19/09/2025
কাশির সিরাপ খেলে ঘুম পায় কেন? এর সাথে কি কাশির সম্পর্ক আছে?...
আমরা অনেকেই খেয়াল করেছি, কাশির সিরাপ বা ওষুধ খেলে অনেক সময় ঘুম ঘুম ভাব আসে। কিন্তু এর কারণ কী? আর ঘুমের সাথে কি কাশি ভালো হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে?
চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
কাশির সিরাপ খেলে ঘুম আসার মূল কারণ:
কাশির সিরাপ বা সর্দি-কাশির বেশিরভাগ ওষুধে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা ঘুম ঘুম ভাব তৈরি করে। এর প্রধান কারণ হলো:
অ্যান্টিহিস্টামিন (Antihistamines):
সর্দি এবং অ্যালার্জির কারণে হওয়া কাশির চিকিৎসায় প্রায়শই অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা হয়। এই উপাদানগুলো হিস্টামিন (histamine) নামক একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবকে বাধা দেয়, যা অ্যালার্জিজনিত লক্ষণ যেমন নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি এবং গলা খুশখুশ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু এই অ্যান্টিহিস্টামিনগুলো মস্তিষ্কের উপরও প্রভাব ফেলে, যার ফলে তন্দ্রা বা ঘুম ঘুম ভাব হয়। এটি বিশেষভাবে প্রথম প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিন যেমন ডাইফেনহাইড্রামিন (diphenhydramine) বা ক্লরফেনিরামিন (chlorpheniramine) এর ক্ষেত্রে বেশি ঘটে।
সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ডিপ্রেসেন্ট (CNS Depressants):
কিছু কাশির ওষুধ, বিশেষ করে যেগুলোতে কাশি দমনকারী উপাদান থাকে (যেমন কোডেইন (codeine) বা ডেক্সট্রোমেথরফান (dextromethorphan)), সরাসরি মস্তিষ্কের কাশি কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে। কোডেইন একটি ওপিওড জাতীয় উপাদান, যা ঘুম আনে এবং কাশি কমাতে খুব কার্যকর। অন্যদিকে ডেক্সট্রোমেথরফানও মস্তিষ্ককে শান্ত করে কাশি কমায়, যার একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ঘুম আসা।
ঘুমের সাথে কাশির নিরাময়ের সম্পর্ক:
সাধারণত, ঘুমের সাথে কাশি সরাসরি নিরাময়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে পরোক্ষভাবে ঘুম অনেক সাহায্য করে।
শরীরের বিশ্রাম এবং নিরাময়:
যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বিশ্রাম পায়। এই সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও দক্ষতার সাথে কাজ করে, যা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং টিস্যু মেরামত করতে সাহায্য করে। ভালো ঘুম অসুস্থতার সময় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে অপরিহার্য।
কাশির চক্র ভাঙা:
ক্রমাগত কাশির কারণে গলা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীতে অস্বস্তি হয় এবং একটি বিরক্তিকর চক্র তৈরি হয়। কাশির ওষুধ সেবন করে যদি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে এই চক্র সাময়িকভাবে ভেঙে যায়। এতে শরীর কিছুটা আরাম পায় এবং জ্বালা-পোড়া কমে।
কাশির ওষুধের কার্যপ্রণালী (Mechanism of Action):
কাশির ওষুধের প্রধানত দুটি ধরন রয়েছে, যা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে কাজ করে:
কাশির দমনকারী (Cough Suppressants / Antitussives):
এই ওষুধগুলো মস্তিষ্কের মেডুলা অবলঙ্গাটা (medulla oblongata) অংশে অবস্থিত কাশি কেন্দ্রকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এরা মস্তিষ্কের এই অংশকে সংকেত পাঠাতে বাধা দেয়, যার ফলে কাশি কমে যায়। এই ধরনের ওষুধের মধ্যে ডেক্সট্রোমেথরফান (dextromethorphan) এবং কোডেইন (codeine) প্রধান।
কফ বের করে আনা বা Expectorants:
এই ওষুধগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীতে জমে থাকা কফ বা শ্লেষ্মাকে পাতলা এবং আলগা করতে সাহায্য করে। এর ফলে কফ সহজে বের হয়ে আসে এবং বুক হালকা লাগে। গুইফেনেসিন (Guaifenesin) এই ধরনের ওষুধের একটি সাধারণ উদাহরণ। এই উপাদানটি কফকে পাতলা করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে পিচ্ছিল করে।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
সবসময় মনে রাখবেন, কাশির সিরাপ বা ওষুধ কেনার আগে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, কাশির কারণ বিভিন্ন হতে পারে (যেমন: সাধারণ সর্দি, ফ্লু, অ্যালার্জি, বা আরও গুরুতর কোনো সমস্যা) এবং সঠিক কারণ নির্ণয় করে ওষুধ সেবন করা জরুরি।
আর হ্যাঁ, যদি কোনো কাশির ওষুধ সেবনের পর বেশি ঘুম আসে, তবে ভারী যন্ত্রপাতি চালানো বা গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।