23/03/2024
🍂
খতনা বা মুসলমানি কে ইংরেজিতে বলে সারকামসিশন (circumcisions )। আপনি যে ধর্ম বা সংস্কৃতির মানুষ হোন না কেন, খতনা সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য জানা থাকলে আপনার শিশুকে খতনা করাবেন কি না এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে । মুসলমানি নিয়ে যেহেতু খুব বেশি প্রচার নেই, তাই অনেকেই ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে খতনা সমাজব্যবস্থা ও ধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হলেও এ নিয়ে তেমন প্রচার নেই। তাই অনেক শিশুর মুসলমানি হাজামের মাধ্যমে করানো হয়, যা অনেক জটিলতা তৈরি করে।
*️⃣ মুসলমানি কি ?
পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত চামড়া থাকে যা পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে, তা কেটে বাদ দেওয়াকেই বলা হয় খতনা বা মুসলমানি বা Circumcision.
*️⃣ কেন করানো হয় ?
> ধর্মীয় কারণে মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদিরা খতনা করিয়ে থাকে।
> Phimosis বা Paraphimosis হলে।
> smegmal cyst ( চামড়ার নিচে ময়লা জমে টিউমার এর মতো) হলে অপারেশন করতে হয়।
> Balanitis বা balanoposthitis বার বার হলে।
> পুরুষাঙ্গের চামড়া অনেক সময় প্যান্টের জিপারের সঙ্গে আটকে গেলে।
*️⃣ কখন মুসলমানি করা জরুরী :
কিছু সমস্যা হলে মুসলমানি করাতে হয় জরুরি ভিত্তিতে। আবার মুসলমানি না করালেও কিছু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
Phimosis (ফাইমোসিস ): ফাইমোসিস হলো পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া এমনভাবে মূত্রনালিকে ঢেকে রাখে, যে বাচ্চা বা রোগীর প্রস্রাবের সময় মাথাটা ফুলে ওঠে। বাচ্চা প্রসাব করার সময় কান্নাকাটি করে, প্রসাব একবারে সব বের হয় না এবং কিছুক্ষণ পর আবার প্রসাব করতে চায়। বাচ্চা প্রসাবের রাস্তার সামনে যেই চামড়া থাকে সেটা টানাটানি করলে বা চামড়ায় কোন প্রদাহ হলে এমন হতে পারে। এইক্ষেত্রে প্রথমে আমরা মুসলমানি না করে কিছু মলম আছে সেগুলো ব্যবহার করি। সাধারণত ঔষধ ব্যবহার করার পরই ভালো হয়ে যায়। যদি ঔষধ এ ভালো না হয় বা বার বার এই সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে মুসলমানি করাতে হয়।
Paraphimosis(প্যারা ফাইমোসিস) : পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া উল্টে টাইট হয়ে যায়, যার ফলে চামড়াটাকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নাড়াচাড়া করা যায় না। এ ক্ষেত্রে মাথার দিকে ফুলে যায় এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। অনেক সময় ফাইমোসিস রুগির চামড়া পিছনে সরাতে গিয়ে প্যারা ফাইমোসিস হতে পারে।
Smegmal cyst (স্মেগমাল সিস্ট): পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়ার নিচে স্মেগমা জমে এই সিস্ট হয়। বার বার এমন হলে মুসলমানি করিয়ে ফেলাই ভালো।
*️⃣ মুসলমানির উপকারিতা:
> স্মেগমাল সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
> পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়।
> যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
> ফাইমোসিস, প্যারাফাইমোসিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আর থাকে না।
> প্যান্টের জিপারের সাথে ইনজুরির হার কমে যায়।
> Balanitis হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
*️⃣ কখন মুসলমানি করা যাবে না :
> Hypospadias( হাইপোস্পিডিয়াস ) রোগ এটি পুরুষাঙ্গের জন্মগত ত্রুটি। এতে প্রস্রাবের নালি পুরুষাঙ্গের মাথায় না থেকে নিচে থাকে। ফলে প্রসাব সামনে না গিয়ে নিচে পড়ে। এই ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের সামনের চামড়া অপারেশন সময় ব্যবহার করে এই সমস্যা ঠিক করা হয়। মুসলমানি আগেই করলে পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া কেটে ফেললে তা অপারেশন সময় আর ব্যবহার করা যায় না। অপারেশন এর সময়ই মুসলমানি করানো হয়।
> Epispadias ( এপিসপিডিয়াসিস) এটিও শিশুর একটি জন্মগত ত্রুটি যেখানে প্রসাবের রাস্তা সামনে না থেকে উপরে থাকে। এই জন্মগত ত্রুটির ক্ষেত্রেও খতনা করানো যায় না।
*️⃣ মুসলমানি করানোর বয়সঃ
অনেকেই বলে জন্মের সাথে সাথে মুসলমানি করিয়ে দেয়া ভালো। আসলে সেটা ঠিক না। সাধারণত কোন সমস্যা না থাকলে বাচ্চার বয়স ২ বছর হলে মুসলমানি করানো ভালো। ২ বছরের আগে যদি কোন সমস্যা থাকে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তবে মুসলমানি করিয়ে ফেলতে হবে। ২ বছরের আগে মুসলমানি করালে কিছু কিছু ক্ষেত্রে Meatal stenosis ( প্রসাবের নালির ছিদ্র চিকন) হতে পারে।
*️⃣ সতর্কতা :
খতনার পর কিছু রোগীর রক্তপাত বন্ধ হয় না। তাই খতনার আগে বাচ্চার অবশ্যই রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে। রক্তের কিছু পরীক্ষা আছে সেগুলো করিয়ে নিলে এই সমস্যা এড়িয়ে চলা যায়।
*️⃣ মুসলমানি পরবর্তী জটিলতা
> রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া।
> অতিরিক্ত চামড়া কেটে ফেলা।
> চামড়া কম কাটা। এইক্ষেত্রে অনেক সময় পুনরায়
মুসলমানি করার প্রয়োজন হয়।
> পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথা কেটে ফেলা।
> ক্ষত না শুকানো ইত্যাদি।
মুসলমানি করতে গিয়ে যেকোনো দুর্ঘটনা বাচ্চার ভবিষ্যৎ জীবন জটিল করে তুলতে পারে। মুসলমানি একটি ছোট অপারেশন। এই অপারেশন করতে কিছু হিসাব নিকাশ করে করা লাগে যেমনঃ চামড়া কতটুকু কাটা লাগবে, কখন মুসলমানি করা যাবে না, ভিতরের মিউকাস সারফেস হিসাব করে কাটা । অপারেশন এর সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হলে তখন সেটার ম্যানেজমেন্ট করা। এগুলো অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন ভালো পারেন। তাই মুসলমানি অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জারি ডাক্তার দিয়ে করানোই উত্তম।
ডাঃ নাজমুল ইসলাম
এমবিবিএস, এমএস( শিশু সার্জারী)
সহকারি অধ্যাপক
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট
(ঢাকা শিশু হাসপাতাল)
শিশুর অপারেশন বিষয়ক যে কোন পরামর্শের জন্য যোগাযোগ : ০১৭৭৭৩৩১৫১১ 🍂
https://www.facebook.com/Dr.Nazmul.Islam