25/02/2018                                                                            
                                    
                                                                            
                                            বুকে ব্যথা, স্ট্রেস আপনার হার্টের সমস্যা ডাকছে না তো?
বেশ কয়েকদিন ধরেই বুকের বামদিকে কেমন একটা চাপ ধরা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। প্রথম কয়েকদিন গ্যাসের ব্যথা বলে গ্যাসের অসুধ খেয়েছিলেন রফিক সাহেব। কাজ হয়নি। ডাক্তার বলছেন স্ট্রেস কম নিতে। তবে তাঁর পক্ষে ব্যথার থেকেও স্ট্রেস কম নেওয়াটাই সবথেকে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, পেশাটাই যে এমন। আইটি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মচারী। আর শুধু তো পেশা নয়, ২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে স্ট্রেসহীন জীবন কাটাচ্ছেন এমন ব্যক্তি বোধহয় খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজারই সামিল। ব্যস্ততার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যেরই বা ঠিকঠাক খেয়াল রাখে ক’জন! তাছাড়া হার্টের সমস্যা তো এখন আর বয়স দেখে আসে না। যাকে-তাকেই আক্রমণ করে।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা, জেট গতি, বিলাসবহুল জীবনযাপন, স্ট্রেস, ফাস্ট ফুডের হাতছানি-হার্টের সমস্যা হওয়ার জন্য যাবতীয় সবকিছু নিয়ে আজকের মানুষ দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু এটা ভুলে যাচ্ছেন যে, শরীরের যে অঙ্গের সৌজন্যে আজকের এই জীবনটা কাটাতে পারছেন, সেটার ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া হয় কিনা। তাই ডাক্তার স্ট্রেস কম নিতে বললেও সেটা আর কমে না। ফলে বয়স নির্বিশেষে যে কেউই হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হন। তবে এটাও ঠিক যে বুকের ব্যথা মানেই হার্টের সমস্যা নয়। তাই একবার দেখে নিন বুকে ব্যথা বা আর অন্য কোন সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেবেন।
কি দেখে বুঝবেন আপনার হার্টের সমস্যা রয়েছে:
 # একটানা কিছুক্ষণ বা কিছুক্ষণ পর পর বুকে ব্যথা, ধড়ফড় করা, অস্বস্তি বা চাপবোধ হওয়া, খুব বেশি পরিশ্রম না করেও ক্লান্তিবোধ করা।
 # হাত, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা পেটে ব্যথা বা স্বস্তিবোধ না করা, মাথা ঘোরানো, ঝাপসা দেখা।
 # হৃদস্পন্দন ঠিকমতো না হওয়া।
 # হার্টের সমস্যা হলে হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যহত হয়, ধমনীতে রক্ত জমে যাওয়ায় হাত পা ফুলে যায়।
 # বুকের বামদিকে ব্যথা হলে গ্যাসের ব্যথা বলে এড়িয়ে যাওয়া। বারবার একইরকম ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
 # অনেক সময় হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ না করার দরুন শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
 # ভাল ঘুম হলেও অনিদ্রা ভাব।
 # হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল না হলে হজমের সমস্যা দেখা যায়। এড়িয়ে যাবেন না।
 # পায়ের শিরায় টান, সামান্য পরিশ্রম বা হাঁটলেই হাঁপ ধরে যাওয়া কিন্তু হার্টের সমস্যার ইঙ্গিতবাহক।
 # পাখার তলায় বসেও অতিরিক্ত ঘাম হলে বুঝবেন হার্টে কোনও সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে।
হার্ট সুস্থ রাখতে নিজে অবশ্যই কী করবেন?
* ধূমপান না করলে রাতে ঘুম আসে না? এইরকম অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে অবিলম্বে নিজেকে বদলান। একবারে সম্ভব না হলে একটু একটু করে ধূমপান কমান।
* স্ট্রেস কমান, নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
* সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ঠিকমতো ঘুমানো। মানুষ যখন ঘুমায়, তখন রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ধীর গতির হয়ে যায়। ঘুম থেকে ওঠার পর নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার জন্য যা ভীষণ প্রয়োজন।
* অতিরিক্ত স্ট্রেস বা চিন্তা-ভাবনা না করার চেষ্টা করবেন। রক্তচাপ যাতে না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ বটে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন।
* কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখুন।
* হার্ট ভাল রাখতে ব্যায়াম করতে হবে শুনেই ভাবছেন এত সময় কোথায়? অত চিন্তা করতে হবে না। খুব বেশি কিছু না। একটু সময় ধরে হাঁটা, বাইক চালানো, ডাক্তারের পরামর্শ মতো আজই শুরু করে দিন।
* ফল, সবধরনের শাক-সবজি, শস্যজাতীয় খাদ্য, বিন, বাদাম, মাছ (স্যাম, টুনা মাছ), মাংস, দুগ্ধজাত খাবার অবশ্যই খাদ্যতালিকায় থাকা দরকার। নুন ও চিনি সীমিত খান। কিন্তু রান্নায় অতিরিক্ত তেল, মাখন বা চিজ ব্যবহার করবেন না।
যাঁদের হার্টে কোনও সমস্যা নেই বা কিছু কিছু সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কারোর পক্ষেই একদিনে পুরনো অভ্যাস ছেড়ে বেড়িয়ে এসে নতুন কোনও স্বাস্থ্যবিধি পালন করা সম্ভব নয়। আজই বদলে নিন নিজের রুটিনটা। কারণ সামান্য বদলেই কিন্তু সবকিছু বজায় রেখে আগামী দিনগুলো সুস্থভাবে কাটাতে পারবেন। একটু মেনে চললে ক্ষতি কি!