24/08/2025
🧠 স্ট্রোক (Stroke): মস্তিষ্কের উপর নীরব আঘাত⏩⏭️✨
স্ট্রোক, যা "সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট (CVA)" নামেও পরিচিত, হলো একটি মারাত্মক স্নায়বিক অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন এবং পুষ্টির জন্য রক্তের উপর নির্ভরশীল। যখন এই রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়, তখন মস্তিষ্কের কোষগুলো দ্রুত মারা যেতে শুরু করে, যার ফলে মস্তিষ্কের সেই অংশের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ট্রোক একটি জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি, এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে এটি স্থায়ী অক্ষমতা বা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
👥🩸 স্ট্রোকের প্রকারভেদ এবং কারণ⏩
স্ট্রোক প্রধানত দুই ধরনের হয়:
🚫 ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke): এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের স্ট্রোক (প্রায় ৮০% ক্ষেত্রে ঘটে)। এই ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে কোনো ধরনের ব্লকেজ বা জমাট বাঁধা (clot) তৈরি হয়, যা মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই জমাট বাঁধা সাধারণত হৃদপিণ্ড বা ঘাড়ের ধমনী থেকে এসে মস্তিষ্কের ছোট রক্তনালীতে আটকে যায়।
💥 হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke): এই ধরনের স্ট্রোক মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ ঘটলে হয়। এই রক্ত মস্তিষ্কের টিস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হেমোরেজিক স্ট্রোকের দুটি প্রধান কারণ হলো:
ইনট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ: মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তনালী ফেটে যাওয়া।
সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ: মস্তিষ্ক এবং এর চারপাশের পাতলা টিস্যুর মধ্যে রক্তক্ষরণ।
👥⚠️ স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ: ফাস্ট (FAST) পরীক্ষা⏩
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হঠাৎ করে দেখা যায় এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। লক্ষণগুলো মনে রাখার জন্য FAST নামক একটি সহজ পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়:
F - 😖 Face Drooping (মুখের এক পাশ ঝুলে যাওয়া): রোগীকে হাসতে বললে মুখের এক পাশ অসাড় বা ঝুলে যেতে পারে।
A - 🖐️ Arm Weakness (একটি হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া): রোগীকে দু'হাত উপরে তুলতে বললে একটি হাত দুর্বল হয়ে নিচে নেমে যেতে পারে।
S - 💬 Speech Difficulty (কথা বলতে অসুবিধা): রোগীর কথা অস্পষ্ট বা জড়ানো মনে হতে পারে। সহজ বাক্য পুনরাবৃত্তি করতে বললে সে তা নাও পারতে পারে।
T - 📞 Time to call Emergency (জরুরি পরিষেবা কল করার সময়): উপরের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।
এছাড়াও অন্যান্য লক্ষণগুলো হতে পারে:
হঠাৎ করে শরীরের একপাশে অসাড়তা বা দুর্বলতা।
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, যেমন এক বা উভয় চোখে ঝাপসা দেখা বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারানো।
তীব্র মাথাব্যথা, যা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং কোনো কারণ ছাড়া।
ভারসাম্য বা সমন্বয়হীনতা, হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া।
বিভ্রান্তি বা ঘোর লাগা।
👥🛡️ স্ট্রোকের ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এবং প্রতিরোধ⏩
কিছু কারণ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে কিছু নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং কিছু অনিয়ন্ত্রণযোগ্য।
নিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকির কারণ:
▶️উচ্চ রক্তচাপ: এটি স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ।
🩸 ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
🍔 উচ্চ কোলেস্টেরল: এটি রক্তনালীতে চর্বি জমিয়ে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
🚬 ধূমপান: ধূমপান রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
⚖️ স্থূলতা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: স্থূলতা এবং অতিরিক্ত লবণ, চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
🛋️ শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব।
অনিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকির কারণ:
👴 বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
👨👩👧 পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে যদি স্ট্রোকের ইতিহাস থাকে, তবে ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
👫 লিঙ্গ: পুরুষদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, তবে নারীদের মধ্যে স্ট্রোক থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি।
প্রতিরোধ:
একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন:
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
ধূমপান ত্যাগ করা এবং অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা।
স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
👥💉 স্ট্রোকের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন⏩
স্ট্রোকের চিকিৎসা রোগীর ধরনের উপর নির্ভর করে।
⏭️ইস্কেমিক স্ট্রোকের চিকিৎসা:
টিপিএ (tPA) ওষুধ: এটি একটি শক্তিশালী ওষুধ যা রক্ত জমাট বাঁধাকে ভেঙে দেয়। লক্ষণ দেখা দেওয়ার প্রথম ৩-৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে এটি ব্যবহার করা হলে কার্যকর হতে পারে।
মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি: একটি বিশেষ ক্যাথেটারের সাহায্যে মস্তিষ্কের রক্তনালী থেকে জমাট বাঁধা অপসারণ করা হয়।
হেমোরেজিক স্ট্রোকের চিকিৎসা:
এক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
পুনর্বাসন:
স্ট্রোকের পর পুনর্বাসন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এটি মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকে:
🚶♀️ ফিজিওথেরাপি: পেশীর শক্তি, নড়াচড়া এবং ভারসাম্য উন্নত করার জন্য।
🗣️ স্পিচ থেরাপি: কথা বলা এবং গিলতে সমস্যা হলে সাহায্য করে।
🎨 অকুপেশনাল থেরাপি: দৈনন্দিন কাজ যেমন পোশাক পরা, খাবার খাওয়া ইত্যাদি পুনরায় শিখতে সাহায্য করে।
স্ট্রোক একটি জীবন পরিবর্তনকারী ঘটনা হতে পারে, তবে সচেতনতা, দ্রুত পদক্ষেপ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রভাব কমানো সম্ভব। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জরুরি, কারণ প্রতিটি সেকেন্ড এখানে মূল্যবান।
স্ট্রোক পরবর্তী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকরী!
©️ গবেষণা ও তথ্য সংকলনে-
Muhammad Nasim Hossain
Dhaka: 19-Aug, 2025