21/08/2022
বয়স্কদের জয়েন্ট পেইন:-
বয়স্করা সাধারণত যে সকল জয়েন্টের সমস্যায় ভোগেনঃ
মানুষের রোগের ভিতর ব্যথা বা যন্ত্রনা একটি অস্বস্থি ও কষ্টকর সমস্যা। আল্লাহতাআলা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জয়েন্ট বা সন্ধি আমাদের স্বাভাবিক চলাচল এবং কর্ম সম্পাদন করে জীবন নির্বাহের জন্য দিয়েছেন। সাধারনতঃ দুই বা দুইয়ের অধিক হাড় বা তরুনাহিস্থ শরীরের কোন এক জায়গায় সংযোগস্থাপনকারী টিস্যুর মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটি অস্থি সন্ধি বা জয়েন্ট তৈরী করে। আর এই সংযোগ স্থাপনকারী টিস্যুগুলো হচ্ছে মাংসপেশী, টেন্ডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল, ডিস্ক, সাইলোভিয়াল পর্দা বা মেমব্রেন ইত্যাদি। এগুলো জয়েন্টকে শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদান করে, জয়েন্ট এর তল বা সারফেস সমূহকে মসৃন বা পিচ্ছিল রাখে। এছাড়া মেরুদন্ডের দুটি হাড়ের মাঝে অবস্থিত ডিস্ক সক এবজরবার হিসাবে কাজ করে হাড়কে ক্ষয়ে যাওয়া করে। এই সব অস্থি বা জয়েন্টগুলোতে প্রধানত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষয়, প্রধাহ জনিত এবং আভ্যন্তরীন পরিবর্তনের কারনে ব্যথা বেদনা সৃষ্টি করে মানুষের চলাচল কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়।
বৃদ্ধ বয়সে প্রায় সকল সন্ধি বা জয়েন্টে কম বেশী ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যেসব জয়েন্ট শরীরের ওজন বহন করে এবং অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয় যেমনঃ ঘাড়, কোমর ব্যথা, স্কন্ধ অস্থি সন্ধি বা সোল্ডার জয়েন্ট এবং হাটুর ব্যাথা সবচেযে বেশী রোগী পাওয়া যায়।
ঘাড়ে ব্যথা:-
ঘাড়ের ব্যাথা বিভিন্ন কারনে হতে পারে মূলতঃ ঘাড়ের মেরুদন্ডে যে হাড় ও জয়েন্ট আছে তা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যবহারের ফলে তাতে ক্ষয় জনিত পরিবর্তন ঘটে তার লিগামেন্ট গুলো মোটা ও শক্ত হয়ে যায় এবং দুইটি হাড়ের মাঝে যে ডিস্ক থাকে তার উচ্চতা কমে এবং সরু হওয়া শুরু হয়। আবার অনেক সময় হাড়ের মাঝে যে ডিস্ক থাকে তার উচ্চতা কমে এবং সরু হওয়া শুরু হয়। আবার অনেক সময় হাড়ের মাঝে দুরুত্ব কমে গিয়ে পাশে অবস্থিত স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে ব্যাথার জন্ম দিতে পারে। অনেক সময় স্নায়ু রজ্জু সরু হয়ে যেতে পারে। ফলে ঘাড় ব্যাথা ও নড়াচড়া করতে অসুবিধা সহ মাথা ব্যথা কিম্বা ব্যথা হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে ঘাড় ব্যথা ও নড়াচড়া করতে অসুবিধা সহ মাথা ব্যাথা কিম্বা ব্যথা হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিন এই ব্যথা অব্যাহত থাকলে ঘাড়ের মেরুদন্ডের বিকৃতি বা স্পাইরাল ডিফারমিটি দেখা দিতে পারে। এই সব সমস্যা গুলোকে প্রকার ভেদে বিভিন্ন নামে নামকরন করা হয় যেমনঃ সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস, সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসথোসিস, সারভাইক্যাল রিব, স্টিফ নেক, সারভাইক্যাল ইনজুরি ইত্যাদি।
কোমর ব্যথার:-
বার্ধ্যক্য জনিত বয়সে কোমর ব্যথার প্রধান কারন হচ্ছে কোমরের হাড় ও ইন্টারভার্টিক্যাল ডিস্ক এর ক্ষয় এবং কোমরের মাংশ পেশীর দুর্বলতা। কোমর ব্যথার রোগগুলোকে আমরা, লো-ব্যক পেইন/লাম্বার স্পান্ডাইলোসিস/ প্রোলাপস্ ডিস্ক ইত্যাদি রোগ বলে থাকি। এই রোগের কারণ, প্রক্রিয়া ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ঘাড় ব্যথা বা সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস এর অনুরূপ। তবে রোগীর শরীরের অবস্থান/ পোশ্চার সঠিকভাবে রক্ষার গুরুত্ব দিলে অনেক ক্ষেত্রে কোমরের ব্যথা এড়ানো সম্ভব। শক্ত বিছানায় শোয়া, কাত হয়ে বিছানায় শুতে যাওয়া, ওঠা, ভারী জিনিস বহন বা তোলা পরিহার করা, নিয়মিত কোমরের ব্যয়াম করা এবং অসমতল যায়গায়,ওঠা, ভারী জিনিস বহন বা তোলা পরিহার করা, নিয়মিত কোমরের ব্যয়াম করা এবং অসমতল যায়গায় চলাচল না করা ইত্যাদি। কোমরের ব্যায়ামের ভিতরে উল্লেখযোগ্য চীত হয়ে শুয়ে হাটু ভাজ করে পিঠ দিয়ে বিছানায় চাপ দেওয়া, একই অবস্থায় শুয়ে হাটু একত্রে এপাশ ওপাশ চাপ দেওয়া, একই অবস্থায় শুয়ে এক পা এক পা করে হাটু ভাজ করে পেটের সাথে চাপ দেওয়া ইত্যাদি। কোমরের ব্যথার রোগীরা ঔষদের সাথে সাথে থেরাপিষ্ট এর পরামর্শ মোতাবেক শর্টওয়েভ, আলট্রাসাউন্ট, আই, এফটি কোমরের ব্যায়াম ও হাইড্রোথেরাপি অর্থাৎ পানিতে সাতার কাটলে, রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক দ্বারা হিজামা কাপিং থেরাপি ও ড্রাই নিডেলিং, আকুপাংচারসহ অন্যান্য ট্রাডিশনাল চাইনিজ থেরাপির মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন।
স্কন্ধ অস্থি সন্ধি বা সোল্ডাল জয়েন্টে ব্যথা:-
স্কন্ধ অস্থি সন্ধি একটি জয়েন্ট। বয়স ও ব্যবহার জনিত কারনে এই সকল জয়েন্টের আশে পাশের মাংসপেশী, টেন্ডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল ও বার্সাতে প্রদাহ হতে পারে এবং রোগী জয়েন্ট নড়াচড়া করতে ব্যথা অনুভব করে, ফলে জয়েন্ট নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকেন এবং জয়েন্টটি আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে জমতে শুরু করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় জয়েন্ট এর নড়াচড়া করার ক্ষমতা হ্রাস হয় এবং স্টিফনেস ডেভলআপ করে। ডায়াবেটিস, ঘাড়ের ব্যথ ও বুকের সার্জারীর কারনেও এ জোড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাটুর ব্যথা:-
হাটু মানুষের একটি বড় জয়েন্ট। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বয়সজনিত ক্ষয়ের জন্য হাটুর ভিতরের লিগামেন্ট, মিনিসকাস এবং হাড়ের প্রদাহ জনিত পরিবর্তনের ফলে হাটুতে ব্যথার সৃষ্টি হয়ে চলাচলে অসুবিদার সৃষ্টি করে এই রোগকে সাধারনত অষ্টিও আর্থাইটিস বলে বেশী পরিচিত। সাধারনতক আঘাত, শারীরিক ওজন বৃদ্ধি, হরমোন জনিত সমস্যা এই রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারন।