17/07/2025
পিত্তথলিতে পাথর কি? এর কারণ এবং এর চিকিৎসা
পিত্তথলিতে পাথর (Gallstones বা Cholelithiasis) হলো পিত্তথলির (Gallbladder) ভিতরে জমে থাকা কঠিন বস্তু, যা সাধারণত কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন বা ক্যালসিয়াম লবণের মিশ্রণে তৈরি হয়। এটি মার্বেলের মতো ছোট হতে পারে, আবার কখনও কখনও বড় হতে পারে। অনেক সময় একাধিক পাথরও তৈরি হয়।
🔍 পিত্তথলিতে পাথরের কারণ:
১. কোলেস্টেরলের অতিরিক্ত মাত্রা:
পিত্তের মধ্যে যদি অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমে যায় এবং তা দ্রবীভূত না হয়, তাহলে তা পাথর তৈরি করতে পারে।
২. বিলিরুবিনের অতিরিক্ত পরিমাণ:
যকৃত (লিভার) যদি বেশি বিলিরুবিন তৈরি করে (যেমন: হিমোলিটিক অ্যানিমিয়া বা লিভারের অসুখে), তাহলে তা পাথর তৈরির কারণ হতে পারে।
৩. পিত্তথলি সঠিকভাবে খালি না হওয়া:
পিত্তথলি যদি পুরোপুরি খালি না হয়, তাহলে পিত্ত জমে থেকে পাথর তৈরি করতে পারে।
৪. অনিয়মিত খাবার খাওয়া বা দীর্ঘ সময় না খাওয়া:
অনিয়মিত ডায়েট বা দীর্ঘ সময় উপবাস থাকার ফলে পিত্ত জমে থাকতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ওজন বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
এই দুটি অবস্থাই পিত্তে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
৬. জিনগত প্রভাব:
পরিবারে কারও আগে পিত্তপাথরের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
⚠️ লক্ষণ (যদি থাকে):
পেটের ডানদিকে বা মাঝখানে তীব্র ব্যথা (বিশেষ করে খাওয়ার পরে)
বমি বা বমিভাব
হজমে সমস্যা
জ্বর বা জন্ডিস (যদি সংক্রমণ হয়)
অনেক সময় আবার কোনো উপসর্গই থাকে না, তখন একে বলা হয় "Silent Gallstones"।
🩺 চিকিৎসা:
১. ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা (প্রাথমিক অবস্থায়):
Ursodeoxycholic acid জাতীয় ওষুধ দিয়ে ছোট পাথর গলানোর চেষ্টা করা হয়। তবে এটি ধীর প্রক্রিয়া এবং সবসময় সফল হয় না।
২. অপারেশন (সার্জারি):
Cholecystectomy (পিত্তথলি কেটে ফেলা): এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকর পদ্ধতি। দুই ধরনের অপারেশন হয়:
ল্যাপারোস্কোপিক চোলেসিস্টেকটমি (keyhole surgery): ছোট কাটা দিয়ে ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশন।
খোলা অপারেশন (Open surgery): যদি জটিলতা থাকে বা বড় পাথর হয়।
৩. অন্য চিকিৎসা:
ESWL (Extracorporeal Shock Wave Lithotripsy): শব্দ তরঙ্গ দিয়ে পাথর ভেঙে ফেলা। তবে এটি সীমিতভাবে ব্যবহৃত হয়।
✅ প্রতিরোধে করণীয়:
নিয়মিত ও পরিমিত খাওয়া
ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম খাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
প্রচুর পানি পান করা
নিয়মিত ব্যায়াম
আপনি যদি সন্দেহ করেন যে আপনার পিত্তপাথর হতে পারে, তবে আল্ট্রাসনোগ্রাফি (USG) করিয়ে নিশ্চিত হওয়াই ভালো।