24/06/2025
🛑 সায়াটিকার ব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি শুধু ব্যথা কমায় না, বরং ব্যথার মূল কারণ দূর করতে এবং ভবিষ্যতে ব্যথা ফিরে আসার সম্ভাবনা কমাতেও সাহায্য করে।
ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সায়াটিকার চিকিৎসায় যে ভূমিকাগুলো পালন করা হয়, সেগুলো হলো:
▶️ব্যথা উপশম ও প্রদাহ কমানো
*✅ স্নায়ুর ওপর চাপ কমানো: সায়াটিকার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ। ফিজিওথেরাপির নির্দিষ্ট কিছু কৌশল, যেমন ম্যানুয়াল থেরাপি (মেরুদণ্ডের সামঞ্জস্য), স্নায়ুর নড়াচড়া বাড়িয়ে চাপ কমাতে সাহায্য করে।
*✅ পেশি শিথিল করা: টানটান ও স্প্যাসমডিক পেশিগুলো ব্যথার সৃষ্টি করে। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এই পেশিগুলোকে শিথিল করা হয়, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক।
*✅ প্রদাহ কমানো: কিছু থেরাপি, যেমন হিট প্যাক বা আইস প্যাক, প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা ব্যথার তীব্রতা কমায়।
▶️ নমনীয়তা ও সচলতা বৃদ্ধি
*✅ স্ট্রেচিং ব্যায়াম: ফিজিওথেরাপিস্টরা সায়াটিক নার্ভ এবং সংশ্লিষ্ট পেশিগুলোর নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট স্ট্রেচিং ব্যায়াম শেখান। এতে নার্ভের ওপর চাপ কমে এবং চলাফেরা সহজ হয়।
*✅ জয়েন্টের নমনীয়তা: কোমরের জয়েন্ট এবং পায়ের পেশিগুলোর নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য কিছু মবিলাইজেশন ব্যায়াম করানো হয়
▶️পেশি শক্তি ও ভারসাম্য উন্নত করা
*✅ পেশি শক্তিশালীকরণ: সায়াটিকার কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়া কোমর, নিতম্ব এবং পায়ের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম করানো হয়। শক্তিশালী পেশি মেরুদণ্ডকে সঠিক অবস্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং নার্ভের ওপর চাপ কমায়।
*✅ কোর মাসলের শক্তি বৃদ্ধি: পেটের এবং পিঠের কোর মাসলগুলো মেরুদণ্ডের স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। এই মাসলগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সায়াটিকা ফিরে আসার ঝুঁকি কমে।
*✅ ভারসাম্য উন্নত করা: সায়াটিকার কারণে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ভারসাম্য উন্নত করার জন্য ব্যায়াম করানো হয়, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে সুবিধা দেয়।
▶️জীবনযাত্রার মান উন্নত করা
*✅ সঠিক ভঙ্গি ও চলাচলের নির্দেশনা: ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীর ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা এবং ভারী জিনিস তোলার সঠিক ভঙ্গি শেখান, যা সায়াটিকার ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
*✅ নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস: ফিজিওথেরাপি প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে রোগীর জন্য উপযুক্ত ব্যায়ামের রুটিন তৈরি করা হয়, যা নিয়মিত পালনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
*✅ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি: দীর্ঘক্ষণ ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভার এবং পাকস্থলীতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। ফিজিওথেরাপি যেহেতু প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথার চিকিৎসা করে, তাই এটি ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমায়।
অন্যান্য সুবিধা
*✅ পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ: ফিজিওথেরাপি শুধুমাত্র বর্তমান ব্যথা কমাতেই নয়, বরং ব্যথার মূল কারণ দূর করে এবং সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সায়াটিকা ফিরে আসার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
*✅ অস্ত্রোপচার এড়ানো: বেশিরভাগ সায়াটিকা রোগীর ক্ষেত্রেই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয় এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র গুরুতর ক্ষেত্রে, যেমন মূত্রাশয় বা অন্ত্রের কার্যকারিতা প্রভাবিত হলে, অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরিশেষে বলা যায়, সায়াটিকার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।