28/08/2024
কি যেন একটা বদলে গেছে! মানুষের ভেতরে চেপে থাকা কি যেন একটা সরে গেছে…! বৃষ্টির আগ মুহূর্তের বাতাসে যেমন অদ্ভূত ভাললাগা জড়িয়ে থাকে, ঠিক তেমনই কিছু একটা পরিবর্তন অনুভব করছি চারপাশের মানুষের মাঝে!
খুব ছোট্ট একটা ঘটনা। মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছি। আমাদের রিকশা দাঁড়িয়ে আছে সিগন্যালে। পিছন থেকে একটা রিকশা এসে চাকার স্পাইকে লাগিয়ে দিল। আমি দাঁত মুখ চেপে অপেক্ষা করছি গুলির মত অশ্রাব্য গালি বর্ষণের। কিন্তু কই! একটা গালিও দিলনা। ঠান্ডা স্বরে বলল, আরেকটু হলে আমার কত টাকার ক্ষতি হয়ে যেত এটা চিন্তা করলানা? ব্যাস এটুকুই! আমি ৯ বছর বয়স থেকে ঢাকার রাস্তায় একা চলি। রিকশাচালক মামাদের জন্য আমার অন্যরকম একটা সহানুভূতি কাজ করে। জীবনে অনেকবার তাদের কারনে পথের বিপদ (harassment) থেকে বেঁচেছি। তাদের মানবিকতার অংশটুকু আমার ভালমত জানা। কিন্তু এও জানি তারা সবসময় উত্তপ্ত হয়েই থাকেন। কারও সাথে টোকা লাগলেও শুরু হবে গালাগালি। হাতাহাতিও হয়ে যায় কত। এই শহরে রিকশাচালক মামার এমন শান্ত ব্যবহার আমি এই প্রথম দেখলাম।
ভাবা যেতে পারে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু সমাজকর্মী হিসেবে আমাার পর্যবেক্ষণ বলে, ব্যাপারটা তা নয়। ছাত্রদের আন্দোলনের সময় থেকে দিনের বেশিরভাগ সময় রাস্তায় থাকা রিকশাচালক ও অন্য সকল মানুষ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দেখেছেন কিভাবে দেশের সব মানুষ একে অন্যের বিপদে এগিয়ে এসেছে। পুলিশের গুলির তোয়াক্কা না করে একজন আরেকজনকে রক্ষা করতে দাঁড়িয়ে গেছে। এই তো গত পরশু আবারও হাসনাত আবদুল্লাহ নিজে মার খেতে খেতে চিৎকার করে লাঠিয়াল আনসার বাহিনীকে বলছিল, এই ছাড় তোরা আমার ভাই কে, ছেড়ে দে..! আর আবু সাইদ! আহ্ সে তো এদেশের প্রতিটা মানুষের বুকের ভিতরে ঢুকে গেছে। পুলিশের গুলি শুধু তার গায়ে লাগেনি, এদেশের প্রতিটা মানুষ আহত হয়েছে সেই গুলিতে। কিন্তু সাথে আরেকটা অদ্ভূত ব্যাপার হয়েছে, মানুষের মধ্যে একটা পজিটিভ পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। এই পরিবর্তনকে ধরে রাখতে হবে আমাদের সবাইকে। কি করে? বেশি বেশি ভাল কাজ করে। কাউকে না ঠকিয়ে। অন্যের হক না মেরে। অল্পে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করে। আইন ভংগ না করে। অন্যের কষ্টে এগিয়ে এসে। সমাজে আমরা যে যত উঁচু অবস্থানে আছি, তার দায়িত্ব তত বেশি….।