15/08/2021
তাহাজ্জুদের নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ হলো ইশরাকের নামাজ।
ইশরাক, দোহা এবং চাশত একই নামাজ কীনা, এসব নামাজের সময়, নিয়ম ও রাকাতসংখ্যা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
❖ ইশরাক নামাজের পরিচয় ও ফজিলত:
ইশরাক মানে প্রভাত, সকাল, সূর্যোদয়। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়বে, এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে যিকির করবে, এরপর সূর্যোদয় হলে (সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর) দুই রাকাত নামাজ পড়বে, তার জন্য পরিপূর্ণ হজ্ব ও ‘উমরার সওয়াব লেখা হবে।’’ কথাটি তিনি জোর দিয়ে তিনবার বলেন। [তিরমিযি, আস-সুনান: ৫৮৬; হাদিসটি হাসান]
হাদিসে এই নামাজের কোনো নাম বর্ণিত হয়নি। তবে, বিদ্বানগণের নিকট এই নামাজ ইশরাকের নামাজ বা সূর্যোদয়ের নামাজ হিসেবে পরিচিত।
❖ দোহা ও চাশতের নামাজের পরিচয়:
‘দোহা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো, দিনের প্রথম প্রহর। ফার্সিতে একে বলা হয় ‘চাশত’। অতএব, দোহা এবং চাশত একই নামাজ। পরিভাষায় সূর্যোদয়ের পর সূর্যের তাপ কিছুটা প্রখর হওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয়, সেটিকেই দোহার নামাজ বলা হয়।
❖ দোহার (চাশতের) নামাজের মহান ফজিলত:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের শরীরের প্রতিটি জোড়ার জন্য (শুকরিয়াস্বরূপ) প্রতিদিন সকালে সাদাকাহ দিতে হয়। (জেনে রেখো) প্রত্যেক তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) সাদাকাহ; প্রত্যেক তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) সাদাকাহ; প্রত্যেক তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সাদাকাহ; প্রত্যেক তাকবির (আল্লাহু আকবার) সাদাকাহ; সৎ কাজের আদেশ সাদাকাহ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা সাদাকাহ। আর এসবের পক্ষ হতে দোহার (চাশতের) দুই রাকাত নামাজই যথেষ্ট হবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭০৪]
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আদম সন্তান, তুমি দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাকাত আদায় করো; আমি তোমার (দিনের) শেষ ভাগের জন্য যথেষ্ট হবো।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৩৭; হাদিসটি সহিহ]
হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, আল্লাহ তার বাকি দিনের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হবেন এবং তার অপছন্দনীয় বিষয়গুলো তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। [মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযি: ২/৪৭৮]
❖ দোহার (চাশতের) নামাজের রাকাতসংখ্যা:
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত দোহার নামাজ ৪ রাকাত পড়তেন। তবে, আল্লাহ চাহেতো কখনো তা বৃদ্ধি করতেন।’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭১৯]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিনে দোহার (চাশতের) ৮ রাকাত নামাজ পড়েছেন। [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৯১]
শারহুল জামি’ আস সহিহ গ্রন্থে এসেছে, সাহাবিদের মধ্যে আম্মাজান আয়িশা পড়তেন ৬ রাকাত; ইবনু উমার ২ রাকাত, সা’দ ও আম্মাজান উম্মু সালামাহ ৮ রাকাত, আলি ইবনু আবি তালিব ৪ রাকাত পড়তেন। রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ইন।
আলিমগণের বড় অংশের মতে, দোহার (চাশতের) নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়া যায়। তাঁরা তাঁদের পক্ষে দলিল দিয়েছেন। তবে, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু সলিহ আল উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘‘(দোহার নামাজের) সর্বোচ্চ রাকাত নির্ধারিত নয়। কেননা আয়িশা (রা.) হতে (উপরে) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘আল্লাহ চাহেতো এর চেয়ে অধিক পড়তেন’’ (নির্দিষ্ট বাউন্ডারি দেওয়া হয়নি)।’’ [শারহুল মুমতি’: ৪/৮৫]
তবে, হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী নবিজি অধিকাংশ সময় ৪ রাকাত আদায় করতেন, যেমনটি আমরা পূর্বেই পড়লাম।
❖ দোহার (চাশতের) নামাজের সময়:
সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর থেকেই দোহার (চাশতের) নামাজ পড়া যায়। তবে, দোহার (চাশতের) নামাজের উত্তম সময় হলো, সূর্যের তাপ যখন প্রখর হয়। এই সময় থেকে নিয়ে দিনের দ্বিপ্রহর শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দোহার (চাশতের) নামাজের সময় থাকে।
❖ দোহা আর ইশরাক কি এক নামাজ?
প্রখ্যাত ফকিহ ও হাদিস বিশারদ ইমাম আবু বকর জাসসাস (রাহ.) বলেন, অধিকাংশ আলিমের মতে, ইশরাক এবং দোহার নামাজ একই। [আহকামুল কুরআন: ৩/৫৫৯]
মুহাদ্দিসগণ দোহা এবং ইশরাকের নামাজকে একই নামাজ গণ্য করেছেন। তবে, সুফিগণ আলাদা গণ্য করেছেন। [যাকারিয়া কান্ধলভি, ফাতহুল মুলহিম: ৪/৬৩৪]
ইমাম ত্বিবি তাঁর শারহুল মিশকাতে বলেছেন, ইশরাক হলো দোহার প্রথম সময়। মূলত দুটো একই নামাজ। শায়খ ইবনু বায, ইবনু উসাইমিন (রাহ.)-সহ আরবের আলিমগণের মতও তাই।
❖ উপসংহার:
মূল কথা হলো, ইশরাক এবং দোহা (চাশত) একই নামাজ। শুধু সময়ের পার্থক্যের কারণে এদের নাম ভিন্ন হয়েছে। ইশরাক হলো দোহার প্রথম সময়। যদি জামাতে ফজর আদায় করে, নামাজের স্থানে বসে থেকে যিকর করে, অতঃপর সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর আদায় করা হয়, তবে এটিকে ইশরাক বলা হয়। আর সূর্য কিছুটা প্রখর হওয়ার পর (সকালের নাস্তার সময়ে) আদায় করলে এটিকে ‘দোহা’ (চাশত) বলা হয়। মৌলিকভাবে দুটোই দোহার নামাজ।
একই দিনে ইশরাক ও দোহার (চাশতের) নামাজ আদায় করাও জায়েয। কোনো (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত বা নফল) নামাজের নিয়ত যেহেতু মুখে পড়তে হয় না (শুধু অন্তরে ইচ্ছাপোষণ করতে হয়), সেহেতু ইশরাক এবং দোহার (চাশতের) নামাজেও অন্তরে ইচ্ছাপোষণ করাই যথেষ্ট।