15/05/2025
ফরয পরিমাণ ইলম না থাকলে কখনোই বিয়ে করা উচিত নয়!
অনেকেই কুফু না মিলিয়ে বিয়ে করেন — সেটা হোক সম্পদের দিক থেকে, কিংবা দীনের ইলমের দিক থেকে। অথচ একজন মানুষ যতটুকু ইলমের অধিকারী, তার সমপর্যায়ের কাউকে, বা তার চেয়ে একটু কম ইলমের অধিকারী মেয়েকে বিয়ে করাই শ্রেয়।
একজন হাফেজ ভাই সদ্য দ্বীনের পথে ফিরে আসা এক বোনকে বিয়ে করেছেন। এখন সেই বোন তার আদেশ-নিষেধ মানছেন না, এবং তিনি পর্দা করাই ইসলাম পালন বা ইসলাম শুধু সেখানেই সীমাবদ্ধ — এমন ভাবনা রাখেন। এর মূল কারণ, ফরয পরিমাণ ইলমের অভাব।
আসলে ফরয পরিমাণ ইলম না থাকলে কখনোই বিয়ে করা উচিত নয়। চলুন, সেই ফরয পরিমাণ ইলম কী কী হওয়া উচিত তা একটু বিস্তারিতভাবে জানি:
ফরযে আইন কী?
ফরযে আইন হলো এমন ইলম বা আমল, যা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ব্যক্তিগতভাবে ফরজ — মানে, এটি অন্য কেউ করে দিলে হবে না, নিজেকেই শিখতে ও পালন করতে হবে।
ফরযে আইন ইলম বলতে কী বোঝায়?
বিয়ে করার আগে একজন মুসলমানের জানা উচিত এমন কিছু ইলম আছে, যেগুলো তার ব্যক্তিগত জীবন, ইবাদত, আখলাক, ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনের জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে:
১. আকীদা বা ঈমান – সঠিকভাবে তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাত সম্পর্কে জানা।
২. তাহারা-মুজা, সালাত ও অন্যান্য ফরয ইবাদতের বিধান।
৩. হালাল ও হারাম সম্পর্কিত জ্ঞান।
৪. বিয়ের মাসায়েল – যেমন:
• মোহর নির্ধারণ
• স্ত্রীর অধিকার
• স্বামীর দায়িত্ব
• তালাক বা খোলা সম্পর্কিত শরয়ী বিধান
৫. আদর্শ পারিবারিক জীবন – কিভাবে শান্তিময় পরিবার গড়া যায় ইসলামি রীতিতে।
কেন ফরযে আইন ইলম ছাড়া বিয়ে করা উচিত নয়?
১. অজ্ঞতার কারণে অন্যায় করা হয় – স্বামী বা স্ত্রী কেউ কেউ না জেনে এমন কিছু করে বসে যা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হয়।
২. পারস্পরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় – স্বামী স্ত্রীর হক বুঝে না, স্ত্রী স্বামীর দায়িত্ব জানে না।
৩. সংসারে অশান্তি বাড়ে – কারণ ইসলামি জ্ঞান ছাড়া ইমোশন ও সংস্কারের উপর ভিত্তি করে চললে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায়।
৪. ইবাদতের সঠিকতা হারায় – অনেকেই সংসার শুরু করার পরও নামায, পবিত্রতা, সন্তানের দায়িত্বের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকে।
ইসলামি আলেমদের মতামত:
ইমাম গাযযালী (রহ.) সহ বহু বড় আলেম বলেছেন:
যে অবস্থায় যে কাজ ফরয হয়, তা জানার পরিমাণ ইলম অর্জন করাও ফরয হয়ে যায়।
যেমন, ব্যবসা করলে ব্যবসার হালাল-হারাম শিখে নেয়া ফরয, তেমনি বিয়ে করলে বিয়ের মাসায়েল জানা ফরয।
তাহলে করণীয় কী?
১. বিয়ে করার আগে ফরযে আইন ইলম শিখে নেওয়া।
২. স্ত্রী ও স্বামীর উভয় পক্ষকে এই বিষয়ে সচেতন করা।
৩. আলেমদের কাছ থেকে মাসআলা-মাসায়েল জেনে নেওয়া।
৪. বিশ্বস্ত ইসলামি বই, লেকচার, কোর্সের মাধ্যমে ইলম অর্জন করা।
মুসলিম হিসেবে জীবনযাপনের জন্য ফরজে আইন অপরিহার্য। দ্বীনদার অর্থাৎ দ্বীনের বুঝ থাকা বা আসা মাত্রই প্রথম দায়িত্ব ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জন করা। অবিবাহিত হলে বিবাহের আগে ফরযে আইন ইলম করা অপরিহার্য। অর্জনের পরই বিবাহের কথা ভাবা উচিত।
আবার, বিয়ের আগে বিয়ে নিয়ে, বিয়ের ফিকহ, দায়িত্ব, কর্তব্য, নারী-পুরুষের মনস্তত্ব, প্যারেন্টিং এসব নিয়েও পড়াশোনা করা উচিত। জীবনের যেকোনো পর্যায়ে যাওয়ার আগে তা নিয়ে জানাশোনা, প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা কর্তব্য।
বিয়েতে যেহেতু আরেকজন মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয় তাই এটা আরো সেন্সিটিভ বিষয়। সবার উচিত সচেতন থাকা যেন কোনোভাবেই জীবনসঙ্গীর উপর জুলুম না করা হয়ে যায়। এমনকি নিজে মাজলুম হলেও...
তাই সবার নিকট অনুরোধ কেউই ফরজে আইন ইলম এবং বিয়ের প্রস্তুতি ছাড়া বিয়ে করবেন না।
সংগৃহীত