
25/07/2025
বিষয়: মাইলস্টোন স্কুল বিমান দুর্ঘটনা ও শিশুদের মানসিক ট্রমা:
ঘটনায় শিশু ও কর্মচারী মারা যান এবং আহত হন, যার অনেকেই শিশুসহ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল যখন অনেক শিশু খেলার মাঠে, শ্রেণিকক্ষে বা করিডরে অবস্থান করছিল। অনেকেই ঘটনাটি সরাসরি দেখেছে বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনা শিশুদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে এক গভীর মানসিক আঘাত, যা দীর্ঘমেয়াদী ট্রমা বা PTSD এ রূপ নিতে পারে।
শিশুর ট্রমা ও PTSD কী?
PTSD (Post-Traumatic Stress Disorder): PTSD হল এমন এক মানসিক অবস্থা, যা একজন ব্যক্তি যখন কোনো ভয়ানক, জীবন-হানিকর বা ধ্বংসাত্মক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তার মানসিক কাঠামোতে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন ঘটে।
শিশুদের ক্ষেত্রে, এই ট্রমা অনেক সময় বোঝা যায় না । কারণ তারা কথা দিয়ে ব্যথা প্রকাশ করতে পারে না। তাদের আচরণ, ছবি আঁকা, খেলার ধরন, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় ইত্যাদির মধ্যেমে তাদের PTSD লক্ষণ গুলো প্রকাশ করে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল-
শিশুদের PTSD এর লক্ষণ – বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলাম:
🟡 ১ম স্তর – তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া (দুর্ঘটনার ১ম সপ্তাহ) লক্ষণ:
1. আতঙ্ক, কান্নাকাটি- যেমন বারবার কাঁদে, বলে “প্লেন আসবে”
2. বিমানের শব্দে ভয়- হঠাৎ পাশ দিয়ে প্লেন গেলে কেউ কেউ কান বন্ধ করে ফেলে
3. কথা কমিয়ে ফেলা- কোনো কথা বলে না, শুধু তাকিয়ে থাকে
🟠 ২য় স্তর – মাঝারি সময়ের ট্রমা (২ সপ্তাহ থেকে ১ মাস) লক্ষণ:
1. দুঃস্বপ্ন- ঘুমের মাঝে চিৎকার করে উঠে, “আগুন লাগছে!”
2. খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা- কিছুই খেতে চায় না, বমি আসে
3. একা থাকতে না চাওয়া - সবসময় বাবা বা মাকে ধরে রাখে, বাথরুমেও একা যায় না
🔴 ৩য় স্তর – দীর্ঘমেয়াদী PTSD (১ মাসের বেশি) লক্ষণ:
1. স্কুলে না যেতে চাওয়া - স্কুল দেখলেই কাঁদে, বলে “সেই স্কুল, আমি যাব না”
2. একা একা খেলা করা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা- কারো সঙ্গে খেলে না, নিজের পুতুলের সঙ্গে কথা বলে
3. নিজের প্রতি ঘৃণা / আত্মঘাতী ইঙ্গিত- কেউ কেউ বলে “আমি না থাকলেই ভালো হতো”
🔶 শিশুরা ট্রমা কীভাবে প্রকাশ করে (Developmental Expression) লক্ষণ:
1. ৩–৬ বছরের শিশু- আঁকাআঁকি, ঘুমে ভয়, পুতুলের মাধ্যমে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে।
2. ৭–১২ বছর- চুপচাপ থাকা, স্কুলে সমস্যা, দুঃস্বপ্ন, হঠাৎ রাগ
3. ১৩–১৮ বছর- বিষণ্ণতা, একাকীত্ব, আত্মঘাতী চিন্তা, Substance use ঝুঁকি
করণীয় : শিশুর জন্য সহায়তামূলক পরিবেশ তৈরি
🏠 পরিবারে করণীয়:
✅ শ্রবণ ও সাহচর্য: শিশুর গল্প মন দিয়ে শোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন — তারা বলুক বারবার, আপনি শুনুন
✅ ভয়কে স্বাভাবিক করুন: বলুন “ভয় পাওয়া একেবারে ঠিক, আমি তোমার পাশে আছি”
✅ নিয়মিত রুটিন বজায় রাখুন: ঘুম, খাওয়া, খেলাধুলা, পড়াশোনা — এই রুটিন শিশুর মনে নিরাপত্তা তৈরি করে
✅ সৃজনশীল প্রকাশের সুযোগ দিন: আঁকাআঁকি, পুতুল খেলা, গান, নাটক—এগুলো শিশুদের ট্রমা প্রকাশে সহায়ক
✅ পরিবারে সংবাদ বা আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করুন: বারবার টিভিতে দুর্ঘটনার ছবি/ভিডিও দেখানো থেকে বিরত থাকুন।
🏫 স্কুলে করণীয়:
✅ ট্রমা-সেনসিটিভ ক্লাসরুম:
• শিক্ষকেরা যেন শিশুদের আচরণকে শাস্তির চোখে না দেখে
• শিশু যদি কাঁদে, আতঙ্কিত হয় — সহানুভূতির সঙ্গে পাশে থাকুন
✅ কাউন্সেলিং ও Safe Space:
• সপ্তাহে অন্তত একদিন একজন পেশাদার কাউন্সেলর যেন স্কুলে ভিজিট করেন
• শিশুদের জন্য একটি ‘Calm Room’ তৈরি করা যেতে পারে
✅ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক:
• শিক্ষকদের জন্য ট্রমা-সচেতনতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়ার্কশপ আয়োজন করুন
✅ সামাজিক পুনর্বাসন:
• দলগত কাজ, গ্রুপ আর্ট, মিউজিক থেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুদের মানসিক সংযোগ ফিরিয়ে আনুন
কখন বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে?
1. ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন- ২ সপ্তাহের বেশি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট দেখান
2. আত্মঘাতী ইঙ্গিত যে কোনো সময় তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ
3. স্কুল-খেলাধুলা-সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ৩ সপ্তাহের বেশি ডেভেলপমেন্টাল থেরাপি প্রয়োজন
4. বার্ন ইনজুরি + PTSD একত্রে চিকিৎসা দরকার বার্ন ইউনিটে সাইকোলজিকাল সাপোর্ট সংযুক্ত করুন
🔶 বাংলাদেশে সহায়তা পাওয়ার স্থান:
সরকারি:
• জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (NIMH), ঢাকা
• BSMMU Child Psychiatry Unit/ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
• Shishu Hospital Mental Health Cell (Proposed). Lighten World
Writer: Md. Ashadujjaman Mondol
Clinical Psychologist
📞 পরামর্শ ও থেরাপির জন্য যোগাযোগ করুন:
Lighten World
📲 +880 18 7975 9064