23/07/2025
#তাগূত
প্রশ্ন হলো, তাগূত কী? তাগূত হলোঃ আল্লাহর পরিবর্তে কিংবা আল্লাহর সাথে অংশীদার করে যার আনুগত্য তথা ইবাদাত করা হয় এবং যে এই আনুগত্য তথা ইবাদাতে সন্তুষ্ট থাকে, তাকে তাগূত বলে। তাগূত অর্থ সীমালংঘনকারী। তাগূত দৃশ্য-অদৃশ্য ব্যক্তি ও বস্তু উভয়ই হতে পারে। তাগূত হলো আল্লাহর অবাধ্য ও বিরোধী অপশক্তি। তাগূত ইসলামের বড় শত্রু। রসূলুল্লাহ এর দাওয়াত ও জিহাদের মূল লক্ষ্যই ছিলো তাগূত নির্মূল করা এবং তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা।
অসংখ্য প্রকারের তাগূত রয়েছে। বিশেষ কয়েক প্রকার তাগূত হলোঃ
১. #শয়তানঃ শয়তান বান্দাকে আল্লাহর পরিবর্তে নিজের এবং অন্যের আনুগত্য তথা ইবাদাতে লিপ্ত করে, তাই শয়তান হলো তাগূত।
২. #প্রবৃত্তিঃ প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা বান্দাকে আল্লাহর অবাধ্য করে। ফলে, বান্দা আল্লাহর পরিবর্তে নিজ প্রবৃত্তি-পূজায় লিপ্ত হয়। তাই প্রবৃত্তি হলো তাগূত।
৩. #শাসকঃ সেসমস্ত শাসক তাগূত, যারা আল্লাহর নাযিলকৃত শরী'আহ আইনের পরিবর্তে অন্য আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। আইন তথা বিধান দেয়া একমাত্র আল্লাহর এখতিয়ার। এটি লংঘন করে তারা নিজেরা আইন প্রণয়ন করার শিরকে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর সাথে নিজেদেরকে শরীক তথা অংশীদার করে। প্রশাসন সেসব মানব রচিত আইন জনগণের উপর প্রয়োগ করে। যারা এসমস্ত আইন ও বিধানের আনুগত্য করে তারা সুস্পষ্ট শিরকে লিপ্ত। কেননা, এই আনুগত্য তথা ইবাদাতের মাধ্যমে তারা আল্লাহর সাথে শরীক তথা অংশীদার করে এবং তাদের শাসককে আইনপ্রণেতা তথা বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করে।
৪. #বিচারকঃ সেসমস্ত বিচারক তাগূত, যারা আল্লাহর নাযিলকৃত শরী'আহ আইনের পরিবর্তে অন্য আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা করে। আদালতও একটি তাগূত। কেননা, এখানে আল্লাহর নাযিলকৃত শরী'আহ আইনের পরিবর্তে অন্য আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা চলে। আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার-ফয়সালা না করা সুস্পষ্ট কুফরি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার-ফয়সালা করে না, তারাই কাফির." [সূরা মায়েদা, আয়াতঃ ৪৪]। আর এসকল মানবরচিত বিধান দ্বারা পরিচালিত আদালত ও বিচার-ফয়সালার দারস্থ হওয়া সুস্পষ্ট শিরক। মহান আল্লাহ বিচার-ফয়সালার জন্য তাগূতের নিকট যাওয়াকে হারাম করেছেন।
৫. #সংসদঃ সংসদ বা পার্লামেন্ট একটি তাগূত। কেননা, এখানে আল্লাহর আইন ও বিধানকে পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন করে অথবা বাদ দিয়ে নতুন আইন তথা সংবিধান প্রণয়ন করা হয় যা সুস্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআনের সাথে কুফরি এবং মহান আল্লাহর সাথে শিরক। অতএব, মানব রচিত সংবিধানও একটি তাগূত। সংসদ হলো এমন একটি জায়গা যেখানে এর সদস্যরা সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আল্লাহর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। অধিকাংশ সংসদ সদস্যদের মতামত বা ভোটে আল্লাহর হারাম করা বিষয়কে হালাল করা হয় অর্থাৎ বৈধতা দেয়া হয়। এইভাবে তারা আল্লাহর আইন ও বিধানকে পরিবর্তন করে বড় শিরক ও কুফরিতে লিপ্ত হয়। আর যারা শিরক ও কুফরিতে লিপ্ত তারা মুশরিক ও কাফির।
৬. #সার্বভৌমত্বের_দাবিদারঃ সার্বভৌমত্বের দাবিদার ব্যক্তি বা শাসক হলো তাগূত। কেননা, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া আর কারও সার্বভৌমত্ব নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, "আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহরই।" [সূরা আলে-ইমরান, আয়াতঃ ১৮০] একইভাবে, সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহ। শাসক কিংবা জনগণ কখনই সকল ক্ষমতার উৎস হতে পারে না। অথচ, কুফরী গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসির মুলকথা হলো 'শাসক কিংবা জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস'। যে কেউ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সার্বভৌমত্বের দাবিকে মেনে নিবে সে কাফির ও মুশরিক।
এছাড়াও অদৃশ্য কিংবা ভবিষ্যৎ জানার দাবিদার, মিথ্যা 'ইলাহ' দাবিদার, জাদুকর, পীর-মাজার, তাবিজ-কবচ, মূর্তি-ভাস্কর্য, বাপ-দাদার অন্ধ-অনুসরণ ইত্যাদি হলো তাগূত। ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত হলো তাগূতকে অস্বীকার করা।
' #কুফর_বিত্_ত্বগূত_তথা_তাগূতকে_অস্বীকার_করার_৩টি_উপায়
১. #অন্তর_দ্বারা - তাগূতকে অস্বীকার করাঃ এর অর্থ হলো, অন্তর থেকে তাগূতকে অবিশ্বাস করা, তাগূতের প্রতি আনুগত্য তথা ইবাদাতকে বর্জন করা এবং তাগূত ও তার অনুসারী কাফির, মুশরিক ও মুরতাদদের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা। তাদের প্রতি চিরশত্রুতা ও ঘৃণা বজায় রাখা।
২. #জবান_দ্বারা - তাগূতকে অস্বীকার করাঃ এর অর্থ হলো, বক্তব্য দ্বারা তাগূতকে অস্বীকার করা, তাগূতের প্রতি আনুগত্য তথা ইবাদাত বর্জনের আহবান করা এবং তাগূত ও তার অনুসারীদের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়া। তাদের বিরোধিতা করা এবং তাদের শিরক ও কুফরির ব্যাপারে মানুষদের সতর্ক করা।
৩. ্বারা_তাগূতকে_অস্বীকার_করাঃ এর অর্থ হলো, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা তাগূতকে অস্বীকার করা। সকল প্রকার আনুগত্য তথা ইবাদাত থেকে তাগূতকে বর্জন করা এবং তাগূত নির্মূলের জন্য সর্বাত্মক লড়াই অব্যাহত রাখা। এটি হলো তাগূতকে অস্বীকার করার চূড়ান্ত পদ্ধতি। জীবিত তাগূতকে কোন প্রকার উপকার না করা এবং তাগূত থেকে কোনভাবেই উপকৃত না হওয়া। তাগূত শাসকের আইন, বিধান ও শাসনকার্যকে বাতিল বলে গণ্য করা এবং তাগূত বিচারক ও আদালতের নিকট কোনো প্রকার বিচার নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। তাগূত ও তার অনুসারীদের নির্মূল করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, "যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর পথে, আর যারা কাফির (মুশরিক, মুরতাদ, মুনাফিক) তারা লড়াই করে তাগূতের পথে। সুতরাং তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল।" [সূরা আন-নিসা, আয়াতঃ ৭৬]