
30/05/2025
গত ২৮ মে ছিল Menstrual hygiene day. শুধু আমাদের বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই আজও সামাজিক বাধা আর পরিবারের সংকোচের কারনে বয়:সন্ধিকালে এসেও শিশুরা মাসিক/পিরিয়ড/মেন্সট্রুয়েশন সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায়! এই বৈজ্ঞানিক সত্যকে একসেপ্ট করতে শারীরিক বা মানসিক, কোনভাবেই সে শতভাগ প্রস্তুত হয়ে ওঠে না। অনেকের কাছে এটা এমনই এক লজ্জার এবং গোপনীয়তার বিষয় যে, অনেক মাও তার মেয়ের সাথে আলাপ করে তাকে প্রস্তুত করতে অস্বস্তিবোধ করেন।
ফলস্বরূপ আজও প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতায় আঁতকে ওঠে বেশিরভাগ শিশু! শারীরিক যন্ত্রনার পাশাপাশি সে শিকার হয় দুর্বিসহ মানসিক যন্ত্রণার। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কোথাও সে তার অসহায়ত্ব আর যন্ত্রনার কথা বলতে পারে না, তাই বিন্দুমাত্র সহানুভূতিও সে পায় না শুধুমাত্র সোশাল স্টিগমা এবং ট্যাবুর কারনে।
আজও পিরিয়ডের যন্ত্রণা চেপেই প্রত্যেকটা মেয়েকে দৈনন্দিন কাজ করে যেতে হয়, হোক তা ঘরে বা বাইরে। কাপড় ধুতে গিয়ে প্রচন্ড ব্যথায় কোমর ছিঁড়েই যাক, অফিসে বসে থাকতে থাকতে পিঠ ভেংগেই আসুক, সিঁড়ি বাইতে বাইতে মাথাই ঘুরুক, চোখে ঝাপসাই দেখুক আর রাঁধতে রাঁধতে বমিই হোক না কেন, কাউকে কিচ্ছু বলা যাবে না। আজকাল অসুখ হলেও জোর গলায় বলা যায়, ছুটি নেয়া যায়। কিন্তু পিরিয়ড হলে কোন ছুটি বা বিশ্রাম মেলে না। মিলবে কেন! এ যে প্রতি মাসের রুটিন ব্যাপার, প্রতি মেয়ের রুটিন ব্যাপার!
আজও বহু মেয়ে একটা স্যানিটারী ন্যাপকিন জোর গলায় কিনতে পারে না, এ যে লজ্জার ব্যাপার! স্রষ্টা প্রদত্ত যে ক্ষমতায় মেয়েরা সন্তান ধারন করতে সক্ষম, পৃথিবীকে একটা নতুন প্রাণের স্পন্দন দিতে সক্ষম, সমাজের কাছে তা তো নোংরা ব্যাপার! তাই মেয়েকে চুপ করে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ভিড় কমে গেলে আস্তে আস্তে ন্যাপকিন চাইতে হয়, দোকানদার অনেকটা চুরি করে একটা কাগজের প্যাকেটে ন্যাপকিন পেঁচিয়ে দিলে তা চুপি চুপি নিয়ে জোর কদমে হেঁটে আসতে হয়, যেন কেউ দেখে না ফেলে! যেন কি এক অবৈধ কাজ হচ্ছে!
আজও বহু মেয়ে স্যানিটারী ন্যাপকিন কেনার ক্ষমতা রাখে না। যার পেটের ভাত জোটে না, ন্যাপকিন তার কাছে বিলাসদ্রব্য বৈ কি! তাই আজও মাসের পর মাস সেই নোংরা ন্যাকড়া ব্যবহার, দিনের দিনের পর দিন আলো-বাতাসহীন জীবানুযুক্ত স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ন্যাকড়া শুকানো। আজও একটা ভাল রেস্টরুম বা টয়লেট পাওয়া যায় না বলে মেয়েরা ন্যাপকিন বা প্যাড চেইঞ্জ করতে পারে না। ঘন্টার পর ঘন্টা একই প্যাড পরে মুখ বুজে কাজ করে যেতে হয়। এই সব কিছুরই ফলাফল তীব্র যন্ত্রণাদায়ক রোগ-ব্যাধি!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজ World Menstrual Hygiene Day, বিশ্ব পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য দিবস। যারা এই শব্দটা শুনলেই ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নেন, আপনাদের জন্মদাত্রী মায়েরা এই পিরিয়ড হয় বলেই আপনাদেরকে পৃথিবীতে নিয়ে আসতে পেরেছেন। আমাদের মায়েরা, খালারা, নানীরা, দাদীরা অনেকে সুযোগ, সুবিধা এবং চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু তার মানে এই না যে আমাদের মেয়েরা এবং বোনেরাও আজকের দিনে দুর্ভোগ পোহাবে।
Period Friendly World বা পিরিয়ড বান্ধব পৃথিবী আজকের দিনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। যেন প্রতিটা মানুষ খোলা মনে এই ব্যাপারে আলাপ করতে পারে, যেন সাহায্য চাইতে পারে, যেন লোকলজ্জা আর গালমন্দের ভয়ে একটি মেয়েরও স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ না হয়!
শুরুটা হতে পারে আপনার ঘর থেকে,
আপনাকে দিয়েই,
আপনি কি প্রস্তুত?
Dr. Josepha Elizabeth