27/07/2025
✅ বীন বাজালে সিনেমায় সাপ নাচে। বাস্তবে নাচে না।
সাপের কান নেই। শোনার জন্য ঘনঘন জিহ্বা বের করতে হয়। সাপ আপনাকে আক্রমণ করবে না। আপনি যদি শব্দ করে হাঁটেন, সে বুঝতে পারে। সাপের বুকের তলায় খোলসের রঙ আলাদা। সেখানে বিশেষ স্নায়ুতন্তু থাকে। মাটির কম্পন বুঝতে পারে। আপনি কত দূরে আছেন, আপনি সাইজে কত বড়, সে বুঝতে পারে। পালিয়ে যায়।
বেলি, হাস্নাহেনার গন্ধে কখনো সাপ আসে না।
কেউ কেউ জীবদ্দশায় বেলি, হাস্নাহেনা, গন্ধরাজের তলায় সাপ দেখেছেন হয়তো। মনে রাখবেন, সাপের ঘ্রাণশক্তি খুবই দুর্বল। সে গন্ধ পায় না। সুগন্ধি ফুলে পোকামাকড় আকৃষ্ট হয় বেশি। পোকা খেতে ব্যাঙ আসে। ব্যাঙ খেতে মাঝে মাঝে সাপ আসতে পারে। খাবারের পর মানুষের মতো সাপও ক্লান্ত হয়। মানুষ খাবারের পর যেমন আয়েশ করে ঘুমায়, তেমনই সাপও বেলি-হাস্নাহেনার তলায় ঘুমুতে পারে। তবে এসব গাছ যদি বাড়ির ভেতর থাকে, তবে সাপ কম আসে। কারণ মানুষের উপস্থিতি তারা ভয় পায়। তবে বাড়ির সাইডে, ঝোপঝাড়ে এমন গাছ থাকলে সাপ আসা স্বাভাবিক।
একটা সাপকে মারলে তার জোড়া সঙ্গী কখনোই আপনাকে খুঁজে দংশন করতে আসবে না।
সাপের স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল। সাপ বাংলা সিনেমার সর্পরাজ শাকিব খান কিংবা নাগিন মুনমুন নয় যে সঙ্গীহারার প্রতিশোধ নিতে ছুটে আসবে। সাপ নিম্নজাতের প্রাণি। এদের মধ্যে রিভেঞ্জ বলে কিছু নেই।
কিন্তু একটা সাপ মারার পর আরেকটা সাপ প্রায়ই একই স্থানে দেখা যায়, কারণ কী?
সিম্পল। মেটিংয়ের সময় তাদের পার্টনার আশেপাশে থাকতেই পারে কিংবা আশেপাশে গর্ত থাকলে তার বাচ্চাকাচ্চা কিংবা আরও সাপ উঠে আসতেই পারে। সে প্রতিশোধ নিতে আসেনি, বরং ভুল করে গর্ত থেকে চলে এসেছে।
“ছোট সাপের বিষ নাই” কথাটা ভুল।
সাপের বাচ্চাও সাপ। কেঁচোর সমান একটা কেউটের কামড়ে আমার চোখের সামনে এক রোগীকে টানা ২৪ ঘণ্টা জীবনের সাথে ফাইট করতে হয়েছে। আইসিইউতে আমরা তিন ডাক্তার তার পাশে ২৪ ঘণ্টা লড়েছিলাম।
আর্টিফিশিয়াল ভেন্টিলেশন থেকে শুরু করে একাধিকবার অ্যান্টিভেনম দিয়েছি। সে সুস্থ হয়ে বাড়িতে গেছে। যাবার আগে আমাদের গালিগালাজ করে গেছে। আমরা নাকি তাকে অনেক দামি ওষুধ দিয়েছি! সে জানে না, এক ডোজ অ্যান্টিভেনমের দাম ১০ হাজার টাকা।
লজিক্যালি, লোকটার দোষ নেই। সে ছিল জেলে। দিনে হয়তো এক-দেড়শ টাকা তার ইনকাম।
রাতে যারা বাজার থেকে অন্ধকারে ঘরে ফেরে তাদের এবং জেলেদের সাপ বেশি কাটে।
জেলেরা বর্ষায় রাতে আইল, বরশি ফেলে, জাল ফেলে মাছ ধরে। নদী বা নালায় মাঝ ধরে। সাপ শুকনো ভেবে সেখানে থাকে। কামড় দেয়।
সিনেমা বলে, সাপ দুধ খায়। গরুর দুধ খেতে গোলাঘরে হানা দেয়। ভুল কথা।
এসব সাপ ক্ষেতের ব্যাঙ-পোকামাকড় খায়। কালো রঙের দাড়াশ সাপ দেখি, এরা আমাদের উপকার করে। ফসল বাঁচায়। এদের না মারা উত্তম।
সাপে কাটলে ব্লেড দিয়ে কেটে দিলে বিষ বের হয়ে যায় কথাটা ভুল।
ভুলেও এই কাজ করবেন না। ব্লেড দিয়ে কাটলে বিষকে রক্তের সাথে নিজহাতে মিশিয়ে দিলেন।
দংশন করা সাপকে উল্টোকামড় দিলে বিষ ফেরত চলে যায় এটাও ভুল।
পায়ে কাটলে বিষ সেখানে। আপনার মুখের দাঁতে তো বিষ নেই। কীভাবে ফেরত দেবেন?
সাপের বিষ তার দাঁতে থাকে না। সে যখন কামড় দেয়, তার মুখের পেশিগুলো টানটান হয়ে যায়। দাঁতের কাছেই থাকে বিষগ্রন্থি। সেখান থেকে বিষ দাঁত বেয়ে শরীরে প্রবেশ করে।
শক্ত করে বাঁধলে বিষ ছড়াতে পারে না এই ধারণাও ভুল।
আপনি নিজেই নিশ্চিত নন সাপটা বিষধর ছিল কি না, তাহলে শক্ত করে বাঁধবেন কেন?
অনেক ডাক্তার সাপে কাটার পর বাঁধতে নিষেধ করেন। কারণ এতে হিতে বিপরীত হয়।
ফুটবলের অ্যাংলেট পায়ে দিলে যেমন আটসাট হয়ে থাকে, তেমনভাবে গামছা বা শার্ট বা শাড়ি দিয়ে দংশনের কিছু উপরে পেঁচিয়ে নিতে পারেন। বাঁধন অবশ্যই ঢিলা রাখবেন দুটো আঙুল ঢুকে যাবে এমনভাবে।
আবার খুব ঢিলাও না। ২০ মিনিট পরপর খুলে আবার লাগাতে পারেন।
ভুলেও লোহার তার, সুতলি, কারেন্টের তার বা অন্য সরু জিনিস দিয়ে বাঁধবেন না। এতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পচন শুরু হবে। হয়তো আপনাকে বিষধর সাপ কাটেইনি, অথচ আপনি ভয়ে গিট্টু দিয়ে হাত-পা পঁচিয়ে পঙ্গু হয়ে গেলেন। কেমন হবে?
সাপ কাটলে আংটি, চুড়ি, ব্রেসলেট খুলে ফেলবেন।
কারণ কিছু সাপের বিষে হাত-পা ফুলে যেতে পারে। ফলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পঁচন হতে পারে।
সাপ কখন দংশন করে?
১। মুখোমুখি হলে। পালাতে না পারলে ভয় পেয়ে কামড় দেয়।
২। বর্ষায় গর্তে পানি উঠে গেলে। তখন শুকনো জায়গায় আসে ক্ষেতের আইল, রাস্তা, তোশকের তলা, বালিশের তলা, আলনা, কাঠের স্তূপে।
৩। অন্ধকারে তার শরীরে পা পড়লে।
৪। ইঁদুরের গর্তে পা রাখলে বা সেখানে বসলে।
(বাচ্চাদের গর্তে প্রস্রাব না করতে শেখান)
বাংলাদেশে ৮০ প্রজাতির সাপ আছে। মাত্র ২৭টি বিষাক্ত। অধিকাংশই সামুদ্রিক। স্থলভাগে মাত্র ৫/৬টি।
যেমন:
গোখরা
কালকেউটে
শঙ্খচূড়
চন্দ্রবোড়া
সাপে কাটলে বুঝবেন কীভাবে?
সরাসরি সাপ দেখলে।
বিষদাঁতের চিহ্ন থাকলে।
নিউরোটক্সিন হলে ঝিমঝিম, ঝাঁপসা দেখা, চোখ বন্ধ হয়ে আসা, জিহ্বা-শ্বাসনালী ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বমি ইত্যাদি।
চন্দ্রবোড়া হলে রক্তবমি, পায়খানায় রক্ত, ক্ষতস্থানে রক্তপাত, ফুলে যাওয়া, ফোস্কা, কালচে হওয়া।
কিছু সাপে হার্ট অ্যাটাক হয়।
নির্বিষ সাপে কামড়েও মানুষ মারা যায় ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাকে।
চিকিৎসা:
ঘাবড়াবেন না।
দংশনের স্থান ধুয়ে ফেলুন।
নাড়াচাড়া করবেন না।
ব্লেড, অ্যাসিড, মরিচ, তেল, তাবিজ কিছু ব্যবহার করবেন না।
সাপ চিনলে ডাক্তারকে জানান।
ওঝার কাছে যাবেন না।
এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট না করে সরকারি হাসপাতালে যান।
রাসেল ভাইপার বাদে সব বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে আছে।
(রাসেল ভাইপার বিলুপ্ত হলেও রাজশাহী ও ফরিদপুরে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে)
সাপ নিরীহ প্রাণি। মেরে ফেলবেন না।
স্নেক রেসকিউয়ারকে জানান। ওঝারা সাপ মেরে তেল বানায় যা বিভ্রান্তিকর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
কার্বলিক অ্যাসিডে সাপ পালায় না।
সাপের ঘ্রাণশক্তি দুর্বল। টোটকা ভুলে যান।
সতর্কতা:
খড়, লাকড়ি, বালিশ, তোশক, আলনা — সব আগে শব্দ করে নিন।
বাড়ির পাশে ঝোপঝাড় কেটে ফেলুন।
ইঁদুরের গর্ত ভরাট করুন।
গ্রামের মানুষদের জানিয়ে দিন।
সতর্ক থাকুন ভয় পাবেন না অবহেলা করবেন না।
সংগ্রহ করা