24/11/2025
মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাদক গ্রহণে ডোপামিন একটি মূল ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি আমাদের মস্তিষ্কের “পুরস্কার ব্যবস্থা” (reward system)–এর অন্যতম প্রধান নিউরোট্রান্সমিটার। সহজভাবে বললে, ডোপামিনই হলো সেই রাসায়নিক যা আনন্দ, তৃপ্তি এবং প্রেরণার অনুভূতি তৈরি করে।
---
১. ডোপামিনের স্বাভাবিক কাজ
মস্তিষ্কে আনন্দদায়ক বা উপকারী কাজ (যেমন সুস্বাদু খাবার খাওয়া, সফলতা অর্জন, ভালোবাসা পাওয়া) করলে ডোপামিন নিঃসৃত হয়।
এই নিঃসরণ আমাদেরকে সেই কাজগুলো পুনরায় করতে উৎসাহিত করে।
---
২. মাদক গ্রহণে ডোপামিনের অতিরিক্ত উত্তেজনা
নেশাজাতীয় পদার্থ (যেমন হেরোইন, কোকেইন, আইস, অ্যালকোহল, গাঁজা) স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়।
উদাহরণ: স্বাভাবিক আনন্দে ডোপামিনের মাত্রা ১০০% হলে, কিছু মাদক তা ২০০-১০০০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
এর ফলে:
হঠাৎ তীব্র আনন্দ (“হাই” অনুভূতি)
মানসিক চাপ ও কষ্ট সাময়িকভাবে ভুলে যাওয়া
শক্তি ও উদ্দীপনা বেড়ে যাওয়া
---
৩. আসক্তি তৈরির প্রক্রিয়া
বারবার মাদক নেওয়ায় মস্তিষ্ক অতিরিক্ত ডোপামিনে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
স্বাভাবিক আনন্দের উৎস (যেমন খাওয়া, কথা বলা, ঘুরে বেড়ানো) তখন ডোপামিনের কম মাত্রা তৈরি করে, ফলে আর আগের মতো আনন্দ লাগে না।
মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ডোপামিন উৎপাদন কমিয়ে দেয় → তখন আনন্দ বা স্বাভাবিক বোধ করতে মাদকই একমাত্র উপায় মনে হয়।
এটি শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা তৈরি করে।
---
৪. দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
ডোপামিন রিসেপ্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয় → আনন্দ পাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
প্রেরণা, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
বিষণ্নতা, উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ বাড়ে।
মাদক না পেলে Withdrawal লক্ষণ (উদ্বেগ, শরীর কাঁপা, অবসাদ, অনিদ্রা, শারীরিক ব্যথা) দেখা দেয়।
---
💡 সংক্ষেপে: ডোপামিন মাদকাসক্তির শুরুতে আনন্দ ও উত্তেজনার উৎস হলেও, সময়ের সাথে এটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক আনন্দ পাওয়ার ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। ফলে, মানুষ মাদকের প্রতি আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।