08/05/2024
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার WHO এর তথ্যমতে ২০২২ সালে প্রায় ২.২৬ মিলিয়ন রোগী ফুসফুসের ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়েছিলেন আর ১.৭৯ মিলিয়ন রোগী ক্যান্সার এ মৃত্যুবরণ করেছিলেন I আক্রান্ত আর মৃত্যুর হার হিসেবে ফুসফুসের ক্যান্সার সারাবিশ্বে প্রথম I আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয় I তাই ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়া আমাদের জন্যে খুবই জরুরি I
ফুসফুসের ক্যান্সার এর কারণসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো তামাক এবং তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার- যেমন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ধূমপান, জর্দা সহ পান, সাদাপাতা, গুল ইত্যাদি I এছাড়া ফুসফুসের ক্যান্সার এর পারিবারিক ইতিহাস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন যক্ষা, এবং পরিবেশ দূষণ অন্যতম I
ফুসফুসের ক্যান্সার এর লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কাশির সাথে রক্ত, শ্বাসকষ্ট I অনেক সময় যখন রোগ অন্যখানে ছড়িয়ে পরে তখন সেখানকার লক্ষণ নিয়েও আসতে পারে I যেমন হাড্ডিতে ছড়ালে হাড়ে ব্যথা, ব্রেইন এ ছড়ালে খিঁচুনি বা হাত পা অবশ, লিভার এ ছড়ালে জন্ডিস নিয়ে আসতে পারে I
একজন রোগী ফুসফুসের ক্যান্সার এর লক্ষণ সহ আসলে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে প্রথমে এক্সরে এবং পরে Core biopsy এর মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং এর ধরণ নির্ণয় করতে হয় I এরপর প্রয়োজন অনুসারে রোগীর বুকের সিটি স্ক্যান, পেটের আলট্রাসোনোগ্রাম বা সিটি স্ক্যান, বোন স্ক্যান বা পেট স্ক্যান করে ক্যান্সার এর স্টেজ নির্ণয় করা হয় I এরপর একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রোগের স্টেজ অনুসারে চিকিৎসার ধরণ নির্ণয় করেন I
ফুসফুসের ক্যান্সার এর চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমুনোথেরাপি, টাইরোসিন কাইনেজ ইনহিবিটর অন্যতম I
প্রথম দিকের স্টেজ বা স্তরের ক্যান্সার হলে সাধারণত অপারেশন এর জন্যে বিবেচনা করা হয় I এর মধ্যে লোবেক্টোমি, নিউমোনেক্টমি, VATS অন্যতম I
অনেকসময় রোগী ডাক্তার এর কাছে দেরিতে আসার কারণে, অপারেশন করা সম্ভব হয়নাI তখন কেমোথেরাপি দেয়া হয় I
কখনো দেখা যায় যে অপারেশন বা কেমোথেরাপি দেবার পরেও ক্যান্সার এর কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকে কিংবা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয় I এই অবশিষ্ট ক্যান্সার কে ধ্বংস করতে বা ক্যান্সার ফিরে আসার সন্দেহ দূর করতে রেডিওথেরাপি দেয়া হয় I রেডিওথেরাপি এর মাধ্যমে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এক্সরে বা গামা রে বা প্রোটন- কে ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের জন্যে ব্যবহার করা হয় I
অত্যাধুনিক ইমুনোথেরাপি এর মাধ্যমে রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করা হয় যাতে তা ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে I ইমুনোথেরাপি অনেক ব্যয়বহুল এবং তা সাধারণের সামর্থের মধ্যে নয় I দেশীয় কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এসব তৈরী করে I
TKI বা টাইরোসিন কাইনেজ ইনহিবিটর - একধরণের মুখে খাবার কেমোথেরাপির ঔষধ I ফুসফুস ক্যান্সার এর রোগী যখন কেমোথেরাপি নেয়ার উপযুক্ত থাকেন না, বা নিতে চান না- তখন এই ধরণের ঔষধ প্রয়োগ করা হয়I সব ধরণের ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্যে এইসব ঔষধ প্রযোজ্য হয় না I এই সব ঔষধ কাজ করবে কিনা তা নির্ণয়ের জন্যে আগে বিশেষ এবং দামি পরীক্ষা করে নিতে হয় I
ফুসফুসের ক্যান্সার এর চিকিৎসা শেষ হবার পরে কমপক্ষে ৫ বছর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয় I
ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সবধরণের তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন চিরতরে বাদ দেয়া I নিজের পাশাপাশি পরিবার এর সদস্যদেরও তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন বন্ধ করতে হবে I পরিবারের কেউ ফুসফুসের ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে থাকলে নিজেদের ও নিয়মিত চেক আপ করতে হবে I ক্যান্সার এর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর কাছে যোগাযোগ করতে হবে I