
15/05/2022
👁🗨👁🗨👁🗨
♠️ লিভার সিরোসিস:
সিরোসিস লিভারের একটি ক্রনিক রোগ যাতে লিভারের সাধারণ আর্কিটেকচার নষ্ট হয়ে যায়। ফলে লিভার হারায় তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস থেকে লিভারে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে। তবে এসব কোন কিছুই হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের মতো সহসা ঘটে না। সিরোসিস আক্রান্ত রোগী বহু বছর পর্যন্ত কোনো রকম রোগের লক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, ধরা যাক আমাদের লিভারটা একটা আধুনিক এপার্টমেন্ট যাতে সব আধুনিক সুযোগ সুবিধাই বিদ্যমান। এই এপার্টমেন্টের একটি কল নষ্ট থাকতে পারে কিংবা নষ্ট থাকতে পারে পুরো পানির সাপ্লাই লাইন অথবা আরো বেশী কিছু। ঠিক একইভাবে সিরোসিসেও লিভারে সামান্য কোন সমস্যা দেখা দিতে পারে কিংবা সমস্যাটি হতে পারে অনেক বড় কিছু। একটা পানির কল নষ্ট হলে যেমন এপার্টমেন্টের অধিবাসীদের কোন সমস্যা হয় না তেমনি কম্পেনসেটেড বা আর্লি সিরোসিসেও রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কোন অসুবিধা হয় না বললেই চলে। রোগের লক্ষণ আর কষ্টগুলো দেখা দেয় ডিকম্পেনসেটেড বা এ্যডভান্সড সিরোসিসে যখন ঐ এপার্টমেন্টটির নষ্ট পানি সরবারহ লাইটির মতো লিভারেও বড় ধরনের গোলযোগ দেখা দেয়।
#লিভার_সিরোসিস রোগের বেশ কয়েকটি লক্ষণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
▪️জ্বর
▪️দুর্বলতা
▪️গাঢ় প্রস্রাব
▪️পেট ফোলা
▪️ফ্যাকাশে মল
▪️ক্ষুধা না লাগা
▪️জ্ঞানীয় বৈকল্য
▪️তীব্র চুলকানি ত্বক
▪️অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস
▪️বমি বমি ভাব এবং বমি
▪️শরীরের ডান দিকে পাঁজরের নিচে ব্যথা
▪️পেটের উপরের ডানদিকে অস্বস্তি বা ব্যথা
▪️নীচের পা, গোড়ালি বা পায়ে ফোলাভাব
▪️ত্বক এবং চোখের হলুদ হয়ে যাওয়া, যা জন্ডিস নামে পরিচিত।
কিছু ক্ষেত্রে, লিভার রোগের কারণের উপর নির্ভর করে, এই লক্ষণগুলি হঠাৎ আসতে পারে। এটাও সম্ভব যে লিভার রোগে আক্রান্ত প্রায় ৫০% লোকের কোন উপসর্গ থাকবে না। দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোগটি বহু বছর না হওয়া পর্যন্ত কোনও লক্ষণ অনুভব করতে পারে না।
সিরোসিস কেন হয়?
এই তালিকাটি অনেক বড় এবং দেশভেদে সিরোসিসের কারণগুলোও বিভিন্ন। ইউরোপ ও আমেরিকায় সিরোসিসের প্রধান কারণ এ্যালকোহল আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। বাংলাদেশে প্রায় আড়াই হাজার রোগীর উপর জরীপ চালিয়ে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, এদেশে লিভার সিরোসিসের প্রধাণ কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, আর এর ঠিক পরেই রয়েছে ফ্যাটি লিভার। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ও এ্যালকোহলের স্থান বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভারের অনেক পরে।
ফ্যাটি লিভার নানা করাণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস, ডিজলিপিডেমিয়া (রক্তে চর্বি বেশী থাকা ), ওবেসিটি (মেদ-ভুড়ি), উচ্চরক্ত চাপ আর হাইপোথাইরয়ডিজম ফ্যাটি লিভারের প্রধাণ কারণ। পাশ্চাত্যে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী পরবর্তীতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন। এদেশেও ফ্যাটি লিভার জনিত লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের রোগী পাওয়া যায়।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর জ্বর হলে নিম্নলিখিত পরামর্শ দেওয়া উচিৎ:
⚫️ এন্ডোটক্সেমিয়া: এন্ডোটক্সিন সাধারণত রক্তে থাকে। হেপাটিক সিরোসিসে তারা অপর্যাপ্তভাবে লিভার দ্বারা পরিষ্কার করে। তাদের উপস্থিতি "লিমুলাস টেস্ট" দ্বারা সিস্টেমিক প্রচলনে দেখা দিতে পারে। টেস্টটি কার্যকর এবং অকার্যকর গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করার জন্য একটি সহজ পদ্ধতি। জ্বরের কারণ হলো রক্তে এন্ডোটক্সিনের উপস্থিতি।
লিভার সিরোসিসে কি খাবেন:
▪️রসুন খান
▪️জলপাই তেল
▪️আঙ্গুর খাওয়া
▪️সয়া প্রোটিন খাওয়া
▪️সবুজ শাকসবজি খান
▪️চর্বিযুক্ত মাছ খেয়ে লিভার সুস্থ রাখুন
▪️লিভার সিরোসিস এড়াতে বাদাম খান
▪️বীটের রস লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি রোধ করে
▪️সবুজ চা এবং কফি লিভারকে সুস্থ রাখতে খুবই উপকারী।
লিভার সিরোসিস প্রতিরোধের উপায়:
▪️নিয়মিত ব্যায়াম করুন
▪️মিহি শস্য থেকে দূরে থাকুন
▪️বেশি পরিমাণে মাংস খাবেন না
▪️অতিরিক্ত চিনি খাওয়া ক্ষতিকর
▪️আপনার খাওয়ার অভ্যাস উন্নত করুন
▪️ভাজা এবং মশলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন
▪️অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন
▪️ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত খাবার, দীর্ঘ সময় ধরে নন-ভেজ ডায়েট এবং নোংরা জল পান করার কারণেও এই রোগ হয়।
এটি প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিৎ। কোন কোন খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:
⚫️ শাকসবজি ও ফলমূলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া যেসব খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, তা হচ্ছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘সি’, বিটা ক্যারোটিন, কাঠবাদাম, গ্রিন টি, আনারাস, আঙুর, ভুট্টা, লাল আটা, বাদাম তেল, জলপাই, খেজুর, উদ্ভিজ তেল, ব্রোকলি প্রভৃতি।
⚫️ প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি অবশ্যই থাকা উচিত। ক্যালসিয়াম ও আঁশসমৃদ্ধ খাবারেও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। সারা দিনে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত। কারণ, পানিতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
⚫️ বিভিন্ন রকমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন বিটা ক্যারোটিন চোখের জন্য খুব উপকারী, ফ্লাভানোয়েড হার্টের জন্য ভালো।
⚫️ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের অতি বেগুনি রশ্মির কারণে যে ক্ষতি হয়, তা প্রতিরোধ করে।
⚫️ হৃদ্রোগ, চোখের বিভিন্ন রোগ, স্মৃতিশক্তিজনিত যেকোনো সমস্যা প্রতিরোধ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
⚫️ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল পড়া রোধ করে। এটি আয়রন লেভেল কার্যকরভাবে রক্ষা করে হিমোগ্লোবিনের সমতা বজায় রাখে।
সিরোসিস হলে কি করবেন?
সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোন ব্যাক্তির উচিত দ্রুত লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেয়া ও নিয়মিত ফলোআপে থাকা। এতে দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায়। পাশাপাশি সিরোসিসের কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা গেলে লিভারের খারাপের দিকে যাওয়ার ঝুকিও অনেক কমে যায়। লিভার সিরোসিস ও এর কারণগুলোর আধুনিকতম চিকিৎসা এখন এদেশেই সম্ভব। দেশেই তৈরী হচ্ছে অধিকাংশ ওষুধ। এদেশে যা নেই তা হলো লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ব্যবস্থা। প্রতিবেশী দু-একটি দেশে এ সুযোগ থাকলেও তা খুবই ব্যয়বহুল আর সঙ্গত কারণেই এদেশের সিংহভাগ রোগীর সাধ্যের অতীত। সেদিন হয়তো আর বেশী দুরে নয় যেদি এদেশেই অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সম্ভব হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে সিরোসিসের রোগীকে শনাক্ত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যেহেতু শুরুর দিকে সিরোসিসে তেমন কোন লক্ষণ থাকে না বললেই চলে, তাই রোগী আর চিকিৎসক উভয়ের সচেতনতাটা এক্ষেত্রে খুবই জরুরী।