21/08/2025
ট্রমা
ট্রমা হলো গভীর মানসিক আঘাত, যা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বা চাপপূর্ণ ঘটনার কারণে তৈরি হয়। এটি মানুষের চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করতে পারে। দুর্ঘটনা, সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা শৈশবের কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকে ট্রমা সৃষ্টি হয়। সময়মতো সমর্থন ও থেরাপি না পেলে এটি মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলে।
ট্রমার লক্ষণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণভাবে কয়েকটি লক্ষণ বেশ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। মানসিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ভয়, উদ্বেগ, দুঃস্বপ্ন, অস্থিরতা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, মনোযোগের ঘাটতি এবং অতীত ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাক। শারীরিক লক্ষণ হিসেবে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অনিদ্রা, অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড় করা বা হঠাৎ ভয় পাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক সময় মানুষ ট্রমার কারণে সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যায়, একাকিত্ব বেছে নেয় বা নিজেকে অসহায় মনে করে। গুরুতর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং জীবনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। এসব লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এ রূপ নিতে পারে।
ট্রমার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। ভয়াবহ দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, সহিংসতা, শারীরিক বা যৌন নির্যাতন, শৈশবে অবহেলা বা গভীর মানসিক আঘাতজনিত অভিজ্ঞতা ট্রমার জন্ম দেয়। প্রিয়জনকে হারানো, সম্পর্ক ভাঙন বা গুরুতর অসুস্থতাও এর কারণ হতে পারে। এসব ঘটনার তীব্র মানসিক চাপ মস্তিষ্কে গভীর ছাপ ফেলে, যা দীর্ঘমেয়াদে ট্রমার রূপ নেয়।
ট্রমা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে মানসিক সচেতনতা এবং সঠিক মানসিক সহায়তা খুবই জরুরি। প্রতিরোধের জন্য শিশুদের নিরাপদ পরিবেশে বড় করা, সহিংসতা এড়িয়ে চলা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল শেখানো এবং পারিবারিক ও সামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সময়মতো কাউন্সেলিং, সহমর্মিতা ও নিরাপদ পরিবেশ দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর।
ট্রমার ক্ষেত্রে সহায়ক কিছু সাইকোলজিক্যাল টেকনিকের মধ্যে রয়েছে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT), যা নেতিবাচক চিন্তা ও বিশ্বাস পরিবর্তনে সাহায্য করে। অতীত ট্রমাটিক স্মৃতিকে নতুনভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে কার্যকর। এছাড়া মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এক্সারসাইজ ও গ্রাউন্ডিং টেকনিক রোগীকে বর্তমানের সাথে যুক্ত থাকতে সাহায্য করে, যাতে সে অতীতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি থেকে মুক্তি পায়। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের মানসিক সমর্থনও দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রমার চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর হলো সাইকোথেরাপি, বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) ও আই মুভমেন্ট ডিজেন্সিটাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রসেসিং (EMDR)। নিয়মিত কাউন্সেলিং রোগীকে তার ভয় ও কষ্ট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রয়োজনে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মেডিটেশন, রিলাক্সেশন টেকনিক, শারীরিক ব্যায়াম ও পরিবার-বন্ধুর সমর্থন ট্রমা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
#কাউন্সেলিং #সাইকোলজি #থেরাপি #ট্রমা