25/02/2025
মানুষের মাঝে সম্পর্ক এবং মাহরাম আত্মীয়তা তিন ধরনের হয়ে থাকে।
১.নসব তথা বংশীয় সম্পর্ক।
২.রেযা’আত তথা দুধ সম্পর্ক।
৩.মুসাহারাহ তথা বৈবাহিক সম্পর্ক।
বিবাহের মাধ্যমে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাকে বলা হয় মুসাহারাত, যেমন শশুর-শাশুরী এবং তাদের
উর্ধতন-নিম্নতন অর্থাৎ তাদের পিতা-মাতা,এবং স্ত্রীর কন্যা/স্বামীর ছেলে ইত্যাদি। এই আত্মীয়দের সাথে সম্পৃক্ত হুরমত কে হুরমতে মুসাহারাত বলা হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা’য়ালা বংশগত এবং বৈবাহিক উভয় প্রকারের আত্মীয়দের সম্মান করার হুকুম দিয়েছেন।
ইরশাদ ফরমান,
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا [الفرقان: 54]
আর তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; তারপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। (সুরা ফুরকান ৫৪)
হুরমতে মুসাহারাতের এই চার সবব তথা কারণের কিছু আছে এমন যার ব্যাপারে সকল ইমামগণ একমত পোষন করেছেন, আর কিছুর ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
১.সহীহ বিবাহ; এরপর সর্বসম্মতিক্রমে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে যায়।
فحرمۃ المصاہرۃ تثبت بالعقدالصحیح بدون کلام(عبدالرحمن الجزیری ،الفقہ علی المذاہب الاربعۃ ،دارالکتب العلمیۃ ، بیروت ،طبع ثانی
২.সহবাস; সহীহ বিবাহের পর সহবাসের মাধ্যমে হুরমত প্রমানিত হয়ে যায়,এবং ব্যভিচারের মাধ্যমে সহবাসের দ্বারাও হানাফি, হাম্বলী,এবং এক বর্ণানামতে ইমাম মালেকের নিকটও হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে যায়। আর শাফেয়ী ও মালেকী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মতামত হলো ব্যভিচার দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয় না।
ہو:ومناط التحریم عند الحنفیۃ و الحنابلۃ الوطء حلالا کان او حراما(الموسوعۃ الفقہیۃ الکویتیۃ،وزارۃ الأوقاف والشؤن الأسلامیۃ الکویت،۱۴۲۷،۳۶/۲۱۴)۔
৩-৪. স্পর্শ ও নজর; কামভাবের সাথে স্পর্শ এবং কামভাবের সাথে লজ্জাস্থানের ভিতরের অংশ দেখার দ্বারা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে যাবে।
تثبت حرمۃ المصاہرۃ بالزنا والمس والنظر بدون نکاح والملک وشبہتہ لان المس والنظرسبب داع الی الوطء فیقام مقامہ احتیاطا ( الفقہ الاسلامی و ادلتہ ۹/۶۶۳۰)
সহীহ বিবাহ,বা ফাসেদ এবং বাতিল বিবাহের পর সহবাসের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে যায়। তবে এর জন্য নিম্নোক্ত কয়েকটি শর্ত রয়েছে,
১.সহবাসকৃতা জিবীত হতে হবে।
২.সহবাসকৃতা কামভাবের অধিকারীনী হতে হবে,বা তার বয়স কমপক্ষে ৯ বছর হতে হবে। এবং বৃদ্ধা নারীগণও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
৩.এমনিভাবে পুরুষও বালেগ হতে হবে অথবা সাবালেগ হতে হবে। গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী তার বয়স কমপক্ষে ১২ বছর হতে হবে।
৪.সহবাস হতে হবে সামনের দিক দিয়ে, পিছন দিক দিয়ে নয়।
یشترط فی الوطء ثلاتۃ امور ،ان تکون الموطوء ۃحیۃ و ان تکون مشتہاۃ وہی من کان سنہا تسع سنین فاکثر و الشرط الثالث ان یکون الوطء فی القبل (عبدالرحمن الجزیری ،الفقہ علی المذاہب الاربعۃ ۴/۶۲)
স্পর্শের দ্বারা হুরমতে মুসাহারাত..
শশুর তার ছেলের বউকে বা জামাই তার শাশুড়ী কে স্পর্শ করলে নিন্মের শর্ত গুলো পাওয়া গেলে হুরমতে মুসাহারাত সাবেত হয়ে যাবে।
সে ক্ষেত্রে শশুরের ছেলের জন্য ছেলের বউ এবং জামাই এর জন্য শাশুড়ির মেয়ে হারাম হয়ে যাবে।
১–সরাসরি খালি গায়ে বা এমন কাপড়ের উপর দিয়ে মেয়েকে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়। যদি এমন মোটা কাপড় পরিধান করে থাকে যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভূত না হয়, তাহলে নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।
فى الدر المختار- أو لمس ) ولو بحائل لا يمنع الحرارة
وقال ابن عبدين- ( قوله : بحائل لا يمنع الحرارة ) أي ولو بحائل إلخ ، فلو كان مانعا لا تثبت الحرمة ، كذا في أكثر الكتب (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/107-108)
২–স্পর্শ করলে পুরুষ মহিলা যেকোন একজনের উত্তেজনা অনুভুত হওয়া।
পুরুষের উত্তেজনা অনুভূত হওয়ার লক্ষণ হল গোপনাঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।
আর মহিলার উত্তেজনা হল মানসিকভাবে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া।
وفى رد المحتار- قوله (بش**ة) اي ولو من احدهما،
وفى الدر المختار- وحدها فيهما تحرك آلته أو زيادته به يفتى
وفي امرأة ونحو شيخ كبير تحرك قلبه أو زيادته (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/107-109)
৩–স্পর্শ করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। যদি স্পর্শ করার সময় কেউ উত্তেজিত না হয়, তাহলেও নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে না। সেই সাথে স্পর্শ করার শেষে, হাত ছেড়ে দেওয়ার পর যদি উত্তেজনা অনুভূত হয় তাহলেও নিষিদ্ধতার সাব্যস্ত হবে না।
وفى الدر المختار- والعبرة للش**ة عند المس والنظر لا بعدهما
وفى رد المحتار- ( قوله : والعبرة إلخ ) قال في الفتح : وقوله : بش**ة في موضع الحال ، فيفيد اشتراط الش**ة حال المس ، فلو مس بغير ش**ة ، ثم اشتهى عن ذلك المس لا تحرم عليه (رد المحتار-كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/108)
৪–স্পর্শ করার পর উদ্ভূত উত্তেজনা স্থীর হওয়ার পূর্বেই বীর্যপাত না হতে হবে। যদি উত্তেজনা হওয়ার সাথে সাথেই বীর্যপাত হয়ে যায়, তাহলেও নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।
وفى الدر المختار- هذا إذا لم ينزل فلو أنزل مع مس أو نظر فلا حرمة به بفتى
وفى رد المحتار- قوله : فلا حرمة ) لأنه بالإنزال تبين أنه غير مفض إلى الوطء هداية .
قال في العناية : ومعنى قولهم إنه لا يوجب الحرمة بالإنزال أن الحرمة عند ابتداء المس بش**ة كان حكمها موقوفا إلى أن يتبين بالإنزال ، فإن أنزل لم تثبت ، وإلا ثبت(الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/109
৫–মহিলার বয়স ৯ বছর থেকে কম না হতে হবে। আর পুরুষের বয়স ১২ বছর থেকে কম না হতে হবে। {হুরমতে মুসাহারাত-১৯}
৬–যদি স্পর্শকারী মহিলা হয়, আর উত্তেজনা হওয়ার দাবি করে, আর স্বামীর এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় যে, স্ত্রী সত্য বলছে, বা স্পর্শকারী পুরুষ হয় ও উত্তেজনার দাবি করে, তাহলেও তার সংবাদের উপর স্বামীর প্রবল ধারণা হয় যে, লোকটি সত্য বলছে, তাহলে নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে নতুবা নয়। কেননা স্ত্রী এ দাবি করার মাধ্যমে স্বামী থেকে বাঁচতে চাচ্ছে, তাই স্বামীর সত্যায়ন জরুরী, তাছাড়া যদি দুই জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয় যে, স্পর্শ করার সময় উত্তেজনা ছিল তাহলে স্বামীর সত্যায়নের কোন প্রয়োজন নেই। {ইমদাদুল ফাতওয়া-২/৩২০, হুরমতে মুসাহারাত-১৯}
এই নিয়মের ভিত্তিতে একটা মাসয়ালাঃ
আপন মেয়েকে বাবা যদি সাহওয়াতের সাথে স্পর্শ করে এবং তার উষ্ণতা অনুভব করে তাহলে মেয়ে মা (বউ) মেয়ের বাবার জন্য হারাম হয়ে যাবে। (আদ-দুররুল মুখতার 4/112,, ফাতাওয়া হিন্দিয়া 1/340; আল বাহরুর রায়েক 3/177)
দৃষ্টিপাতের দ্বারা হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তগুলো প্রযোজ্য হবে।
১- দৃষ্টিপাতটি হতে হবে মহিলা পুরুষের আর পুরুষ নারীর সরাসরি শরীরের দিকে। ছবি বা ভিডিও বা কারো অবয়বের পুতুল হলে হবে না।
২- দৃষ্টিটি নিবদ্ধ হতে হবে মহিলার লজ্জাস্থানের খানিকটা ভিতরাংশে। শুধু উপরের অংশ দেখার দ্বারা হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে না। আর পুরুষের ক্ষেত্রে শুধু লজ্জাস্থান দেখার দ্বারাই হুরমত সাবেত হবে।
৩- দৃষ্টি নিবদ্ধের সময় শারিরিক উত্তেজনা অনুভূত হতে হবে। পরে বা আগে হলে হবে না।
৪- যার লজ্জাস্থান দেখছে সে জীবিত হতে হবে। মৃত হলে হুরমত সাব্যস্ত হবে না।
৫- দৃষ্টি নিবদ্ধের সাথে সাথেই বীর্যপাত না হতে হবে। বীর্যপাত হয়ে গেলে হুরমত সাব্যস্ত হবে না।
৬- মেয়ের বয়স কমপক্ষে ৯ বছর আর ছেলের বয়স কমপক্ষে ১২ বছর হতে হবে।
أخبرنا أبوحنیفة، عن حماد، عن إبراهیم، قال: إذا قبل الرجل أم أمرأته أو لمسها من ش**ةٍ حرمت علیه امرأته، أخرجه محمد في الحجج ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۱)
أخبرنا إسماعیل بن عیاض، حدثنا سعید بن أبی عروبة، من قیس بن سعید، عن مجاهد في الرجل یفجر بالمرأة قال: إذا نظر إلی فرجها فلا یحله له أمها ولا بنتها، أخرجه محمد في الحجج أیضًا ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۲
(لا) تحرم (المنظور إلى فرجها الداخل) إذا رآه (من مرآة أو ماء) لأن المرئي مثاله (بالانعكاس) لا هو (هذا إذا كانت حية مشتهاة) ولو ماضيا (أما غيرها) يعني الميتة وصغيرة لم تشته (فلا) تثبت الحرمة بها أصلا كوطء دبر مطلقا وكما لو أفضاها لعدم تيقن كونه في الفرج ما لم تحبل منه بلا فرق بين زنا ونكاح.(رد المحتار-4/108-109
وفى الدر المختار- هذا إذا لم ينزل فلو أنزل مع مس أو نظر فلا حرمة به بفتى
وفى رد المحتار- قوله : فلا حرمة ) لأنه بالإنزال تبين أنه غير مفض إلى الوطء هداية .
قال في العناية : ومعنى قولهم إنه لا يوجب الحرمة بالإنزال أن الحرمة عند ابتداء المس بش**ة كان حكمها موقوفا إلى أن يتبين بالإنزال ، فإن أنزل لم تثبت ، وإلا ثبت (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/109
উপরোল্লিখিত ৬টি শর্ত পাওয়া গেলে দৃষ্টিপাতের দ্বারাও হুরমাতে মুসাহারাত তথা বৈবাহিক সম্পর্কের দরূন আজীবন বিবাহ হারাম হওয়ার নীতি কার্যকর হবে দৃষ্টিপাতকারী পুরুষ ও মহিলার মাঝে।
আর যদি কোনো একটি শর্ত না পাওয়া যায় তাহলে হুরমাতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে না। তবে তা কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত নয়।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বেচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
Creadit By M***i Mahmudul Hasan Tuhin