07/03/2025
প্রশ্নঃ রমাদ্বন মাসে জ্বিনেরা তো বন্দী⛓ থাকে, তাহলে এই মহিমান্বিত🌙 মাসে জ্বিন/জাদু🔥 দ্বারা আক্রান্ত কিছু ভাই-বোনদের সমস্যা হঠাৎ করে বেড়ে💥 যায় কেন❓❓❓
আলহামদুলিল্লাহ্!
ওয়াস্ব-স্বলাতু ওয়াস-সালামু আলা রসূলিল্লাহ্!
পবিত্র রমাদ্বন মাস হলো রহমাতের মাস! আল্লহর মাগফিরত ও জাহান্নাম থেকে নাজাতের মাস! এবং এই মাসে আল্লহ রব্বুল আলামীন জ্বিন শয়তানদেরকে শেকলবন্দি করে রাখেন। এ সংক্রান্তে আমরা রসূলুল্লহ ﷺ-এর অনেক সংখ্যক হাদীস দেখতে পাই।
..سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا كَانَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ
আবূ হুরাইরাহ (রদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত যে, "রসূলুল্লহ ﷺ বলেছেনঃ "যখন রমাদ্বন আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।"
[সুনান আন-নাসাঈ: অধ্যায়- كتاب الصيام, ২১০৫ - সহীহ]
আরো বিস্তারিত বর্ণনায়-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ. وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ وَيُنَادِي مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ
আবূ হুরাইরাহ (রদ্বিঃ) হতে বর্ণিত আছেঃ তিনি বলেন, "রসূলুল্লহ ﷺ বলেছেনঃ "শয়তান ও দুষ্ট
জ্বিনদেরকে রমাদ্বন মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর দরজাও তখন আর খোলা হয় না; খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেনঃ 'হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও।' আর বহু লোককে আল্লহ্ তাআলার পক্ষ হতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে।"
[সুনান আত-তিরমিযী: অধ্যায়- كتاب الصوم عن رسول الله ﷺ, ৬৮২ সহীহ]
[আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রদ্বিঃ), ইবনু মাসউদ (রদ্বিঃ) ও সালমান (রদ্বিঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।]
উপরোক্ত হাদীসসমূহ সম্পর্কে আলিমদের ব্যাখ্যা থেকে আমরা জানতে পারি যে-
১. “শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়” (صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ):
অর্থাৎ শয়তানদের কার্যক্ষমতা দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তারা সহজে মানুষকে গুনাহের দিকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়;
ঈমাম আন-নাবাউয়ী ব্যাখ্যা করেছেন যে, "এটি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা নয়, বরং তাদের ক্ষমতা হ্রাস পায়।"
২. “মারদাতুল-জ্বিনদেরকে বন্দী করা হয়” (وَمَرَدَةُ الْجِنِّ):
অর্থাৎ সব জ্বিনকে নয়, বরং যারা সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী শয়তান জ্বিন কেবল তাদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।
ঈমাম ইবনু হাজার আল-আসকালানী (রহঃ) তার কিতাব 'ফাতহুল বারী'-তে ব্যাখ্যা করেছেন যে, "এখানে 'শয়তান' বলতে শুধু দুষ্ট প্রকৃতির শক্তিশালী শয়তানদের (মারদাতুল-জ্বিন) বোঝানো হয়েছে। ছোট ও দুর্বল জ্বিন শয়তানরা এখনও সক্রিয় থাকতে পারে, তবে তাদের কাজের ক্ষমতা অনেকটাই সীমিত হয়।"
ইমাম আল-কুরতুবী (রহঃ) তার কিতাব 'আল-মুফহিম'-এ বলেন, "শয়তানের প্রধান কাজ হলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করা, কিন্তু রমাদ্বনে এটি কঠিন হয়ে পড়ে। তবে মানুষ নিজের নাফসের (প্রবৃত্তির) কারণে এখনো গুনাহ করতে পারে।"
দ্বিতীয়ত,
রমাদ্বন মাসে কেন জাদুর প্রভাব বাড়ে??
অনেক জাদুতে আক্রান্ত ভাই-বোনেরা লক্ষ্য করেন যে, রমাদ্বনে তাদের উপর করা কালোজাদুর প্রভাব আরও তীব্র হয়। যদিও শয়তানরা শৃঙ্খলিত থাকে, তবুও জাদুর সমস্যার বৃদ্ধি সম্পর্কে আলিমগণ কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছেন:
১. শয়তান শৃঙ্খলিত, কিন্তু মানুষ ও তার সহযোগী জ্বিনরা নয়-
শয়তান ও জ্বিনের মধ্যে পার্থক্য আছেঃ যারা জাদু করে (অর্থাৎ জাদুকর), তারা নির্দিষ্ট জ্বিনদের সাহায্য নিয়ে কাজ করে।
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) তার কিতাব 'মাজমু ফাতাওয়া'-এ বলেন, "শয়তানদের কার্যক্ষমতা কমে গেলেও যারা পূর্ব থেকেই জাদুর মাধ্যমে নিয়োজিত ছিল, তারা তাদের কাজ চালিয়ে যায়।"
২. সব শয়তান বন্ধিত্বে নয়, শুধু বিদ্রোহীরা-
ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) ব্যাখ্যা করেন, "শুধু সবচেয়ে বিদ্রোহী শয়তানরা শৃঙ্খলিত হয়, কিন্তু কম শক্তিশালী শয়তানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রয়ে যায়।"
৩. জাদুর প্রভাব আগেও চালু ছিল-
শয়তানরা রমাদ্বনের পূর্বে কাজ করে এবং তারা একটি স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করে; ফলে রমাদ্বনে এটি নতুন আক্রমণ নয়, বরং আগের প্রভাবের অব্যাহত অবস্থা।
রমাদ্বনে কুর'আন তিলাওয়াত ও রুক্বইয়াহ বাড়ানোর ফলে শয়তানরা দুর্বল হয়। তারা আরও বেশি প্রতিরোধ করতে চায়, যার ফলে রোগীর উপর আরও বেশি আক্রমণের অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
৪. নাফস (প্রবৃত্তি) এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব-
অনেক সময় মানুষ নিজের নাফস এবং মানসিক দুর্বলতার কারণে সমস্যাগুলোকে আরও বড় মনে করে।
ঈমাম আল-গাযযালী (রহঃ) তার কিতাব 'ইহইয়া উলুম আদ-দ্বীন'-এ বলেন, "অনেক সময় আমরা নিজেদের মানসিক চিন্তাগুলোকে শয়তানের কাজ বলে ভাবি, অথচ এর উৎস আমাদের নাফস ও মানসিক অবস্থা হতে পারে।
৫. রমাদ্বনে নতুন করে বা বেশি করে জাদু করা হয়-
রমাদ্বনে ঈমানদারদের আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, তাই জাদুকররা প্রতিরোধের জন্য বেশি সক্রিয় হয়।
রমাদ্বনে মুসলিমদের ইবাদাতের প্রতি অধিক অগ্রসর হওয়া, কুরআন পড়া, দুআ করা ও রুক্বইয়াহ করার ফলে আগে করা জাদুর প্রভাব নষ্ট হতে থাকে; এজন্য, জাদুকররা নতুন করে জাদু করে, যাতে পূর্বের জাদুর প্রভাব পুনরায় সক্রিয় হয়।
জাদুকররা রমাদ্বনে শয়তানদের সাহায্য পাওয়ার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান করে; কিছু জাদুকররা রমাদ্বনের প্রথম রাতে এবং শেষ দশকে বিশেষ জাদুকরী অনুষ্ঠান ও কুফরী আমল করে, যাতে তারা শয়তানদের পূর্ণ সহযোগিতা পায় এবং নতুন করে জাদু করে পূর্বের জাদুকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে।
পরিশেষে, কিছু মানুষের জন্য রমাদ্বন আল্লহর পক্ষ থেকে একটি বড় ঈমানী পরীক্ষা হয়ে আসে। তাই অনেক সময় আল্লহ মানুষের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য তাদের ওপর জাদুর সমস্যা বৃদ্ধি হতে দেন।
সংক্ষেপেঃ
১. রমাদ্বনে শয়তানদের কার্যক্ষমতা কমে যায়, বিশেষ করে শক্তিশালী-বিদ্রোহী শয়তান জ্বিনেরা শেকলবন্দি থাকে, কিন্তু শয়তানের উৎপাত একদম বন্ধ হয়ে যায় না, যেহেতু অন্যান্য জ্বিন শয়তানরা (দূর্বলভাবে হলেও) মুক্ত আছে।
২. কালোজাদুর প্রভাব অব্যাহত থাকার বা বৃদ্ধি পাবার কারণ:
-> জাদুকরের নতুন করে জাদু করা
-> পূর্বের চালু থাকা জাদুর প্রভাব অব্যাহত থাকা
-> নির্দিষ্ট জ্বিনের সাহায্যে জাদুর কাজকর্ম জাদুকররা চালিয়ে যায়
-> নাফস ও মানসিক চাপের কারণে সমস্যাগুলো বেশি অনুভূত হওয়া
[মাঝে ইন্টারনেট কানেকশনে বিঘ্ন ঘটার কারণে যথা সময়ে পোস্টটি করা সম্ভব হয়ে উঠেনি, এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত]