17/03/2025
বর্তমানে আম মুসলিম সাথে সাথে শিক্ষিত মানুষ জানে না - তাগুতকে অস্বীকার করা কতটা জরুরি - আধুনিক এই সময় ঈমানের দাবি রক্ষা করতে হলে বড় বাঁধা হলো তাগুত। অনেক ভাই ব্রাদার নিজেকে মুসলিম মনে করে কিন্তু তাগুত পূজারী - উপলব্ধি করতে পারে না তাই।
তাগুতকে প্রতিরোধ করতে সচেতনতা আলাপ - যাহা একাডেমিক ভাবে জানা অতি অবশ্যকিয় বিষয়।
সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরলাম তাগুতকে - ঈমান আমল ঠিক রাখতে ব্যপক বিস্তৃত ভাবে জেনে নিবেন নিজ দায়িত্ব -
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে তাগুত এর ছোবল থেকে রক্ষা করুন। ( আমীন)
তাগুত শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা
تاغوت (তাগুত) শব্দটি আরবি থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ সীমালঙ্ঘনকারী, অবাধ্যতা, অত্যাচারী শক্তি বা এমন সবকিছু যা আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের উপাসনার কেন্দ্র হয়ে যায়। ইসলামী আকীদায় তাগুত বলতে সেই সকল ব্যক্তি, ব্যবস্থা বা মতবাদকে বোঝানো হয়, যা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যায়।
১. তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার কুরআনের দলিলসমূহ
(১) সূরা আল-বাকারা: ২৫৬
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُو۟لَٰئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ
অর্থ:
"আল্লাহ হচ্ছেন মু’মিনদের অভিভাবক, তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনেন। আর যারা কুফরী করে, তাদের অভিভাবক তাগুত, যারা তাদের আলো থেকে অন্ধকারে বের করে নিয়ে যায়। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।"
(২) সূরা আন-নিসা: ৬০
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ ءَامَنُوا۟ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓا إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوٓا أَن يَكْفُرُوا۟ بِهِۦ ۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيْطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَٰلًۭا بَعِيدًۭا
অর্থ:
"আপনি কি দেখেননি তাদের, যারা দাবি করে যে, তারা আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তা বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা চায় তাগুতের কাছে বিচার নিতে, অথচ তাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে? আর শয়তান চায় তাদেরকে দূরপ্রসারী ভ্রষ্টতার মধ্যে ঠেলে দিতে।"
(৩) সূরা আন-নাহল: ৩৬
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِى كُلِّ أُمَّةٍۢ رَّسُولًا أَنِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱجْتَنِبُوا۟ ٱلطَّٰغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ ٱلضَّلَٰلَةُ ۚ فَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلْمُكَذِّبِينَ
অর্থ:
"আমি প্রত্যেক উম্মতের কাছে এক রাসূল পাঠিয়েছি (এ বলে) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে দূরে থাকো। অতঃপর তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন যাকে আল্লাহ হিদায়াত দিয়েছেন, আবার কেউ ছিলেন যাদের ওপর ভ্রষ্টতা অবধারিত হয়েছিল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের পরিণাম কী হয়েছে।"
২. তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে সহীহ হাদিস
(১) হাদিস:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
"যে ব্যক্তি বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করে, সে এমন এক দড়ি ধরে নিয়েছে যা কখনো ছিঁড়বে না।"
📚 (সহীহ মুসলিম: ১৮৪৪)
(২) হাদিস:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
"যে ব্যক্তি তাগুতের অনুসরণ থেকে মুক্ত থাকে এবং আল্লাহর একত্ববাদ গ্রহণ করে, সে প্রকৃত ঈমানদার।"
📚 (মুসনাদ আহমাদ: ৩৭০২)
(৩) হাদিস:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
"ইসলাম সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে যে, তুমি আল্লাহর একত্ববাদ গ্রহণ করবে এবং তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করবে।"
📚 (সুনান আন-নাসাঈ: ৪৭২৫)
৩. তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার গুরুত্ব ও আমাদের দায়িত্ব
১. তাগুতকে প্রত্যাখ্যান না করলে ঈমান পূর্ণ হয় না:
যদি কেউ আল্লাহর ইবাদত করার পাশাপাশি তাগুতকে অনুসরণ করে, তবে তার ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে না।
২. তাগুত বিভিন্ন রূপে আসতে পারে:
তাগুত শুধু মূর্তি বা মিথ্যা দেব-দেবী নয়, বরং যে কোনো ব্যক্তি, মতবাদ, আইন বা প্রতিষ্ঠান যা মানুষকে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়, তা তাগুতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
৩. মুসলমানদের জন্য ফরজ:
একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য শুধু আল্লাহর ইবাদত করা যথেষ্ট নয়, বরং তাকে তাগুতকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করতেও হবে।
শেষকথা --
তাগুতকে অস্বীকার করা ঈমানের একটি মৌলিক শর্ত। কেউ যদি আল্লাহর ইবাদত করে কিন্তু তাগুতকে অস্বীকার না করে, তাহলে তার ঈমান পূর্ণ হবে না। কুরআন ও হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, তাগুত থেকে দূরে থাকা এবং তা প্রত্যাখ্যান করা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। আমরা যেন সর্বদা তাগুতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করি এবং আল্লাহর একত্ববাদকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করি।
আল্লাহ আমাদের তাগুত থেকে রক্ষা করুন এবং প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে জীবনযাপন করার তাওফিক দিন, আমীন।