10/04/2021
ইংরেজি তে একটি প্রবাদ আছে, 'You are what you eat'। এই প্রবাদটি আমাদের বলে যে ফিট এবং স্বাস্থ্যকর হওয়ার জন্য আপনার ভাল খাবার খাওয়া দরকার। অর্থাৎ , আপনি যদি ভাল খাবার খান তবে আপনি স্বাস্থ্যকর হবেন, খারাপ খাবার খেলে আপনি অস্বাস্থ্যকর হবেন, আপনার ভাল খাবার খাওয়া আপনাকে ভালো বোধ করার জন্য দরকার। শরীরের পাশাপাশি মনের জন্য খাদ্য দরকারি। সহজ কথায় বলতে গেলে, আপনি যা খাচ্ছেন তা সরাসরি আপনার মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা এবং শেষ পর্যন্ত আপনার মেজাজকে প্রভাবিত করে।
একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য আমাদের পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে এবং আরও সতর্ক বোধ করতে সহায়তা করে । এর সাথে সাথে তা আমাদের মনোযোগের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
অপরদিকে, অপর্যাপ্ত ডায়েট ক্লান্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সমস্যা এবং প্রতিক্রিয়া সময়কে ধীর করতে পারে। একটি খারাপ ডায়েট স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, এমনকি তা হতাশার কারণও হতে পারে।
পুষ্টি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। চিনি এবং অতি-প্রক্রিয়াজাতক্রিত খাবার শরীর এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তীতে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতাসহ অন্যান্য মেজাজের ব্যাধিগুলি তৈরিতে অবদান রেখে থাকে। খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, আমরা যখন স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা বোধ করি তখন প্রায়শই অতিপ্রক্রিয়াজাতক্রিত খাবার যা সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায় সেগুলোই খেয়ে নেই। ব্যস্ত বা কঠিন সময়কালে, এক কাপ কফি দিয়ে সকালের সম্পূর্ণ নাস্তা সেরে ফেলি । একি ভাবে তাজা ফল এবং শাকসবজির পরিবর্তে উচ্চ ফ্যাট, উচ্চ-ক্যালোরির ফাস্ট ফুডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরি। যার ফলে দিনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাবার বাদ পরে যায় বা আমরা সঠিক ও যথাযথ খাদ্যগুলো পুরোপুরি এড়িয়ে যাই।
মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা এবং খাদ্য:
আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন এর তথ্যমতে, আমাদের অন্ত্রের একাধিক ব্যাকটিরিয়া কতগুলো নিউরো-রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে থাকে যা মস্তিষ্কে মেজাজ সহ শারীরবৃত্তীয় এবং মানসিক প্রক্রিয়াগুলির নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে শরীরের ৯৫% সেরোটোনিন অন্ত্র ব্যাকটিরিয়া দ্বারা উৎপাদিত হয় যা আমাদের মেজাজ ঠিক রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে । যার ফলে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকার ফলে এসব উপকারী অন্ত্র ব্যাকটিরিয়া গুলো ঠিকমতো কাজ না করার ফলে মানসিক বিপর্যয় আরও দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ি হয়।
আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, হতাশাগ্রস্থ বা চাপের মধ্যে থাকা লোকেরা হয় খুব বেশি, না হয় খুব কম খাদ্য গ্রহণ করে। পরিণতিতে আলস্য অথবা ওজন বৃদ্ধির মতো জটিল সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে হয়। ফলে উভয় ক্ষেত্রেই, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতার সময়কালে একটি দুর্বল বা খারাপ ডায়েট কেবল বিষয়গুলিকে আরও খারাপ করে তোলে। এটি একটি দুষ্ট চক্র যা চলতেই থাকে।
আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ মস্তিষ্কের জন্য উপকারি। বিভিন্ন রকমের বাদাম, বীজ এবং শিম জাতীয় খাবার, যেমন মটরশুটি এবং মসুর ডাল মস্তিষ্কের জন্য উপকারি খাবার।
অনেক সময়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আমরা একা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কারও কারও আবার ইটিং ডিসঅর্ডার দেখা দেয়। যদি এমন হয় যে আপনি যদি খুব বেশি বা খুব কম খাচ্ছেন , আপনার খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে, তবে আপনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তবে এমন অবস্থায় দক্ষ পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যেকোনো মানসিক সমস্যায় সাইকোথেরাপী ও কাউন্সেলিং অথবা সাইকিয়াট্রিক কন্সাল্টেশনের জন্য TRIN এ যোগাযোগ করুনঃ ০১৫৫২-৫২৫২৫২
অ্যাপয়েন্টমেন্টঃ সোমবার - শনিবার, সকাল ১১.০০ - সন্ধ্যা ৭.০০