Prof. Dr. Sunjida Shahriah

Prof. Dr. Sunjida Shahriah Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Prof. Dr. Sunjida Shahriah, Doctor, Mohakhali DOHS, Dhaka.
(1)

24/10/2025

#চেম্বার_কথন_৫৩
ভদ্রমহিলা, "আমার স্বামীকে খুন করতে ইচ্ছে করে! মোটেও সহ্য হয় না! ছেলেমেয়েরা বিরক্ত হয়! কেন আমি এই ৫৫ বছরে এসে ওদের ৮০ বছরের বাবার সাথে এমন করি! কারণ এখনই তো ওদের বাবার সেবা দরকার। আমি নাকি আগে এমন ছিলাম না! ভীষনভাবে বদলে গেছি! আসলেই আমি খুব নরম ছিলাম! একটু পানি হবে?"

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ভদ্রমহিলা একটু থামলেন। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, কি কি বলবেন সেটা বারবার রিহার্সাল দিয়ে এসেছেন।

চা, পানি আসলো। উনি চুপ করে পানির গ্লাসটা বাম হতে ধরে আছেন। চুমুক দিচ্ছেন না। বিখ্যাত লোড শেডিং শুরু হয়েছে। ফ্যানটা ঘুরছে কিন্তু এক রত্তি গুমোট কাটছে না। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে! কিন্ত ওনার সেদিকে ভুরুক্ষেপ নেই।

ভদ্রমহিলাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিস্মৃত শতাব্দী প্রাচীন রেলওয়ে স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে আছেন। পর্দা সরিয়ে দিলেন। আমার জানালায় ঝুলানো গাছের ফাঁক গলে আলো জাফরি কাটছে ওনার কোলে। অদ্ভুতভাবে একমুহূর্তে যেন মনে হলো উনি আলো ধরতে চাচ্ছেন, কিন্তু আঙ্গুলের ফাঁক গলে আলোটা বার বার পড়ে যাচ্ছে।

ভদ্রমহিলা, "অদ্ভুত তো! আপনি আমাকে তাড়াতাড়ি বলবার জন্য তাড়া দিচ্ছেন না! চেম্বারে যেয়ে চুপ করে বসে থাকলে মানুষ বিরক্ত হয় তো!"

আমি হেসে ফেললাম, "আমি খুব ভালো মানের না! দেখেন না আমার বাইরে কোনো সাইনবোর্ড নেই!"

ভদ্রমহিলা, " আপনি বিরক্ত হচ্ছেন না?"

আমি মৃদু হাসলাম, "আপনি সময় নিন। স্মৃতির নৌকায় পা দিলে আমরা সবাই একটু থমকে যাই।"

এই পারমিশনটার যেন ওনার অবচেতন মনের জন্য দরকার ছিল। সুনসান নিরবতা কাটলো। গলগল করে ঝর্নার মত ভদ্রমহিলার গলা থেকে কথা বের হতে থাকলো।

ভদ্রমহিলা, "আমার স্বামীর সাথে বয়সের পার্থক্য ২৫ বছর। ৯ বছরে বিয়ে হয়। আমার তখনো মাসিক শুরু হয় নাই। দেখতে এসে শুধু একটা প্রশ্নই আমার শাশুড়ি করেছিলেন। মাসিক শুরু হয়েছে কিনা! আমার বাবা ছিলেন ক্ষয়িষ্ণু জমিদার। ঘটি ডোবে না, নাম তাল পুকুর। শরিকী বাড়ি, এজমালী সম্পত্তি। মা মারা গেছেন, অল্পদিন। এরই মধ্যে বাবার নতুন বউ। থাকার ঘরের বড়ই অভাব। বিয়ের নামে আসলে বাবা আমাকে এক রকম বিক্রিই করে দিলেন। এই টাকায় পরে শুনেছি বাবা বাজারে একটা মুদি দোকান দেন। আমার আর ফিরানি হয় নাই। বাপের ভিটায় এই জীবনে আর পা পরে নাই।"

ভদ্রমহিলা দম নিতে থামলেন।
আমি চুপচাপ।
বিড়ালটা জানালা তাক করে বসে আছে।
একটা চড়ুই পাখি কার্নিশে বেশ লেজ নেড়ে নেড়ে তাকে লোভাতুর করছে।

ভদ্রমহিলা আবার শুরু করলেন, "শ্বশুরবাড়িতে নতুন জীবন শুরু হল! বাসর রাত্রে ভারী শাড়ি গয়না পড়ে হাঁটতে পারছিলাম না। প্রচুর ভারী ভারী গয়না। কান কেটে যাবার উপক্রম। এখনো মনে আছে ফুপুশাশুড়ি আমাকে কোলে করে খাটে তুলে দিয়েছিলেন। ল্যাজারাস কোম্পানির পালঙ্ক। সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

রাতে স্বামী আসলে আমি বলেছিলাম, চাচা একটু পেশাব করতে যাবো। আমার স্বামী আমাকে কষে একটা চড় মেরে ছিলেন।"

আমি যেন স্পষ্ট গালে আঙ্গুলের দাগ দেখতে পেলাম। ৯ বছরের সদ্য মাতৃহারা বালিকার গালে সদ্য স্বামীত্ব অর্জন করা ৩৪ বছরের যুবার সাপটে স্পর্শ!

ভদ্রমহিলা, "আমার ভালো বউ হবার ট্রেনিং শুরু হলো। শাশুড়ি ভয়ঙ্কর প্রতাপশালী। বাড়ির বুয়ার ছুটি ছিলো বাৎসরিক। আমার না। দিনগুলি যাও বা যেত রাতগুলি আরো ভয়ঙ্কর! আমার স্বামীর কাছে যৌনতা মানে দৈহিক আঘাত। কখনো চাবুক, কখনো হাত দিয়েই। আমার আগে না কি আরো ৫টা বউ মারা গেছে। আমি ৬ নম্বর বউ। ১১ বছরে প্রথম গর্ভবতি হই। ততদিনে আমি জম্বি। হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত বাচ্চা প্রসব হয়। আমি শুনি ডাক্তার বকা বকি করছেন নাবালিকা মা বলে। ১২ তে প্রথম মা হই। যেই ছেলে আপনার কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে ওর জন্ম। ১৩ বছরে দ্বিতীয় বার। এই বার মেয়ে হয়। এর পর ১৪ বছরে আবার ছেলে! ১৫ বছরে আবার মেয়ে। এরপর আমার শাশুড়ির পরামর্শে আমার স্বামী ভ্যাসেকটমি করে।"
আমি স্তব্ধ। আবার নিরবতা!

কিছুক্ষন পরে ভদ্রমহিলা আবার শুরু করলেন, "বাচ্চারা একটু বড় হতেই ওদের ইন্ডিয়াতে নাম করা কনভেন্টে পাঠানো হতো। একে একে আমার ৪ টা সন্তানই চৌকষ অক্সফোর্ড এক্সেন্ট শিখলো। আমাকে নিয়ে গেলে শেষের দিকে ওদের লজ্জা হতো! কারণ আমি ওদের বন্ধুদের মা'দের মতো চৌকষ না। আমার চৌহদ্দি রান্নাঘরেই আটকে থাকলো। আর দুপুরের শাশুড়ির পা টেপা।

আমি কথা বলতে ভুলে গেলাম। আমার গলার আওয়াজ কেমন ভুলে গেলাম। শ্বশুর মারা যান যখন আমার স্বামীর বয়স তিন বছর। উনার লাইব্রেরীটা হল আমার নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা। বইয়ের জগৎ আমাকে আশ্রয় দিলো। আমি কাউকে না বলে ২১ বছরে আবার পড়াশুনা শুরু করলাম। ততদিনে ছোটো বাচ্চাটিও বোর্ডিং স্কুলে চলে গেলো। এইদিকে স্বামী আমার শরীরের প্রতি মনোযোগ হারিয়েছে। কারণ তার শুধু শিশু শরীর পছন্দ। আমার এখন মনে হয় সম্ভবত আমার শাশুড়ি ইচ্ছে করেই আমার বাচ্চাদেরকে দেশের বাইরে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছিল। বাচ্চারা নাম করা সব জায়গা থেকে পাশ করতে লাগলো। বাবার মুখ উজ্জ্বল হতে থাকলো। আমি আরো নিভে যেতে থাকলাম। একদিন সাহস করে শাশুড়িকে বললাম পড়তে চাই। উনি কি বুঝলেন জানি না, মাস্টার রাখলেন। আমি প্রাইভেটে মেট্রিক পাশ করলাম। নেশা হয়ে গেলো পড়াশুনা। এরপর সাইন্স নেবো ঠিক করলাম। কিন্তু প্র্যাক্টিকাল কি হবে? এমন অগুণিত সমস্যা। এর মধ্যে শাশুড়ির প্রথম স্ট্রোক করলো। ঠিক ২ মাস পরে আমার স্বামীর। আমি একই রুমে ২ জন স্ট্রোকের রোগী রাখি। নিয়ম করে ডাক্তার আসে। ৩ বেলা নার্স। আমার সন্তানেরা বাবা আর দাদীর জন্য বিদেশ থেকে চলে আসলো। সম্পত্তি ভাগের কথা উঠলো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার ভাগের কোনো হিসেব নেই। আমি আসলেই একটা ফালতু। উদ্বৃত্ত। বাপের ঘরে, স্বামীর ঘরে,এখন বাচ্চাদের ঘরেও। জীবনে ঠোক্কর খেতে খেতে এটা বুঝে গেছি যে টাকাই ক্ষমতার উৎস! স্বামী-সন্তানের সাথে মানসিক সংযোগ নেই, বাপের বাড়ির কেউ নেই। একটা বিশ্বস্ত বন্ধু পরিজন নেই। আমি একা। বুঝলাম আমাকে টিকে থাকতে হবে। খুব প্রেম করতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু কাকে পাবো? শরীরের প্রতি ঘেন্না ধরে গেছে। মানুষ শরীরই চায় দেখি। সব বাদ দিয়ে পড়াশোনাটা চালিয়ে গেলাম। এমএ পাশ করলাম। কম্পিউটার শিখলাম। এর মধ্যে কিছু দিন ভুগে আমার স্বামী, শাশুড়ী আবার ঠিক হয়ে গেলো।

সব কিছু আগের মতো হয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে একদিন শুনলাম আমার স্বামী আবার বিয়ে করবে। কারণ আমি তাকে মনোযোগ দেই না নাকি।

এই বার প্রথম দেখলাম মা ও ছেলের বিরোধ। আমার শাশুড়ি এই বিয়েতে কিছুতেই রাজি হলো না। আমার সামনেই দেখলাম আমার শাশুড়ির গায়ে হাত তুললো আমার স্বামী। একমাত্র সন্তানের হাতের এই মার খেয়ে উনি হঠাৎ বদলে গেলেন। একদম চুপ হয়ে গেলেন। শরীর খারাপ করলো। ওমরাহ তে গেলেন। ফিরে এসে ক্যান্সার ধরা পড়লো। জানি না কেন, মৃত্যুর আগে আমার শাশুড়ি ওনার নামের সমস্ত সম্পত্তি আমাকে দিয়ে যান! আমার স্বামীর নামে নাকি কিছুই সম্পত্তি ছিল না। আমার শ্বশুরকে বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পত্তি নাকি আমার শাশুড়ির নামে আমার দাদা শ্বশুর লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন।

এরপর হঠাৎ করে যেন পাশার দান পাল্টে গেলো। আর এক কাপ চা হবে?"
চা আসলো।

ভদ্রমহিলা আবার শুরু করলেন, " আমার স্বামীর আবার স্ট্রোক করলো। আবার বিছানায়। আবার ডাক্তার, নার্স! আমাকে অকথ্য গালাগালি করে, দারোয়ান, ড্রাইভার, মালি, বাবুর্চি নিয়ে! আমার ইদানিং প্রচন্ড রাগ উঠে। মনে হয় সব লন্ডভন্ড করে দেই। আর কতো? মানুষের সহ্যের কি সীমারেখা নেই?"

আমি তাকিয়ে রইলাম ভদ্রমহিলার দিকে। মনে হলো যিনি এতোটা সহ্য করেছেন জীবনে তাঁকে কিছু বলবার মতো যোগ্যতা আমার আসলেই নেই। আমি আসলে কতোটুকু জীবন দেখেছি? পুঁথিগত বিদ্যার দৌড় দিয়ে ওনাকে ছোঁয়া মানে ওনার এই জীবনের পথ পরিক্রমাকে অসন্মান করা হবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে। ইদানিং প্রায়ই নিজের চোখে আয়না ধরলে বুঝি যে আমি আসলেই কতটাই কম জানি বা বুঝি।

আস্তে করে ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ভার্বাল বা কথা বলা নাকি মাত্র ৭% যোগাযোগের মাধ্যম। বাকি ৯৩% যোগাযোগ নন-ভার্বাল বা ভাষাবিহীন। আমি চেয়ারটা টেনে ওনার কাছে গিয়ে ঝুঁকে ওনার হাতটা ধরলাম। হাতে কিছু পুরাতন দাঁতের গভীর দাগ দেখলাম মনে হলো। ভদ্রমহিলার হাতটা ধরে ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

উনি চোখ সরিয়ে নিলেন।
খরখরে চোখ দ্রোহ কালের আগুনে ভরা। মনে হলো ঠিক যেন এই বারের বাঙলাদেশের অপরিচিত আচরণ করা বৃষ্টিবিহীন ক্লান্ত শ্রাবণকাল।

আমি ভাবতে চেষ্টা করলাম ভদ্রমহিলার মা বেঁচে থাকলে কিভাবে ওনার মাথায় এই মুহূর্তে হাতটা রাখতেন? গালে হাতটা বুলাতেন!

ওনার মাথা ছুঁয়ে গাল স্পর্শ করবার সাথে সাথে শ্রাবণের ধারার মতো পড়তে লাগলো নিঃশব্দ কান্না।
অনেকক্ষন গেলো।

ভদ্র মহিলার ছেলের সাথে কথা বললাম।
আমি, "মানুষের আচরণের বহিঃপ্রকাশ হয় রাগ, দুঃখ, আনন্দ বা ভয় থেকে হয়। উনি রাগী আচরণ করছেন। কিন্তু আরেকটু পেছনে যদি যাই দেখবো, এই রাগটি একটি মৌলিক অনুভুতি। এটা অটো তৈরি হয়। এই রাগ অনুভতিটি মনের মধ্যে তৈরি করে কিছু চিন্তা। সেই মনের অদৃশ্য চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটা়ই আমরা বাহ্যিক আচরণে। আপনারা মায়ের রাগটা দেখছেন কিন্তু কেন রাগটা করছে সেটা কি বুঝতে চেষ্টা করেছেন? ওনার আসল অনুভূতি হচ্ছে প্রচন্ড দুঃখবোধ। উনি নিজেকে পরিত্যাক্ত বোধ করেন। এখানে আমরা যদি সেই দুঃখটাকে স্পর্শ করতে পারি তাহলেই রাগটা কমে যাবে। আপনারা রাগের জন্য এনেছেন আসলে ওনার জন্য দরকার দুঃখ আর ভয়ের জায়গাটা একটা একটা ইটের মতো করে খুলে দেখা। অনেক গুলিvসাইকোথেরাপি সেশন দরকার।"

আমরা মাঝে মাঝে মানুষের নির্দিষ্ট একটা আচরণকে অগ্রহণযোগ্য বলে তাঁর নিন্দা করি। কিন্তু কখনোই খতিয়ে দেখতে চাই না এই আচরণটার পেছনে তাঁর কোন চিন্তাটা কাজ করে। অর্থাৎ এই আচরণ তাঁর কোন চিন্তার ফসল। এবং আরো একটু পেছনে যেয়ে ভাবি না কোন অনুভূতিটা থেকে এই চিন্তাটা তৈরি হচ্ছে? আমরা শুধু আচরণটাই দেখি। কিন্তু মানুষ তো তাঁর বুকটা খুলে অনুভূতিটা দেখাতে পারেন না, মাথাটা খুলে চিন্তাটা দেখাতে পারেন না। ফলে আমরা মানুষটিকে ভুল বুঝি। খুঁত ধরি। কি কি ভুল করে বিশ্লেষণ করে এক হাত দেখাতে চাই। প্রতিশোধ নিতে চাই। জাজমেন্টাল ভাবনা তাই অস্বাস্থ্যকর চিন্তার প্রকাশ। কারণ শুধু কাজ বা আচরণ দেখে আমরা বলতে পারব না একজন মানুষের মনের মধ্যে কি অনুভূতি এবং ভাবনা চিন্তা চলছে।

আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের নিজেদের অনুভূতি ভাবনা এবং আচরণের লিমিটেশন আছে। কাজেই জাজমেন্টাল না হয়ে অন্যের লিমিটেশনটা বোঝা প্রয়োজন। সেই জন্য সবার আগে দরকার নিজের চোখে নিজে আয়না ধরা। আমি কি করি? নিজের সীমাবদ্ধতাটুকুকে বুঝতে পারলে এবং গ্রহণ করতে শিখলেই আমরা অন্যরটিকেও পারবো। তখন আর দোষ খুঁজতে যাবো না। আর সেই জন্যই আমি একটি অশ্লীল শব্দ। কারণ দিন শেষে we are not independent we are interdependent. তাই না? তাই তো!

( আমার চেম্বারে আগত ভদ্রমহিলার অনুমতি সাপেক্ষে কনফিডেন্সিয়ালিটি বজায় রেখে মনোসামাজিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই লেখা প্রকাশ করা হলো।)

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া।
চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাক্টিশনার।

23/10/2025

সম্মান যেখানে শ্বাস নেয়, সেখানেই বাঁচো

যার সাথে কথা বলছেন, সে মোবাইল টিপছে, অন্যমনস্ক কিংবা আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না—কথা থামিয়ে উঠে পড়ুন। যেখানে আপনার গুরুত্ব নেই, সেখানে এক মুহূর্তের অপচয় নয়। কেউ অবহেলা, অপমান করবে, তারপরেও সেখানে থাকতে হবে—দুনিয়াটা আপনার জন্য এতটা সংকীর্ণ হয়ে যায়নি। যেখানে সম্মান নেই, সেখানে যাবেন না। যে আপনার গুরুত্ব বোঝে না, তার সাথে মিশবেন না।

যেখানে আপনার উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে বিশেষ কিছু আসে-যায় না, সেখানে সময় না দিয়ে নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত হোন। নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে এমন এক উচ্চতায় উপনীত করুন, যাতে আপনার কথা শোনার জন্য মানুষ অপেক্ষা করে। যে আসরে আপনার গুরুত্ব আছে, সে আসরে বসুন। তাদের সাথে মিশুন যারা আপনাকে সম্মান না করলেও অন্তত অসম্মান করে না। সেই আড্ডায় মাতুন, যেখানে আপনি তুচ্ছ নন।

আত্মসম্মান জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে খেয়াল রাখবেন, আত্মসম্মান যেন অহংকারে পরিণত না হয়। “আমি কিছু একটা”—এমন দম্ভে সাধারণের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করবেন না। অসাধারণ হওয়ার দরকার নেই, বরং সাধারণ থাকুন। তবে কারও অবজ্ঞায় আটকে থাকবেন না। অন্তত অবহেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।

যার-তার থেকে যখন-তখন অপমান জীবন থেকে অপসারণ করুন। বাঁচুন—সম্মানের সাথে। যারা বিশ্বাস নষ্ট করে, কথার পিঠে ব্যথা দেয় এবং ভর সমাজে অপমান করে—তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। যারা ইশারা-ইঙ্গিতে আপনাকে অপমানিত করে, পর ভাবে কিংবা মিশতে চায় না—তাদের চৌহদ্দিতেও পা ফেলবেন না। দুনিয়াটা বিশাল। লক্ষ দুয়ার আপনার পক্ষ নেওয়ার অপেক্ষায়। কোথাও জায়গা না পেলে নিজের জগতে বাঁচুন, তবুও অসম্মানের পথে হাঁটবেন না।

আত্মসমালোচনা করুন, তবে আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়ে নয়। প্রত্যেকের ভুল হয়। আত্মসমর্পণ মানে এই নয়—যে যা ইচ্ছা বলতে ও করতে পারবে। বিনীত থাকা ভালো, কিন্তু যারা বিনয়কে দুর্বলতা ভেবে পেয়ে বসে—তাদের শিক্ষা পাওয়াটাও জরুরি।

কারও উপকার করার সুযোগ পেলে আজকেই করুন, কেননা আগামীকাল এই সুযোগ নাও আসতে পারে। ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষায় কোনো কাজ করবেন না। তবে কারও জীবন রক্ষা পায়, ভয়ানক বিপদ থেকে বাঁচে—এমন যদি হয়, এজন্য যে কারও কাছে এক জীবনে দু-একবার ছোট হবেন। এতে আপনি বিশালতা পাবেন। অন্যের দোয়া যে মানুষকে কত বড় বানাতে পারে তা ভাবতেও পারছেন না!

কখনোই কাউকে অসম্মান করা, অবজ্ঞা ও অবহেলা করা—এই ভুল করবেন না। সম্মান দেওয়া এবং নেওয়ার জন্য একজন আছেন যিনি ন্যায্যতার প্রতীক।

পূর্ণাঙ্গ মানবজীবনের যাত্রায় আশেপাশের কেউ তুচ্ছ নয়। যার যতটুকু সম্মান, ততটুকু রক্ষার জন্য প্রয়োজনে সংগ্রাম করতে হবে, জীবন দিতেও হতে পারে। কথা ও আচরণ মানুষের মর্যাদা বাড়ায় বা কমায়। ভালো আচরণ মানবজীবনে আলো হয়ে ফেরত আসে। কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, অসম্মানের পরিকল্পনা করা মানে নিজের পতনের নিমিত্তে গর্ত খোঁড়া।

চিন্তাতেও অন্যের উপকার রাখবেন। কাজে শুভের বাস্তবায়ন ঘটাবেন। কারও অসম্মান করে কোনো আচরণ করবেন না—তাতে যদি কোথাও কোথাও নিজেকে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা লাগে, তবুও। অবস্থান তৈরি করুন, যাতে আপনার অনুপস্থিতিতে মানুষ আপনার শূন্যতা অনুভব করে। লোকেদের স্মৃতিতে আপনার জন্য সম্মান জমা করে যান। যদি চান তবে না থেকেও থাকতে পারেন!

উপকারের হাত প্রশস্ত রাখুন। দানে সম্পদ কমে না, বরং মান-সম্মান বাড়ায়। জীবনের বিরুদ্ধে যত পারেন, কম অভিমান করবেন।

অভিযোগ শান্তির হন্তারক। অল্পে সন্তুষ্ট জীবন সুখী। কিছু ত্রুটি এড়িয়ে যাবেন, কিছু কথা গোপন রাখবেন এবং অন্যের প্রশংসা জারি রাখবেন—দেখবেন, আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

অবস্থা তৈরি করে নিতে হয়। আপনার সরল চিন্তা, সাদামাটা জীবন এবং মানুষের মঙ্গলকামনা—আপনাকে লাখে একজন ‘এক’ হিসেবে তৈরি করবে। নিজেকে বিক্রি করে, বিবেককে বন্ধক দিয়ে কিংবা সত্যকে আড়াল করে অন্যায়ের পক্ষ নেবেন না। পরের হক ভক্ষণ করবেন না।

মানুষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তার কাজ ও কথা থেকে যায়। পাছে যা থাকবে, তা যাতে অগ্রে দোয়া পাঠাতে পারে—সুযোগ রেখে যান। নিজেকে অমূল্য করুন, তবে ন্যায়ের মূল্য হারিয়ে নয়। সম্মানের সাথে থাকুন, সসম্মানে বাঁচুন। অসম্মানের চেয়ে অপমানের আর কিছুই নেই। আত্মসম্মান জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

#সংগৃহীত

22/10/2025

কাউন্সিলিং টেবিলের গল্প

"আমার মনে হয়, তুমি আমাকে এখনও ভালোবাসো। কিন্তু আমরা এই সত্য থেকে পালাতে পারব না যে, আমি তোমার জন্য যথেষ্ট নই। আমি জানতাম এমনটা হবেই। তাই তুমি আরেকজন নারীর প্রেমে পড়েছ বলে আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। রাগও করছি না। আমাকে রাগ করা উচিত, কিন্তু করছি না। আমি শুধু ব্যথা পাচ্ছি। অনেক বেশি ব্যথা। আমি ভেবেছিলাম এটা কতটা ব্যাথা দেবে, তা আমি কল্পনা করতে পারব, কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।" হারুকি মুরাকামি, সাউথ অফ দ্য বর্ডার, ওয়েস্ট অফ দ্য সান

পরকীয়া

ভদ্রমহিলা, "আমার বিয়ের পরেই বুঝি এটা একটা মিস ম্যাচড সম্পর্ক। বৌভাতের পরপরই বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ির দ্বন্দ্বে আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক শীতল হয়ে যায়। আমার শাশুড়ি যা বলবে স্বামী সেটাই মেনে নেবে। মাঝে মাঝেই ননাস, নন্দাই, ভাসুর, জা সহ শ্বশুরবাড়ির সবার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আমাকে নিয়ে বিচার সভা বসত। আমার গার্জিয়ান হিসেবে বড়ো মামার ডাক পড়ত। আমার সবই নাকি ভুল। ওই যে কথায় বলে না, 'যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।' আমি শুধু কাঁদতাম। বাবা নেই, মা বিধবা, পাঁচ বোন। আমি বড়। বাপের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। কাজেই তখন আমার মূল মন্ত্র ছিল, 'যে সহে সে রহে।' তারপর হঠাৎ করে আমরা একদিন ডিভি পেলাম। মনে হলো স্বপ্নের রাজ্য আমেরিকাতে গেলে আমার জীবনের পরিবর্তন হবে। নিউইয়র্কে শুরু হল নতুন সংসার। শ্বশুরবাড়ির খবরদারি কিছুটা কমলো। কিন্তু সেটা সাময়িক। একে একে তার বাবা-মা ভাই বোন সবাইকেই আনার প্রক্রিয়া শুরু হল। ননদের বিয়ে হল আমেরিকার পাসপোর্টধারী বাঙালি ছেলেদের সাথে। দেবরা এদেশে পড়তে আসলো। তারপর কুইন্সটাই আবার বাংলাদেশ হয়ে গেলো আমার কাছে। "
ভদ্রমহিলা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। অনলাইন সেশন চলছে। তিনি স্বেচ্ছায় ক্যামেরা অফ রেখেছেন। কাজেই ভদ্রমহিলা আমার কাছে ইথারে ভেসে আসা কতগুলো শব্দ ছাড়া আর কিছু নয়। আমিও বোধ হয় তাঁর কাছে তাই!
আমি ভাবতে চেষ্টা করলাম মানুষটি বসে বসে কথা বলছেন। হঠাৎ মনে হল তাঁর নাকফুল সাদা রঙের জানালার রোদ্দুর ঠিকরে ঝিকিয়ে উঠলো। তারপর খেয়াল হলো, ধুর! এখন ডিসেম্বর। প্রচন্ড ঠান্ডা! তুষারপাত!
ভদ্রমহিলা আবার শুরু করলেন, "এভাবেই আস্তে আস্তে বাচ্চারা বড় হল, বড়টা এখন ইউনিভার্সিটিতে। ছোটোটা স্কুলে। এর মধ্যে আমার একজনের সাথে পরিচয় হলো। ভদ্রলোক বাংলাদেশী, বিবাহিত! দু’ব্লক পরেই থাকেন। আমার মতোই ওনার গল্পের বই পড়বার নেশা। আমরা একই লাইব্রেরীতে যাই। প্রথম দিকে শুধুই চোখাচোখি। আমি ভেবেছিলাম মেক্সিকান। এরপর আস্তে আস্তে যতদূর সম্ভব একসাথে হাঁটতে, হাঁটতে ঘরে ফেরা। আমি জানি না কখন যেন আমরা দুজনেই দুজনের মনের, শরীরের কাছাকাছি চলে আসলাম। সকালবেলা থেকে আমি অপেক্ষা করতাম। একটু কথাই যেন রিচার্জ করে দেয়। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। যেটুকু সময় দেখা হবে, সেটাই যেন হাপ ছেড়ে বাঁচা। নাইলে তো সেই একই দম বন্ধ ছোট ছোট ঘর, কাঠের দেয়াল। বহু বছর পর মনে হল আমি যেন নতুন করে বেঁচে উঠছি। আমার হারিয়ে যাওয়া সেই কলেজে পড়া দিনগুলির প্রজাপতি আমিটিকে খুঁজে পাচ্ছি। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম কারো কোনো কটু কথায় আর কষ্ট পাচ্ছি না। কিন্তু একদিন হাজবেন্ডের কাছে হঠাৎ ধরা পড়লাম। ও অনেক দিন ধরেই আমার গাড়িতে নাকি ট্রাকার লাগিয়েছিল। আবার সালিশ বসলো। এরকম চরিত্রহীন বউ রাখবে না। এবার আমার বোনরাও বেঁকে বসলো। বললো মানিয়ে নাও। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ বললো এই নতুন মানুষটির বউ বাচ্চাকে সব জানিয়ে দেবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম সব শর্তে। আমার সব কিছু তে ট্রাকার লাগলো। সব সময় নজরবন্দী। কথায় কথায় অপমান। আর পারছি না। ভেবে দেখলাম আমি এখন আর মানিয়ে নিতেও চাই না।"

আমি, " আপনি কি চান?"

ভদ্রমহিলা," যেই সংসারে ভালোবাসা নেই, সেই সংসারে আর কতদিন? আমারও কি ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা হয় না? একবার বিয়ে হয়েছে বলে কি জীবনের সব আনন্দ শেষ? একবার মা হয়েছি বলে কি আমার জীবনে আর কোনো আনন্দ নেই? আমার খাওয়ার অসুবিধা নেই, পড়ার অসুবিধা নেই। কিন্তু জীবনটা মরুভূমি। এক ফোঁটা ভালোবাসার জন্য বুকটা যে হাহাকার করে সেটা কেউ দেখে না। সবাই খালি দোষই ধরে! এটা উচিত ওটা অনুচিত বলে কথা শোনাতে আসে! বলে এই কথা মানিয়ে নাও অথবা মেনে নাও! খালি উপদেশ! কিন্তু আমার কষ্টটার কোন সমাধান নেই। আমি এখন কি করবো?"

আমি, " আপনি কাউন্সেলিং থেকে কি চান?"

ভদ্রমহিলা, " আমার আর সংসার করতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু এতদিনের সংসারটা ভাঙতেও ইচ্ছে করে না।"

মানুষ কেন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তার আগে বুঝতে হবে মানুষ বিবাহিত সম্পর্কে কি চায়? যত্ন, ভালবাসা, সমর্থন, সম্মান, উৎসাহ, নিরাপত্তা, মনোদৈহিক তৃপ্তি ইত্যাদি। বৈবাহিক সম্পর্কে যখন এগুলো পান না তখন তিনি সেগুলো চাইতে থাকেন, অন্যখানে খোঁজেন।

তাহলে প্রশ্ন হল কেন এই জিনিসগুলো চাই? উত্তরটি সহজ! মানুষ একাকীত্ব সহ্য করতে পারে না। এই সহ্য করতে না পারার জায়গাটি থেকে মানুষ কখনো সচেতন এবং কখনো অবচেতনভাবে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ বিবাহিত সম্পর্কে যখন ভালো নেই, তখন চাহিদাগুলো যেখানে মিটবে সেই দিকে ঝুঁকে পড়ি।

প্রথমে অবচেতনভাবে কিভাবে হয় সেটা বলি।
অনেক সময় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন এই দোটানায় এবং যাতনায় চেম্বারে এসে মানুষটি বলেন যে, "আমি এই সম্পর্কটিকে ঠিক নাম দিতে পারি না।"

মানুষটি তার কে? জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন, "তিনি কি আমার বন্ধু নাকি প্রেমিক/ প্রেমিকা জানি না!"

আমাদের প্রত্যেকের একটি লজিক্যাল অংশ বা যৌক্তিক সত্ত্বা থাকে। তিনি যখন কারো সাথে জড়িয়ে পড়ছেন খুব ছোট একটা জিনিস তার ভালো লাগছে। যেটা সচেতন মন হয়তো চায় ও না। ফলে তার যৌক্তিক সত্তা সম্পর্কটিকে ভাষায় সংজ্ঞায়িত করতে পারছে না।

আবার অনেকেই সচেতনভাবেও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান দাম্পত্যের না পাওয়ার সুবিধাগুলি পেতে। এখানে একটা কথা স্পষ্ট, বিশ্বাসঘাতকতা একটা সচেতন সিদ্ধান্ত। / cheating is a choice. এটা কিন্তু একটি গেমে পরিণত হয়। আমরা বারবার প্রেম প্রেম খেলায় মেতে উঠি। প্রেমে পড়া, উথাল পাথাল প্রেম তারপর ভাঙ্গনের সুর, কিছু দিনের বিরতি, আবার নতুন প্রেম আবার একই চক্র।

বিশেষ করে এখন ফেসবুক প্রেম এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এটা কিন্তু মানসিক অসুস্থতার পর্যায়ে পড়ছে। যার চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহার না, নিজের চোখে আয়না ধরাটা জরুরী।

ইংরেজিতে দুটো শব্দ দিয়ে পার্থক্য করা হয়। বিবাহেতর সম্পর্ক /adultery অর্থ বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক আর ব্যভিচার / infidelity জীবন সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ততা যেটাকে প্রচলিত অর্থে চিটিং বলি।

৫ ধরনের চিটিং আছে।
১. সুবিধাবাদী (সুবিধাবাদী বিশ্বাসঘাতকতা/opportunistic infidelity): এরা সামাজিক পরিমণ্ডলের সুখি দম্পতি। জীবন সঙ্গীর প্রতি মমতাও আছে। কিন্তু হঠাৎ চান্স পেলে চিটিং করে ফেলে তারপরে নিজেকে কিছুটা দোষীও ভাবেন। আমাকে একজন বলেছিলেন, " সানজিদা, আমার স্বামী বিদেশ থেকে ফেরার সময় যত দামি মুক্তার মালা আনতেন আমি বুঝতাম তিনি তত বেশি সময় রাত কাটিয়েছেন কারো সাথে হোটেলে।"

২. বাধ্যতামূলক (কর্তব্যজনিত/ বাধ্যতামূলক অবিশ্বস্ততা, Obligatory infidelity): এর মূল ভিত্তি ভয়। অর্থাৎ যদি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কটিতে ওই মানুষটির যৌনতার দাবিকে অস্বীকার করি তবে মানুষটি আমাকে প্রত্যাখ্যান করবেন। কাজেই আমার জীবনসঙ্গীকে চিট করতে না চাইলেও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হব।। কারন আমার সম্পর্কে নির্ভরশীলতা দরকার হয়। এনাদের ডিপেন্ডেন্সি পার্সোনালিটির ইস্যু থাকে। অনিরাপদ অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল-টি শৈশব থেকে এসেছে। অনিরাপদ অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল (অনিরাপদ আবেগী সম্পর্কের ধরণ) / Insecure attachment style. বাংলায় সুন্দর একটা শব্দ আছে। ললিত লবঙ্গ লতিকা। অর্থাৎ কারো উপর আশ্রয় করেন। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব যাদের থাকে, তারা সহজেই অন্যের উপর চেপে বসেন সিন্দাবাদের দৈত্যের মতন।

৩. রোমান্টিক (রোমান্টিক অবিশ্বস্ততা /Romantic infidelity) এই দাম্পত্য সম্পর্কে সবই ঠিক থাকে কিন্তু রোমান্টিকতার ছোঁয়া নেই। ফলে জীবনসঙ্গীর প্রতি নামমাত্র ইমোশনাল বা আবেগীয় সংযুক্তি থাকে। কিন্তু তারা দায়িত্বশীল বাবা-মা অথবা জীবনসঙ্গী হিসেবে চমৎকার। বেনোজলের মতন একটু প্রেমে সে ঢুকে। এই প্রেম স্বল্প স্থায়ী।

৪. বিরোধপূর্ণ (অন্তর্দ্বন্দ্বে ভরা রোমান্টিক অবিশ্বস্ততা /Conflicted romantic infidelity) একজন মানুষ যখন একই সময়ে একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে, একাধিক ব্যক্তি কাছ থেকে প্রকৃত ভালোবাসা এবং যৌনতার আস্বাদন পান তখন এই ঘটনা ঘটে। অথচ নীতিগতভাবে জানি যে মাত্র একটি প্রকৃত প্রেম হয়। মানুষটি একাধিক এ ধরনের প্রেমের স্বাদ পাচ্ছেন। ফলে তিনি দুশ্চিন্তা ভুগছেন। এর সমাপ্তি তীব্র বেদনাদায়ক।

৫. স্মারক বা স্মৃতির রক্ষা কর (স্মরণীয় অবিশ্বস্ততা /Commemorative infidelity): এক্ষেত্রে দেখা যায় দুজনেই দাম্পত্য রক্ষায় কমিটেড বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিন্তু পারস্পরিক কোনো ভালোবাসা বা যৌন আগ্রহ নেই। কিন্তু সংসার করে যাচ্ছেন। যখন তারা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছেন, নিজেদেরকে বলছেন, “আমিও তো মানুষ, আমারও ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে তাই আমি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে যাচ্ছি!” নিজেকে জাস্টিফাই করছেন এভাবেই।

আলোচ্য ভদ্রমহিলা শেষেরটিতে জড়িয়েছেন। স্মরণীয় অবিশ্বস্ততা/ স্মৃতিমূলক অবিশ্বস্ততা; ফলে তিনি তার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে জাস্টিফাই করছেন প্রেমহীন দাম্পত্য জীবনের দোহাই দিয়ে।

এখন প্রশ্ন হল অন্যের সামনে জাস্টিফাই করা যায়। কিন্তু নিজের চোখে আয়না ধরলে তখন আমার ব্যাক্তিগত মূল্যবোধ, নৈতিকতা কি বলে? স্নানের ঘরে আমরা যেমন নগ্ন নির্জনে দাঁড়াই! মনের ঘরে আমরা তো নিজেই নিজের মুখোমুখি চোখে আয়না ধরল দাঁড়াই।

আমি ভদ্রমহিলাকে প্রশ্ন করলাম, "আপনার স্বামীকে ডিভোর্স দিচ্ছেন না কেন?"

ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন, "আমি রোজগার করতে পারিনি তাই।"

আমি, "আপনি কি কখনো রোজগার করতে চেয়েছেন? তার জন্য যে এই শ্রম দিতে হয়, কষ্ট করতে হয় সেই দায়িত্ব নিয়েছেন?"

ভদ্রমহিলা চুপ করে থাকলেন।

আমি বললাম, " বিদ্রোহ করতে গেলে বিদ্রোহ করার উপযুক্ত হতে হয়। কিন্তু সেটা নিজের মর্যাদাকে খুইয়ে না।"

ভদ্রমহিলা, " বাচ্চাদের সামনে থেকে শুরু করে তার আত্মীয়-স্বজন এবং আমার আত্মীয়-স্বজন কারো সামনেই আমার আর কোন মর্যাদা রাখেনি সে। সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ছেড়ে দিয়েছে।"

আমি, " বিবাহিত জীবনে ভালোবাসা একটু কম থাকলেও চলে। কিন্তু দাম্পত্য সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটা খুব জরুরী। পরস্পরকে শ্রদ্ধা না করলে সম্পর্কটিকে খুবই কম। আর টিকলেও সেটা অসুস্থ সম্পর্ক। আবার অন্য দিক থেকে আপনি তার কাছ থেকে সম্পূর্ণ সুবিধাটুকু নেবেন, তারপর অন্য একজনের সাথে মনোদৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হবেন! এটা আপনার জীবনের ব্যাকরণে কতটুকু মর্যাদাকর?"

ভদ্রমহিলা চুপ করে থাকলেন।

আমি বললাম, " এই নতুন ভদ্রলোক কি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন?"

ভদ্রমহিলা বললেন , "না! কিন্তু বিয়েই করতে হবে এমন কেন?"

আমি বললাম, "এটাই সমাজের নিয়ম! দেখুন বিয়ে একটা চুক্তি। আপনার দাম্পত্য শর্তে যদি এমন চুক্তি থাকে পরকীয়া করা জায়েজ; সেটা ঠিক আছে হবে যদি আপনারা দুজনে তা মেনে নেন। কিন্তু একজন মানবেন, একজন মানবেন না। তাহলে তো চুক্তি ভঙ্গ হবে।"

ভদ্রমহিলা বললেন, " আর আমার হাজবেন্ডের প্রতি যে আমার কোনো ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই!"

আমি বললাম, " আপনাকে কেউ জোর করে ভালবাসতে বলবে না! কারন সেটা অস্বাস্থ্যকর। তাহলে আপনি নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়ে শুরু করেন। আস্তে আস্তে হাজবেন্ডের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমান। বিশাল পৃথিবী। নিজের জীবনটা নিজের মতন তৈরি করতে পারেন। আপনার স্বামী এবং নতুন প্রেমিক দুই জনের আপনার প্রতি আচরণগত একটা মিলের জায়গা বলেন?"

বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপর মুখ খুললেন। খুব আস্তে আস্তে বললেন, "দুই জনই বলেন আমি খুব বোকা।"
আমার রবি ঠাকুরের একটা লাইন মনে পড়লো, "এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মিলে না! শুধু সুখ চলে যায়!"

আমি বললাম, "আর?"

ভদ্রমহিলা ঘুম থেকে জেগে ওঠা গলায় বললেন, " দুই জনেই আমাকে ডমিনেট করে!"

আমি, " আপনি কি তাহলে ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুল্লিতে পড়লেন?"

এবার অনেকক্ষণ চুপচাপ।
তারপর আস্তে আস্তে দৃঢ় কিন্তু নিচু গলায় তিনি বললেন, "হ্যা!"

আমি, " তাইলে বিকল্প কি করতে চান এখন?"

ভদ্রমহিলা, " আমি আবার পড়তে চাই।"

আমি, " সেটা চমৎকার কথা। কারণ পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত চলবে। কিন্তু কেন?"

ভদ্রমহিলা, " বহুদিন তো অন্যের পায়ে পায়ে ঘুরলাম! এবার একটু নিজের পায়ে দাঁড়াই!"

করন জোহর চমৎকার বলেছেন,"বিশ্বাসঘাতকতা সবসময়ই ছিল, কিন্তু আমার মনে হয় এটাকে গালিচার নিচে, পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হত। এখন সবাই এতে জড়িয়ে পড়েছে—আর তারা এখন ভান করা বন্ধ করে দিয়েছে যে তারা জড়িত নয়।"

পরকীয়ার নানামুখী কারণ থাকে। গবেষণায় উঠে এসেছে আন্তসম্পর্কের (interpersonal) অমিল পরকীয়ার জন্য অধিক দায়ী অন্তসম্পর্কের (interpersonal) অমিল অপেক্ষা। 1শুধু তাই নয় ব্যক্তি, সম্পর্কের সমীকরণ এবং পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়ে পরকীয়ার বিস্তৃতি ঘটে। 2 অবাক কান্ড হচ্ছে, জীবনসঙ্গীকে ক্ষতি বা হতাশ করার ইচ্ছা না থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গুলোতে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার অধিক সম্ভাবনা গবেষণায় উপলব্ধ হয়েছে। 3 এবং যেকোনো একপক্ষের এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক দিয়ে ভেঙে দিতে প্ররোচিত করে।4 যা ভুক্তভোগী জীবনসঙ্গের মধ্যে বিষন্নতা এবং হীনমন্যতার জন্ম দেয়। 5

এখন প্রশ্ন হল আমি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছি। এর উত্তরণের উপায় কি?

খুব মজার ব্যাপার হলো এলিজাবেথ কুবলার রস দুঃখ বা grief নিয়ে বিভিন্ন ধাপের কথা বলেছিলেন। এখানেও আমরা সেই ধাপগুলো ছুঁয়ে যাই।
অস্বীকৃতি (Shock /denial )
(রাগ/অবজ্ঞা (Anger/ defiance)
দরাদরি করা (Bargaining)
বিষন্নতা (Depression)
আত্মঅনুশোচনা (Remorse)
শেষ পর্যন্ত মেনে নেওয়া (Acceptance)

শুভমিতার একটা গান ছিল।
"অনেকেই বলে মরণ অনেক জীবন সে নাকি একটাই,
প্রতিবার প্রেমে নতুন জনম জীবন কি করে একটাই... "
কাজেই প্রথমেই অনুভূতিগুলোকে নিয়ে কাজ করা দরকার। পেশাগত মনোবিদের প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত নিজেকে দোষ দিবেন না। দোষ দেওয়াটা খুব সোজা। ভাবেন এই ঘটনাতে আমার অবদান কি ছিল?

তৃতীয়ত অতীতের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া অস্বাস্থ্যকর। সামনে এগোন। অতীতের ভুলগুলোকে চিহ্নিত করুন।

চতুর্থ নিজের চোখে আয়না ধরুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি কি চাই। আমি কি আবার চিট করব? নাকি করব না? কোন কোন মিথ্যা কথা বলা এবং গোপনীয়তা বজায় রাখা আমি বন্ধ করেছি?”

যারা চিট করেন একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর তারা এসে আমাদের চেম্বারে অভিযোগ করে বলেন, “আগে করছিলাম, এখন তো অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু আমার বউ বা আমার স্বামী তো ভুলে যাচ্ছেন না।“ মনে রাখতে হবে যে তারা এটা ভুলবেন না। আপনাকে বিরক্ত হওয়া মানায় না।

পঞ্চম নিজের যত্ন নিন।

ষষ্ঠ সাহায্য চাইতে ভয় পাবেন না। খুঁজে দেখুন আপনার চারপাশে কে আছে সাপোর্ট দেওয়ার। প্রয়োজনে পেশাগত সাহায্য নিন।

অবাক কান্ড হলো আমরা বিগত বছরগুলিতে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেকটুকু এগিয়েছি। কিন্তু একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ নারীকে গ্রহণ করবার মানসিকতা সমাজের সৃষ্টি করতে যতোটুকু কাজ করা দরকার ততটুকু কাজ হয় নাই। ফলে দিন শেষে নারীপুরুষের যুদ্ধ কিন্তু চলছে। 'আমি তুমি' নিয়ে যতটুকু দাম্পত্য কলহ হয় তার থেকে অনেক বেশি ঝগড়া হয় 'আমার বাড়ি তোমার বাড়ি নিয়ে।' অথচ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বৃহত্তর পরিবারের অর্থাৎ শ্বশুড়, শাশুড়ি, দেবর, ননদ, শালা, শালীর ফোড়ন কাটা যে কতটা অভদ্রতা, সেটা আমাদের সমাজ আজও বুঝে উঠতে পারেনি। ফলে বিবাহিত পুরুষটিকে আমরা ধারালো ছুরির উপরে দাঁড় করিয়ে ফেলি। মা বনাম বউ অথবা বোন বনাম বউয়ের দ্বন্দ্বে পুরুষটি অহর্নিশ পুড়তে থাকেন। কাকে খুশি করবেন এই দ্বৈরথে। সেই ধারাবাহিকতায় আজো সংসার রক্ষার দায়িত্ব অনেকটুকু বর্তায় স্ত্রীর উপরে।

"সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে!"এই আপ্ত বাক্যটি সবার মুখোমুখি থাকলেও "গুনবান পতি যদি থাকে তার সনে" কথাগুলি আমরা ভুলে যাই।

বাংলাদেশের পরকীয়া সংক্রান্ত আইন কিন্তু এখন সমালোচনার বস্তু। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে পরকীয়া সংক্রান্ত আইন দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায়, বিবাহিত ব্যক্তি যদি অন্য কোন বিবাহিত নারীর সাথে জেনেশুনে যৌন সম্পর্ক করে তা ব্যভিচার পুরুষটির পাঁচ বছরের কারা/অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান আছে।, ব্যভিচারের ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকের শাস্তির বিধান নেই। ওই স্ত্রীলোকটি যে ব্যভিচারের অপরাধে দোষী তিনি কোনো সাজা পাবেন না।

আদালত কি সব বিচার করতে পারে? সবথেকে বড় আদালত হচ্ছে নিজেকে নিজের মনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। ইদানীং আমি নিজেই কতো কম জানি সেটা বেশ বুঝতে পারি! শুধু এটুকুই বুঝি ভালোবাসা আর বিশ্বাসের ইমারত একদিন তৈরি হয় না।

যারা জীবনসঙ্গির প্রতি বিশ্বস্ত যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের জন্য সশ্রদ্ধ ভালোবাসা।

তথ্যসূত্র
1. Haseli A, Shariati M, Nazari AM, Keramat A, Emamian MH. Infidelity and Its Associated Factors: A Systematic Review. J S*x Med. 2019 Aug;16(8):1155-1169. doi: 10.1016/j.jsxm.2019.04.011. Epub 2019 Jun 10.
2. Fincham FD, May RW. Infidelity in romantic relationships. Curr Opin Psychol. 2017 Feb;13:70-74. doi: 10.1016/j.copsyc.2016.03.008. Epub 2016 Apr 30.
3. Grøntvedt T.V., Kennair L.E.O., Bendixen M. Breakup Likelihood Following Hypothetical S*xual or Emotional Infidelity: Perceived Threat, Blame, and Forgiveness. J. Relatsh. Res. 2020;11:1–9.e7.
4. Bendixen M., Kennair L.E.O., Grøntvedt T.V. Forgiving the unforgivable: Couples’ forgiveness and expected forgiveness of emotional and sexual infidelity from an error management theory perspective. Evol. Behav. Sci. 2018;12:322–335.
5. Blow A.J., Hartnett K. Infidelity in committed relati0nships II: A substantive review. J. Marital. Fam. Ther. 2005;31:217–233.
6. Pearson, Stephen & Omar, Maye & Mugweni, Esther. (2015). Concurrent sexual partnerships among married Zimbabweans – implications for HIV prevention. International Journal of Women's Health. 7. 819. 10.2147/IJWH.S88884.

21/10/2025

মারা যাবার আগে শেষবার কার মুখটা দেখতে চান?

20/10/2025
19/10/2025

আমাদের প্রত্যেকের মানসিক যন্ত্রণার ধরন বিচিত্র হলেও সেগুলোর রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাকরণ। অজস্র মানুষের যন্ত্রণা এবং তা উপশমের অভিজ্ঞতা প্রত্যেককেই শুধু ব্যক্তিগতভাবেই শক্তিশালী করে না, প্রিয়জনের সংকটে কার্যকরভাবে তার পাশে দাঁড়াবার রসদেরও জোগান দেয়।

মানসিক যন্ত্রণার কথা জানাতে ‘ফিনিক্স’ নামে একটি গ্রুপ সক্রিয় আছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। মনোসামাজিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিই এই গ্রুপের উদ্দেশ্য। ফিনিক্স হলো সেই পৌরাণিক পাখি, আগুনে পুড়েও ছাই-ভস্ম থেকে যে বারবার জেগে ওঠে নতুন জীবন ও প্রেরণা নিয়ে।

আমাদের মন যা জানে না, চোখও সেটা দেখতে পারে না। আজকের নগর সভ্যতা এবং জটিল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে আত্মরক্ষার উপায় তাই মনকে জানানো, প্রস্তুত করা। সমষ্টির মাঝে যে মনোসামাজিক সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ‘ফিনিক্স’ গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তারই মলাটবদ্ধ রূপ কাউন্সেলিং টেবিলের চিঠি গ্রন্থটি।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অফ বাংলাদেশের (পিসিএসবি) সদস্য সচিব এবং বায়োমেডিকেল জার্নাল, প্যালিয়েটিভ কেয়ার জার্নাল-এর নির্বাহী সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া বইটি রচনা করেছেন।

ড. মেহতাব খানম বাংলাদেশে মনোবিজ্ঞানের একটি জনপ্রিয় মুখ। মনোবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর লেখা যেমন বহুল পঠিত, তেমনই টেলিভিশনে নানান ধরনের মানসিক সংকট নিয়ে অধ্যাপক মেহতাব খানমের আলোচনাগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অজস্র মানসিক সংকটের বাস্তব বিবরণ ও তার সমাধান নিয়ে রচিত ড. মেহতাব খানমের গ্রন্থ ‘মন ও মানসিকতা’।

ড. মেহতাব খানম আমাদের সমাজের চলমান ঘটনা থেকেই বিভিন্ন মানসিক সমস্যার উদাহরণ টেনে বের করেন, আপাতদৃষ্টে আমাদের এড়িয়ে চলা অতি তুচ্ছ বিষয়ের মধ্য থেকেই প্রায়শ আচরণগত সমস্যাগুলোকে অবলীলায় চিহ্নিত করেন এবং এসব সমস্যা থেকে আমরা প্রথমত নিজেদের চেষ্টায় কীভাবে বেরিয়ে আসতে পারি, তার বিজ্ঞানসম্মত পথ বলে দেন। প্রয়োজনে তিনি ঘটনার আরও গভীরতর বিশ্লেষণে ব্রতী হন। সবটুকুই করেন সংক্ষেপে, সহজ-সরল ভাষায় এবং নিজস্ব স্টাইলে।

সংগ্রহ করতে আপনার ঠিকানা ও ফোন নাম্বার লিখে ইনবক্স করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে অথবা সরাসরি কল করুন +৮৮০১৯১৭৭৩৩৭৪১-এই নম্বরে।

#মানসিকস্বাস্থ্য
#ফিনিক্সগ্রুপ
#মনোসামাজিকসচেতনতা
#মানসিকযন্ত্রণারপ্রতিকার
#নতুনজীবন




19/10/2025

এই বই লেখা হয়েছে মনস্তত্ত্ব যে কোনো জটিল বিষয় নয় সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরার জন্য। মানুষের মন নির্দিষ্ট কিছু প্যাটার্ন মেনে চলে। সেই প্যাটার্নগুলো বোঝার জন্যই এই লেখা। আমি যদি আমার মনোজাগতিক সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করতে পারি, তা হলে অন্যের দিকে আঙুল না তুলে অপরের অনুভব, চিন্তা ও আচরণের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে পারব।

কাউন্সেলিং মানে উপদেশ দেওয়া নয় কিংবা সমালোচনামূলক মন্তব্য করা নয়। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা আছে -হয় উপদেশ দেওয়া, নয়তো চুপ করে কথা শুনে যাওয়া মানেই কাউন্সেলিং। কাউন্সেলিং একটি বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি।

এই বইয়ে সহজ বাংলা ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, বইটি যেন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তির চিন্তার খোরাক জোগায়। একই সঙ্গে মনস্তত্ত্বের পেশাজীবী পাঠক যদি আরেকটু গভীরে ঢুকতে চান, তার জন্য তথ্যসূত্রে বিষয়ভিত্তিক ইঙ্গিত রয়েছে। ঠিক যেন একাডেমিক না হয়েও অনেকটা সেমি-একাডেমিক একটা স্বাদ যোগ করার প্রয়াস।

প্রত্যেকটি মানুষেরই চিন্তার দক্ষতা রয়েছে। সেই ভাবনার জায়গাটিকে উসকে দেওয়াই এই বইয়ের লক্ষ্য।

Address

Mohakhali DOHS
Dhaka
1206

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Prof. Dr. Sunjida Shahriah posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Prof. Dr. Sunjida Shahriah:

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category