06/10/2025
বিষয়: অটিজম শিশুর পিতামাতার মানসিক সমস্যা ও করণীয়
১. মানসিক চাপ (Stress)
অটিজম শিশুর আচরণ, শেখার ধরণ, এবং দৈনন্দিন যত্ন নেওয়া অনেক জটিল। ফলে পিতামাতারা ক্রমাগত মানসিক চাপ অনুভব করেন।
🔹 উদাহরণ:
একজন মা প্রতিদিন তার সন্তানের ঘুম, খাওয়া ও রুটিন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে নিজের বিশ্রাম ও সামাজিক জীবন সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন।
২. দোষবোধ (Guilt)
অনেক পিতামাতা মনে করেন তাদের কোনো ভুলের কারণে শিশুর অটিজম হয়েছে।
🔹 উদাহরণ:
একজন বাবা ভাবেন— “গর্ভাবস্থায় আমি বেশি কাজ করেছি, তাই হয়তো সন্তানের সমস্যা হয়েছে।” এই ধরনের চিন্তা ক্রমে হতাশা তৈরি করে।
৩. বিষণ্ণতা (Depression)
অটিজম শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টি ও একাকীত্ব পিতামাতার মধ্যে বিষণ্ণতা তৈরি করে।
🔹 উদাহরণ:
মা প্রতিদিন কাঁদেন কারণ তিনি ভাবেন, “আমার সন্তান কখনোই অন্যদের মতো স্কুলে যাবে না।”
৪. আতঙ্ক ও উদ্বেগ (Anxiety)
অটিজম শিশুর আচরণ কখন কেমন হবে তা অনিশ্চিত থাকে। পিতামাতারা সবসময় “ready mode”-এ থাকেন।
🔹 উদাহরণ:
শিশুটি বাইরে হঠাৎ চিৎকার শুরু করলে মা-বাবা আতঙ্কে পড়েন, লোকজন কী বলবে এই চিন্তায় থাকেন।
৫. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (Social Isolation)
অনেকে অটিজম শিশুকে নিয়ে বাইরে যেতে সংকোচ বোধ করেন। সমাজে সমালোচনার ভয়ে তারা সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেন।
🔹 উদাহরণ:
বিয়েতে গেলে অন্যরা সন্তানের “অস্বাভাবিক আচরণ” নিয়ে হাসাহাসি করে, তাই তারা আর কোথাও যান না।
৬. দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়েন (Marital Conflict)
শিশুর যত্নের ভারসাম্য নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও দোষারোপ শুরু হয়।
🔹 উদাহরণ:
স্ত্রী বলেন, “তুমি কখনো সাহায্য করো না।” আর স্বামী বলেন, “তুমি সবকিছুর জন্য আমাকে দোষ দাও।”
৭. আর্থিক চাপ (Financial Stress)
থেরাপি, স্কুলিং, চিকিৎসা—সবকিছুর খরচ অনেক বেশি। অনেক পরিবার এতে আর্থিকভাবে ভেঙে পড়ে।
🔹 উদাহরণ:
বাবা মাসে আয়ের বেশিরভাগ অংশ থেরাপিতে খরচ করেন, ফলে অন্য প্রয়োজন মেটাতে পারেন না।
🌿 করণীয়
✅ ১. সঠিক তথ্য ও সচেতনতা অর্জন
অটিজম সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করুন। পেশাদার (মনোবিজ্ঞানী, বিশেষ শিক্ষাবিদ, স্পিচ থেরাপিস্ট) থেকে পরামর্শ নিন।
✅ ২. সমর্থন গোষ্ঠীতে যোগদান (Support Group)
অন্য অটিজম শিশুর পিতামাতাদের সঙ্গে মিশে অভিজ্ঞতা ভাগ করুন। এতে একাকীত্ব কমে, মানসিক সাপোর্ট মেলে।
✅ ৩. নিজের মানসিক যত্ন নেওয়া (Self-care)
বিশ্রাম, ঘুম, বিনোদন, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো—এইগুলো মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
✅ ৪. মনোবৈজ্ঞানিক পরামর্শ (Counseling)
পিতামাতার জন্য কাউন্সেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে তারা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবিলা করতে শেখেন।
✅ ৫. দাম্পত্য সমর্থন বৃদ্ধি
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সহযোগিতা করুন। দোষারোপ না করে টিম হিসেবে কাজ করুন।
✅ ৬. পরিকল্পিত রুটিন তৈরি
শিশুর রুটিন নির্দিষ্ট করলে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি কমে, এবং পিতামাতার উদ্বেগও হ্রাস পায়।
✅ ৭. আশা ও ধৈর্য ধরে রাখা
অটিজম শিশুদেরও শেখার ও উন্নতির সম্ভাবনা থাকে। ধৈর্য ধরে ছোট ছোট অগ্রগতি উদযাপন করুন।
Address: House 605(2nd floor), Road 9, Avenue 6, Mirpur DOHS
Contact for services +880 18 7975 9064