20/03/2025
রমজান মাসে সার্জারির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো দেখা দেয়, সেগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত কিছু প্রধান শারীরিক অবস্থা বা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত:
১. পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) ও ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যের সমস্যা
সার্জারির পর শরীরে পানির চাহিদা বেশি থাকে, কিন্তু রোজার কারণে রোগীরা পর্যাপ্ত পানি পান করতে পারেন না।
ফলে ডিহাইড্রেশন, লো ব্লাড প্রেসার, এবং ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতি) হতে পারে।
বিশেষ করে কিডনি রোগী ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা এতে বেশি ভুগতে পারেন।
২. হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রার ওঠানামা)
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি সবচেয়ে বড় সমস্যা, কারণ অপারেশনের আগে ও পরে রক্তের গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া (শর্করা কমে যাওয়া): সার্জারির আগে দীর্ঘ সময় রোজা থাকলে রক্তে শর্করা কমে গিয়ে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা জটিল সমস্যা হতে পারে।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া (শর্করা বেড়ে যাওয়া): সার্জারির পর রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩. সংক্রমণ (ইনফেকশন) ও সার্জারি পরবর্তী ক্ষত শুকানোর সমস্যা
সার্জারির পর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, আর রোজার কারণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও পানি না পাওয়ায় ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ক্ষত শুকানোর সময় দীর্ঘ হয়, যা আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. গ্যাসট্রিক আলসার ও এসিডিটি সম্পর্কিত সমস্যা
সার্জারির আগে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে বা সার্জারির পর প্রয়োজনীয় খাবার না খেলে পেপটিক আলসার, এসিড রিফ্লাক্স (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ - GERD) বেশি হতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার ফলে অনেক রোগী পেটে ব্যথা, বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব ইত্যাদিতে ভুগতে পারেন।
৫. রক্ত জমাট বাঁধা (থ্রম্বোসিস) বা রক্তপাতের সমস্যা
ডিহাইড্রেশনের কারণে রক্ত ঘন হয়ে গেলে ব্লাড ক্লট (থ্রম্বোসিস) তৈরি হতে পারে, যা বিশেষ করে হার্টের রোগী ও সার্জারি হওয়া রোগীদের জন্য বিপজ্জনক।
অন্যদিকে, যদি কোনো রোগী রক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন বা ওয়ারফারিন) বন্ধ করে দেন রোজার কারণে, তবে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৬. অ্যানেস্থেশিয়া সম্পর্কিত সমস্যা
সার্জারির সময় অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়ার পর পানিশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ বা শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া গুরুতর জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বিশেষ করে বয়স বেশি এমন রোগী বা যাদের আগে থেকেই হার্ট বা কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে।
সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন যে রোগীরা
ডায়াবেটিস রোগী (শর্করা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা)
কিডনি রোগী (ডিহাইড্রেশন ও ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স)
হৃদরোগী (ব্লাড প্রেসার ও ব্লাড ক্লট সমস্যা)
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার রোগী (অ্যাসিডিটি ও আলসার বেড়ে যাওয়া)
ইমিউন কমপ্রোমাইজড রোগী (সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি)
সর্বোপরি,
রমজান মাসে সার্জারি-সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশি দেখা দেওয়া সমস্যাগুলো হলো পানিশূন্যতা, শর্করার তারতম্য, সংক্রমণ, ক্ষত শুকানোর বিলম্ব, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, এবং রক্তের ভারসাম্যজনিত জটিলতা। তাই যদি কেউ রমজান মাসে সার্জারি করান, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত এবং সার্জারি পরবর্তী যত্নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।
[সকল প্রকার জেনারেল সার্জারী চিকিৎসা পেতে যোগাযোগ করুন :
01918-358461 ]