05/10/2025
আমরা যা খাই তাই কি চিনি হয়ে যায়?
প্রশ্নটি অনেকের মনেই ঘুরতে থাকে। আসল কথাটা হলোঃ আমাদের দেহ শক্তির জন্য গ্লুকোজ (এক ধরনের চিনি) ব্যবহার করে। আমরা কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি, চিনি) খেলে সেটা সরাসরি গ্লুকোজে পরিণত হয়, এটা সবারই জানা।
কিন্তু আসল বিস্ময়টা হলো এইখানে!
শরীর শুধু কার্বোহাইড্রেটই নয়, বরং অতিরিক্ত প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডিম) এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্যাট থেকেও একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ তৈরি করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার নাম "গ্লুকোনিওজেনেসিস" (Gluconeogenesis)।
তাহলে কি প্রোটিন-ফ্যাট খাওয়াও বন্ধ করতে হবে?
মোটেই না! এটা ভয় পাওয়ার কোনো বিষয় নয়। এই প্রক্রিয়াটি শরীরের একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় কাজ। সমস্যা হয় তখনই, যখন মোট খাবারের পরিমাণ আমাদের শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়।
সহজভাবে বললেঃ
- আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খান, তা সরাসরি চিনিতে পরিণত হবে।
- আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন খান, তাহলে তার একটা অংশও শরীর চিনিতে রূপান্তরিত করতে পারে।
- অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবারই হলো সমস্যার মূল কারণ।
তাহলে সমাধান কি? কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
১) সুষম খাদ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণঃ
- শুধু ভাত-রুটি কমিয়েই প্রোটিন বেশি খাবেন না। ভাত/রুটি, শাকসবজি, প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট – এই চারটিরই একটি ব্যালেন্স ডায়েট তৈরি করুন।
২) কার্বোহাইড্রেট বুঝে-শুনে পছন্দ করুনঃ
- সাদা ভাত-ময়দার বদলে লাল আটা, যব, ব্রাউন রাইস, ডাল জাতীয় জটিল কার্বোহাইড্রেট খান। এগুলো ধীরে ধীরে ভাঙে, ফলে রক্তে চিনি দ্রুত বাড়ে না।
৩) প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ
- প্রোটিন খুব জরুরি, কিন্তু একবেলা হাফ কেজি মাংস খেয়ে ফেলবেন না। প্রতিবার খাবারে একটি মুঠোর সমান প্রোটিন (এক টুকরো মাছ/মাংস, এক কাপ ডাল) রাখাই যথেষ্ট।
৪) স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খানঃ
- বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল, ইত্যাদি থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খান। এগুলো রক্তে চিনি দ্রুত বাড়ায় না এবং পেট ভরা রাখে।
৫) খাবারের প্রকৃতি ও সময় মেনে চলুনঃ
- প্রথমে সালাদ বা সবজি, তারপর প্রোটিন, সবশেষে কার্বোহাইড্রেট (ভাত/রুটি) খান। এতে রক্তে চিনির বৃদ্ধি ধীর গতির হবে।
- রাতের খাবার কিছুটা হালকা রাখুন।
৬) নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুনঃ
- ব্যায়াম আপনার শরীরকে আরও কার্যকর উপায়ে ইনসুলিন ব্যবহার করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে থাকে। খাওয়ার পরে ১৫-২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।
মনে রাখবেনঃ আমাদের শরীর একটি অদ্ভুত যন্ত্র, এটা প্রয়োজন হলে এক উপাদান থেকে আরেক উপাদান তৈরি করবেই। আমাদের কাজ হলো শরীরের ওপর মোট ক্যালরির অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া। পরিমিত ও সুষম খাবার-ই হলো সকল সমস্যার সমাধান।
সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
Collected from Saifuddin Ikram sir Post..