Khulna Health Club

Khulna Health Club সকল রোগের ট্রিটমেন্ট শেখার জন্য Doctor's Academy এর Treatment Guideline কোর্স

25/01/2024

আমি লিখতে ভয় পাই।
তবুও আমার সন্তানতূল্য চিকিৎসকদের দূর্গতির চিত্র এতটাই ব্যথিত করে তুলেছে যে না লিখে পারছি না। তবে আগেরভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারও পছন্দ না হলে অশালীন কথা না বলে শুধরে দিন কিংবা নিরব থাকুন।

১/ চিকিৎসককে তাঁর আত্মমর্যাদা অর্জন এবং রক্ষা করতে হবে নিজেকেই -- কেউ করে দিবে না।

২/ (নবীন চিকিৎসক) - তোমার চলন-বলন, Gesture- Posture - পোশাক - পরিচ্ছদ, আচরন- ব্যবহার, ভাষা- শব্দচয়ন-অঙ্গভঙ্গী, হাস্যরস- কৌতুক সবকিছুই যেন তোমার চিকিৎসক স্ট্যাটাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন হয়। এগুলো রোগীর সাথে থাকবার সময়ের কথা বলছি।
মফস্বলে যারা আছেন আপনারা যেখানে সেখানে (পানের দোকান-মুদি দোকান, সাধারণ ক্লাব, খেলার আসর ইত্যাদি) বসবেন না। ধূমপান (আপনার জন্য নিষিদ্ধ) জনসমক্ষে কখনো না। আপনার সমপর্যায়ের ব্যক্তি ব্যতীত কারও সাথে মিসতে যাবেন না। তবে সাধারণ মানুষকে ঘৃনা করবেন না। যিনি প্রয়োজনে আপনার নিকট আসবেন তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করুন। মোট কথা একটু রিজার্ভ অথচ পরোপকারী হোন। বিনোদনের জন্য ক্ষুদ্র কয়েকজন ঠিক করে নিন তাতেই চলবে।
৩/ বিপি মেশিন গলায় বা কাঁধে জড়িয়ে হেলতে দুলতে, জিন্স টি- শার্ট পরে, চপ্পল টাইপের স্যান্ডেল পরে কখনো ডিউটিতে যেও না। একটি ক্লাসিক প্যান্ট, ফুল বা হাফ শার্ট (লাট না হয়), রোজ নিজে কালির ঘষা দেয়া সু পরে হাসপাতালে যেও। বিপি মেশিন নার্স নিয়ে যায়,প্রয়োজনে এটি মুড়িয়ে তুমি হাতে নিতে পারো। স্টেথোস্কোপ তোমার হাতে ভাজ করা, গলায় সামনে বা দুপাশে ঝুলানো থাকতে পারে, এ্যাপ্রোন বা কোটের পকেটে থাকতে পারে। তবে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে হলে অবশ্যই একটি ধবধবে সাদা, ইস্ত্রি করা দেহের সাথে মানানসই সাইজের এপ্রোন পরে থাকবে। তোমার চুলের ছাট অবশ্যই সিনেমা, ফুটবল বা ক্রিকেট হিরোদের মতো হবে না। দাঁড়ি রাখলে সুন্দর করে না রাখলে রোজ সেভ করে আসবো। মোটকথা উসকোখুসকো নয়। দেখবে তোমার মর্যাদা অনেক বেড়ে যাবে। তোমার সাথে রোগীর লোকেরা সম্মান করে কথা বলবে।

৪/ এবার ডিউটি শুরু কর। তোমার সহকর্মীর কাছ থেকে দায়িত্ব ভালো করে বুঝে নেও-- ভাসা- ভাসা নয়।

৫/ এবার তুমি রোগীর কাছে যাবে ফলো - আপ দিবে। যে রোগীর কাছে যাবে তার কেস-হিস্ট্রি টা একটু দেখে নেও। নার্স-বয়দের আগেই পাঠিয়ে তুমি দু'পা পিছনে থাকো। কেবিনের লোক তারা বাইরে যেতে অনুরোধ করবে। নিতান্ত প্রয়োজন হলে একজনের বেশি থাকবে না। আসলে কোন মানসম্মত চিকিৎসার স্হানে রোগী দেখার সময় রোগীর লোক থাকেনা। তথ্যের প্রয়োজন হলে ভিন্নভাবে তাদের সাথে বসা হয়।

৬/ তুমি রোগীর কেবিনে ঢুকেই সালাম দিবে। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ কোন রোগী হলে কিংবা কেউ থাকলে।
তার আবাস কোথায় জিজ্ঞাসা করতে পারো--কখন ভর্তি হলেন ইত্যাদি বলে একটা সংযোগ স্হাপন করো।
এবার মামুলি হলেও তিনটি অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কর--
√ কেমন আছেন-- ভালো লাগে?
√ খেতে পারছেন বা খেয়েছেন?
√ রাতে ভালো ঘুমিয়েছেন?
( এই তিন উত্তর যার হ্যাঁ বাঁচক তিনি খুব খারাপ রোগী নন,অসন্তুষ্টও নন, হলে বলতেন)
এবার রোগীর হিস্ট্রি অনুযায়ী তার কাছে প্রশ্ন কর। তার উপসর্গগুলো আগের চেয়ে কমল কিনা? তাঁর শরীরে যে লক্ষনগুলো ছিল সেটা কমেছে কিনা -- ইত্যাদি শুধু শুনে আসলে হবে না। নোট করে রাখতে হবে।( দূর্ভাগ্যবশত খুবই কম নোট করা হয়)। এখন প্রাইভেট হাসপাতালে অনেক বেশি সংখ্যার কাগজের বহর। উত্তম হবে চিকিৎসার বাম পার্শ্বে নোট থাকলে। এই রেকর্ডের মূল্য অপরিসীম। রোগী পরীক্ষার সময় তুমি অবশ্যই রোগী শায়িত অবস্থায় তার ডান পার্শ্বে থেকে পরীক্ষা করবে। প্রাইভেট হাসপাতালে অনেক জায়গায় রোগীর ডানপার্শ্বে ফাঁকা জায়গা থাকে না। (প্রয়োজনে বেড ঘুড়িয়ে নিলেই হয় - আমি তাই করি)। তা নাহলে ক্লিনিক্যাল এক্সাম সম্পূর্ণ হবে না, ভালো হবে না, ভূল হবে। রোগীকে যত্নের সাথে পরীক্ষা করবে যেন রোগী বুঝতে পারে তুমি তার প্রতি সহানুভূতিশীল। রোগীকে তোমার আপন জন মনে করে সেবা দেবার চেষ্টা করবে। কিছুই না করেও একটু মাথায় হাত বুলিয়ে "বাবা ঠিক হয়ে যাবেন" বললেই রোগী অনেক খুশি।

৭/ রোগীর ফলো - আপ শেষে রোগীর লোকদের ব্রিফিং করতে হবে। যতটুকু তোমার পক্ষে বলা সম্ভব ততটুকুই বলবে, বেশি বা ভুল বলার দরকার নেই, না জানলে বলবে স্যার এসে জানাবেন। ছোট ছোট ব্যখ্যা বিশ্লেষণ রোগীর লোকেরা আশা করে, তাছাড়া টাইম টু টাইম তাদেরকে অবহিত করা চিকিৎসকের দায়িত্ব। রোগী উন্নতির দিকে হলে তাও বলবে, অবনতি হলে তাও বলবে। সর্বদা তাদের অবহিত করা হলে চিকিৎসার অবহেলার প্রশ্ন আসবে না। এরপর কনসালট্যান্ট দেখবেন তিনিও দেখা শেষে সিদ্ধান্ত দিবেন এবং রোগীর লোকেদের ব্রিফিং করবেন। এতে রোগীর পরিনতি যাই ঘটুক অভিযোগ উঠবে না। রোগী এখানে সন্তুষ্ট না হলে।অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলে আপত্তি করবে না, কেননা সেটা তার অধিকার। তবে হ্যাঁ, সব রোগী নেবার মতো অবস্থায় থাকে না ফলে এই রিস্ক এসেসমেন্ট করতে হবে এবং রিস্ক হলে সেটাও বুঝিয়ে বলতে হবে।

৮/ সমস্যা হচ্ছে এখন প্রাইভেট কিংবা সরকারি অনেক হাসপাতালেই (ছাত্রছাড়া) রোগীর হিস্ট্রি লেখা হয়না। ফলে যে প্রথমবার রোগীটির কাছে যায় সে তার সম্পর্কে কিছুই বিস্তারিত জানেনা। তাই প্রথম যে রোগী রিসিভ করে তারই কর্তব্য হিস্ট্রি লিখে রাখা। তা না হলে পরে যারা আসেন তারা বুঝতে পারেন না, আবারও শুরু করতে হয়, অনেক কিছু বাদ যায়, চিকিৎসা - বিভ্রাট ঘটে।রোগী যেহেতু কনসালট্যান্ট এর তিনি রাগান্বিত হন, তোমাকে বকা-ঝকা সইতে হয়।

৯/ আমিও ছাত্র থাকা কালে মনে করতাম রোগীর হিস্ট্রি নিয়ে স্যারগন এত কেন পীড়াপীড়ি করে। এখন আমি দেখছি হিস্ট্রিতেই ( % বললাম না বিতর্ক হবে) অনেক রোগ ডায়াগনোসিস। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট কি করেন! তুমি সাইকিয়াট্রিস্ট নও বলে তোমার হিস্ট্রি নিতে হবে না তা নয়। আর তোমার দেখা মেডিক্যাল প্রব্লেমের (% বলা যাবে না ~৫৫% এজমা রোগীর Anxiety আছে, ~65% CKD Depression আছে, Panic Attack এর রোগী ICU তে দেখেছি -- ইত্যাদি Tip of ice burgh) বিরাট অংশের সাইকোলজিক্যাল প্রব্লেম আছে। হিস্ট্রি না নিলে জানতে পারবে না।
হ্যাঁ, তার সাথে তোমার শারীরিক পরীক্ষা লাগবে, ল্যাব- টেস্ট লাগবে। তবে হিস্ট্রি - এক্সাম ভালো হলে ল্যাব- নির্ভরতা কমে যাবে।

১০/ কনসালট্যান্টের সাথে রাউন্ডে গিয়ে রোগীর SalientFeature অর্থাৎ শর্ট হিস্ট্রি, ফিজিক্যাল ফাইন্ডিংস এবং ল্যাব রিপোর্ট হয়ে থাকলে মেমোরি থেকে বলতে পারলে ভালো (চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে ডেভেলপ করবে) না হয় দেখেই সুন্দর উপস্থাপন করতে হবে। কনসালট্যান্ট সেটা আশা করেন এবং সংগত।এভাবেই মেডিক্যাল সাইন্স এগিয়েছে। তারপর কনসালট্যান্ট রোগীকে প্রশ্ন করবেন, শরীর পরীক্ষা করবেন, ল্যাব টেস্টর প্রয়োজন হলে বলবেন। তিনি তোমাকে জিজ্ঞেস না করলে তুমি আগ বাড়িয়ে ল্যাব টেস্টের ইচ্ছা ব্যক্ত করো না ওটা বিরক্তিকর। এরপর কনসালট্যান্ট রোগকে আস্বস্ত করবেন, রোগীর লোকদেরকে ব্রিফিং করবেন, তুমিও সেটি শিখতে থাকো। এভাবেই তোমার চাকরীর সাথে সাথে ট্রেনিং হয়ে যাবে।
১১/ ডিউটির বাইরে তুমি যেখানে যেভাবেই থাকো--- পড়, পড়, পড়। (খাওয়া ঘুম বাদে) নস্ট করার মতো সময় তোমার নেই।
যখনই তুমি তোমার ডেস্কে বসবে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যে সকল রোগী তুমি দেখছ তাদের ডায়াগনোসিস অনুযায়ী ঐ সকল রোগগুলি Davidson থেকে পড়ে ফেল এবং প্রদত্ত চিকিৎসার সাথে মিলিয়ে নাও। তবে মনে রাখতে হবে অনেক রোগীরই Co- Morbid Conditions & Complications থাকতে পারে। বেশিরভাগক্ষেত্রেই DM, HTN, IHD, Asthma, COPD, CKD ইত্যাদি Co- Morbity থাকতে পারে। তাই এগুলো সকল ডিসিপ্লিনের চিকিৎসকদের ভালো ভাবে আয়ত্ত করতে হবে। এভাবেই নিজেকে একজন উন্নত মানের চিকিৎসকে পরিনত কর এবং সুযোগমত পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে ফেল। তুমিই কনসালট্যান্ট হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে সরকারি চাকুরী ক' জন পাবে বলা মুসকিল। সরকারি বেসরকারি যাই হোক তোমার পরিচয় তুমি ডাক্তার (অফিসার নও)। তাতে ক্ষতি নেই। সারা দুনিয়ায় ডাক্তার আছেন এবং বেশির ভাগ জায়গায়ই সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত স্থানেই আছেন। তোমরাও থাকবে।
১২/ তোমার পারিশ্রমিক আমি জানি। আমার সাধ্যের মধ্যে নেই কিছু করবার। ওটাও তোমাদেরই করতে হবে। তোমাদের কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তোমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে। (আমি চাই তোমরা বঙ্গবন্ধু, বাঙালী ও বাংলাদেশকে ভালো বাসবে)। তবে তোমরা দলীয় লেজুড় হবে না। নিজস্বতা নিয়ে আদর্শের সৈনিক হবে। মনে রাখবে বঙ্গবন্ধুর পর কোন সরকারের কাছেই চিকিৎসকগন সমাদৃত হননি, ভবিষ্যতেও হবে ন। কারন অনেক। আবার আঠারো কোটি জনগনের স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও ডাক্তারদেরই করতে হবে। তাই এক-- হেলথ পলিসির জন্য একাট্টা হয়ে কাজ করতে হবে। দুই-- ডাক্তারের মজুরীর জন্য প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সাথে দেন - দরবার করতে হবে। ডাক্তার ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল চলবে না। তাহলে ডাক্তারের বেতন ২০ হাজার টাকা হয় কী করে?
আমি কয়েকদিন আগে মার্ক্স এর দর্শন থেকে বিচ্ছিন্নতা বা 'Alienation' নিয়ে লিখেছিলাম। চিকিৎসকের সৃষ্টিতে / শ্রমে তার অধিকার নেই। তার শ্রম চুরি হয়ে যায়। তোমাদেরই তা উদ্ধার করতে হবে।
তোমাদের কল্যাণ হোক।
(লেখা দীর্ঘ হলো বলে দু:খিত)
অধ্যাপক ডাঃ কৃষ্ণ সি গাঙ্গুলী
কে-৩৬ / ৭৮-৮৪.

Address

Dhaka

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Khulna Health Club posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category