02/09/2025
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একটা নাইট ডিউটির কথা খুব মনে পড়ে। ওয়ার্ডে ৫ জন শ্বাসকষ্টের রোগী, অক্সিজেন সিলিন্ডার মাত্র ১ টা।
আবার পড়েন - শ্বাসকষ্টের রোগী কয়টা? ৫ টা।
আর অক্সিজেন?? মাত্র ১ টা।
শ্বাসকষ্টে একেকজনের চেহারা নীল হয়ে যাচ্ছে, কিছু করার নাই।
ওযার্ডে ডিউটি ডাক্তার আমি একজন। তখন অনেক ইয়ং বয়স, ২০১৬ সাল।
সেই বয়সের বুদ্ধিতে যা কুলালো তাই করলাম।
সবাই কে ১৫ মিনিট করে অক্সিজেন ভাগ করে দিলাম।
অর্থাৎ কি দাড়ালো??
১৫ মিনিট রহিমা শ্বাস নিবে বুক ভরে, তারপর মাস্ক খুলে দিয়ে দিবে আরেকজন কে। এরপর রহিমা বাকি ৬০ মিনিট শ্বাসকষ্ট নিয়ে অপেক্ষা করবেন। ৬০ মিনিট পর আবার ঘুরে তার পালা আসবে বুক ভরে নিশ্বাস নেবার..
কি ভয়ংকর অমানবিক!!!
এর মাঝে একজন মহিলা ছিলেন লাংস ক্যান্সার, শেষ স্টেজ। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট।
তার একমাত্র ছেলে, ভার্সিটি স্টুডেন্ট, মায়ের পাশে বসে দিশেহারা। কি করবে বুঝতেসে না!! বাবা নাই, আর তার এত টাকা ও নাই যে প্রাইভেটে নিয়ে যাবে।
নার্সদের কাছে কান্নাকাটি করে.. নার্স দের কিছু করার নাই।
আমার রুমে এসে বলে "স্যার, কিছু একটা করেন, মা মরে যাবে।"
আমিও ভ্যাবলার মত তাকায় থাকি।
পাশের পুরুষ ওয়ার্ডে খোজ নিলাম, ওখানেও সেইম। ১ টাই সিলন্ডার, যা একজন কিডনী রোগীর কাজে লাগছে। তার ও খারাপ অবস্থা। অক্সিজেন মাস্ক খুললেই ঐ ব্যাটা মারা যাবে।
রাত কেটে যাচ্ছে..
ভোর রাতের দিকে কিছটা সমাধান হলো।
পুরুষ ওয়ার্ডের কিডনী রোগী টা প্রাইভেটে চলে গেলো, ঐ সিলিন্ডার টা ঝগড়া করে আমার রোগীদের জন্য আনালাম।
আমার ওয়ার্ডে ২ জনের শ্বাসকষ্ট কমে গেলো।
আর ঐ ক্যান্সারের মহিলাটা, উনার ১৫ মিনিটের দাবী ছেড়ে দিয়ে মারা গেলেন।
তার ছেলেটা শোকে পাথর হয়ে বসে রইলো মায়ের পাশে। শেষ মুহুর্তে মা কে সামান্য বাতাস জোগাড় করে পারেনি, এটা বোধহয় সারাজীবন তাকে দু:স্বপ্ন দেখাবে।
একবার ভাবলাম গিয়ে বলি, "আপনার মা এমনিতেই মারা যেতেন ১-২ দিনের মাঝে। কারো কিছু করার ছিলো না অসুখ অনেকদুর চলে গিয়েছিলো। আপনি বেশী কষ্ট নিয়েন না"
পরে আর বলি নি। থাক, কিছু রাগ পুষে রাখুক দেশের প্রতি।
এভাবেই কোনরকমে সো কলড গরীব দেশের হাসপাতালে ৫ টা শ্বাসকষ্টের রোগীর কষ্টের সমাধান হলো।
---
আজকে একটি শিশুদের হাসপাতালের এই চিরকুট টা দেখুন।
একজন মা সই করেছে এই মর্মে- "আমার বাচ্চা কে আপনারা অক্সিজেন দিতে পারবেন না আমি জানি, মরে গেলে মরে যাক। কি আর করার!! আপনাদের দোষ দিবো না"
বুঝেন অবস্থা!!
::
DR SHAHRIAR
02 SEPT 2025
::