30/06/2025
পানি।
আল্লাহ আজ্জাওয়াজাল এর অদ্ভুত এক সৃষ্টি। জন্মের পর আমাদের শরীরের ৭০% ই থাকে পানি, প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তা হয় ৬০%। আমাদের মস্তিষ্কের ৭৫% পানি, হাড়ে ২২% পানি, মাংসপেশীর ৭৫% পানি, আর রক্ত যা আমাদের দেহের ভাইটাল লিকুইড তাতে ৯০% ই পানি আছে। পানির উপর জমিনে আমরা যা দেখি তার চেয়ে কয়েক গূন আছে পানির নিচেই, যা সবই অদেখা।
তবে আজকে অন্য ইন্টারেস্টিং টপিকে বলবো। আমরা যারা মোটামুটি সাধারণ বিজ্ঞানও পড়েছি আমরা জানি পানি দুটি হাইড্রোজেন এটম এবং একটি অক্সিজেন এটমের সমন্বয়ে তৈরি। কিন্তু ১৯৯৪ সালে জাপানিজ বিজ্ঞানী মাসারু ইমোতো পানির কিছু অদ্ভুত প্রকৃতি বের করেন। উনি দেখলেন আকাশ থেকে নেমে আসা snowflake/তুষারখন্ডের ক্রিস্টাল ( যাতে শত শত ice crystal বা frozen crystal থাকে এবং একেকটি ক্রিষ্টাল জিওমেট্রিক শেইপ নিয়ে থাকে) নানান জিওমেট্রিক শেইপের। অর্থাৎ সহজ ভাষায়, তুষারপাতের বরফের কণাকে মাইক্রোস্কোপিক লেন্সে(অণুবীক্ষণযন্ত্র) দেখলে এর কিছু জ্যামিতিক আকৃতি(একাধিক ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা ষড়ভূজ ইত্যাদি) ফুটে উঠে(কমেন্টে কিছু ছবি দেয়া হলো), এটাই ক্রিস্টাল বা স্নোফ্ল্যেক্স।¹ ইমোতো দেখলেন একেক স্নোফ্ল্যেক একেকরকম আকৃতির যদিও দুটি হাইড্রোজেন আর একটি অক্সিজেনই বিদ্যমান। তিনি কৌতুহল হলেন। কিভাবে আকাশ থেকে পড়া একই তুষারখন্ড বা স্নোফ্যেক্স একেক আকৃতির হয় অথচ সকল পানির পরমাণু একই! তার বৈজ্ঞানিক প্রবৃত্তি তা মানতে পারলো না।
এই থিওরী মিথ্যা প্রমাণের জন্য তিনি ল্যাব নির্মাণ করলেন। সেখানে কক্ষ তাপমাত্রা রাখলেন -৭° সেলসিয়াস এবং এমন প্রক্রিয়া যাতে পানি খুব ধীরে ধীরে বরফে পরিণত হয়, কারণ ক্রিস্টালাইজড শেইপ(বরফে পরিণত হবার সময়কালে যে জ্যামিতিক আকৃতি) হতে হলে দ্রুত বরফ করা যাবে না।² তিনি বিভিন্ন উৎস(ঝর্ণা, নদী, কূপ, হ্রদ) থেকে পানি সংগ্রহ করে দেখলেন একেক পানি থেকে একেক রকম স্নোফ্ল্যেক তৈরি হচ্ছে।
রহস্য আরো বাকি...
ইমোতো বলেন, পানি তার পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং পানির মেমোরি(স্মৃতি) রয়েছে। পানি মানুষের চিন্তাভাবনা ও নি:সৃত শব্দের দ্বারা প্রভাবিত হয়। পানি আমাদের অনুভূতি, শব্দ, কথার প্রতি সংবেদনশীল। কারণ এসবের মাধ্যমে পানির মলিকুলার স্ট্রাকচার বা জ্যামিতিক আকৃতি পরিবর্তিত হয়।
কিভাবে?
ইমোতো বিভিন্ন পানির পাশে বিভিন্ন রকম শব্দ ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে পানি ফ্রিজ করতে লাগলেন এবং দেখলেন একেক পানি একেক শব্দের প্রতিক্রিয়া জানায়। অর্থাৎ পানির পাশে কোনো শব্দ থেকে আসা শব্দতরঙ্গ পানির ওপর প্রভাব ফেলে আর এতে পানি ভিন্ন ভিন্ন ক্রিস্টাল শেইপে রূপ নেয়।
কেউ যদি পানির কাছে পজিটিভ কিছু বলে বা ভাবে তখন সেই পানি থেকে তৈরি ক্রিস্টাল স্বচ্ছ এবং সুন্দর, সুবিন্যস্ত আকৃতি নেয়, আর যদি কোনো নেগেটিভ কথা উচ্চারিত করা হয় তাহলে ক্রিস্টাল অসুন্দর এবং বিদঘুটে আকৃতিতে চলে আসে (কমেন্টে)।
আবার পানির কাছে Heavy metal music ছেড়ে দিলে দেখা যায় ক্রিস্টালের আকৃতি খুবই অসুন্দর এবং আকৃতিগুলো অবিন্যস্ত, আনঅর্গানাইজড। এবং এই পানি খাওয়া বা ব্যবহারেও শরীর, মন অনুরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবে। অর্থাৎ সেই পানি আপনার শরীর বা মনেও তার প্রকৃতি এবং ক্রিস্টাল শেইপ অনুযায়ী প্রভাব ফেলবে।
এরপর ইমোতোর এক মুসলিম ফ্রেন্ড তাকে বললো পাশে কুরআনের তিলাওয়াত ছেড়ে দিতে। ইমোতো দেখলো, কুরআন তিলাওয়াত ছেড়ে দেয়ার পর মাইক্রোস্কপিক লেন্সে পানি বরফে পরিণত হবার মুহূর্তে এমন ক্রিস্টালে পরিণত হয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোনো শব্দে হয় না। এবং দুই হাজার উৎস থেকে নিয়ে আসা পানির ক্রিস্টালও সেরূপ আকৃতির হয় নি। ইমোতো পানির পাশে বিভিন্ন ইতিবাচক শব্দ Thank you, Wisdom, Hope, Peace ইত্যাদি শব্দ বললেন আর ক্রিস্টালের সুন্দর আকৃতি দেখলেন, আর মন্দ শব্দ Evil, You fool, I hate you ইত্যাদি বলতেন আর সেই ক্রিস্টাল দেখতেন অসুন্দর। কিন্তু কুরআন তিলাওয়াত ছেড়ে দেয়ায় যেই ক্রিস্টাল শেইপ, তা অন্য কোনো শব্দে তিনি পান নি। এভাবে "বিসমিল্লাহ" বলেও তিনি পরীক্ষা করেছেন, এবং দেখলেন "বিসমিল্লাহ" বলায় যেই পানির ক্রিস্টাল ফর্ম তৈরি হয় তা এমন গুণসম্পন্ন যা একই আকৃতির ক্রিস্টালে পরিণত করতে "বিসমিল্লাহ"র বিকল্প কোনো শব্দ নেই!
যথেষ্ট অবাক হবার নয় কি?? আরো আশ্চর্য হবার বাকি আছে।
ইমোতোর মুসলিম বন্ধু তাকে পরিচয় করালেন জমজম পানির সাথে, দেখতে চাইলেন জমজম পানির ক্রিস্টাল। কিন্তু ইমোতো জমজম পানিকে ক্রিস্টালাইজ করতে পারছিলেন না, সাধারণ পানির সাথে মিশ্রিত করেও সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে এক ফোটা জমজম পানিকে এক হাজার ফোটা ডিস্টিল্ড পানির সাথে মিশ্রিত করে ক্রিস্টালাজড করে অনন্য এবং অতুলনীয় শেইপ পেলেন!! উনি দুটি ক্রিস্টাল পেলেন(কমেন্টে ছবি দেয়া আছে), যেখানে অন্যান্য সকল পানিতে দেখা যায় একটি ক্রিস্টাল। ইমোতো বলেন, আমার মুসলিম কলিগ বললো জমজম পানির উপর ক্বুরআন তিলাওয়াত ছেড়ে দিতে। ইমোতো কিছু আয়াত ছেড়ে দিলেন, এরপর পেলেন এমন ক্রিস্টাল যা সবচাইতে নিখুঁত আকৃতির।
ইমোত বলেন মুসলিমরা পানি খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলে পান করে। এবং এই রীতি দেড় হাজার বছর ধরে চলমান। বিসমিল্লাহ বললে পানির গঠন ও গূণমান বেড়ে যায়।
সাধারণ পানিতে এক ফোটা জমজম পানি মেশালেও পানির যেরূপ গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়, ইমোতো দেখলেন অন্য পানির ক্ষেত্রে তা হয় না।
পাঠকবৃন্দ! এতক্ষন লিখা পড়তে পড়তে নিশ্চই অবাক হচ্ছিলেন, দৃঢ় হচ্ছিলেন কালামুল্লাহর স্বচক্ষে উদাহরণ দেখে। এই বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দেখে! তাই না? বিজ্ঞানের কিছু আবিষ্কার দেখে!
কিন্তু আমাদের উচিৎ ছিলো সাহাবীদের মত বিশ্বাস করেই দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরা। বিজ্ঞানের এই পরীক্ষা যদি ভুলও প্রমাণিত হয় তবুও আল্লাহর কালাম ভুল হবে না। এই ক্বুরআন আল্লাহর কালাম, এই জমজম আল্লাহর বিশেষ নি'আমত যাতে তিনি মু'জিযা রেখেছেন এবং অতুলনীয় করেছেন।
একবার চিন্তা করি তো?? পানির কাছে ক্বুরআন ছেড়ে দিলেই যদি এত পরিবর্তন হয় তাহলে আপনি যদি দীর্ঘক্ষন ক্বুরআন, দু'আ পড়ে পানিতে নাফছ (সুন্নাহ অনুযায়ী থুথুসহ ফু দেয়া) করেন তাহলে পানি কিরূপ হবে? এবং সেই পানি দিয়ে গোসল, পান করার মাধ্যমে অই ব্যক্তির মাঝেই কি পরিবর্তন হবে?? শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, শিরায় যাদু, বদনজরের প্রভাবে অসুস্থতা থাকলে সেই পানি ব্যবহারে কি আল্লাহ তা বিনষ্ট করে দিবেন না??
আবার কোনো যাদুকর যদি পানির সামনে দীর্ঘক্ষণ যাদু মন্ত্র পড়ে ফু দিয়ে সেই পানি ছিটিয়ে(সিহরুল মারশুশ) দেয় বা কাউকে স্পর্শ (সিহরুল মাস) করায় বা পান (সিহরুল মাশরূব) করায় তাহলে কি ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না যাদুর মাধ্যমে?
©️