09/07/2025
🌦🌧☔🌂🌈🌩🌞🌤⛅
#মৌসুমি_আবহাওয়ায়_চর্মরোগঃ
🌹 মনোরম বর্ষার আবহাওয়া সবার মনকে আবেগী বা রোমাঞ্চিত করলেও, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা এই বৃষ্টিপাতের মাসগুলিতে সাধারণত রোগীদের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন কিছু চর্ম রোগের সমস্যা। সচরাচর পাওয়া কয়েকটি ত্বকের সমস্যা নিয়ে আজ লিখবো। সাথে কিছু দরকারী ত্বকের যত্নের টিপস থাকবে।
গ্রীষ্ম থেকেই, আমরা আর্দ্র এবং ঘামযুক্ত জলবায়ুর অভিজ্ঞতা শুরু করি। শরীরের ত্বকের ভাঁজগুলি যেমন বগল, উরুর মাঝখানে, কোমরের কাপড়ের ভাঁজে, বুকে, গোপন অঙ্গে, পায়ের আঙ্গুলের মাঝে থাকে গরম, আর্দ্র এবং ঘামযুক্ত পরিবেশ। যাতে দেখা দেয় বেশ কিছু চর্ম রোগের প্রকোপ।
যেমনঃ
১. ছত্রাক সংক্রমণ বা ফাঙাল ইনফেকশন (Taenial infection)
এক্ষেত্রে চামড়ার ভাঁজ যুক্ত স্থান গুলোতে গোল গোল চাকার মতো, কখনো কালো বা সাদা দাগের মতো হয়, যা খুব চুলকায়।
২. ডার্মাটাইটিস বা ত্বকের প্রদাহ (Eczema/ Dermatitis)।
এক্ষেত্রে হাতে ও শরীরের অন্যান্য স্থানে ঘা এর মতো হয়।
৩. চামড়া বা আঙুলের ফাঁকে ইনফেকশন (Intertrigo)
৪.স্ক্যাবিস (scabies) ইত্যাদি।
💊চিকিৎসাঃ
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ত্বকের অবস্থা দেখে রোগ নির্ধারণ করেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। যেমনঃ
১. ত্বকে লাগানোর ও মুখে সেবনের জন্য এন্টি ফাঙাল ও এন্টিবায়োটিক।
২. ডার্মাটাইটিস বা একজিমার জন্য বিভিন্ন পটেন্সির স্টেরয়েড
৩. এন্টি ফাঙাল পাউডার
৪. এন্টি ফাঙাল ও এন্টিবায়োটিক যুক্ত সাবান
৫. চুলকানি রোধের জন্য এন্টিহিস্টামিন ইত্যাদি।
৬. সাথে ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগ থাকলে তার চিকিৎসা।
🚫যেসব কারণে এই রোগ গুলো বাড়তে পারে তা হলোঃ
১. প্রতিদিন নিয়মিত গোসল না করা, যথাযথ পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা।
২.বেশ কয়েক ঘন্টা জুতা এবং মোজা পরার কারণে পায়ের পাতা আর্দ্র, ঘামযুক্ত এবং গরম হয়ে থাকে।
ত্বক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেনা, এমন সিন্থেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি জুতা এবং মোজা পরলে তা সঠিকভাবে ঘাম শুষে নিতে পারে না এবং এর ফলে পায়ের ত্বক ঘাম ধরে রাখে। এতে পায়ের আঙুলে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়।
৩. শক্ত, মোটা, সিন্থেটিক পোশাক পরলে একইভাবে শরীরের ত্বক শ্বাস নিতে পারেনা বা ঘামের বাষ্প বের হতে দেয় না। ফলে দেখা দেয় টিনিয়াসিস বা ফাঙাল ইনফেকশন।
৪. গৃহকর্মী, শ্রমিক, কৃষদের মতো যারা নিয়মিত পানিতে হাত ও পা ভেজান, তাদের এসব রোগ বেশি হয়।
৫. স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য ইমিউনো কম্প্রোমাইজড (যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) রোগিদের এই ঝুঁকি বেশি। এমন রোগীদের সাথে বা সংক্রমণ রয়েছে এমন কারও সাথে কাপড় ভাগাভাগি করলে অন্যদেরও এ ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।
📌কীভাবে আমরা এগুলি প্রতিরোধ করব?
১. নিয়মিত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং ঘাম শুষে নিতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করে চামড়ার ভাঁজযুক্ত জায়গা শুষ্ক রাখুন।
২. চামড়ায় ঘাম কম হয়, ঠান্ডা পদার্থের স্যান্ডেল, সুতির খোলা জুতা ও সুতির মোজা পরুন।
৩. দীর্ঘক্ষণ জুতা মোজা পরে থাকতে হলে কয়েক ঘন্টা পর পর খুলে কিছুক্ষণ পায়ে বাতাস লাগান বা পা একটু ধুয়ে শুকিয়ে নিন। আজকাল সব অফিসেই ওজুর জায়গা থাকে। তাই নিয়মিত নামাজ পরলে ওজুর উছিলায় পাও ধোয়া হয়ে যায়।
৪. সুতির পাতলা ঢিলেঢালা পোষাক ও সুতির অন্তর্বাস পরুন।
৫. অন্তর্বাস প্রতিদিন ধোবেন এবং প্রতিদিন একবার পাল্টাবেন।
৬. ডায়াবেটিসের মতো অন্যান্য অটোইমিউন রোগ, যেমন, থাইরয়েডের রোগ, টিউবারকুলোসিস থাকলে তা চিকিৎসা করুন।
৭. পরিবারের সমস্ত আক্রান্ত ব্যক্তিদের একই সময়ে চিকিৎসা করা উচিত যাতে তারা তাদের সংক্রমণ একে অপরকে আক্রান্ত করতে না পারে।
৮. কাপড় বা তোয়ালে ভাগাভাগি করবেন না। সবাই যার যার নিজের ব্যক্তিগত আলাদা কাপড় ব্যবহার করবেন।
৯. হাতের আঙুলের ফাঁকে বা হাতে চর্মরোগ হলে গ্লাভস ব্যবহার করুন। ডিটারজেন্ট, সাবান, ছাঁই ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
এসময় চুলকানি থেকে নিস্তারের জন্য সবচেয়ে বড় যে ভুলটা আমরা করি, তা হলো গরম পানি ও ডেটল সেভলন ইত্যাদি ব্যবহার করি। যা সম্পূর্ণ ভুল। গরম পানি ও ডেটল সেভলন ফাঙাল ইনফেকশন বাড়িয়ে দেয়। তাই এ সময় এসব ব্যবহার পুরোপুরি নিষেধ। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা নির্বাচিত এন্টিফাঙাল ও স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
১০. চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ তাঁর চিকিৎসা পত্রে যে এন্টি-ফাঙ্গাল বা এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ঔষধগুলি ব্যবহারের জন্য দিবেন, সেগুলো যেন চুলকানি একটু কমে এলে, মাঝপথে বন্ধ করে না দিই। সংক্রমণের সম্পূর্ণ সমাধানের জন্য এবং পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি কমানোর জন্য পুরো কোর্সটি অবশ্যই শেষ করা উচিৎ।
১১. অতিরিক্ত ঘামের সমস্যার জন্য, অ্যান্টি-পার্সপিরেন্ট লোশনগুলো বা রোল অন গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।।
©ডাঃ নুসরাত সুলতানা।।