08/08/2025
ইরেকটাইল ডিসফাংশন ও প্রজনন ক্ষমতা: ভুল ধারণা ভাঙুন, সম্পর্ক বাঁচান-
বাংলাদেশের অনেক পরিবারে যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা এখনও নিষিদ্ধের মতো। বিশেষ করে পুরুষের যৌন সমস্যা—ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা ইডি (Erectile Dysfunction)—নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়। অথচ এই সমস্যা শুধু পুরুষের নয়, এটি দাম্পত্য সম্পর্ক, পারিবারিক সুখ-শান্তি এবং সন্তানধারণের সম্ভাবনার সঙ্গেও জড়িত।
ইডি কী এবং এটি কীভাবে প্রজননে প্রভাব ফেলে-
ইডি হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন পুরুষ যৌন মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যায়ে লিঙ্গ উত্থান ঘটাতে বা ধরে রাখতে পারেন না। এটি সরাসরি শুক্রাণু উৎপাদনে প্রভাব ফেলে না, তাই অনেক পুরুষ ইডি থাকা সত্ত্বেও শুক্রাণুর মান ভালো রাখেন এবং সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা (fertility) বজায় থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো—যৌন মিলনই যদি ঠিকভাবে না হয়, গর্ভধারণের সুযোগ কমে যায় বা একেবারেই হয় না এমন না, অনেকেই বাবা হন পুরুষাঙ্গ পার্যাপ্ত শক্ত না হয়ে ও। কিন্তু সন্তান হলেও সঙ্গীর যৌন তৃপ্তি ও মানসিক চাহিদা পূরণ না হলে সম্পর্কের ভাঙন দেখা দিতে পারে। কারণ স্ত্রী নারী হিসাবে তার ও চাহিদা আছে সে মানুষ যান্ত্রিক কাঠামো নয়।
ইডি এবং ফার্টিলিটি: বাস্তব উদাহরণ-
বাংলাদেশের অনেক পুরুষ এমন আছেন, যারা ইডিতে ভোগেন কিন্তু শুক্রাণুর মান ভালো থাকায় কোনোভাবে স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছেন। সন্তান জন্মের পর তারা মনে করেন, "এখন আর সমস্যা নেই"—এবং যৌন জীবনে সঙ্গীর চাহিদা অবহেলা করেন। কিন্তু মনে রাখুন—নারীও মানুষ, তারও যৌন আনন্দ ও শারীরিক তৃপ্তির অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র সন্তান নেওয়াই দাম্পত্য জীবনের লক্ষ্য নয়, বরং সুস্থ যৌন সম্পর্ক দাম্পত্য সুখের অন্যতম ভিত্তি। আবার নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায় মা হওয়ার পর্যাপ্ত শারীরিক সুখের অভাবে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন কিন্তু ভাবেন আমি তো মা, তাই নিজের অবস্থার অবনতি করেন।
ইডির কারণ: শারীরিক, মানসিক ও জীবনযাপন এর দিকে আলোকপাত :-
১.শারীরিক কারণ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন, হৃদরোগ ও রক্তনালীর সমস্যা, হরমোনের অসামঞ্জস্য (বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়া)
২.মানসিক কারণ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ,বিষণ্ণতা, দাম্পত্য কলহ বা দূরত্ব,জীবনযাপনের কারণ,ধূমপান,অতিরিক্ত মদ্যপান,ব্যায়ামের অভাব,অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
ইডি অনেক সময় বড় রোগের ইঙ্গিত-
বিশেষজ্ঞরা বলেন ইডি অনেক সময় শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বড় রোগের প্রথম সতর্ক সংকেত। যেমন রক্তনালীর সমস্যা, হৃদরোগ, বা হরমোনের গুরুতর ভারসাম্যহীনতা। কম টেস্টোস্টেরন একদিকে যৌন ক্ষমতা কমায়, অন্যদিকে শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস করে—ফলে সন্তানধারণের সম্ভাবনাও কমে যায়।
যদি ইডি থাকে এবং সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকে
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় জরুরি। সাধারণত চিকিৎসকরা নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেন
1. রক্ত পরীক্ষা – হরমোনের মাত্রা যাচাই করতে
2. জীবনযাত্রার পরিবর্তন – সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম
3. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট – মেডিটেশন, কাউন্সেলিং
4. ওষুধ বা থেরাপি – ইডি কমাতে সহায়ক চিকিৎসা, সেক্ষেত্রে ফোকাসড শক-ওয়েভ থেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী।
5. ফার্টিলিটি টেস্ট – শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা যাচাই।
দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষায় যৌন তৃপ্তি জরুরি-
ইডি থাকা সত্ত্বেও যদি সন্তান হয়, তাতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়—এমন ভাবা ভুল। সন্তানের পাশাপাশি সঙ্গীর শারীরিক আনন্দ ও মানসিক তৃপ্তি নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যৌন মিলন শুধু প্রজননের জন্য নয়—এটি ভালোবাসা, ঘনিষ্ঠতা এবং মানসিক সংযোগের অন্যতম মাধ্যম। নারীরও যৌন আনন্দ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের যৌন সন্তুষ্টি না থাকলে মানসিক দূরত্ব ও সম্পর্ক ভাঙনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজন হলে চিকিৎসা, পরামর্শ বা যৌন থেরাপির মাধ্যমে যৌন জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা উচিত।
ইডি মানেই বন্ধ্যাত্ব নয়, কিন্তু এটি সন্তানধারণের পথে বড় বাধা হতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি অবহেলা করলে দাম্পত্য সুখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই লজ্জা বা ভয় না করে সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসা নিন, সমস্যা আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন, আমরা আছি আপনার পাশে, সমস্যা সমাধানের সহয়তায়।
সঙ্গীর চাহিদাকে গুরুত্ব দিন, এবং সুস্থ যৌন জীবন গড়ে তুলুন।