05/05/2020
শিল্পকলা
_____________
নাটক, নাচ, ভাস্কর্য নির্মাণ প্রভৃতি কাজকর্মকেই সাধারণত শিল্পকলা ক্যাটাগরির আন্ডারে ফেলা হয়। বিভিন্ন প্যাগান সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এই সকল কাজকর্ম। ইন্ট্রেস্টিং ব্যাপার হলো বাংলাদেশের হিন্দু-সেকু সম্প্রদায় বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হয়ে ইসলামিক পোশাককে আরবের সংস্কৃতি বলে কটাক্ষ করলেও তাদের শিল্পকলার ইতিহাস পাওয়া যায় গ্রিক, চৈনিক, রোমানদের মধ্যেও। এ কথা তাদেরকে বলা হলে সম্ভবত তারা এনকাউন্টার করবে যে শিল্পকলার অরিজিন বিভিন্ন জায়গায় হলেও ভারতবর্ষে এসে ভারতবর্ষের নিজস্ব+বহিরাগত কালচার মিশ্রিত হয়ে একটি নতুন সংস্কৃতি জন্ম নিয়েছে যাকে বাংলার সংস্কৃতি বলতে বাধা নেই। তবে তো তাদের যুক্তি অনুযায়ী ইসলামিক কালচারকেও বাঙালি সংস্কৃতির অধীনস্ত করা লাগে?! কিন্তু তারা তা করবে না। কারণ মুখে যতোই স্বাধীনভাবে কালচারের বিবর্তন হওয়ার পক্ষে কথা বললেও তাদের ভ্রান্ত আইডিওলজি তাদেরকে তাওহিদের সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিতে বাধা দেয়। এবং এটাই হওয়ার কথা ছিল।
আজকের শিল্পকলা মূলত সেকুলার স্পিরিচুয়ালিটির নব্য রিচুয়াল। রিচুয়াল হলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু জেসচার, নাচ, গান, মিউজিক এবং অন্যান্য কার্যক্রমের সমষ্টি অর্থাৎ শয়তানের আওয়াজ যাতে স্পিরিচুয়ালিটি অথবা কোনো সোসাইটির জাহেলিয়াতের চেতনাকে উজ্জীবিত করার কর্মসমষ্টির নাম। তাদের কার্যক্রমে সাধারণত মাস্ক, বিভিন্ন কস্টিউম প্রভৃতি ইউজ করা হতো। এখন অবশ্য এটার প্রবণতা কমে আসলেও মাস্ককে থিয়েটারের লোগো হিসেবে ইউজ করা হয়, তবে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার সময়ে মাস্কের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয়, চৈনিক, গ্রিক, রোমান, এসব মুশরিক সভ্যতার রিচুয়ালগুলো থেকেই মূলত নাটক, গান, বাদ্যযন্ত্র, নাচ প্রভৃতি কার্যক্রম এসেছে। তাদের প্রত্যেকটি রিচুয়াল ছিল তাদের দেবতা/শয়তানকে খুশি করার জন্য কিঁঁছু কার্যক্রম, সর্সারির অংশ হিসেবেও রিচুয়াল পালন করা হতো। এখনকার শিল্পকলায় তাদেরকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করা হয়। পহেলা বৈশাখের রিচুয়ালের উদাহরণ হলো সূর্যোদয়ের সময়ে নতুন সূর্যকে গান গেয়ে বরণ করে নেওয়া। বসন্তবরণও অনুরূপ। এগুলো কোনোটাই কোনইনসিডেন্স নয়, প্রত্যেকটা কার্যক্রমের পিছনে হাজার বছরের ইতিহাস আছে।
রিচুয়াল পালনের নির্দিষ্ট স্থান হিসেবে থিয়েটারের জন্ম হয়। অ্যারিস্টটলের Poetics এর উদ্ধৃতি অনুযায়ী থিয়েটার হলো ‘স্যাক্রেড মিস্ট্রি’র একটু আপডেট ভার্সন, যা করা হয় মানুষের মাঝে উক্ত অনুষ্ঠানের চেতনাকে পুশ করার জন্য। গ্রিক থিয়েটারকে বলা হয় ওয়েস্টার্ন ট্রেডিশানের অরিজিন। পরবর্তীতে রোমানদের মাধ্যমে থিয়েটার ধারণার প্রচার প্রসার ঘটতে থাকে। আমাদের সবার জানা কথা যে রোমানদের কালচারই পশ্চিমা সভ্যতার মূল বস্তুবাদী ওয়ার্ল্ডভিউয়ের অরিজিন। রোমানদের কালচারাল প্যাগানিজম এবং যাদুর কিতাবের কসমোলজিক্যাল প্যাগানিজমের এক মিশ্র রূপ হলো রেনেসা। এবং এই রেনেসার এনলাইটেনমেন্ট কনসেপ্টই হলো আজকের ওয়েস্টার্ন সভ্যতার আক্বীদার অরিজিন।
রেনেসার মাধ্যমে শুধু কসমোলজিবেজড অকাল্টিজমের উত্থান ঘটেছে তা নয়, সৃষ্টিতত্ত্ব ও নতুন বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদের পাশাপাশি প্যাগান রিচুয়ালগুলোও নর্মালাইজ হয়েছে ‘শিল্পকলা’ নামে। জাতিসংঘের মাধ্যমে এই জিনিসগুলো খুব নিষ্ঠার সাথে নর্মালাইজ করা এবং প্রচার প্রসারের কারণ এই আর্টিকেল পড়ার পর আপনি আগের থেকে বেশি জানবেন। ইসলামে সকল ধরণের বাদ্যযন্ত্র হারাম, একই সাথে নাচ, গান তো অবশ্যই। এখন আপনি আগের থেকে বেশি বুঝবেন কেন ইসলামে মূর্তি/ভাস্কর্য সংস্কৃতির সাথে শত্রুতা আছে। ইসলামের সাথে ‘শিল্পকলা’র সংঘর্ষের কারণও ঠিক এটিই। এটিই বাদ্যযন্ত্র ও নাচ হারাম হওয়ার পিছনে আল্লাহর হিকমাহ। এতো বিস্তারিত ইতিহাস যে সবাই জানবেই তা নয়। অতএব প্রশ্ন না করে ‘শুনলাম এবং মানলাম’ টাইপ মুমিন হওয়ার বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো হলে অটোমেটিক ইসলামের প্রতিটা বিধানের হিকমাহ সম্পর্কে উপলব্ধি চলে আসে। এটা হলো হিকমাহ যা আল্লাহ মুমিনদেরকে দান করেন, ফলে সে এমন কিছু দেখতে পায়, এমন কিছু বুঝতে পারে যা সাধারণ চর্মচক্ষে বোঝা কল্পনাতীত ছিল।
_
বর্তমানে টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক সব জায়গায় মিউজিক ও গানের ছড়াছড়ি। নর্তক এবং নর্তকী একই সাথে নাচের দর্শক এবং পার্টসিপেন্ট হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মিউজিকের সুর মানুষকে মোহগ্রস্ত করে তুলে। মিউজিকের প্রভাব এমন যে এর মাধ্যমে মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায়, ফলে মিউজিকে যে চেতনাকে গ্লোরিফাই করা হচ্ছে তা নিজের অজান্তেই মনের কোনো এক কোণে প্রভাব বিস্তার করে ফেলে। বছরের পর বছর ধরে এরকমভাবে প্রভাবিত হয়। মিউজিকের মাধ্যমে বিভিন্ন টক্সিক আইডিওলজি শ্রবণকারী ব্যক্তির ওপর এমনভাবে প্রভাব ফেলে যে সে নিজের অজান্তেই তাতে বিশ্বাসী হয়ে উঠে। অথচ সে যদি নিজের আকল খাটাতো তবে হয়তো সে সেই আইডিওলজিকে ধারণ করতো না। এটা যে শুধু আইডিওলজির ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, যে কোনো ধরণের মূল্যবোধ অথবা ইমোশন জাগ্রত করার ক্ষেত্রে হতে পারে। মিউজিকের এই এভিল পাওয়ারের কারণে মিডিয়া ক্যাম্পেইনের জন্য এক মোক্ষম অস্ত্র হলো মিউজিক। এটি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি টুল। গানের লিরিক্সের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এগুলো অসাড় কথাবার্তা, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয় এবং শিরক ও কুফরির দিকে আহ্বান করা হয়। হুজুররা গান শুনে না বলে আনকালচারড, ক্ষ্যাত গালি দেওয়া শাহবাগী চেতনার ননসেন্সগুলো জানে না যে তারা মুক্তমনা নয়, বরং নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের এলিটদের ব্রেইনওয়াশের শিকার।
বোস্টন চিলড্রেন’স হসপিটালের মিডিয়া ও শিশু স্বাস্থ্যবিভাগের ডিরেক্টর Michael Rich, MD, MPH মিউজিকের প্রভাব খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছে।
https://youtu.be/ecCsAeRjSMg
সমাজে মিউজিকের প্রভাব-
https://blog.sonicbids.com/what-kind-of-impact-does-our-music-really-make-on-society
https://www.udiscovermusic.com/in-depth-features/how-music-changes-society/
মিউজিক ক্রিয়েটিভিটিকে নষ্ট করে দেয়-
https://www.slashgear.com/study-finds-listening-to-music-has-negative-impact-on-creativity-27567774/
_
আল্লাহ বলেন,
“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞ লোকদের আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।“ (সুরা লুকমান,৬)
এই আয়াতটাতে যেন আজকের সমাজের বাস্তবতাই তুলে ধরা হয়েছে। অসাড় কথাবার্তার মাধ্যমে তারা নিজেরা তো পথভ্রষ্ট হয়ই, একই সাথে তাদের অসাড় চেতনার বিশ্বাসী হয়ে ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা করে।
আল্লাহ আরো বলেন,
“তোমার আওয়াজ দ্বারা তাদের মধ্যে যাকে পার সত্যচ্যুত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও ও তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র।” (সুরা ইসরা,৬৪)
সুরা লুকমানের তাফসিরে আল সা'দী বলেন,
“This includes all manner of haraam speech, all idle talk and falsehood, and all nonsense that encourages kufr and disobedience; the words of those who say things to refute the truth and argue in support of falsehood to defeat the truth; and backbiting, slander, lies, insults and curses; the singing and musical instruments of the Shaytaan; and musical instruments which are of no spiritual or worldly benefit.” (Tafseer al-Sa’di, 6/150)
অনুবাদ- “এটি সকল ধরণের হারাম স্পিচ, সকল অসাড় কথাবার্তা এবং মিথ্যা, এবং সকল নির্বোধ যারা কুফর এবং নাফরমানীকে উদ্বুদ্ধ করে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে; যাদের বক্তব্য যা সত্যকে রিফিউট করা এবং মিথ্যার পক্ষে তর্কের জন্য বলা হয় যাতে তারা সত্যকে হারাতে পারে; এবং গীবত, অপবাদ, মিথ্যাকথা, অপমান ও অভিষাপ; শয়তানের সঙ্গীত এবং মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস; এবং মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস যাদের কোনো পার্থিব অথবা স্পিরিচুয়াল উপকারিতা নেই।” (তাফসিরে সাদী, ৬/১৫০)
মিউজিক, গান এগুলো হলো অন্তরের নেশা। মাদকের নেশা যেমন মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ করে দেয়, তেমনই এগুলোও মানুষের ইমান ও চিন্তাশক্তিকে ধীরে ধীরে লোপ করে দেয়।
প্যাগান রিচুয়াল নিঃসন্দেহে শিরককে লালন করে, সেটা দেবদেবী বা ‘স্পিরিট’ এর নামে শয়তানপূজা হোক অথবা ন্যাচারাল কোনো ইনসিডেন্টকে বরণ করার নামে প্যান্থেইস্টিক কালচারের রিসার্জেন্স হোক। এর থেকে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্ক ত্যাগ করা ইমানের দাবী।
____
প্রয়োজনীয় লিংক-
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ritual
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Dance
https://en.m.wikipedia.org/wiki/History_of_theatre
Ruling on music, singing and dancing - Islam Question & Answer https://islamqa.info/en/answers/5000/ruling-on-music-singing-and-dancing
The growth of media has had an ever-expanding role in the lives of children, especially in terms of a child's physical and mental health. Here, Michael Rich,...