09/12/2024
১-২ বছর বয়সী শিশুরা খেতে না চাইলে করণীয় ও জোর করে খাওয়ানোর ক্ষতি
১-২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে খেতে না চাওয়ার প্রবণতা একটি সাধারণ বিষয়। এটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের অংশ, কারণ এই বয়সে তাদের খাদ্যাভ্যাস, ক্ষুধার চাহিদা এবং নতুন খাবার গ্রহণের ক্ষমতা পরিবর্তনশীল থাকে। জোর করে খাওয়ানো ক্ষতিকর হতে পারে, তাই শিশুদের খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত।
শিশু খেতে না চাইলে করণীয়:
১. খাবার আকর্ষণীয় করুন:
• নতুন ধরনের খাবার পরিবেশন করুন:
• শিশুর পছন্দ অনুযায়ী রঙিন ও আকর্ষণীয়ভাবে খাবার সাজান।
• উদাহরণ: সবজি দিয়ে স্যুপ বা রঙিন ফলের সালাদ।
• স্বাদ পরিবর্তন করুন:
• একাধিক পদ্ধতিতে খাবার রান্না করুন (সেদ্ধ, পুডিং, বা নরম ভাত)।
২. খাবার সময় নির্ধারণ করুন:
• একটি রুটিন তৈরি করুন:
• নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিন।
• খুব ঘন ঘন খাবার দিতে চাইবেন না, কারণ এতে ক্ষুধা নষ্ট হয়।
• খাবার খাওয়ার পরিবেশ আনন্দদায়ক করুন:
• টিভি, মোবাইল বা অন্য কোনো ডিসট্রাকশ ছাড়া শিশুকে খেতে দিন।
৩. ক্ষুধা বাড়ানোর উপায়:
• খেলাধুলার পর বা শারীরিক পরিশ্রম শেষে খাওয়াতে চেষ্টা করুন।
• চিপস, চকোলেট বা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস থাকলে বন্ধ করুন।
৪. পরিমাণ নয়, গুণগত মানের দিকে নজর দিন:
• শিশুর একবারে বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
• অল্প খাবার হলেও পুষ্টিকর খাবার দিন (যেমন ডিম, দুধ, ফলমূল, শাকসবজি)।
৫. শিশুকে নিজে খাবার খাওয়ার সুযোগ দিন:
• নিজের হাতে খাবার ধরতে দিন। এতে তারা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখাবে।
জোর করে খাওয়ানোর ক্ষতি:
১. খাবারের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়:
• জোর করে খাওয়ানোর ফলে শিশু খাবারকে ভয় বা বিরক্তির কারণ হিসেবে দেখবে।
• তারা দীর্ঘমেয়াদে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে।
২. মানসিক চাপ ও আঘাত সৃষ্টি করে:
• শিশুর মধ্যে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।
• এটি আত্মবিশ্বাস ও স্বাভাবিক বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. খাওয়ার সমস্যা তৈরি হতে পারে:
• জোর করে খাওয়ানোর ফলে শিশু খাদ্য অস্বীকৃতি (Food Aversion) বা খাওয়ার অস্বাভাবিক অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
• ভবিষ্যতে খাবারের প্রতি বাছবিচার (Picky Eating) হতে পারে।
৪. গ্যাগ রিফ্লেক্স বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে:
• জোর করে খাওয়ালে শিশুর গ্যাগ রিফ্লেক্স সক্রিয় হতে পারে, যা বমি বা শ্বাসনালিতে খাবার আটকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশে প্রভাব ফেলে:
• জোর করে খাওয়ানোর কারণে শিশুর শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঠিকমতো শোষণ করতে পারে না। ফলে ওজন বৃদ্ধি এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
কীভাবে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করবেন:
1. ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন:
• শিশুর সামনে নিজে খাবার খান। শিশুরা দেখে শিখে। অন্য শিশুদের সাথে নিয়ে সবাইকে একসাথে খাওয়াতে পারেন। এতে সবার মধ্যেই খাওয়ার একটা আনন্দ কাজ করবে।
2. শিশুর মতামত নিন:
• তাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার তৈরি করতে চেষ্টা করুন।
3. নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করান:
• ধীরে ধীরে নতুন ধরনের খাবার দিন এবং সেগুলো মজাদার গল্পের মাধ্যমে পরিচিত করান।
4. ধৈর্য ধরুন:
• শিশুর খাবারের অভ্যাস পরিবর্তনে সময় দিন।
১-২ বছর বয়সী শিশুদের খেতে না চাওয়াটা প্রাকৃতিক। এটি নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। জোর করে খাওয়ানোর পরিবর্তে ধৈর্য ধরে খাবার খাওয়ানোর প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। একটি পুষ্টিকর খবার ও আনন্দময় পরিবেশ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
@ Ahmad Habibur Rahim
নবজাতক শিশু বিশেষজ্ঞ