27/07/2025
বিদেশি ডাক্তারদের একটা গল্প শুনাই:
২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে আহত এক ছেলে বাংলাদেশের জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিউটে ভাস্কুলার সার্জারী ডিপার্টমেন্টে হাতের রক্তনালী এবং মাংসপেশি ও টেন্ডন এবং স্নায়ু কাটা নিয়ে ভর্তি হয়। বাংলাদেশের দক্ষ ভাস্কুলার সার্জনরা রক্তনালী জোড়া দিয়ে দেন এবং টেন্ডন ও মাংসপেশি ঠিক করার জন্য জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল নিটোরে রেফার্ড করেন। বাংলাদেশি অর্থপেডিক্স সার্জনরা মাংসপেশি এবং স্নায়ু দক্ষতার সাথে রিপেয়ার করে দেন। তখন তাকে বলে দেয়া হয় হাতের পুর্ন কর্মক্ষমতা এবং মুভমেন্ট ফিরে আসতে ৬ মাস সময় লাগবে৷ সেই ছেলে নিটোরে ভর্তি থাকা অবস্থায় সেখানে চলে আসে বিদেশি চিকিৎসক টিম!! তাও এক দেশ থেকে না, চীন, সিংগাপুর, এবং ইংল্যান্ডের চিকিৎসক টিম। কারন আমাদের অযোগ্য প্রশাসনের বিশ্বাস এদেশের চিকিৎসকরা কিছু পারেন না, তাদের বিদেশি বাবারা সব পারে। তো ইংল্যান্ডের টিম ছেলেটার হাত দেখে বললো চিকিৎসা হইছে, কিন্তু অতো ভালো হয় নাই, তারা আরেকটু করতে চায়!! তো তারা ছেলেটার প্রায় সুস্থ হয়ে যাওয়া হাতটা আবার কাটে এবং বাংলাদেশি সার্জনদের হাতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রিপেয়ার করা রক্তনালি, স্নায়ু এবং টেন্ডন তিনটাই ইঞ্জুরি করে ফেলে!!! এবং সেগুলো আর ঠিক না করতে পেরে কোনোভাবে ঢেকেঢুকে অপারেশন শেষ করে ফেলে। এরপর ছেলেটির হাতে পচন শুরু হয়। নিটোরের বাংলাদেশি চিকিৎসকরা দেখে বলেন ছেলেটির রক্তনালী এবং স্নায়ু অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং সবার আগে রক্তনালী রিপেয়ার করা লাগবে। আমি তখন জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে ভাস্কুলার সার্জারীতে রেসিডেন্ট হিসেবে জয়েন করেছি। ছেলেটি ভর্তি হয়ে আমাদের ইউনিটেই আসলো। সাথে জনা পঞ্চাশেক ইয়ং পোলাপান। পারলে আমাদের ই ক্ষেয়ে ফেলে এমন এটিটিউড। আমি ওর মাকে ডেকে হিস্ট্রি নিলাম। ছেলের মা হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে বললো, "স্যার বিশ্বাস করেন, আহমেরা যেই অপারেশন করছিলেন, আমার পোয়া ভালা অইয়া গেছিলো প্রায়, আমি অনেকবার মানা করছেলাম, কয়ছি, বাবো ধৈর্য্য ধর, হাতটা ঠিক অইয়া যাইবে। আমার ছাওয়াল কতা শোনে নায়, এহন হাতে পচন লইছে। আমি কি করমু স্যার, ওর কি অইবে?" আমার এই কথা গুলো এখনো কানে বাজে, আমার কাছে খুব বেশি জবাব ছিলো না। ছেলেটা সমন্বয়ক কোঠায় ডিরেক্ট আইসিইউতে যায়গা পেলো, যদিও আইসিইউ এর কোনো ইন্ডিকেশন ছিলো না। এবং আল্টিমেটলি সেই হাত আর ভালো করা যায় নাই!!! পেয়ারের বিদেশি ডাক্তাররা তার ১২ টা বাজিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ভিআইপি প্রোটোকল নিয়ে ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে তার দেশে ফিরে গেছে! আর ছেলেটার হাতটা শেষ হয়ে গেলো! এই হচ্ছে বিদেশি ডাক্তার! যার জন্য আপনাদের মন আকু-পাকু করে। একটা কথা সব সময় ভাববেন, আমরা ১৮ কোটি জনগনের ডাক্তার, বছরে একেকজন চিকিৎসক ডেইলি ২০ টা করে হলেও ৭৩০০ রোগী দেখি, চিকিৎসা দেই। আর ওরা একেকজন সারা জীবনে ২০০০ রোগী দেখে কি না সন্দেহ আছে। আমাদের এক্সপেরিয়েন্স এর সামনে ওরা বাচ্চা শিশু, আই রিপিট আমাদের এক্সপেরিয়েন্স এর সামনে ওরা বাচ্চা শিশু। সেই গল্প আরেকদিন শোনাবো ইন শা আল্লাহ।