24/11/2023
আল্লাহ মানবদেহে এমন বিস্ময়কর ব্যবস্থা তৈরি করে রেখেছেন যে যখন যন্ত্রণা, অস্বাভাবিকতা কিংবা অস্বস্তি অনুভূত হয় তখন কোনো ঔষধ ছাড়াই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া সম্ভব। যখন অসুখ হয়,শরীরে কোনো অংশ পীড়াগ্রস্ত হয় অথবা অকালে বার্ধক্যের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে তখন লোকে এমন কিছু আরোগ্যকর ঔষধ পাওয়ার তাড়না অনুভব করে যা চটজলদি সব সারিয়ে দিবে। বর্তমানে সমস্ত রোগের মেডিকেল ড্রাগ এবং ট্রিটমেন্ট আছে। মানুষের মাথায় ঢুকানো হয়েছে যে উপসর্গ (Symptoms) সাপ্রেস করতে পারলেই সুস্থ হওয়া যাবে। মেডিকেল ইন্ডাস্ট্রি রোগব্যাধি সারানো প্রক্রিয়ার গভীরে না গিয়ে শুধু সিম্পটম ভিত্তিক ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছে। আজ একটিও পরিপূর্ণ সুস্থ মানুষের দেখা পাওয়া যাবে না হয়তো। লোকেদের বিশ্বাস একটা বয়স পার হলে নানান অসুখবিসুখ হওয়াই স্বাভাবিক। আপনি যদি রোগাপটকা ধরনের, কোনোকারণে দীর্ঘকাল যাবৎ অসুস্থ কিংবা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে সুন্দর স্বাস্থ্য ফিরে আসার প্রক্রিয়া ম্যাজিকের মতো ঘটে যাবে না। বারবার অসুস্থ হচ্ছেন আর ঔষধ খেয়ে কিছুকাল সুস্থ থাকছেন ব্যাপারটা এরকম নয়। স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে সৃজনশক্তি, পেশা, সম্পর্ক, আবেগ, সুখ ইত্যাদি। বহু বছরের অবহেলা, অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম না করা ইত্যাদির কুফল ও প্রভাব কয়েকটা ভিটামিন বড়ি, সদ্য বাজারে আসা ড্রাগ, সার্জারি অপারেশন এসব দিয়ে কি সমাধান হবে? জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার চাবিকাঠি স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া। অসুখ করলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, নিয়মিত চেকআপের জন্য ডাক্তার লাগবে, ঔষধ খেলেই সব ঠিক এসব ভ্রান্ত ধারণা জনমানসে গেড়ে বসেছে। অস্থিরতা অনুভব করা শারীরিক ও মানসিক ব্যাধির অন্যতম পরিচিত কারণ। অনেকে একে স্ট্রেস বলে। ভয় দেহের জৈবরাসায়নিক পরিবর্তন ট্রিগার করে। হতাশা ইমিউন সিস্টেমকে বিকল করে ফেলতে পারে। মানুষ বিশ্বাস করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগব্যাধি বাড়বে এবং এটাই স্বাভাবিক। রোগ ও বার্ধক্য মানবদেহের জেনেটিক ডিজাইনের অংশ নয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ সহকারে দেখানো যাবে যে রোগ ও বার্ধক্য হচ্ছে মনে ভীত নেতিবাচক ভাব ও আবেগ আর দেহে মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ জমে যাওয়ার সম্মিলিত ফলাফল। অসংখ্য ধরনের প্রোটিন যেগুলো জিন ও কোষ গঠন করে এরা ২-১০ দিনের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। রেডিওআইসোটোপ গবেষণা থেকে জানা গেছে ৯৮ ভাগ অণু যেগুলো দেহ গঠন করেছে এরা এক বছরের মধ্যে আর আগের জায়গায় থাকে না। এই নবায়ন প্রক্রিয়া দেহের প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে (রক্ত,পেশি,চর্বি,হাড়,স্নায়ু,ব্রেইন ম্যাটার ইত্যাদি) সংঘটিত হয়। কোষগুলো অবিরত প্রতিস্থাপনের ফলে কয়েক মাস কিংবা বছর অন্তর অন্তর দেহ নতুনত্ব পায়। আধুনিক স্টাডি ও প্র্যাক্টিস মানবস্বাস্থ্যের উপর মন, অনুভূতি এবং আবেগের প্রভাব অস্বীকার করে। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা আপাদমস্তক অসুখ সারানোর বদলে সত্যিকার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ধ্বংস করে ক্রনিক ডিজিজ এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। স্বাস্থ্য ও জীবনীশক্তির স্থিরাবস্থা অর্জনের পথযাত্রায় রোগের চিকিৎসা একটা ছোট বিষয়। তারপরও প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় এটাই মূল ফোকাস থাকে। স্বাস্থ্যপূর্ণ দেহ ও মনের ঘনিষ্ঠ সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠাই সত্যিকার আরোগ্যলাভের উপায়। ঘরের অন্ধকার দূর করার জন্য বাতির সুইচ চাপতে হবে। অন্ধকার এমনি এমনি দূর হবে না। এখানে অন্ধকার নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। বরং বাতি না জ্বালতে পারাটাই সমস্যা। বাতি জ্বেলে দিলেই অন্ধকার দূর হবে তৎক্ষনাৎ। তেমনি দেহ ও মনে জীবন রক্ষাকারী প্রভাব তৈরির ক্রিয়া রোগব্যাধি দূর করে। শেষ কথা এটাই, সুস্বাস্থ্য একটা অবাস্তব স্বপ্ন রয়ে যায় যখন কেবলমাত্র রোগ সারানোই প্রধান লক্ষ্য থাকে। ভালো থাকায় বিঘ্ন সৃষ্টি করার জন্য অসুস্থতাকে দোষারোপ করা এবং এমনভাবে ট্রিটমেন্ট করা যেন রোগ কোনো মারাত্মক শত্রু, এগুলোই আজকালকার স্বাস্থ্য সংকটের ভিত্তি।
মৌলিক প্রাকৃতিক নিয়ম হচ্ছে, শক্তি (Energy) চিন্তার (Thoughts) সাথে চলে। যদি অসুখ আপনার মনোযোগের বিন্দু হয় অথবা সত্য ও প্রসঙ্গের বিন্দু হয় তাহলে আপনি অসুস্থ হয়েই থাকতে যাচ্ছেন কারণ অসুখে নেগেটিভ এনার্জি মাথাচাড়া দেয়। ওয়েস্টার্ন সভ্যতায় ৯০ ভাগেরও বেশি অসুখ স্বভাবতই ক্রনিক ডিজিজ। এসবের জন্য কোনো সফল চিকিৎসা সহজলভ্য নয়। অন্তত গতানুগতিক চিকিৎসাব্যবস্থায় নেই। সফলভাবে ক্রনিক ডিজিজ সারানোয় অক্ষম মডার্ন মেডিক্যাল সিস্টেম জনগণের মাথায় ঢুকিয়েছে যে, আমাদের রোগের উপসর্গগুলো থেকে মুক্তি পেতে হবে যদি সুস্থ হতে চাই। আসলে ভারসাম্যহীন দেহ/মনের আরোগ্যলাভের জন্য সুখানুভব (Happiness) জরুরি। হাসিখুশি, ভালোবাসাময়, প্রেমময়, সরলপ্রাণ মানুষ অসুখবিসুখে আক্রান্ত হয় কম। অসুখী লোকেরা স্বাস্থ্যবান হয় না এবং স্বাস্থ্যহীন লোকেরা অসুখী থাকে। দেহ খাদ্য,পানীয় এবং বাতাস ব্যবহার করে টিকে থাকে। চিন্তা, অনুভূতি ও আবেগগুলোর প্রত্যেকটিই দেহ,মন ও আত্মার বিশাল পরিবর্তন সাধনের ক্ষমতা রাখে। জার্মানির প্রফেসর অব মেডিসিন ডক্টর রাইক গিয়ার্ড হমার প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, প্রত্যেক শারীরিক অসুস্থতা (যেমন- ক্যান্সার) ট্রিগার হয় কিংবা বেড়ে যায় রোগীর জীবনের অমীমাংসিত সংঘাত দ্বারা। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, ব্রেইন সেলের মতোই স্কিন,লিভার,হার্ট,ইমিউন সেলগুলো চিন্তা,আবেগপূর্ণতা এবং সিদ্ধান্ত তৈরিতে সক্ষম। এড্রেনাল গ্রন্থি এড্রেনালিন ও কর্টিসল হরমোন দুটি নিঃসরণ ট্রিগার করে জীবন যখন ঝুঁকি বা বিপদের সম্মুখীন হয়। নিয়মিত স্ট্রেসড থাকলে হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে, সারাদেহে বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে। অনেকে মনে করে শুধু এড্রেনাল গ্রন্থি এড্রেনালিন নিঃসরণ ঘটায়। কিন্তু না! প্রতিটি কোষই স্ট্রেস হরমোন উৎপাদন করে। দেহের কোষগুলো বস্তু থেকে তরঙ্গের (Frequency) আগমন শনাক্ত করতে পারে এবং পরিক্ষা করতে পারে তারা উপকারী নাকি ক্ষতিকর। থাইমাস গ্রন্থি T-সেল (White blood cell) সক্রিয়করণ নিয়ন্ত্রণ করে। T-সেলগুলো ক্যান্সার সেল ও আক্রমণকারী ক্ষতিকর এজেন্টদের চিহ্নিত করে দূর করে। ডিহাইড্রেশন, অস্বাস্থ্যকর খাবার, দুঃসংবাদ, স্ট্রেস ইত্যাদির কারণে থাইমাস গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন দেহ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও অন্যান্য অসুখ প্রতিরোধে দূর্বল হয়ে যায়। রেডিও, টেলিভিশন, স্মার্টফোন, সংবাদপত্র, জাংকফুড, আর্টিফিশিয়াল ফুড এন্ড বেভারেজেস, ইনডোর আউটডোর দূষণ, নেতিবাচক মানুষজন ইত্যাদির প্রভাব থাইমাস গ্রন্থির উপর পড়ে। ভীতিকর, অমানবিক দৃশ্য দেখা, হতাশা কষ্টের গান শোনা এসব থাইমাসের উপর কুপ্রভাব ফেলে। আপনি ইতিবাচকভাবে থাইমাস এবং পুরো দেহকে শক্তিশালী ও রিচার্জ করতে পারেন ভালো মানবিক কাজকর্ম করে, পুষ্টিকর খাবার খেয়ে এবং প্রকৃতির মাঝে সময় ব্যয় করে। যদি কোনোকিছু আপনাকে খুশি করে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার দেহে সুখানুভবের হরমোনগুলো ট্রিগার করবে। যদি দেহে আরোগ্যলাভের সাড়া (Healing response) অনুপস্থিত থাকে তবে সর্বাধুনিক মেডিকেল টেকনোলজি বা এক্সপেরিয়েন্সের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। প্লাসিবো হিলিং এর মেকানিক্সটা রোগীর দৃঢ় বিশ্বাসের মাঝে অবস্থিত যে, একটা ড্রাগ, একটা অপারেশন কিংবা একটা ট্রিটমেন্ট প্রোগ্রাম সৃষ্টিকর্তার কৃপায় তার পেইন দূর করবে অথবা অসুখ সারিয়ে তুলবে। ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি যেসব ড্রাগস তৈরি করছে সেগুলো শরীর নিজেই প্রত্যেকটা ড্রাগ/ড্রাগ উপাদান ম্যানুফ্যাকচার করে নিজে থেকে সেরে উঠতে সক্ষম। সিন্থেটিক ড্রাগস কোনোমতে কাজ করে কারণ কোষে রিসেপ্টর থাকে ড্রাগ কেমিক্যালের জন্য। এর মানে মানবদেহ নিজেই এসব কেমিক্যাল প্রস্তুত করতে সক্ষম তা না হলে কোষের রিসেপ্টর থাকতো না। ফার্মাসিউটিক্যাল ড্রাগস অনেক ব্যয়বহুল,অনির্দিষ্ট,অনেক কম কার্যকরী এবং বহু ক্ষতিকর সাইড ইফেক্ট যুক্ত। ৩৫-৪৫ ভাগ প্রেস্ক্রিপশনই রোগের প্রতিকারে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। চূড়ান্ত কথা হচ্ছে বেশিরভাগ ইতিবাচক ফলাফল সরাসরি শরীরের নিজস্ব হিলিং রেসপন্স বা প্লাসিবো ইফেক্ট দ্বারা সংঘটিত হয়, মেডিকেল ট্রিটমেন্ট দিয়ে না। ডাক্তারের সান্নিধ্যই অনেক সময় মেডিসিনের কাজ করে। মডার্ন হাইটেক মেডিসিন ক্রনিক ডিজিজে প্রয়োগ করা যাবে না। অবশ্যই মেডিকেল ব্যবস্থা অপরিহার্য যখন হঠাৎ কোনো অঙ্গে জটিলতা দেখা দেয়, ইঞ্জুরি, আশঙ্কাজনক ইনফেকশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বর্তমানে বেশিরভাগ অসুখ সহজাতভাবেই ক্রনিক ধরনের। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ,হৃদরোগ,স্কেরোসিস,রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস,ডায়াবেটিস,ডিপ্রেশন,ক্যান্সার (একিউট থেকে ক্রনিক রুপান্তর হলে) ইত্যাদি। যখন আমরা প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করি তখন অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ থাকে। অসুস্থতা অপ্রাকৃতিক। তাই এর আবির্ভাব ঘটে দেহ যখন জমে পড়া ক্ষতিকর বস্তু ও তরল বের করে দিতে বা প্রশমিত করতে চেষ্টা করে। পুনরায় স্বাস্থ্য ফিরে পাবার জন্য দেহকে বিষ বের করায় সহায়তা করা প্রয়োজন। পুষ্টিকর স্বাভাবিক ডায়েট ও একটা প্রাকৃতিক হেলথকেয়ার প্রোগ্রাম স্বাস্থ্য ঠিক করার সাথে সাথে আবার অসুস্থ হওয়াও রোধ করবে। বিষ (Toxins) দেহের ভেতরে উৎপন্ন হয় পাশাপাশি বাইরে থেকে প্রবেশ করে। কেমিক্যাল, ফুড এডিটিভ,দূষক,মেটাবলিক বর্জ্য,ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন পয়জন ইত্যাদি হচ্ছে বিষ। যখন বিষ সহ্যক্ষমতার সীমায় পৌছায় তখন এই ঘটনা ব্যাথা বা অন্য ধরনের অস্বস্তির মাধ্যমে সিগন্যাল দেয় এবং দেহের এলিমিনেশন সিস্টেম (যেমন- স্কিন,শ্বসনতন্ত্র,লিভার,বৃহদান্ত্র,কিডনি), লিম্ফেটিক সিস্টেম এবং ইমিউন সিস্টেমকে প্রতিরক্ষা ক্রিয়ায় উদ্দীপিত করে। অনেক সময় অসুখের (Toxin crisis) সিম্পটমগুলো প্রশমিত হয়ে যায় তাতে মনে হয় যে সুস্থ হওয়া গেছে। একদম মূল থেকে সমস্যার কারণগুলো দূর না হলে আবার টক্সিন জমে টক্সিন ক্রিসিস সৃষ্টি হবে। এভাবে বারবার ঘটতে থাকলে ক্রমে আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে। একশ বছর আগে মানুষের মধ্যে এমন অহরহ ক্রনিক ডিজিজগুলো দেখা যেতো না। ডক্টর হেনরী লিন্ডলারের মতে প্রায় সকল ক্রনিক ডিজিজ সৃষ্টি হয় ড্রাগ পয়জনিং দ্বারা একিউট ডিজিজ সাপ্রেস করার ফলে। আরোগ্যলাভ (Healing) সর্বদা দেহে সংঘটিত হয় এবং দেহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। মেডিসিন এখানে বিশেষ খানিকটা ভূমিকা রাখে মাত্র। যদি দেহ নিজে থেকে না ঠিক হয় তবে মেডিসিন দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। আপনি পুরোপুরি সেরে উঠেননি যতক্ষন না সমস্যার কারণগুলো সৃষ্টি বা মেইনটেইন করা থামাচ্ছেন। কারণ (Cause) ছাড়া কোনোকিছু ঘটেনা। অসুখের সিম্পটমগুলো থামিয়ে দিতে সফল হওয়া একদম ভালোকিছু নয়। এরফলে টক্সিক পদার্থগুলো দেহের আরো অভ্যন্তরে যেতে বাধ্য হয়। আপাতত সাপ্রেসিংয়ের ফলে জেনারেল সার্কুলেশন থেকে টক্সিন সরে গিয়ে দেহের সহ্যক্ষমতা সাময়িক উন্নতির দিকে যায়। সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ ব্যতীতই শরীর আরো টক্সিন ধারণ করতে পারে তখন। ক্রমে সর্দিকাশি,জ্বর,ইনফেকশন এসব দেখা দিবে। অনেক সময় হঠাৎ বড় ধরনের টক্সিসিটি ওয়েভ সংঘটিত হতে পারে। হার্ট এটাক,স্ট্রোক এরকমই উদাহরণ। অথচ এমন কেসে ভুক্তভোগীরা দীর্ঘসময় ধরে পারফেক্টলি হেলদি স্টেজ পার করেছে। বর্তমানে ব্যবহৃত মেডিকেল ট্রিটমেন্ট কোনো ডিজিজের সিম্পটমগুলোকে এভাবে টার্গেট করে যেন এগুলোই ডিজিজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফিস্টিকেটেড ডায়াগনস্টিক টুলস একটি অসুখের সিম্পটমস চমৎকারভাবে শনাক্ত করতে পারে। স্টমাক আলসার,আই ক্যাটারাক্ট,পিত্তপাথর,ইউরেটাসের টিউমার যেটাই হোক না কেন। ট্রিটমেন্ট তখন হয় সার্জারী নয়তো অর্গানটাই কেটে বাদ দেয়া। ট্রিটমেন্ট শেষে রোগী সেরে উঠার একরাশ তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফেরে। অসচেতন রোগীর আসল সমস্যাটাই নির্মূল না করার ফলে সে হয়ে গেছে একটা জীবন্ত টাইম বোম্ব। যেকোনো মুহূর্তে...! বাস্তবে ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস ৮০ ভাগ রোগেরই ক্যাজুয়াল ফ্যাক্টরগুলো চিহ্নিত করতে পারে না। অসুস্থতার মূল কারণ খুঁজে বের করা মেডিকেল ট্রেনিংয়ে প্রধান ফোকাস থাকে না। এথেকে মেডিকেল কেয়ারের বর্তমান সংকটের জন্য আমরা প্রফেশনালদের দোষারোপ করতে পারিনা। অনেক রোগীই চায় ডাক্তার অসুখ(সিম্পটমস) সারানোর তেলেসমাতি ব্যবস্থাপত্র করে দিক। সম্পূর্ণ সুস্থ হবার ধৈর্য্য ও আকাঙ্ক্ষা তাদের থাকে না।
রোগজীবাণু কাউকে বিনাকারণে আক্রমণ করে না। ইনফেকশন মিথ হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসেরা সব অসুখের জন্য দায়ী। একইভাবে বলা যায়, মাছিরা সব ময়লা-আবর্জনা সৃষ্টি করে! ঠিক তো? সত্যিটা হচ্ছে যে মাইক্রোবস অসুখ সারাতে সাহায্য করে অথবা অন্তত এর তীব্রতা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। ইনফেকশন শরীরের আত্মরক্ষার সবচেয়ে অসাধারণ একটি প্রক্রিয়া। জীবাণুরা আবর্জনা, দূষিত পদার্থ এবং দূর্বল,আহত,মৃত কোষগুলো (যা শরীর কোনোভাবে দূর করতে পারে না) ভেঙে ফেলে। ইমিউন সিস্টেম এই জীবাণুদের কাজ করার সময় উৎপন্ন টক্সিন দূর করার ব্যবস্থা করে। ইমিউন সিস্টেম এদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কাজ শেষে জীবাণুদের হটিয়ে দেয়। ডাক্তাররা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এন্টিবায়োটিক ড্রাগ দিয়ে দূর করার চেষ্টা করে। তাদের বিশ্বাস ইনফেকশনে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়াগুলো ক্ষতিকর। এই দৃষ্টিভঙ্গি খুব অসম্পূর্ণ এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক। রোগজীবাণু সহজাতভাবে দূর্বল অঙ্গ বা শরীরের আহত অংশে বাসা বাঁধে যখন দেহের নিজস্ব পরিষ্কারকরণ ও আরোগ্যকরণ ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবেই দেহের পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ অংশগুলো এড়িয়ে যায় কারণ সেখানে কিছু অনুকূল নেই। একারণে রোগজীবাণু একাই অসুখ সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়। সরল সত্যটি এই ফ্যাক্ট দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ১০০ লোক একই কোল্ড বা ফ্লু ভাইরাসের মধ্যে উন্মুক্ত থাকে তখন তাদের মধ্যে অল্প কয়েক লোক সংক্রামিত হয় মাত্র। মডার্ন মেডিক্যাল রিসার্চ কখনো সত্যিকারভাবে খুঁজে বের করেনি কেন একটা মানুষের ইমিউন বিশেষ কোনো রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হয়। জার্ম থিওরি, যার উপর ভিত্তি করে সমগ্র মেডিকেল সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত তা ফরাসি কেমিস্ট লুই পাস্তুর কর্তৃক ১৯ শতাব্দীর শেষ দিকে আবিষ্কার হয়েছিল। মৃত্যুশয্যায় পাস্তুর বুঝতে পারেন, মাইক্রোবস কোনো একটা অন্তর্নিহিত কারণ ছাড়া ইনফেকশন ঘটাতে পারে না। ১৮৮৩ সালে এন্টনি বিউচ্যাম্প জানান, অসুখের (Diseases) প্রাথমিক কারণ থাকে আমাদের মধ্যে,আমাদের শরীরের মধ্যে। দিনে ২৪ ঘন্টাই আমরা মাইক্রোবস জগতে উন্মুক্ত থাকি। মানবদেহে যত কোষ আছে তারচেয়েও বেশি আছে মাইক্রোওর্গানিজম। কিছু মাইক্রোওর্গানিজম খাবার হজমে সাহায্য করে এবং ভিটামিন বি১২ ম্যানুফ্যাকচার করে,অন্যরা বর্জ্য পদার্থ ভেঙে ফেলে। বিউচ্যাম্পের কাজ ব্যাখ্যা করে যে, যদি দেহের এসিড/এল্কালাইন (pH) ব্যালান্স এসিডিটির দিকে চলে যায় তাহলে শরীর ধ্বংসাত্মক জীবানুদের খাদ্য বেশি উৎপাদন করে এবং তাতে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিউচ্যাম্প তার এক্সপেরিমেন্টগুলোয় সকল মানুষের রক্ত ও কোষে প্লিওমরফিজম বা আদি মাইক্রোবের অস্তিত্ব রয়েছে এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হন। আদি নিরীহ মাইক্রোবস শক্তিশালী স্বাস্থ্যপূর্ণ এল্কালাইন পিএইচে বসবাস করে। পিএইচ হালকা এসিডিক এ পরিবর্তন হলে এরা নিজেদের ব্যাকটেরিয়ায় রুপান্তর করে। ব্যাকটেরিয়াগুলো ফানজাই হয়ে যায় যখন পিএইচ মাঝারি এসিডিক হয়। সবশেষে শক্তিশালী এসিডিক পিএইচে ফানজাই ভাইরাসে পরিণত হবে। এসিডিক মেটাবলিক বর্জ্য পদার্থ, মৃত কোষ, ব্লাড প্রোটিন এবং টক্সিন জমে আটকে পড়লে টিস্যু ও ফ্লুইডগুলোর পিএইচ ক্ষারত্ব থেকে অম্লত্বের দিকে চলে যায়। ফলাফল টক্সিসিটি ক্রিসিস! এইভাবে দেহ স্বাভাবিক এল্কালাইনড অবস্থায় ফিরে যাবার প্রচেষ্টা চালায়। মাইক্রোবস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যখন দেহে টক্সিনের মাত্রা অত্যাধিক থাকে। এর চিকিৎসা হলো টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে সরানো তথা পরিষ্কারকরণের ব্যবস্থা করা।
ড্রাগস কোনোদিনই রোগ সারায় না। উলটো প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে বাগড়া দেয় এবং দেহের ডেঞ্জার সিগন্যাল দাবিয়ে দেয়। সাংঘাতিক যন্ত্রণাময় অবস্থা ব্যতীত পেইনকিলার নেয়াই মূলত দেহের হিলিং ইন্টেলিজেন্স দমিয়ে দেয়া ও ধ্বংস করে ফেলা। অসুস্থতার সময় দেহের পেইন সিগন্যাল দরকার হয় যথাযথ ইমিউন রেসপন্স ট্রিগার করে টক্সিন দূর করা ও সর্বনাশ থেকে বাঁচানোর জন্য। পেইন নার্ভে যখন হিস্টামিন হরমোন অতিক্রম করে যায় তখন নার্ভ পেইন সিগন্যাল দেয়। ভাইরাল পার্টিকেল ও বিষাক্ত বস্তু তাড়িয়ে দেয় এবং অন্য হরমোনগুলোকে শরীরে পানি বন্টন নিয়ন্ত্রণে ডাইরেক্ট করে হিস্টামিন। কোনো স্থানে টক্সিন সৃষ্টি হলে সেখানে তীব্র পানিসংকট (Dehydration) দেখা দেয়। এতে ব্যাথার প্রাবল্য বাড়তে থাকে। টক্সিন ও ব্লাড প্রোটিন কোষের চারপাশের তরলে জমতে থাকে। এই তরল পদার্থ হলো ইন্টারস্টিশিয়াল ফ্লুইড বা কানেক্টিভ টিস্যু যা লিম্ফেটিক সিস্টেম থেকে নিঃসৃত হয়। যখন লিম্ফেটিক সিস্টেম হজমের গন্ডগোল বা অন্যান্য কারণে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেনা তখন ব্লাড প্রোটিন ও টক্সিনের চলাচল প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। উচ্চমাত্রায় এসিডিক ও রিয়েক্টিভ প্রোটিন ও টক্সিন থেকে সুস্থ কোষদের বাঁচাতে তাৎক্ষণিকভাবে দেহ এসবকে জল দিয়ে ঘিরে রাখতে থাকে। ঐ অংশে স্বাভাবিক অক্সিজেনের অভাবে ব্যাথা শুরু হয়। ব্লাড প্রোটিন রক্তপ্রবাহ ছেড়ে কানেক্টিভ টিস্যুতে স্বাভাবিকভাবেই প্রবেশ করে। কিন্তু তৎক্ষনাৎ লিম্ফেটিক সিস্টেম দ্বারা এরা দূর না হলে মৃত্যুও হতে পারে। মানবদেহ জানে নিশ্চিতভাবে কোনটা বিপদ আর সেভাবেই কাজ করে। হিউম্যান ব্রেইনে উৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক পেইনকিলার এন্ডোরফিন উৎপন্ন হয় পেইন সহ্যকর রাখার জন্য। ইমিউন ও ক্লিনসিং রেসপন্সে কোনোরকম বিঘ্ন তৈরি করে না এন্ডরফিন। অন্যদিকে সিন্থেটিক পেইনকিলার দেহের এমন অবস্থা করে যেমনটা বাড়িতে বার্গলার এলার্ম সিস্টেম কেটে ফেললে হয়। পেইনকিলার ব্যাথাক্রান্ত স্থানে যেতে ব্লাড প্রোটিনের সাহায্য নেয়। কানেক্টিভ টিস্যুতে ব্লাড প্রোটিনের সাথে পেইনকিলার ড্রাগও আটকে পড়ে। তখন গুরুতর সাইড ইফেক্ট এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি এভাবেই সর্বসাধারণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর তারা চায় না এসব প্রকাশ পাক। যদি আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য ব্যাথাপূর্ণ অবস্থার জন্য Vioxx, Aleve, Celebrex, Aspirin এসব ড্রাগ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার জানা উচিৎ এগুলো নাটকীয়ভাবে হার্ট এটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। সামান্য পরিমাণ এস্পিরিনও ইন্টেস্টিনাল ব্লিডিং ঘটায়। তাই বেশি ব্যবহার করতে থাকলে ব্লাড লস হবে মারাত্মকভাবে। একইভাবে ইবুপ্রোফেন, এসিটামিনোফেনও অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ ড্রাগস।
উৎস: টাইমলেস সিক্রেটস অব হেলথ & রেজুভেনেশন, এন্ড্রিয়াস মরিজ