15/07/2021                                                                            
                                    
                                                                            
                                            ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো 'ডায়াবেটিস' বা 'বহুমূত্র রোগ'। মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর ১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তাদের উচিত এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আর যাদের এখনো হয় নাই তাদের উচিত এটাকে প্রতিরোধ করা। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ডায়াবেটিস হবে ৭ম বৃহত্তম মরণ ব্যাধি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০% (৮.৪ মিলিয়ন) মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, WHO-2014। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এর ৬১/২২৫ নম্বর ঘোষণায় ডায়াবেটিসকে দীর্ঘমেয়াদি, অবক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল ব্যাধি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা মানবদেহে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। 
এ রোগের লক্ষন গুলির মধ্যে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, এ কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ; অধিক পিপাসা লাগা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া; অতিশয় দুর্বলতা; সার্বক্ষণিক ক্ষুধা; স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস; চোখে ঝাপসা দেখা; শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা; চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব; বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা; চোখে কম দেখতে শুরু করা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। বীজ যেমন- পরিবেশ পেলে গজিয়ে উঠে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও তেমনই নানা ধরনের রোগ হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে হার্ট, কিডনি, লিভার, চোখ নষ্ট হয়ে যায়, নানা রকম ক্যান্সার হতে পারে, এমনকি শরীরের মাংসেও পচন ধরতে পারে। গর্ভকালীন সময়েও নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, গর্ভস্থ শিশু মৃত এবং প্রতিবন্ধী হতে পারে, অর্থাৎ ডায়াবেটিস, এহেনও কোনো রোগ বা জটিলতা নেই যেটা জন্মাতে সাহায্য করে না। 
ডায়াবেটিস আজীবনের একটি অসংক্রামক রোগ। বংশগত, পরিবেশগত, অলস জীবন যাপন, অসম খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ রোগ হতে পারে। এর চিকিৎসার মূল উপাদান হচ্ছে শিক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে ওষুধ। যেসব খাবার খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় সেসব খাবার যেমন- মিষ্টি জাতীয় খাবার, সাদা ভাত, সাদা রুটি, সিদ্ধ আলু ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রেখে যেসব খাবার খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেরিতে এবং ধীরে ধীরে বাড়ে যেমন আঁশজাতীয়  শাকসবজি, ফল, মাছ/মাংস, ডিম, দুধজাতীয় খাবার ইত্যাদি খাবারের তালিকায় যাতে থাকে সে দিকটা খেয়াল রাখতে হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কালো বেরি খাওয়া উচিত। ব্ল্যাকবেরি তে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা ইনসুলিন তৈরিতে সহায়তা করে। যার কারণে রক্তে সুগার স্বাভাবিক পর্যায়ে থেকে যায়। হিবিস্কাসের পাতায় উচ্চ পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর। ড্রামস্টিক পাতার রস ডায়াবেটিসে প্যানাসিয়ার মতো কাজ করে। ড্রামস্টিক পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। যা চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিন বাড়ায়, এর ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি নিম পাতা চিবানো উচিত। নিমের উপস্থিত অ্যান্টিভাইরাল দেহে চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের সদাবাহার গাছ হতে তিন-চারটি পাতা ছিড়ে নিয়ে ধুয়ে চিবিয়ে রস খেলে অথবা এক কাপ ফুটন্ত পানিতে এর ফুল ভিজিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে পান করলে মিলবে উপকার। শোধিত শিলাজতু রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কুশতা খুবছুল হাদীদ বা আয়রন বা লৌহ আমরা বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে পেতে পারি যেমন কচুশাক, কাঁচাকলা, ডালিম, মৌরি ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে, এই খাবার গুলো নিয়মিত খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয় এবং রক্তস্বল্পতা পূরণ করতে সহায়তা করে। কুশতা যমুররদ বা পান্না পাথর ডায়াবেটিস নিরাময়েও সাহায্য করে। কুশতা মারওয়ারীদ বাংলায় একে মুক্তা বলে। মুক্তা পাথর মনকে শান্ত করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে, অনিদ্রা থেকে মুক্তি দেয়, যেকোনো শারীরিক অসুস্থতায় মুক্তা অনেক উপকারী। ডায়াবেটিস রোগের কারণে চোখের সমস্যা, ঘুমের সমস্যার সমাধান দেয় এই মুক্তা। এছাড়া তুঁত, যব,  লিচু, ভুট্রা, লিচু, ডালিম, পিয়াজ, মাশরুম, মেথী, নয়নতারা পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর।