18/02/2025
এত বেশি মিসক্যারেজ কেন হচ্ছে আমাদের চারপাশে??
এই প্রশ্নের উত্তর আপনাদের অনেকের মত আমিও খুজেছি এবং বুঝতে পেরেছি, প্রশ্নের উত্তরটা এক কথায় দেয়া সম্ভব না।
মিসক্যারেজ বাড়ার সবচেয়ে বড় কারন হিসেবে আমি যে কারনটাকে নোটিস করেছি তা হল লো প্রজেস্টেরন বা শরীরে(রক্তে ও টিস্যুতে) প্রজেস্টেরন হরমোনের অভাব, অথবা, প্রজেস্টেরনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমান এস্ট্রোজেনের উপস্থিতি।
মেয়েদের প্রধান দুটো সেক্স হরমোন হচ্ছে এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন।
এরমধ্যে প্রজেস্টেরনের মূল কাজ হল জরায়ুর লাইনিংটা ইনট্যাক্ট রেখে নিষিক্ত ডিম্বানু বা ভ্রুণকে জরায়ুর সাথে ধরে রাখা।
মেনোপজের আগ পর্যন্ত নারীদেহে রজঃচক্রের লুটিয়াল ফেইজে প্রজেস্টেরন উৎপাদন বাড়তে থাকে এবং এর মাধ্যমে শরীর নিশ্চিত করতে চায় যৌনতার মাধ্যমে কোন পরিপক্ক ডিম্বানু নিষিক্ত হলে তা যেন ভ্রুনে পরিনত হয়ে গর্ভধারন নিশ্চিত হয়। ওভুলেশনের সময়ে যদি পুরুষের বীর্যের মাধ্যমে নারীর ডিম্বানু নিষিক্ত হয় তখন মূলত ঐ নিষিক্ত ডিম্বানুই দ্রুত গর্ভাশয়কে প্রজেস্টেরন তৈরিতে উৎসাহিত করে।
এখন, আমি কয়েকটা লক্ষন তুলে ধরবো যা দেখলে আপনি সন্দেহ করবেন আপনার সম্ভবত লো প্রজেস্টেরন ইস্যু আছে।
১)অযথাই মাঝারি ধরনের মাথাব্যথা
২)যখন তখন বেশ ঘাম হওয়া, শরীর থেকে ভাপ বের হচ্ছে মনে হওয়া
৩)মেজাজ খিটখিটে থাকা
৪)প্রায়শই হতাশায় ভোগা, অল্পতেই খুব হতাশ হয়ে যাওয়া
৫)রাতে ভাল ঘুম না হওয়া
৬)দুর্বল স্মৃতিশক্তি
৭)কাজে ফোকাস করতে না পারা
৮)মাসিক একবার শুরু হলে চলতেই থাকা বা মাসব্যাপী স্পটিং হতে থাকা
৯)যৌনশক্তি-আকাঙ্ক্ষার অভাব
১০)পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
এগুলো প্রজেস্টেরনের অভাবে ঘটে(সবসময়ই এগুলো প্রজেস্টেরনের অভাবে হয় না, কিন্তু প্রতি মাসের একটা বড় সময় ধরে এমন থাকলে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে তার প্রজেস্টেরন হরমোনের স্বল্পতা আছে) প্রতি মাসে মাসিকের আগের ৬-৭ দিন এমনটা থাকা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু ১০ দিনের বেশি এই লক্ষনগুলো থাকলে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে।
প্রজেস্টেরনের স্বল্পতা মিসক্যারেজের একটা লিডিং কজ, বিশেষ করে আর্লি মিসক্যারেজের।
প্রজেস্টেরন স্বল্পতার ৮টি কারন এখানে আমি উল্লেখ করবো।
১)যথেষ্ট হেলদি ফ্যাটস না খাওয়া-প্রজেস্টেরন স্টেরয়েড হরমোন, হেলদি ফ্যাটস ছাড়া শরীর স্টেরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না
২)সঠিক সময়ে না ঘুমানো-রাত ১০টা-১টার ডেল্টা স্লিপ ওয়েভটা মিস করেন যারা, প্রজেস্টেরন লো থাকার সম্ভাবনা তাদের বেশি।
৩)হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারপ্রোল্যাক্টিনেমিয়া থাকলে প্রজেস্টেরন কম থাকার সম্ভাবনা থাকে
৪)এনোভুলেশান-ডিম্বানু উৎপাদন না হওয়া
৫)সঠিক বয়সে স্বাস্থ্যকর যৌনতা শুরু না হওয়া(দেরিতে বিয়ে)
৬)অতিরিক্ত স্ট্রেস এবং ভিটামিন ডির অভাব
৭)টিনেজ বয়সে জিরো ফিগার হবার জন্য অনেকদিন ক্র্যাশ ডায়েটিং করা
৮)পিসিওএস বা পেরিমেনোজাল সিন্ড্রোম
যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে তারা সন্তানধারনের পরিকল্পনা করার সময় অন্তত ৬-৮ মাস প্রস্তুতির সময় রাখবেন যে সময়ে আপনি আপনার প্রজেস্টেরন লেভেল বৃদ্ধি করবেন।
প্রজেস্টেরন লেভেল বৃদ্ধির কয়েকটি উপায় নিয়ে আমরা ধারাবাহিক ভাবে কিছু পোস্ট করবো শিগগিরই, ইনশা আল্লাহ।
আমরা চাই মিসক্যারেজের কষ্ট থেকে মুক্তি পাক নারীসমাজ,
আর না ভাঙ্গুক কারো মাতৃত্বের স্বপ্ন.