23/05/2025
World Schizophrenia Day 2025 - Rethink the Label: Reclaim the Story
আজ ২৪ মে বিশ্ব স্কিজোফ্রেনিয়া দিবসে আসুন - স্কিজোফ্রেনিয়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করি, সচেতন হই, আক্রান্ত রোগীদের দূরে ঠেলে না দিয়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি
স্কিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ, কিন্তু এটি নিয়ে সমাজে প্রচুর ভুল ধারণা ও মিথ প্রচলিত রয়েছে। নিচে কিছু সাধারণ মিথ এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো:
মিথ ১: স্কিজোফ্রেনিয়া মানে একাধিক ব্যক্তিত্ব বা স্প্লিট পারসোনালিটি।
বাস্তবতা: এটি স্কিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা। স্কিজোফ্রেনিয়ায় একাধিক ব্যক্তিত্ব থাকা কোনো উপসর্গ নয়। বরং, বাস্তবতা উপলব্ধিতে বিভ্রান্তি, চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তায় অসংগতি, এবং আবেগ প্রকাশে ঘাটতি স্কিজোফ্রেনিয়ার মূল বৈশিষ্ট্য।
মিথ ২: স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহিংস ও বিপজ্জনক।
বাস্তবতা: অধিকাংশ স্কিজোফ্রেনিয়া রোগী কখনোই সহিংস আচরণ করেন না। বরং, তারা নিজেরাই সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। সহিংসতা এই রোগের সরাসরি উপসর্গ নয়; তবে মাদকাসক্তি বা পূর্বের সহিংস আচরণ থাকলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
মিথ ৩: খারাপ পারিবারিক পরিবেশ বা দুর্বল ব্যক্তিত্ব স্কিজোফ্রেনিয়ার কারণ।
বাস্তবতা: স্কিজোফ্রেনিয়া কারো ব্যক্তিত্বগত দুর্বলতা বা খারাপ পিতামাতার ফল নয়। এটি একটি জটিল মানসিক অবস্থা যা জিনগত, স্নায়বিক এবং পরিবেশগত নানা কারণে হতে পারে। মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যের পরিবর্তন, পারিবারিক ইতিহাস বা মানসিক ট্রমা এর জন্য দায়ী হতে পারে।
মিথ ৪: স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তরা কাজ করতে বা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অক্ষম।
বাস্তবতা: যথাযথ চিকিৎসা ও সহায়তা পেলে অনেক স্কিজোফ্রেনিয়া রোগীই কার্যকর ও অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারেন। ওষুধ, থেরাপি এবং মনোসামাজিক সেবার মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ ও জীবনের মানোন্নয়ন সম্ভব। সমাজে গ্রহণযোগ্যতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তাদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মিথ ৫: স্কিজোফ্রেনিয়া একটি বিরল রোগ।
বাস্তবতা: এটি যতটা বিরল মনে করা হয়, বাস্তবে তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ কোটি মানুষ স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এটি সংস্কৃতি, জাতি বা আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে যে কোনো মানুষের হতে পারে।
মিথ ৬: স্কিজোফ্রেনিয়ার কোনো চিকিৎসা নেই।
বাস্তবতা: যদিও স্কিজোফ্রেনিয়ার সম্পূর্ণ নিরাময় নেই, তবে এটি নিয়ন্ত্রিত ও ব্যবস্থাপনা যোগ্য। সঠিক চিকিৎসা, থেরাপি, পারিবারিক সহায়তা ও সমাজভিত্তিক সেবার মাধ্যমে রোগীর জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মিথ ৭: স্কিজোফ্রেনিয়া হলে আজীবন মানসিক হাসপাতালে থাকতে হয়।
বাস্তবতা: এই ধারণা এখন অচল এবং ভুল। সঠিক চিকিৎসা ও সমাজভিত্তিক সহায়তা থাকলে স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তরা নিজের বাড়িতেই স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। আধুনিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যই হচ্ছে রোগীকে সমাজে পুনঃস্থাপন ও সহায়তার মাধ্যমে স্বাধীন জীবনযাপন নিশ্চিত করা।
এই ভুল ধারণাগুলো দূর করে আমরা যদি একটু সহানুভূতিশীল হয়ে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে স্কিজোফ্রেনিয়াকে দেখি, তাহলে আক্রান্ত মানুষটির জীবন আরও সহজ ও সম্মানজনক হয়ে উঠতে পারে।