Prof. Dr. Sunjida Shahriah

Prof. Dr. Sunjida Shahriah Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Prof. Dr. Sunjida Shahriah, Doctor, Dhaka.
(1)

20/07/2025

#চেম্বার_কথন_১০৭

"I had a really good childhood up until I was nine, then a classic case of divorce really affected me." Kurt Cobain

"আমি কে? কেনই বা বেঁচে আছি? আমি মরে গেলেই তো সবার জ্বালা জুড়ায়..." শেষের দিকে গলাটা কেমন ধরে আসলো। সন্ধ্যা নামার আগে যেমন একটি ম্লান আলো ছড়িয়ে পড়ে, গলার স্বরটি তেমন স্থিমিত ম্লান হয়ে গেল।

স্থির তাকিয়ে থাকলাম! কৈশোর পেরিয়ে তারুন্যের দরজায় উঁকি দিচ্ছে যেনো একটি হলুদ বসন্ত পাখি! নাকি বসন্ত বাউরি! মুক্তার মতো চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে কোলে! নত মুখ!

"আমার বাবার বিয়ে মাত্র তিন মাস পরে! ডেসটিনেশন ওয়েডিং; বালি তে বোধ হয়! আমাকে তো কেউ কিছু বলে না! দাদু দিদা দেশে নেই। ঠিকমত কথাও হয় না! আমি এখনো জানি না বাবার বিয়েতে আমাকে যেতে বাধ্য করা হবে কিনা!" মেয়েটি ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে দোলনায় দুলতে দুলতে বলল।
গ্রিক পুরানের মতে অ্যাটলাস নাকি গোটা পৃথিবীর ভার নিজের মাথায় নিয়েছিলেন। এইজন্যই নাকি মেরুদন্ডের প্রথম হাড়কে বলে অ্যাটলাস। মেয়েটিকে দেখে মনে হল রাজ্যের ভার তার ছোট্ট মাথায়। খেয়াল করলাম এখনো একবারও সে আমার সাথে চোখাচোখি করেনি। চুপ করে থাকলাম।

"ফুপি বলছে ওর বাসায় যেয়ে থাকতে। আমি জানি না আসলে আমাকে বাসা থেকে এভাবে বের করে দেয়া হচ্ছে কিনা! আমার ফুপা খুব বাজে ভাবে গায়ে হাত দেয়! জোর করে বুকে জড়িয়ে ধরে। ঠোঁটে চুমু দেয়। কিন্তু এটা ফুপিকে বলা যাবে না। ছোটবেলায় একবার দিদাকে বলেছিলাম। দিদা আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল...! কারন আমি নাকি আমার মায়ের মত সবখানে প্যাঁচ লাগাই! আমি এখন কারো টাচ নিতে পারি না!" মেয়েটি মাটির দিকে তাকিয়ে বলল।

কোকোটা খুব দুষ্টু। দোলনাটা ওর দখলে। ও আচ্ছা; কোকো শ্যানেল বিড়ালটির নিত্য আনাগোনা আমার চেম্বারে। আদর পেলেই কোলে উঠে বসে। কোকো লাফিয়ে মেয়েটার কোলে চড়লো। স্পষ্ট দেখতে পেলাম মেয়েটার শরীরটা শক্ত হয়ে গেল। কিন্তু কোকোও কম যায় না! গুটিসুটি পাকিয়ে লেজটা সুন্দর করে গুটিয়ে ধুপ করে ওর কোলে ঘুমিয়ে পড়লো।

ইলেক্ট্রিসিটি নেই। পাখাটা সার্ভিসিং করাতে হবে। ঘটাং ঘটাং শব্দ হচ্ছে।মনে হল অচেনা ছোটো শহরের নির্জন স্টেশনের বিশ্রাম কক্ষে বসে আছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের চাকাকে আটকে ফেলেছে মহাকাল। আমরা এই স্তব্ধ সময় মুখোমুখি বসা দুটো নীরব মানুষ।

বেশ অনেকক্ষণ চুপচাপ!
তারপর মেয়েটি আবার শুরু করল, "সবাই বলে এটা করো সেটা করো! কিন্তু আমার তো একটাই জান! আমার মনটা কি চায় কেউ জানতে চায় না। আমি বুঝি বাবার বাসায় আমি একটা বাড়তি উপদ্রব। কিন্তু মা এর বাসায়ও আমার জায়গা নেই। ভাইবোন নেই! নানা, নানি, মামা, খালা, চাচা কেউ নেই। কোথায় যাব? কাকে বলব? কে আমাকে বিশ্বাস করবে? তাছাড়া আমি তো মিশতেও পারিনা মানুষের সাথে!"

খুব আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার মা কোথায়?"

মেয়েটি, "মা বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন। মা আমাকে নাকি কোনোদিনই চায় নাই। বার বার আবরশন করতে চেয়েছিল। তারপরও যখন আমি হলাম মা আমাকে দাদু দিদার কাছে রেখে পিএইচডি করতে চলে যায়। ওই ইউনিভার্সিটিতেই পরে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দেয়। কিন্তু আমাকে কোনদিন নিয়ে যায়নি। আমার ঠিক মনে পড়ে না মা শেষ কবে এসেছেন। আমি মনে করতে পারি না মায়ের কোলে কোনদিন আদৌ উঠেছি কিনা। মা আমার কাছে একটা টু ডি ছবি। যার দৈর্ঘ্য আছে, প্রস্থ আছে কিন্তু বেধ নেই। বাবার বিজনেস যত বাড়তে লাগলো তত দুবাই, সিঙ্গাপুর আর আমেরিকা যাওয়া বেড়ে গেল। কখনো কখনো দুমাস তিন মাস পর দেখতাম। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো এই লোকটা কে? আমার প্রথম যখন মেনস্ট্রেশন শুরু হল আমার এখনো মনে আছে দিদা বলছিল, কি ঝামেলা! আমার মনে হচ্ছিল আমি লজ্জায় মরে যাই! মাটির সাথে মিশে যাই। আমিই সবার বিপদের কারণ।"

মেয়েটা স্পষ্ট আমার চোখের দিকে তাকালো, "আচ্ছা আপনি বলতে পারেন আমি কেন মারা যাইনি?"

আমি চুপ করে তাকিয়ে থাকলাম চোখে চোখে। মনে হল, স্পষ্ট দেখতে পেলাম বসন্ত বাউরি পাখিটা ঘাড় কাৎ করে, আমার দিকে তাকালো। কিন্তু ওর ভাষায় কথা কইতে জানিনা। পাখিটি বোধহয় শুনতেও চাচ্ছে না কিছু।

"আপনার চেম্বারে এত গাছ কেন?" মেয়েটির মাথা ঝুঁকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল।

"বসন্ত বাউরি পাখি যদি কোনো দিন আসে এখানে, একটু যেন প্রাণের আরাম পায়! বোধ হয় সেই জন্যই!" প্রায় ফিস ফিস করে বললাম। ভয় হচ্ছিল যদি জোরে কথা বলি মেয়েটা সেটুকুও নিতে পারবে না।

আবার অনেকক্ষণ চুপচাপ। আড়চোখে খেয়াল করলাম বসন্ত বাউরি গুগল করছে।

"আমি মাকে খুব একটা মিস করি না! কিন্তু যেদিন প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হয় আমি চাদরটা মাথায় মুড়ি দিয়ে মনে করি মা আমার পাশে লালাবাই শোনাচ্ছে। আমি বাবাকেও মিস করি না। শুধু স্কুল ছুটির পরে যখন দেখি কারো বাবা দাঁড়িয়ে থাকতো আর বাচ্চাটা দৌড় দিয়ে বাবা বাবা বলে ঝাঁপিয়ে পড়তো কোলে তখন নিজেকে খুব পরিত্যক্ত লাগতো। আমাকে পালা খুব কষ্ট বলে ফুপু দিদা দাদুকে আমেরিকায় নিয়ে গেল। কোভিডের সময় আমার ভীষণ জ্বর আসলো। আমি একদম একা বাসায়। কেউ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। খালি একদিন দেখলাম আমাদের রান্না করতো যে মর্জিনা খালা উনি হঠাৎ করে শক্ত হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলেন। আমি সেই প্রথম মৃত মানুষ দেখলাম। খালা দুই দিন পড়েছিলেন। তারপর আমার উথাল পাথাল জ্বর। এর পর অনেক দিনের ঘটনা আমার মনে পড়ে না। বিড়ালটার নাম কি?"

"কোকো!" আমি মৃদু গলায় বললাম।

"ছেলে?" বলেই লেজ তুলে দেখতে চেষ্টা করল।

"হ্যাঁ! লেজ তুলে প্রাইভেট পার্টস এর দিকে তাকালে ওর আত্মসম্মানে আঘাত লাগে।"

"সরি!" বলে মেয়েটি আবার চুপচাপ।

"আপনি কথা কম বলেন তাই না?" মেয়েটি এই প্রথম আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকালো।

আমি এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
" কেন বলতো?"

" কারণ আপনি চুপ করে আছেন তাই!"

" আমি তোমার কথা শুনছিলাম! মনে হচ্ছিল অনেক কিছু জমে আছে তোমার! অনেক কথা বলার বাকি! সেই না বলা কথাগুলোর যে নন ভারবাল আকুলতা সেটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম! তুমি কি জানো যে একজন মানুষ ভাষা দিয়ে বা ভারবাল কমিউনিকেশন করে মাত্র ৭% বাকি ৯৩%ই নন ভার্বাল বা ভাষাবিহীন! তোমার সেই ভাষাবিহীন ইঙ্গিত আমাকে চুপ করে থাকতে বলছিলো।"

মেয়েটি ফুঁপিয়ে উঠলো।

আমাদের সমাজে বাচ্চারা সব সময় unseen and unheard! ওদের কোনটা ভালো হবে সেটা ভেবে দেওয়ার জন্য বাবা-মা সব সময় এক পায়ে খাড়া। কারণ বাবা-মারও একটা তাগিদ থাকে ভালো বাবা মা হওয়ার। একজন ভালো বাবা মা'র সামাজিক মানদণ্ড নির্ধারিত হয় তিনি কত দামী স্কুলে পড়াচ্ছেন, কত দামি জামা দিচ্ছেন, কত ভালো ভালো খাবার দিচ্ছেন, বিদেশে কয়বার বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন, কোন কোন দামি রেস্টুরেন্টে ঘুরাচ্ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একবারও কেউ জানতে চায় না বাচ্চার থেকে যে, "বলতো তোমার মনটা কি চায়?" বাচ্চার মনের খবর কয়জন জানতে চায়?

ভাবে আমি বাবা-মা, তাই আমি বাচ্চার সব থেকে সবকিছু বেশি ভালো বুঝি! যেন ভালো বোঝার সোল এজেন্সি উনি একাই নিয়ে নিয়েছেন। মনে করেন, বাচ্চা কি বুঝে ও তো ছোট? ওর কোন ভালো-মন্দ বিচার-বিশ্লেষণের জ্ঞান আছে নাকি? অর্থাৎ জ্ঞানের এই ঠিকাদারি অবচেতনভাবে অধিকাংশ অভিভাবকই নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন। ফলে বাচ্চাটি কখনোই প্রাণ খুলে সে যা ভাবে, অনুভব করে সেটা প্রকাশ করতে পারে না। ভয়ঙ্কর গ্লানি নিয়ে বেড়ে ওঠে।

আবার আলোচ্য মেয়েটিতে ফিরি। সেশন শেষে যাওয়ার সময় ফিডব্যাক নেওয়া প্রটোকলের মধ্যে পড়ে।

আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, "কেমন লাগছে তোমার?"
মেয়েটি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, "বহুদিন এত হালকা লাগেনি!"

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমি তার সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা কিছুই বদল করিনি। শুধু একটুখানি মনোযোগ দিয়ে শোনা কি ভয়ঙ্কর থেরাপিউটিক কাজ করে। আগে একটা সময় যখন বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা জেনে নিতাম তখন ভাবতাম আমি অনেক জ্ঞানী। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে নিজের চোখে আয়না ধরলে ইদানিং টের পাই আম কতোটা কম জানি, কম বুঝি।

তারপর সেই কাউন্সিলিং টেবিলের গল্প।

বিবাহ বিচ্ছেদ বাবা মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই একটি কঠিনতম প্রক্রিয়া।

ডিভোর্স দেবো বাচ্চাকে জানাবো কি?

অবশ্যই আপনি যদি ডিভোর্স দেন আপনি আপনার মুখ থেকে বলবেন। বাচ্চারা মামা খালা নানী দাদী বাইরের মানুষের কাছ থেকে যেন না শুনে। কারন সেটা নিজেকে আরও পরিত্যক্ত এবং প্রত্যাখ্যাত বোধ করায় বাচ্চাদের। বাবা-মার দায়িত্ব তাঁর সন্তানদেরকে সচেতন করা ডিভোর্সের ফলে কি কি প্রভাব তাঁদের ডিভোর্স পরবর্তী জীবনে প্রত্যেকের উপর পড়বে। এখানে সন্তানদের সাথে খোলামেলা আলোচনা হওয়াটা খুবই জরুরী। এই আলোচনায় মূল কথা মনে রাখতে হবে বাবা-মা পরস্পরকে অসম্মান করা মোটেও যাবে না। অথচ প্রচলিতভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের সময় চরমভাবে একজন অন্যজনকে দোষ দিতে থাকেন। পারলে শুলে চড়ায়। ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,
"আমি বহি এক ধারে, তুমি যাও পরপারে,
মাঝখানে বহুক বিস্মৃতি।
একেবারে ভুলে যেয়ো, শতগুণে ভালো সেও—
ভালো নয় প্রেমের বিকৃতি..."

এবার প্রশ্ন হল ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন বাচ্চাকে কি বলবো?
স্পষ্ট করে বলুন যে, "দেখো বাবা-মা আর একসাথে থাকতে পারছেন না। কিন্তু তোমাকে সন্তান হিসেবে কখনোই আমি পরিত্যাগ করব না। বড়দের পৃথিবীর হিসাবগুলো আলাদা। তুমি যখন বড় হবে তখন আরো অনেক কিছু বুঝতে পারবে। কিন্তু ভয় পেয়ো না আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে চলে যাব না।"

এভাবে খোলামেলা আলোচনা হলে সন্তান অনেকটুকু সাবলীলতা সাথে বাবা মার ডিভোর্সের ধকলটা সামাল দিতে পারবে। তবে বেদনার ভার কমবে না। মনে রাখবেন বাচ্চাটি তীব্র ভয় পাচ্ছে। তাই ওকে সাহস দিন।

আত্মীয় স্বজনদের একটি প্রবণতা থাকে তোমার বাবা কই? মা কই ইত্যাদি জিজ্ঞেস করার। কথা বলার তো লাইসেন্স লাগে না মুখ আছে যা খুশি বলে দেয়। একবারও খেয়াল করে না এই কথাগুলো শিশু মনে কত বিরূপ প্রভাব তৈরি করে।

বাচ্চাদের বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে আশ্বস্ত হওয়া প্রয়োজন যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও তাঁরা ভবিষ্যৎ জীবনে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকবে। বাবা-মা উভয়ের মনোযোগ, ভালোবাসা, স্নেহ ও যত্ন পাবে। বাচ্চারা অনিশ্চয়তাকে তাও সহ্য করতে পারে; কিন্তু বাবা-মা যখন তাদের সাথে মিথ্যা বলে সেটা কোনোভাবেই তারা নিতে পারে না।
"By understanding the needs of children following a divorce, parents can help their children become resilient and emotionally healthy." (1)

উপরন্তু বাচ্চারা ভাবতে থাকে তাদের দোষেই বিবাহ বিচ্ছেদটা ঘটছে। কারণ বাচ্চাদের কাছে বড়দের মতন পর্যাপ্ত তথ্য থাকে না। বাচ্চারা সীমিত তথ্য দিয়ে দ্রুত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। বাবা মা'র মধ্যে এ ধরনের কথা অহরহ প্রচলিত যে শুধু বাচ্চাদের জন্য সংসার করছে না হলে ডিভোর্স দিয়ে দিতাম। ফলে বাচ্চারা মনে করে তারাই বাবা-মার যন্ত্রণার কারণ।
" It is important to be up-front with children about the changes that they are experiencing and reassure them that the divorce is not their fault."(2)

এখন প্রশ্ন হল বাচ্চাদের কেমন পরিবেশ চাই?
মনে রাখতে হবে বাবা-মার দ্বন্দ্ব ঝগড়া বাচ্চাদের মধ্যে স্ট্রেস তৈরি করে। কাজেই বাবা-মার একজন একজনকে দেখে নেওয়া, অথবা টাকা-পয়সার গরম দেখানো, ইগো বাদ দিয়ে খেয়াল করা দরকার বাচ্চাদের কিসে মঙ্গল হয়। বাবা মার তীব্র দ্বন্দ্ব বাচ্চাদেরকে ঠেলে দেয় কোন একজনের পক্ষ নিতে। যেটা অস্বাস্থ্যকর। সবার সামনে বাচ্চাদেরকে জিজ্ঞেস করা যে তুমি কার সাথে থাকবে অথবা এক বাবা-মার একজন সম্পর্কে আরেকজনের নেতিবাচক কথা সাংঘাতিকভাবে বাচ্চাদের মনোজগতে সমস্যা তৈরি করে। ফলে এই বাচ্চা না মাকে সম্মান করতে শেখে না বাবাকে। কিন্তু নিজেদেরকে জব্দ করার নেশায় মত্ত বাবা-মা এই জিনিসগুলা ভয়ংকর ভাবে অস্বীকার করেন। বিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী স্বামী স্ত্রী সন্তানকে একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। যারা এমন করছেন তাদের জন্য অশনি সংকেত। কারণ আজকে জীবনসঙ্গীকে তথাকথিত টাইট দিতে বাচ্চাকে ব্যবহার করছেন কালকে এই বাচ্চাই আপনাকে টাইট দেবেন। মনে রাখবেন এভাবে আপনি আপনার বাচ্চার মনোজগতটি কলুষিত করছেন।

"Parents should avoid putting children in the middle and asking children for information about the other parent, as well as avoid arguing and speaking negatively about the other parent." (2,4)

বাচ্চাদেরকে কিভাবে সময় দেব?
একাধিক ভাই বোন থাকলে তাদেরকে ডিভোর্স পরবর্তী আলাদা করবেন না। ধরুন ডিভোর্স হয়ে গেছে। বাবা-মা আলাদা থাকছেন। এমন অবস্থায় বাচ্চাদেরকে সময় দিতে হবে যে দুই বাড়িতেই তাদেরকে ধাতস্থ হতে। এই সময় দেওয়াটা খুব ধীরে ধীরে হবে। এটা আশা করা ঠিক হবে না যে বাচ্চারা চট করে দুই বাড়িতে এডজাস্ট করবে।
"Establishing smooth, routine transition times help children experience less distress and helps them to understand that their parents care about them."(3)

কে ভালো? বাবা না মা?
বাচ্চারা চায় তারা বাবা-মা দুজনের সাথেই একসাথে থাকুক। যার ফলে তারা একসাথে পাবে দুইজনকে। দুই বাবা-মার দুই জায়গায় থাকা বাচ্চাদেরকে ডিস্টার্ব করে। বিশেষ করে বয়সন্ধিতে বাচ্চা যখন পৌঁছায়। যদি ডিভোর্সের পরে বাবা-মা দুইজন অনেক দূরে দূরে থাকেন তবে দুজনেরই দায়িত্ব হচ্ছে বাচ্চাদের সাথে নিয়মিত ফোন, চিঠি, ইমেইল ইত্যাদি সমস্ত উপায়ে যোগাযোগ রক্ষা করা। বাচ্চারা যাতে মনে না করে বাবা-মা তাদেরকে ত্যাগ করেছন।
"If parents live far from their children, it is important for them to keep in touch through phone calls, e-mails, or letters." (2,5)

ডিভোর্স হয়ে গেছে কিভাবে বাচ্চা সামলাবো?
মনে রাখতে হবে বাচ্চাদের নিয়মিত রুটিন এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মানতে শেখানো জরুরী। পুরোটা মায়ের ঘাড়ে অথবা পুরোটা বাবার ঘাড়ে দিয়ে দেওয়াটা মোটেও সমীচীন নয়। বাচ্চাদের কাজ, স্কুলের ব্যালেন্স টিচার মিটিং এ যাওয়া, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, দাওয়াত, আত্মীয় কুটুম্বিতা ইত্যাদি ভাগ করে নেয়া জরুরি। বাবা মা যখন এই কাজগুলো দুজনের সমানভাবে ভাগ করে নিয়ে করবেন তখন বাচ্চারা কিন্তু তখন আর অতটা খারাপ বোধ করবে না।
"Establishing or strengthening family rituals, customs, and rules is important for children."(3)

আমাদের দেশে অধিকাংশ সময় বাচ্চা পালার দায়িত্ব ডিভোর্সের পর মায়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। এবং ডিভোর্স পরিবারের বাচ্চারা যখন সামান্য বেচাল করে সমাজ হা করে আঙ্গুল তুলে তেড়ে আসে ব্রোকেন ফ্যামিলির বাচ্চা ভালো হয় না বলে। দুটোই ভ্রান্ত ধারণা। মানুষকে যেমন রাষ্ট্র, ধর্ম, সমাজ, পরিবার অধিকার দিয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঠিক সেরকমই নিজেদের বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে বাচ্চাদের জীবনে বিষাক্ততা ছড়ানোর কোন অধিকার দেয়া হয়নি। কাজেই যারা আইনী লড়াইয়ে যাচ্ছেন এই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।

দুটি মানুষ স্বেচ্ছায় একসাথে থাকতে পারছেন না ঠিক আছে, কিন্তু তার মাশুল বাচ্চারা কেন দেবে? আলোচ্য মেয়েটির অনেকগুলো সেশন লেগেছে কিন্তু সেটি এখানে অপ্রাসঙ্গিক।

যেইসব দম্পতি নিজেদের বিবাহ বিচ্ছেদ সত্বেও চমৎকারভাবে বাচ্চাদেরকে গড়ে তুলছেন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে, সম্মানের সাথে, তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা।

তথ্যসূত্র
1. Clarke-Stewart, K. A., Vandell, D. L., McCartney, K., Owen, M. T., & Booth, C. (2000). Effects of parental separation and divorce on very young children. Journal of Family Psychology, 14(2), 304-326.

2. Emery, R. E. (2006). The truth about children and divorce: Dealing with the emotions so you and your children can thrive. Penguin Group.

3. Ahrons, C. (2004). We’re still family. Harper Collins.

4. Elam, K. K., Sandler, I., Wolchik, S. A., Tein, J. Y., & Rogers, A. (2019). Latent profiles of postdivorce parenting time, conflict, and quality: Children’s adjustment associations. Journal of Family Psychology, 33(5), 499-510.

5. Whitesides, M. F., & Becker, B. J. (2000). Parental factors and the young child’s postdivorce adjustment: A meta-analysis with implications for parenting arrangements. Journal of Family Psychology, 14(5), 5-26.

(কথোপকথনের উপরোক্ত অংশটুকু আমার চেম্বারে আসা মানুষটির অনুমতি সাপেক্ষে মনোসামাজিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কনফিডেন্সিয়ালিটি বজায় রেখে প্রকাশ করা হলো)

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া। চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার; বাংলাদেশ।

19/07/2025
একটা লেখা পড়েই লেখাটা আসলে কি নিয়ে সেটা তলিয়ে না ভেবেই কেউ যখন "বেহুদা" ঝটপট ফোঁস করে ওঠে... তখন কি কি প্রতীয়মান হয়...
12/07/2025

একটা লেখা পড়েই লেখাটা আসলে কি নিয়ে সেটা তলিয়ে না ভেবেই কেউ যখন "বেহুদা" ঝটপট ফোঁস করে ওঠে...

তখন কি কি প্রতীয়মান হয়,
১. তার ইনসিকিউরিটি
২. বিশেষ কোনো ভাবনার প্রতি পক্ষপাতিত্ব
৩. নিজস্ব বুদ্ধিতে খতিয়ে দেখবার অনভ্যস্ততা

Hearing আর listening শব্দদু'টি বাংলায় আলাদা করে নেই। কিন্তু ইংরিজিতে আলাদা ব্যবহৃত হয়।

Hearing মানে শুধু শোনার জন্যই শোনা। শুনেই, কি বলতে চাইলেন না বুঝেই ফট করে একটা "বেহুদা" মন্তব্য করা। ফলে এরাই না বুঝেই অপ্রাসঙ্গিক তর্কে লিপ্ত হয়।

পক্ষান্তরে, listening মানে সময় নিয়ে কি বলতে চাইছেন তার মূলভাব বুঝে, আমি নিজে হলে এই পরিস্থিতিতে কি করতাম সেটা নিজের চোখে আয়না ধরে বুঝে তারপর মন্তব্য করা। তাই active listening এর বিকল্প নেই, যদিও এটা তে সময় লাগে। তবুও এই সময় দেওয়া জরুরি।

মন্তব্য করবার আগে বুঝে নেওয়াটা জরুরী। গৎবাঁধা অন্যের থেকে শোনা বুলি না আওড়ে!

11/07/2025

আমাকে দেখা যাক বা না যাক
নবারুণ ভট্টাচার্য

কে আমার হৃদ্‌পিণ্ডের ওপরে মাথা রেখে ঘুমোয়
কে আমাকে দুধ ও ভাতের গন্ধ দিয়ে আড়াল করে
কে আমার মাটি যেখানে আমি বৃষ্টির মতো শুষে যাই
আমি যখন দূষিত আকাশে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে উড়ি
আমার পালকে ছাই জমে জমে ধূসর হয়ে যায়
তখন আমার সামনে সবুজ গাছ হয়ে ওঠে কে
কে আমাকে চোখের পাতা বন্ধ করে আড়াল করে
কে আমাকে আগুন দিয়ে মশালের মতো জ্বালায়
কে আমার পৃথিবী যার ভেতরে আমি লাভার মতো
ফুটতে থাকি
আমি যখন পথ থেকে গলিতে তাড়া খেতে খেতে দৌড়ই
আমার পায়ের তলায় হাইওয়ে, আলপথ সব ফুরিয়ে যায়
তখন আমার সামনে আশ্রয় হয়ে ওঠে কে
এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে
আমার ওপরে অনেক অত্যাচার করতে হবে
এত অত্যাচার করার ক্ষমতা, দুর্ভাগ্যবশত,
কোনো শোষক, নিপীড়ক বা রাষ্ট্রমেশিন এখনও জানে না
যখন জানবে
তখন আমার প্রশ্নের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে
আমি প্রশ্নগুলোকে ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগোতেই থাকব
আমাকে দেখা যাক বা না যাক
প্রশ্নগুলো ফেটে অনেক সপ্তর্ষিমণ্ডল আকাশে দেখা যাবে।

11/07/2025

‘আগে তো বুঝি নাই সে এমন!’ আমাদের চারপাশে প্রায়শই এ ধরনের কথা শোনা যায়। যখন কেউ এসব কথা বলে, বুঝতে হবে সময়টা পেরিয়ে গ.....

11/07/2025

আমাদের প্রত্যেকের মানসিক যন্ত্রণার ধরন বিচিত্র হলেও সেগুলোর রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাকরণ। অজস্র মানুষের যন্ত্রণা এবং তা উপশমের অভিজ্ঞতা প্রত্যেককেই শুধু ব্যক্তিগতভাবেই শক্তিশালী করে না, প্রিয়জনের সংকটে কার্যকরভাবে তার পাশে দাঁড়াবার রসদেরও জোগান দেয়।

মানসিক যন্ত্রণার কথা জানাতে ‘ফিনিক্স’ নামে একটি গ্রুপ সক্রিয় আছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। মনোসামাজিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিই এই গ্রুপের উদ্দেশ্য। ফিনিক্স হলো সেই পৌরাণিক পাখি, আগুনে পুড়েও ছাই-ভস্ম থেকে যে বারবার জেগে ওঠে নতুন জীবন ও প্রেরণা নিয়ে।

আমাদের মন যা জানে না, চোখও সেটা দেখতে পারে না। আজকের নগর সভ্যতা এবং জটিল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে আত্মরক্ষার উপায় তাই মনকে জানানো, প্রস্তুত করা। সমষ্টির মাঝে যে মনোসামাজিক সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ‘ফিনিক্স’ গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তারই মলাটবদ্ধ রূপ কাউন্সেলিং টেবিলের চিঠি গ্রন্থটি।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অফ বাংলাদেশের (পিসিএসবি) সদস্য সচিব এবং বায়োমেডিকেল জার্নাল, প্যালিয়েটিভ কেয়ার জার্নাল-এর নির্বাহী সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া বইটি রচনা করেছেন।

ড. মেহতাব খানম বাংলাদেশে মনোবিজ্ঞানের একটি জনপ্রিয় মুখ। মনোবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর লেখা যেমন বহুল পঠিত, তেমনই টেলিভিশনে নানান ধরনের মানসিক সংকট নিয়ে অধ্যাপক মেহতাব খানমের আলোচনাগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অজস্র মানসিক সংকটের বাস্তব বিবরণ ও তার সমাধান নিয়ে রচিত ড. মেহতাব খানমের গ্রন্থ ‘মন ও মানসিকতা’।

ড. মেহতাব খানম আমাদের সমাজের চলমান ঘটনা থেকেই বিভিন্ন মানসিক সমস্যার উদাহরণ টেনে বের করেন, আপাতদৃষ্টে আমাদের এড়িয়ে চলা অতি তুচ্ছ বিষয়ের মধ্য থেকেই প্রায়শ আচরণগত সমস্যাগুলোকে অবলীলায় চিহ্নিত করেন এবং এসব সমস্যা থেকে আমরা প্রথমত নিজেদের চেষ্টায় কীভাবে বেরিয়ে আসতে পারি, তার বিজ্ঞানসম্মত পথ বলে দেন। প্রয়োজনে তিনি ঘটনার আরও গভীরতর বিশ্লেষণে ব্রতী হন। সবটুকুই করেন সংক্ষেপে, সহজ-সরল ভাষায় এবং নিজস্ব স্টাইলে।

সংগ্রহ করতে আপনার ঠিকানা ও ফোন নাম্বার লিখে ইনবক্স করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে অথবা সরাসরি কল করুন +৮৮০১৯১৭৭৩৩৭৪১-এই নম্বরে।
#মানসিকস্বাস্থ্য
#ফিনিক্সগ্রুপ
#মনোসামাজিকসচেতনতা
#মানসিকযন্ত্রণারপ্রতিকার
#নতুনজীবন




11/07/2025

এই বই লেখা হয়েছে মনস্তত্ত্ব যে কোনো জটিল বিষয় নয় সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরার জন্য। মানুষের মন নির্দিষ্ট কিছু প্যাটার্ন মেনে চলে। সেই প্যাটার্নগুলো বোঝার জন্যই এই লেখা। আমি যদি আমার মনোজাগতিক সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করতে পারি, তা হলে অন্যের দিকে আঙুল না তুলে অপরের অনুভব, চিন্তা ও আচরণের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে পারব।

কাউন্সেলিং মানে উপদেশ দেওয়া নয় কিংবা সমালোচনামূলক মন্তব্য করা নয়। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা আছে -হয় উপদেশ দেওয়া, নয়তো চুপ করে কথা শুনে যাওয়া মানেই কাউন্সেলিং। কাউন্সেলিং একটি বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি।

এই বইয়ে সহজ বাংলা ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, বইটি যেন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তির চিন্তার খোরাক জোগায়। একই সঙ্গে মনস্তত্ত্বের পেশাজীবী পাঠক যদি আরেকটু গভীরে ঢুকতে চান, তার জন্য তথ্যসূত্রে বিষয়ভিত্তিক ইঙ্গিত রয়েছে। ঠিক যেন একাডেমিক না হয়েও অনেকটা সেমি-একাডেমিক একটা স্বাদ যোগ করার প্রয়াস।

প্রত্যেকটি মানুষেরই চিন্তার দক্ষতা রয়েছে। সেই ভাবনার জায়গাটিকে উসকে দেওয়াই এই বইয়ের লক্ষ্য।
অর্ডার করুন: https://kathaprokash.com/book/1236

10/07/2025

"Perhaps when we find ourselves wanting everything, it is because we are dangerously close to wanting nothing."

Sylvia Plath

10/07/2025
09/07/2025

অর্ডার করুন সানজিদা শাহরিয়ার দুটো বই
অর্ডার লিংক: https://kathaprokash.com/author/440

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম
08/07/2025

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম

বিষয়: আমাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা হয় কেন ?ব্যক্তিগত সমস্যার সরাসরি পরামর্শের অনুষ্ঠান ‘আমি এখন কী করব?’; সঞ্....

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Prof. Dr. Sunjida Shahriah posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Prof. Dr. Sunjida Shahriah:

Share

Category