
29/10/2024
স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে জীবননাশও করতে পারে। চলুন, স্ট্রোক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
স্ট্রোক কী?
স্ট্রোক হল মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। মস্তিষ্কের কোষগুলি স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য অক্সিজেন এবং পুষ্টির উপর নির্ভরশীল। যখন রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তখন মস্তিষ্কের কোষগুলি মারা যায় এবং এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
স্ট্রোকের প্রকারভেদ
মূলত দুই ধরনের স্ট্রোক হয়:
* ইস্কেমিক স্ট্রোক: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের স্ট্রোক। এই ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে কোনো রক্তের ক্লট বা অন্য কোনো পদার্থ জমে গিয়ে রক্তের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।
* হেমোর্যাজিক স্ট্রোক: এই ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
স্ট্রোকের লক্ষণ
স্ট্রোকের লক্ষণগুলি হঠাৎ করে দেখা দিতে পারে এবং এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত দেখা যায়:
* মুখ বা শরীরের একপাশে অসাড়তা: হাসির সময় মুখ বাঁকা হওয়া, এক হাত বা পা উঁচু রাখতে না পারা
* বক্তৃতা বা বোঝার সমস্যা: কথা বলতে গিয়ে আটকে যাওয়া, অন্যের কথা না বোঝা
* দৃষ্টি সমস্যা: এক চোখে অন্ধকার দেখা, দ্বিপ্রতীক্ষা
* সুস্থতা হারানো: মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো
* শরীরের একপাশে দুর্বলতা
এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে এক মিনিটও নষ্ট না করে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্ট্রোকের কারণ
স্ট্রোকের অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
* উচ্চ রক্তচাপ: এটি স্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
* হৃদরোগ: হৃদরোগের কারণে রক্তের ক্লট তৈরি হতে পারে যা মস্তিষ্কে গিয়ে আটকে যেতে পারে।
* ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
* উচ্চ কোলেস্টেরল: উচ্চ কোলেস্টেরল রক্তনালীতে প্লাক জমতে পারে এবং রক্তের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
* ধূমপান: ধূমপান রক্তনালীকে সংকীর্ণ করে দেয় এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
* অতিরিক্ত মদ্যপান: অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
* অনিয়মিত হৃদস্পন্দন: অনিয়মিত হৃদস্পন্দন রক্তের ক্লট তৈরি হতে পারে।
* মস্তিষ্কের রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা: জন্মগত বা অর্জিত কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে।
স্ট্রোক প্রতিরোধ
স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য আপনি নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে পারেন:
* রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রক্তের শর্করা স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
* কোলেস্টেরল কমানো: স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
* ধূমপান বন্ধ করা: ধূমপান স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণগুলির মধ্যে একটি।
* স্বাস্থ্যকর খাদ্য: ফল, শাকসবজি, পুরো শস্য, মাছ, বাদাম এবং বীজ খান।
* নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিট মধ্যম তীব্রতার ব্যায়াম করুন।
* ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
* নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ: নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
মনে রাখবেন, স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা। যদি আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ স্ট্রোকের লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে দেরি না করে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
আপনার যদি স্ট্রোক সম্পর্কে আরও জানতে ইচ্ছা হয়, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
স্ট্রোক প্রতিরোধে খাদ্য তালিকা:
কি খাবেন:
* ফল ও শাকসবজি: বিভিন্ন রঙের ফল ও শাকসবজি রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
* পুরো শস্য: বাদাম, বীজ, ওটস, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি হৃদয় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
* মাছ: স্যামন, টুনা, ম্যাকেরেল ইত্যাদি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
* দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস।
* পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: কলা, আঙ্গুর, টম্যাটো ইত্যাদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কি পরিহার করবেন:
* স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট: মাখন, গরুর চর্বি, বেকড পণ্য, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি রক্তনালীতে প্লাক জমতে পারে।
* সোডিয়াম: প্রক্রিয়াজাত খাবার, ক্যান্ডি, চিপস ইত্যাদিতে অতিরিক্ত লবণ থাকে যা রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
* শুক্রাণু: লাল মাংস, অঙ্গরাজ, এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
* শুধুমাত্র চিনি: মিষ্টি, সফট ড্রিঙ্কস, কেক ইত্যাদি রক্তের শর্করা স্তর বাড়াতে পারে।
* অতিরিক্ত অ্যালকোহল: অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
Disclaimer: এই তথ্য শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং কোনোভাবেই চিকিৎসা পরামর্শ হিসেবে গণ্য করা হবে না।
আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।