29/06/2025
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা কী ?
→ বিষণ্নতা মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি। যা চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণে প্রভাব ফেলে। ব্যক্তিকে দুঃখ, হতাশা, অনিচ্ছা এবং আত্মবিশ্বাসহীনতায় ডুবিয়ে রাখে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা দৈনন্দিন জীবন, কাজ এবং সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
(২)বিষণ্নতার প্রকারভেদ
→ বিষণ্নতা বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায় এবং প্রতিটি ব্যক্তিকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
(ⅰ) মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার(Major Depressive Disorder)
(ii) বাইপোলার ডিসঅর্ডার(Bipolar Disorder)
(iii) পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার(Persistent Depressive Disorder)
(iv)প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা(Postpartum Depression)
(ⅴ) সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার(Seasonal Affective Disorder)
(vi) সাইকোটিক ডিপ্রেশন(Psychatic Depression) ইত্যাদিও বিষণ্ণতার অন্তর্ভুক্ত।
(ⅰ) মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (Major Depressive Disorder):-এটি বিষণ্নতার সবচেয়ে সাধারণ ধরন,অন্তত দুই সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত দুঃখ এবং ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ হারানো সাথে জড়িত।
(ⅱ) বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder):- এই
রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিষণ্নতা এবং ম্যানিয়ার মধ্যে পর্যায়ক্রমে ওঠানামা করেন। ম্যানিয়া হল অতিরিক্ত প্রফুল্লতা এবং শক্তির একটি অবস্থা।
(iii)পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার(Persistent Depressive Disorder):- ক্রমাগত বিষণ্নতাজনিত ব্যাধি, একে ডিস্ট্রাইমিয়া ও বলা হয়। দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে হালকা কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতার লক্ষণ সৃষ্টি করে।
(IV) প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা (Postpartum Depression):-গর্ভাবস্থা বা প্রসবের পর মহিলাদের মধ্যে এই বিষণ্ণতা দেখা যায়। এর ফলে চরম দুঃখ, উদ্বেগ এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
(ⅴ) সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডা(Seasonal Affective Disorder) :- এটি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে, সাধারণত শরৎ এবং শীতকালে বিষণ্নতার কারণ হতে পারে। এর কারণ দিনের আলোর অভাব ও হতে পারে।
(VI) সাইকোটিক ডিপ্রেশন (Psychotic Diepression):- এটি বিষণ্নতার একটি গুরুতর রূপ, যেখানে হ্যালুসিনেশন (কল্পনা দেখা বা শোনা) বা বিভ্রম (মিথ্যা বিশ্বাস) অন্তর্ভুক্ত থাকে।
(৩) বিষণ্নতার লক্ষণ
→ বিষণ্ণতা ব্যক্তিদেরকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে এবং মানসিক, শারীরিক এবং আচরণগত লক্ষণে প্রকাশ পায়।
(ⅰ) দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ বা দুঃখবোধ।
(ii)আগ্রহের অভাব-পূর্বে যে কাজগুলো করতে ভালো লাগত, সেগুলোতেও আগ্রহ কমে যায়।
(iii)ঘুমের সমস্যা-ঘুম না হওয়া অথবা অতিরিক্ত ঘুম, উভয়ই বিষণ্নতার লক্ষণ হতে পারে।
(iv) মূল্যহীনতা বা অতিরিক্ত অপরাধ বোধ।
(V) আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা করা।
(vi) মনোযোগ দিতে বা ছোটখাটো বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বোধ করা।
(Vⅱ) খাওয়া-দাওয়ার পরিবর্তন খুব বেশি বা খুব কম খাওয়া ।
(৪) বিষণ্নতার কারণ :-
⇒(i)মানসিক চাপ এবং ট্রমাঃ-জীবনের কঠিন পরিস্থিতি, যেমন-প্রিয়জনের মৃত্যু, সম্পর্কের সমস্যা,আর্থিক সংকট, কর্মক্ষেত্রে চাপ, বিষণ্নতার কারন হতে পারে।
(ii)জেনেটিক্স:-বিষণ্নতার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, সেই ব্যক্তির বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
(iii)দীর্ঘস্থায়ী রোগঃ- স্ট্রোক, হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ বিষণ্নতার কারন হতে পারে।
(iv) পদার্থের অপব্যবহারঃ-অ্যালকোহল বা "মাদক দ্রব্যর অপব্যবহার বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
(ⅴ) ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যঃ- কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। মেমন- আত্মবিশ্বাসের অভাব বা হতাশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি,বিষণ্নতার কারণ হতে পারে।
(vi) হরমোনের পরিবর্তন:-গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের কারণেও বিষণ্নতা হতে পারে।
(Vⅱ) পুষ্টির অভাবঃ-শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব ও বিষণ্নতার একটি কারণ হতে পারে।
(৫) বিষণ্নতা প্রতিরোধ:-
(i)থেরাপি
(ii)ওষুধ
(iii) নিয়মিত ব্যায়াম
(iv)পর্যাপ্ত ঘুম
(v)ভালো খাদ্যাভ্যাস।
তামান্না আহাম্মেদ
ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট