05/03/2024
স্টেম সেল পুষ্টি চিকিৎসাঃ
দেহের প্রতিটি অংশ কোষ (Cell) দিয়ে তৈরি । প্রতিটি কোষের “বায়োলজিক্যাল লাইফ” রয়েছে। প্রতিাট কোষের নির্দিষ্ট পুষ্টি (এমাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, গ্লুকোজ, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি) ও দৈনিক পরিমান (Daily Required) রয়েছে।
দেহের সকল কোষ একই “প্রান রাসায়নিক” কাজ সম্পন্ন করার পর ভিন্ন ভিন্ন নির্বাহী আদেশ কার্যকরী করে থাকে। এবং দেহ কোষ গুলির মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দেহ সুনির্দিষ্ট ভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়।
যেমন অন্তনালীর কোষ গুলো মুখগহবর দিয়ে আসা সকল খাবার কে হজম, বিশ্লেষন ও শোষন করে থাকে।
লিভার এর কোষ (হেপাটোসাইট) গুলো অন্ত্রনালী দ্বারা শোষিত সকল খাবার দেহের সিসটেম পরিচালনার উপযোগী করে তোলে। যেমন প্রয়োজনীয় হরমোন, এনজাইম প্রোটিন সংশ্লেষন করে।
হৃদপেশীর কোষ গুলো (মাইয়োসাইট) অবিরত ভাবে সংকোচন ও প্রসারন এর মাধ্যমে সাড়া দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট রাখে। হৃদপেশি কোষের স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি সংকোচন ও প্রসারন ঘটলেই এটিকে “উচ্চ রক্তচাপ” বলে।
রক্ত সরবরাহকারী নালী (শিরা,ধমনী ও কৌশিক জালিকা) গুলো “এন্ডোথেলিয়াম কোষ” তৈরি। দেহের প্রায় ১লক্ষ মাইল নালী এই কোষ দিয়ে তৈরি। এই রক্তনালী দিয়ে রক্ত কোষ , পুষ্টি ও অক্সিজেন দেহের প্রতিটি কোষে পৌঁছাতে পারে।
রক্ত কোষের কাজ হচ্ছে অক্সিজেন গ্রহন ও কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন । ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস সহ সব ধরনের টক্সিন কে ধ্বংশ করে দেহ কোষ কে নিরাপত্তা প্রদান রক্ত কোষের প্রধান কাজ।
কিডনি কোষ দেহ কোষে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন বর্জ পদার্থ নিষ্কাষন করে দেহ কে বিষ মুক্ত ও ভারসাম্য দেয়।
ফুসফুস এর এলভিওল কোষ গুলি বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহন করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে দেহ কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ ও কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত করে।
স্নায়ু কোষ গুলো দেহের বাইরে ও ভিতরে সমস্ত যোগাযোগের কেন্দ্র বিন্দু (মস্তিষ্ক) হিসাবে কাজ করে। স্নায়ু কোষের নির্দেশনা ছাড়া দেহের একটি কার্য ও সম্পাদন সম্ভব নয়।
বিভিন্ন গ্রন্থি কোষ গুলো দেহের বিভিন্ন হরমোন,এনজাইম ও প্রোটিন তৈরি করে। যেমন প্যাংক্রিয়াসের বিটা সেল প্রোটিনধর্মী হরমোন ইনস্যুলিন তৈরি করে। থাইরয়েড গ্রন্থি প্রোটিনধর্মী হরমোন থাইরক্সিন তৈরি করে। কিডনির এড্রেনাল গ্ল্যান্ড এলডোসটেরন, কর্টিসল,টেসটোসটেরন প্রভৃতি ফ্যাটধর্মী হরমোন তৈরি করে। প্রতিটি প্রোটিন এমাইনো এসিডের চেইন এবং প্রতিটি ফ্যাট ,ফ্যাটি এসিড এর চেইন। বিভিন্ন ধরনের হরমোন,এনজাইম ও প্রোটিন দেহ কোষের প্রান রাসায়নিক কাজ গুলো সচল ও অবিরত রাখে। যে কোন একটি হরমোন,এনজাইম,প্রোটিন তৈরি না হলে দেহ কোষের প্রান রাসায়নিক কার্য বিঘœ ঘটে এবং কোষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন হরমোন “ইনসুলিন” তৈরি না হলে দেহে “ডায়বেটিস” রোগ হয়।
প্রতিটি কোষের প্রান রাসায়নিক কার্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নির্দিষ্ট পুষ্টি (এমাইনো এসিড,ফ্যাটি এসিড, গ্লুকোজ,ভিটামিন,মিনারেল ও পানি) এবং অক্সিজেন এর উপস্থিতিতে প্রতিটি কোষ সুনির্দিষ্ট নীতিতে লক্ষ লক্ষ প্রান রাসায়নিক কার্য সম্পন্ন করে। প্রতিটি প্রান রাসায়নিক কাজের বিপরীতে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নির্বাহী কাজ।
বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে,দেহের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ একটি মাত্র কোষ হতে সৃষ্টি হয়েছে। বাবার একটি পুঃজনন কোষ (স্পার্ম), এবং মায়ের একটি স্ত্রীজনন কোষ এর মিলনের ফলে মাতৃ জঠরে যে নতুন কোষের সৃষ্টি হয় সেটি হচ্ছে “ব্লাস্টোসিষ্ট”। এই ব্লাস্টোসিষ্ট ধারাবাহিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে একটি পুর্নাঙ্গ “মানব শিশু” তে পরিনত হয়। এই ব্লাস্টোসিষ্ট এর প্রাচীর নীচ স্তরে বিশেষ ধরনের কোষ সৃষ্টি হয়। এই কোষ গুলোই “স্টেম সেল”। এই স্টেম সেল নিজেরা বিভাজিত হয় এবং পর্যায় ক্রমে একটি নির্দিষ্ট স্টেম সেল নির্দিষ্ট একটি অঙ্গে পরিনত হয়। মানব শিশুর পূর্ন বিকশিত হওয়ার পর দেহের সবত্র স্টেম সেল লুকায়িত অবস্থায় থাকে। প্রতিটি অঙ্গ কোষের নির্দিষ্ট জীবন কাল রয়েছে। জীবন চক্র শেষে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। কিন্তু স্টেম সেল দীর্ঘ দিন বেঁেচ থাকে এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বিভাজিত হয়। অঙ্গ কোষ অসুস্থ হলে মানুষ রোগ মুক্ত হতে পারে,কিন্তু স্টেম সেল অসুস্থ হলে রোগ মুক্তি অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রতিটি কোষের অসুস্থতার প্রধান কারন “পুষ্টিহীনতা”। অন্য কারন গুলো হচ্ছে, বিকিরন (X-Ray, MRI, CT-SCAN, PET-SCAN etc),ডায়গনষ্টিক এজেন্ট, স্টেরয়েড ড্রাগ, ক্যামিক্যাল ফুড,অলটার ফুড।
কোষের অক্সিজেন এর অপরিহার্যতাঃ
গ্লুকোজ,এমাইনো এসিড,ফ্যাটি এসিড, কোষ এর সাইটোপ্লাজমে বিপাক হয়ে পাইরুভেট এ পরিনত হয়। এবং সামান্য পরিমান রাসায়নিক শক্তি এটিপি তৈরি হয়। অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পাইরুভেট “ক্র্যাব সাইকেল” এ অংশ গ্রহন করে। অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে পাইরুভেট ‘ল্যাকটিক এসিড’এ পরিনত হয়।
ক্র্যাব সাইকেল হচ্ছে কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায় (power house of cell) সংগঠিত ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়া। ক্র্যাবস সাইকেলে প্রবেশের পূর্বে পাইরুভেট বিপাক হয়ে “এসিটাইল কোয়া (Acytile CoA)পরিনত হয়। ক্র্যাবস সাইকেল চলার সময় ধারাবাহিক ভাবে “এনজাইম ও কো-এনজাইম ”এর সহায়তায় হাইড্রোজেন আয়ন বা সমপরিমান ইলেকট্রন বস্তু টি থেকে স্থানান্তর হয়ে একটি অক্সিজেন অনু তৈরি করে। অক্সিজেন অনু হাইড্রোজেন এর সাথে মিলে পানির অনু তৈরি করে। কোষের হাইড্রোজেন আয়ন বা সমপরিমান ইলেকট্রন স্থানান্তর এর মাধ্যমে অক্সিজেন অনু তৈরির প্রক্রিয়া কে “রেসপাইরেটরী চেইন” বলে। কোষের “রেসপাইরেটরী চেইন ” বন্ধ হলে কোষের মৃত্যু ঘটে
ধন্যবাদান্তে
Copy Right:
Dr.Shebendra Karmakar
Ph.D in Natural Health,USA