকে লাবণ্যময় ত্বক থেকে ঝলমলে মসৃণ চুল; সবই মিলবে এর মহিমায়।
 
 #রূপচর্চায় চালের গুঁড়া
চালের গুঁড়া খাবার উপাদান হিসেবে নয়, রূপচর্চার অন্যতম উপকরণও। যারা অল্প সৌন্দর্যচর্চা করে থাকেন, তারা অবশ্য এই বিষয়টি ভালোভাবেই জানেন। ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল, ভিটামিন এবং অ্যাসিডে ঠাসা এই উপাদান। চকচকে, লাবণ্যময় ত্বক থেকে ঝলমলে, মসৃণ চুল- সবই পাবেন এর গুণে।
 
সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র শোভন মেকওভারের কসমোলজিস্ট শোভন সাহার সঙ্গে কথা হয়  এ নিয়ে। কথায় কথায় তিনি জানালেন, ‘চালের গুঁড়া ভালো স্ক্রাবার এবং ক্লিনজার। ত্বক পরিষ্কার করতে খুব কাজে দেয়। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু এটি সেনসিটিভ ত্বকে ব্যবহার করা একদমই ঠিক হবে না। আবার প্রতিদিন ব্যবহার করাও উচিত হবে না। চালের গুঁড়া আর প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। স্বাভাবিক এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহারই যথেষ্ট। তবে শুষ্ক ত্বকের জন্য অবশ্যই দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।’
 
রূপচর্চায় চালের গুঁড়া
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে চালের গুঁড়ায় রূপচর্চার কাহিনি। কোরিয়ান মহিলাদের হাত ধরে রূপচর্চায় আসে এই উপাদান। বছরের পর বছর তারা ত্বক এবং চুল পরিচর্যায় তারা এই উপাদানটি ব্যবহার করতেন। আর তাদের ত্বক এবং চুল যে কতটা ঈর্ষণীয়, তা আলাদা করে বলার কিছু নেই। এমনটাও শোনা যায় যে, চাল ব্যবহার করেন বলেই নাকি ৫০-৬০ বছর বয়সেও ওই প্রদেশের মহিলাদের মাথায় ঘন, কুচকুচে কালো চুল দেখতে পাওয়া যায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, চালের কত মহিমা। নিজেকে সুন্দর রাখতে তাই রূপ রুটিনে যুক্ত করুন চাল। তবে সব ধরনের চালের গুঁড়া যে ত্বকে ব্যবহার করা যাবে তা কিন্তু নয়। শুধু আতপ চাল ও কালিজিরা চালের গুঁড়া হলে ভালো। তাহলে আজই জেনে নিন এর উপকারের বিস্তারিত।
 
সানট্যান দূর করে
রোদের তাপ আর সানট্যান সৌন্দর্য সচেতন মহিলাদের দুশ্চিন্তার কারণ। ত্বকে জেদি সানট্যানের মতো দাগও দূর করে চালের গুঁড়া। সপ্তাহে দুবার চালের গুঁড়া ও দুধ মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করুন। মিশ্রণটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক। মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহারে ট্যান কমবে।
 
ঘরোয়া ক্লিনজার
সমপরিমাণে গোলাপজল এবং রাইস ওয়াটার মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। রোদ থেকে ফিরে পরিষ্কার মুখে মুখের ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ দূর করার জন্য বোতলের পানি স্প্রে করে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন।
 
ডার্ক সার্কেলের সমস্যায়
মাত্র দুই চা চামচ চালের গুঁড়া, অর্ধেক পাকা কলা এবং এবং চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। চোখের নিচের কালচে দাগ দূর করতে এই মিশ্রণ খুব ভালো। ১৫-২০ মিনিট  লাগালেই উপকার পাবেন।
 
মসৃণ ত্বকের দাওয়া
মসৃণ ত্বকের মোক্ষম দাওয়াই হিসেবে চালের গুঁড়ার কদর সমগ্র এশিয়ায়। মিহি চালের গুঁড়ার সঙ্গে অল্প চিনি এবং পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে নিন। এই তিন উপাদানের মিশ্রণ স্ক্রাব হিসেবে খুব ভালো। স্ক্রাবটি শুধু মুখের জন্য নয়, পুরো শরীরেও ব্যবহার করতে পারেন।
 
যৌবনোচ্ছল ত্বকের জন্য
টানটান এবং আবেদনময়ী ত্বক পেতে ব্যবহার করতে পারেন চালের গুঁড়া। চালের গুঁড়ার সঙ্গে একটা ডিমের সাদা অংশ, পরিমাণ মতো মধু ও টকদই মিশিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিন। এটি ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে বলিরেখার সমস্যা কমে আসবে।
 
ব্রণের সমস্যা কমায়
এক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারেন চালের গুঁড়া। সামান্য চালের গুঁড়া, পাতিলেবুর রস ও শসার রসের সঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে ব্রণের ওপর লাগাতে পারেন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে পিম্পল কমে যাবে। তবে সেনসিটিভ ত্বকে মিশ্রণটি ব্যবহার না করাই ভালো।
 
আন্ডারআর্মের যত্নে
বগলের নিচের অংশ অর্থাৎ আন্ডারআর্মের কালো ছোপ ছোপ দাগ দূর করতে এবং তা মসৃণ করতেও ব্যবহার করতে পারেন চালের গুঁড়া। কমলালেবুর খোসার গুঁড়া এবং অল্প বেকিং সোডার সঙ্গে চালের গুঁড়া এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্রতিদিন আন্ডারআর্ম স্ক্রাব করুন।
 
ড্যামেজড চুলের জন্য
সমপরিমাণে চালের গুঁড়া ও মুলতানি মাটি একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এতে পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে চুলের জন্য এই প্যাক দারুণ কার্যকরী। ড্যামেজড এবং রুক্ষ চুলের জন্যও ভালো। এই প্যাক চুল নরম এবং মসৃণ করতে সাহায্য করবে।
 
ঘন-কালো কেশের জন্য
ট্যাবের পানির পরিবর্তে চুল ধুতে পারেন রাইস ওয়াটার দিয়ে। সরাসরিও ব্যবহার করতে পারেন আবার সঙ্গে ভিনিগার বা পাতিলেবুর রসও মিশিয়ে নিতে পারেন। অল্প রাইস ওয়াটার ব্যবহার করতে  চাইলে প্রথমে সাধারণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে শেষবার রাইস ওয়াটার ব্যবহার করুন। চুল মসৃণ, কালো এবং চকচকে থাকবে দীর্ঘদিন।