26/09/2025
পূজা চলাকালীন সময়ে সতর্কতা!
ভয়ংকর অক্টোবর
পূজা চলাকালীন সময়ে দেখা যায় যে অনেকের সমস্যা বেড়ে যায়। শুধু যে পূজার সময়-ই সমস্যা বেড়ে যায় এরকম নয়, এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় রোগীদের সমস্যা বেড়ে যায়। যেমন অমাবস্যা, পূর্ণিমা, শনিবার ও মঙ্গলবার ইত্যাদি। ১৮ সেপ্টেম্বরে ২০২৪ বছরের দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণ ছিল, এসময় এক বোনের অবস্থা দেখুন—
আসসালামু আলাইকুম
কালকে চন্দ্রগ্রহণ ছিলো
দুপুরে হঠাৎ খুব অস্থিরতা বেড়ে যায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আর খুব চিতকার দিয়ে কান্না আসে আর দৌড়ে বাহিরে চলে যেতে ইচ্ছা করছে
আজকে সন্ধ্যার পর শরীর একেবারে অসার হয়ে আসে একেবারে বিছানায় নিস্তেজ হয়ে যাই আর চিক্কার দিয়ে কান্না আসছে আর দৌড়ে বাহিরে চলে যেতে ইচ্ছা করছে। পরপর 2দিন এরকম হলো।
সামনে আসছে হিন্দুদের দূর্গা পূজা। আশ্বিন মাসে ১০ দিন ধরে চলে এই পূজা উৎসব। ২ অক্টোবর ২০২৪ থেকে মহালয়া দিয়ে শুরু হবে দূর্গা পূজা। শেষ হবে ১৩ অক্টোবর। একই মাসে ১৬ তারিখ আছে লক্ষ্মী পূজা এবং ৩১ অক্টোবর হিন্দুদের অন্যতম কালীপূজা। এ যেন ভয়ংকর অক্টোবর। মুফাসসিরগণ বলেন, হিন্দু ধর্মীয় দেবতা ও মূর্তির রূপ, গঠন ও বিবরণ অনুযায়ী বুঝা যায় এরা জিন ছিলো।
গতবছর দুর্গাপূজায় অনেক ভাই-বোনদের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনেক বোন অসুস্থতায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল, সহ্য করতে না পেরে তারা কাতরাচ্ছিলেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল ভয়ংকর শত্রুর মতো, সন্তানকে নিয়ে অনেক মা ছিলেন পেরেশান। পেজ-হোয়াটসঅ্যাপে একেরপর এক ম্যাসেজ আসছিল। ওই তিক্ততার রেশ এখনো বয়ে চলছেন কত ভাই-বোন।
জাদুকরদের বিশ্বাস যে, নির্দিষ্ট দিনে বা বিশেষ বিশেষ সময়, মূহুর্তে ও দিনক্ষণের গুরুত্ব রয়েছে। যাদুকররা সাধারণত পূজা, দিন, সময়, তারকা, অমাবস্যা,পূর্নিমা ও বিভিন্ন বিষয় কেন্দ্র করে যাদু করে থাকে। এর মধ্যে কিছু তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জাদু করতে হলে জ্বীনের সাহায্য নিতে হয়। কেউ সরাসরি ইবলিসের ইবাদাত করে، কেউ তার সহকর্মী, ইফরীত, মারিদ এবং সর্দার তথা গডফাদার টাইপের জ্বীনদের ইবাদাত বা পূজা করে, কেউ ইবলিসের ইবাদাত করলেও তার সহকর্মী ও অন্যান্য জ্বীনদের পূজা করার মাধ্যমেও সাহায্য নেয় জাদু করার জন্য। তাদের পূজা করে বা তাদের জন্য ভোগ ও বলি দিয়ে জাদুকরেরা জাদু করে।
ছোট বা কম শক্তিশালী জ্বীনরাও বড় শয়তানদের পূজা করে এবং তাদের কাছে সাহায্য কামনা করে। রুকইয়াহ'র অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রায় জ্বীনই অন্য শয়তান এবং ইবলিসের কাছে সাহায্য চায়। একবার জ্বীনের এক পেশেন্টকে রুকইয়াহ করার সময় দুপুরের দিকে জ্বীন পূর্ব দিকে সিজদা দিচ্ছিল এবং আসরের পরে পশ্চিম দিকে ফিরে সিজদা দিচ্ছিল।
এর মানে হচ্ছে হাদিসে আছে যে, সকালে সূর্যোদয়ের সময় পূর্ব দিকে শয়তান সূর্যের উপস্থিত হয় আর সন্ধ্যার পর পশ্চিম দিকে, যেন শয়তান পূজারীদের ইবাদত গ্রহণ করতে পারে। আর সাহায্য গ্রহণের জন্যই দুপুরের পূর্বে মূহূর্তে পূর্ব দিকে আর আসরের পর পশ্চিম দিকে সিজদা দিচ্ছিল। এখন চিন্তা করুন জ্বীন জাদু কতটা ভয়ংকর।
জাদুকররা মনে করে তাদের দেবতা নির্দিষ্ট দিনে আগমন করে, প্রার্থনা কবুল করে, চাহিদা পূরণ করে, কল্যাণ দান করে এবং খুশি হয়। ইত্যাদি। মনে করে যে, "পূজার দিনে তার দেবতাকে খুশি করা গেলে আগামী বছর এই সময় পর্যন্ত কল্যাণ ও শুভ বহাল থাকবে।"
দূর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজা হিন্দুদের পাশাপাশি জাদুকরদের নিকটেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য জাদুকররা হিন্দুদের পূজার সময়ে জ্বীন শয়তানদের অনেক বেশি পূজা করে এবং প্রচুর পরিমাণে জাদু নবায়ন করে। ফলে জ্বীন শয়তানরা অনেক বেশি সমস্যা করে। আর আর যত নিকৃষ্ট পাপকাজ এবং যত বেশি পূজা করা যায় জাদু ততই শক্তিশালী হয় এবং জটিলতা ও তততই বৃদ্ধি পায়।
এজন্যই দেখা যায়, হিন্দুদের পূজার সময়টায় রোগীদের সমস্যা অনেক বেশি বেড়ে যায়। পূর্বে যারা রোগী ছিলো, সুস্থ হয়েছে তারা আবারও অসুস্থ হয়ে যায়। তাই এ সময় গুলোতে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
জাদু নবায়ন থেকে বাঁচতে ও পূজার সময় একজন মুমিনের করণীয় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:
১/ অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আদায় করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিন বা মাঝেমধ্যে দুই রাকাত নফল আদায় করুন।
২/ হেফাজতের দৈনন্দিন মাসনুন আমল গুরুত্বের সাথে করবেন। অতিরিক্ত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়তে পারলে আরো ভালো হবে।
৩/ মাগরিবের আগেই নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিন। যেন আজানের পর টয়লেটে যেতে না হয়।
৪/ মাগরিবের আগে প্রস্তুতি নিয়ে এসময় দোয়া করতে পারেন। এসময় দোয়া কবুল হয়।
৫/ আজানের সাথে সাথেই বা পূর্বে বিসমিল্লাহ দরজা জানালা বন্ধ করে দিন। কারণ এ সময় শয়তানরা বের হয়। প্রয়োজনে ২০-২৫ মিনিট পর খুলে দিতে পারবেন।
৬/ এ সময় বাচ্চাদের বাইরে বের হতে দিবেন না। কিছুদিন আগে একটা বাচ্চা রোগী নিয়ে তার পরিবার। মাগরিবের সময় একা বের হয়েছিল। হঠাৎ দেখে একটা মেয়ে, একটু দেখে নাই। এরপর থেকে ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে।
৭/ হেফাজতের মাসনুন আমল গুলো নিজেরা করার পর বাচ্চাদের গায়েও ফুঁ দিয়ে দিবেন প্রতিদিন।
৮/ অন্য সময়ের তুলনায় রুকইয়াহ বাড়িয়ে দিন। রাতে ঘুমানোর সময় কানের কাছে রুকইয়াহ ছেড়ে/প্লে করে রাখুন।
৯/ সমস্যা বাড়ছে বা জাদু নবায়ন হয়েছে অনুভব করলে টানা ৩/৭/১৪ দিন অবস্থাভেদে জাদু নষ্টের গোসল করবেন। সাথে জাদুর রুকইয়াহ করবেন বা এর অডিও শুনবেন।
১০/ কখনও সমস্যা বেশি মনে হলে তখন-ই রুকইয়াহ করুন। সময় না থাকলে অন্তত সূরা ফালাক ও সূরা ইউনুস এর ৮১ নং আয়াতটি কয়েকবার তিলাওয়াত করুন।
১১/ এসময় স্বপ্নে প্রসাদ বা বিভিন্ন জিনিস খেতে দেখলে নিম্নোক্ত কাজগুলো করবেন–
ক) কিছু কালোজিরা নিবেন এতে "সুরা ইয়াসিন- ৯ এবং সুরা সাবা, ৪৭-৪৮ নাম্বার আয়াত" সাতবার করে পাঠ করে ফুঁ দিবেন এবং ঘুমানো আগে এক চিমটি কালোজিরা খেয়ে নিবেন।
খ) অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে লিপজলের মতো ঠোঁটে ব্যবহার করবেন ঘুমের সময়।
গ) আর সুরা ইয়াসিন এর ৯ নাম্বার আয়াতটা কয়েকবার পাঠ করবেন।
১২/ পূজা মণ্ডপের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন।
১৩/ পূজা মণ্ডপে গমন বা তাদের ঈশ্বরের জন্য বানানো খাবার গ্রহণ করবেন না। এটা হারাম।
শেষ পরামর্শ হচ্ছে–
এই সময় সমস্যা বৃদ্ধি পেলে বা জাদু নবায়ন হয়ে মনে করলে, স্বপ্নে প্রসাদ খেতে দেখলে, সিঁদুর, গরু বা মূর্তি দেখলে অথবা জিন জাদুর অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত রুকইয়াহ শুরু করুন এবং সম্ভব হলে রাকির কাছে সরাসরি রুকইয়াহ করুন।
লেখাঃ-মুফতী দিলাওয়ার হুসাইন