30/07/2025
বিয়ের পরের দিন যখন গোসল করতে যাবো, তখন দেখি আমার লাগেজে সব দরকারি জিনিস আসলেও, বডি ওয়াশ/সাবান আসে নি,,ভুলে আসেনি সেটা বুঝেছি তারপরও কেমন যেনো লাগছিলো সেটা কাউকে জানাতে,, তারপরও আমার হাজবেন্ড এর একজন কাজিন কে ডেকে বললাম, আমাকে একটা সাবান দেয়া যাবে? সে বলল আচ্ছা আমি নিয়ে আসি, ইউজ করা সাবান দিলে তো আর হবে না, ইনট্যাক্ট আছে কিনা দেখছি।।
আমি রুমে অপেক্ষা করছি, কিন্তু সে আর আসছে না, এইদিকে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাবে কিন্তু কেউ আসছে না, আমাকে নাস্তার জন্যও কেউ জিজ্ঞেস করছে না, পেটে অনেক ক্ষিদা ছিলো, হাজবেন্ড একবার এসে বলে গেছে একটু অপেক্ষা করো, আমিও খাইনি, তোমার সাথেই খাবো, তুমি গোসল সাড়ার পরে! এই কথাটার ওপর ভরসা করেই ২ ঘন্টা, খুবই বিব্রতবোধ করছিলাম এভাবে বসে থাকতে, তাও গোসলের জন্য, আমি সাবান ছাড়াই গোসল করে নিতাম কিন্তু তারা বলেছে সাবান এর জন্য অপেক্ষা করতে, গোসলে যাওয়া যাবেনা।
আমার মোবাইলে আমার খালামনির কল আসলো, উনি জিজ্ঞেস করলেন, কি করতেছি, আমি বললাম কিছু না, বসে আছি, ওপাশ থেকে নিরবতা, আবার কারো গলার আওয়াজ ও শুনা যাচ্ছে বাট কথা বুঝা যাচ্ছে না, খালামনি বললেন, শোন মা, একটু অপেক্ষা কর, সাবান নিয়ে আসতেসি, এরমধ্যে তোকে কেউ কিছু বললে কোনো কথা বলবি না।
লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইলো, এগুলো নিয়েও কথা হবে,এবং সেটা বাবার বাড়ি পর্যন্ত চলে যাবে, আমও চিন্তাও করিনি।
দুপুর, ১:৩০৷ আমি এখনো বসেই আছি, খালামনি আর আমার একটা কাজিন ভাই আসছে সাবান নিয়ে, রুমে ঢুকেই আমার হাতে তারা সাবান দিয়ে বলল, যাহ, গোসল করে আয়, লজ্জায় আবারো আমার মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইলো।
আমি গোসল সেড়ে আসলাম, খালামনি বললেন আমরা চলে যাই, আমি বলতে চেয়েছিলাম খেয়ে যাও, কিন্তু আমার পেটেই কিছু পরেনি, আমি তাদেরকে কি বলবো, যদিও আমার খাবার টা বাপের বাড়ি থেকেই নিয়ে আসছিলো,,
সবার একে একে খাওয়ার পালা শেষ, আমার হাজবেন্ড আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো ডাইনিং টেবিলে, আমি বসলাম, সাথে সাথেই আমাকে আমার চাচি শ্বাশুড়ি বললেন, এই তুমি এসব কি পরেছো? শাড়ী পরে আসো। আমার হাজবেন্ড বলল, খেয়ে নিক আগে, পরে পরলেও তো হয়।
আমার চাচি শ্বাশুড়ি কান্না শুরু করে দিলেন, প্রথম দিনই এই অবস্থা পরে কি হবে,, আমি ঝামেলা যাতে না বাড়ে সেজন্য উঠে গেলাম, গিয়ে শাড়ী বের করে কোনোমতে পরে টেবিলে আসলাম,, তখন সবাই আমাকে বলল এই শাড়ীই কি ছিলো?
না আরো ছিলো, আমি জবাব দিলাম,, তাহলে তুমি এই শাড়ী কেনো পরেছো, এইসব হালকা কালার কি বউরা পরে? দেখতেও কেমন কমদামি লাগছে, এসব তোমার বাবার বাড়ি রেখে এসো নেক্সট টাইম গেলে।
আমি কি তাহলে একটা কালারফুল শাড়ী পরে আসবো? জিজ্ঞেস করলাম আমি।
তারপর আমি একটা সবুজ শাড়ী পরে আসি, তারপর আমাকে খেতে দেয় তারা, কিন্তু সেই খাবার এর কোনো স্বাদ ই আমি পাইনি,, কারন বিয়ে করার স্বাদে অলরেডি আমার পেট ভরপুর ছিলো।
রাতে যখন ঘুমাতে যাবো তখন মা বাবার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম,, হঠাৎ কেউ একজন রুমে ঢুকেই আমার ফোনটা কেড়ে নেয়, দেখলাম আমার ননাস,,, ফোনটা কেড়ে নিয়ে উনি বললেন, আমাদের গিবত করছো?
আমি বললাম, না ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করছিলাম।
তাহলে এতোক্ষন কি কথা এতো? তোমার বাবাকে এক্ষুনি কল দাও, দিয়ে বলো ভালো মন্দের খোঁজ বাসায় এসে নিয়ে যেতে, এতো ফোনালাপ চলবে না,, আর ফোনটা ও আমাদের কাছেই থাকবে সেটাও বলে দিও।
আমি কল দিলাম আমার সেই খালামনিকেই, দিয়ে বললাম,, বাবা আমার ফোন এখন থেকে আমার কাছে থাকবে না, দরকার হলে আমিই কল দিবো, তোমরা কল দিও না, আমাকে দেখতে এসো,, বাবা ডাকলেও কথাগুলো খালামনিকে বলেছিলাম কারন বাবাকে এগুলো বলা যায় না, কলিজায় লাগে। খালামনি প্র্যাকটিক্যাল মাইন্ডেড, বাসার সবাইকে সুন্দর করে ম্যানেজ করে নিতে পারবেন,
এরমধ্যে একটা জরুরি কথা বলার ছিলো আমার বাবার বাড়ি, যেটা না বললে পরের দিনই হয়তো তারা আমার বাবাকেই এখানে হাজির করাবে আর অপমান করবে,, কিন্তু সেটা কিভাবে মোবাইল তো আমার কাছে নাই,, আমি চুপিচুপি গেলাম মোবাইল টা ননাস এর রুম থেকে চুরি করতে,, গিয়ে দেখলাম ননস আর উনার মেয়ে জেগে আছে, হাতে মেহেদি দিচ্ছে, তাই আবার চলে আসলাম,,আরেকবার চেক করতে হবে এসে।
বিছানার এসে ঘুমের ভান করলাম, আর ভাবতে থাকলাম শ্বশুর বাড়িতে বিয়ের প্রথম দিনই এরকম সিচুয়েশন কি আমিই ফেইস করছি নাকি সব মেয়েরাই করে,, তারাও কি এভাবে রাতের অন্ধকারে নিজের ফোন চুরি করার জন্য সবার ঘুমিয়ে পরার অপেক্ষা করে?
শ্বশুর বাড়িতে এক আপুর প্রথম দিনের গল্প...
কালেক্টেড