08/04/2025
https://www.facebook.com/share/1Ak689uJ4w/?mibextid=wwXIfr
ছবিটা দেখে আরেকবার মনে পড়ে গেলো, বাংলাদেশের মানুষ কেন ক্ষমতা চায়।
কেন অন্য চাকরিতে একই গ্রেডের বেতন পেলেও বিসিএস ক্যাডার হবার জন্য বছরের পর বছর বেকার থেকে, টিউশন করিয়ে বয়স শেষ হওয়া পর্যন্ত বিসিএসের প্রস্তুতি নেয়।
সে যাই হোক, ছবিটা দেখে আজকে একটু অসহায়ই বোধ হলো৷ নাহিদ ইসলাম পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। গুনে গুনে ১১ জন দৃশ্যমান ডাক্তার সেখানে উপস্থিত। থাকতেই পারেন। এতে আমার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু যে কারণে মাথাব্যথা-
আজ সকালে ডাক্তার দেখাতে গেলাম পিজি হাসপাতালে। উদ্দ্যেশ্য স্কিন এবং ডেন্টিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট। প্রথমে সিরিয়াল দিয়ে টিকেট নিলাম৷ গেলাম ৭ তলায়৷ স্কিনের ডাক্তার আমাকে সময় দিলেন বড়জোর ৪০-৫০ সেকেন্ড। দুটো সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলাম। একটা সমস্যা বলার পরেই, আমার প্রেসক্রিপশন তৈরি।
-বললাম ডক্টর, মেডিকেল হিস্ট্রিটা একটু জানাই। এর আগেও কিছু মেডিসিন নিয়ে কাজ হয়নি...
-লাগবে না, বলে থামিয়ে দিলেন।
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে অন্তত মেডিকেল হিস্ট্রি, পূর্বের মেডিকেশন (ব্যবহৃত ওষুধ ও ডোজ), রোগ নির্ণয় ও প্রতিকারে মেডিসিন প্রেসক্রাইব করার জন্য কতটুকু জরুরি তা আমি জানি। ডক্টরও জানেন। কিন্তু যেখানে দেশের মানুষের জীবনের দাম নাই। ওখানে স্কিনের এতো দাম কীভাবে হয়!
-বললাম, "ডক্টর আরেকটা প্রব্লেম..."
-ডাক্তার আমাকে থামিয়ে বললেন, আগে একটার চিকিৎসা শেষ করেন৷ পরে দেখায়েন আরেকটা।
সমস্যা হচ্ছে একটা সমস্যা শেষ করে, আরেকটা সমস্যার চিকিৎসা শুরু করলে সেটা ভবিষ্যতে কতটুকু গুরুতর পর্যায়ে যাবে সেটা তিনিও খুব ভালো করে জানেন৷ কিন্তু ওটা তার চিন্তার বিষয় নয়৷ ওনার চিন্তা সময় নিয়ে। খাতায় রোগীর নাম এন্ট্রি করে রোগীকে তাড়াতে পারলে বাঁচে।
একগাদা মন খারাপ নিয়ে গেলাম, ১১ তলায় ডেনিস্ট্রি বিভাগে৷ সব রুম প্রায় তালাবদ্ধ। BMU এর ২ জন ট্রেইনি ডক্টর বাদে অর্থডন্টিক বিভাগে কোনো প্রফেসর তখন ডিউটিতে ছিলেন না। সবাই ছুটিতে। ১১১৫ নম্বর কক্ষে গিয়ে পাই একজন ট্রেইনি ডাক্তারকে। তিনি বই পড়ছিলেন। খুব সম্ভবত, শীঘ্রই কোনো একাডেমিক পরীক্ষা আছে।
দরজা নক করে ভেতরে আসবো কিনা জানতে চাইলে, তিনি ঠোঁট বাঁকিয়ে এমন এক্সপ্রেশন দিলেন। মনে করেন আগেকার দিনে কোনো শূদ্র ব্রাহ্মণকে ছুঁয়ে ফেললে যেমন এক্সপ্রেশন দেয়ার কথা, খানিকটা অমন। অচ্ছুৎ টাইপের একটা ফিল দিলেন। এ দেশে এতকিছু গায়ে মাখলে হয় না। যাক গে।
দাঁতের ট্রিটমেন্টে দাঁত উঠিয়ে ফেলতে হতে পারে। সাথে প্রায় লাখখানেক টাকা খরচ। চিকিৎসা কোন পদ্ধতিতে করবো সেই সিদ্ধান্ত নিতে, সবকিছু মিলিয়ে আমার কিছু বিষয়ে জানার ছিলো। কিন্তু তিনি কোনো উত্তরই দিলেন না৷ বললেন, ২ টা টেস্ট করিয়ে সিরিয়াল দিয়ে যেতে। ১ মাস পরে আসতে!
মানে wth! একটা মাসে মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন চলে আসে।
১১ তলা থেকে ৭ তলায় গিয়ে টিকেট নিলাম। ৬ তলায় পেমেন্ট করলাম। আবার ১১ তলায় এসে X-ray OPG এর সামনে সিরিয়াল দিলাম। এবার ঘটলো অন্য কাহিনি, মেশিন কাজ করছে না৷ একজনকে টেস্ট করার পরে, ১০ মিনিট মেশিনকে রেস্ট দিয়ে পরের জনেরটা টেস্ট করাতে হবে।
এই হচ্ছে, খুবই মাইনর দুটো রোগের ডাক্তার দেখাতে একজন অনার্স পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর দশা৷
খেটে খাওয়া, অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত সেই রাজনৈতিক/অর্থনৈতিক প্রভাবহীন মানুষগুলোর চিকিৎসা সেবা কাছে থেকে দেখলে বুঝবেন, দেশে মৌলিক অধিকার বলে কিছু নেই।
দেশের বিত্তশালী বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী না হলে, আপনার জীবনের দাম ১০ টাকার টিকেট পর্যন্তই।
-Mirza Saki, BGE 49