11/10/2025
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ (NIMH) এর তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, অথচ এদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশই কোনো ধরণের চিকিৎসা নিচ্ছেন না। এই বিশাল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসার বাইরে থেকে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে নানা জটিলতার মুখে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সামাজিক কলঙ্ক, সচেতনতার অভাব এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এ সমস্যার প্রধান কারণ। অনেকেই মনে করেন মানসিক অসুস্থতা “লজ্জার বিষয়” বা “ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতা”, যার ফলে তারা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের কাছে না গিয়ে ফার্মেসির কর্মী, সাধারণ চিকিৎসক, এমনকি কবিরাজ বা ধর্মীয় উপায়ে সমাধান খোঁজেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা গড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করেন কোনো পেশাদার সাহায্য নেওয়ার আগে। এই দীর্ঘ অপেক্ষার ফলে সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে ওঠে — যেমন: বিষণ্ণতা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা, উদ্বেগ থেকে শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সংখ্যা এক হাজারেরও কম, যা প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশের জন্য অতি অপ্রতুল। এই স্বল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞের কারণে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অপ্রাপ্তযোগ্য।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখনই বৃহত্তর জনসচেতনতা তৈরি, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজপ্রাপ্য করা, এবং দুর্যোগ ও জরুরি প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় মানসিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র এবং কমিউনিটি পর্যায়ে কাউন্সেলিং ও সাপোর্ট সেন্টার গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্য আর কোনো “অদৃশ্য” সমস্যা নয়, এটি এখন একটি জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংকট। সময় এসেছে মানসিক স্বাস্থ্যকে শারীরিক স্বাস্থ্যের সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখার এবং প্রত্যেকের কাছে তা সহজলভ্য করার।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক | দৈনিক যুগান্তর