Pregnancy and Child Care

Pregnancy and Child Care Pregnant Mother and Child care. Help for many problem Solution
(2)

নিরাপদ প্রসবের জন্য যা কিছু জরুরিলেখা: ডা. সালেহা বেগম চৌধুরীআমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর একটা বড় কারণ প্রসবকালীন জটিলতা। গর...
02/09/2025

নিরাপদ প্রসবের জন্য যা কিছু জরুরি
লেখা: ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী

আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর একটা বড় কারণ প্রসবকালীন জটিলতা। গর্ভকালীন সবকিছু স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও দেখা দিতে পারে প্রসবকালীন জটিলতা, অনেক ক্ষেত্রে যা হয়ে উঠতে পারে মা ও শিশুর মৃত্যুর কারণ। এসব ক্ষেত্রে কী করবেন?

কোন প্রসবই ঝুঁকিমুক্ত নয়

প্রসবব্যথা শুরুর পর থেকে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত সময়টাকে বলে প্রসবকাল (লেবার)। স্বাভাবিক প্রসবের সময়কাল প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা তার পরের সন্তানের ক্ষেত্রে ৮-১০ ঘণ্টা। প্রসবকালীন মা ও গর্ভস্থ সন্তানের অবস্থা নিরূপণ, পর্যবেক্ষণ একটি জরুরি বিষয়। অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ প্রসবকালীন পরিচর্যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও নার্স যৌথভাবে এই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।

মনে রাখতে হবে, কোনো প্রসবই ঝুঁকিমুক্ত নয়। আর কিছু কিছু জটিলতা এড়ানো যায় না। কারণ, এগুলো অনির্ধারিত। তবে জটিলতা তৎক্ষণাৎ নির্ণয় করে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে রোগী ও সন্তানকে সুস্থ রাখা যায়।

কোন প্রসবই ঝুঁকিমুক্ত নয়ছবি: পেক্সেলস ডটকম

প্রসবকালীন জটিলতা

বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত প্রসব

জরায়ুর সংকোচনের মাত্রা ও গতি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়ার কারণে সাধারণত বিলম্বিত প্রসব হয়ে থাকে। সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারলে নবজাতকের অক্সিজেনশূন্যতা দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

প্রসবের মাঝখানে বাচ্চার মাথা আটকে যেতে পারে। বিশেষ করে প্রসবের পথ ছোট ও চাপা থাকলে, গর্ভস্থ শিশুর ওজন চার কেজির বেশি থাকলে, কিংবা শিশুর মাথা অপেক্ষাকৃত বড় হলে এই জটিলতা দেখা দেয়। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে এই জটিলতা বেশি হয়।

সময়মতো চিকিৎসা না দিলে বা দেওয়া সম্ভব না হলে শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মায়েরও গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এই সমস্যা নির্ণীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিজারিয়ান করে প্রসব করাতে হবে। আর আগে থেকে যদি বোঝা যায়, তবে আগেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো।

হঠাৎ শিশুর অবস্থা জটিল হওয়া বা ফিটাল ডিসট্রেস

প্রসবের প্রথম ও মাঝামাঝি সময়ে এই পরিস্থিতি দেখা দিলে চিকিৎসা অবশ্যই অস্ত্রোপচার। তবে লেবারের শেষের দুই ঘণ্টায় দেখা দিলে যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে প্রসব করানো সম্ভব। কিছু কিছু বাচ্চা প্রসব ব্যথা বা জরায়ুর সংকোচন সহ্য করতে পারে না। অনির্ণীত কারণেও ঘটতে পারে এই সমস্যা। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর হৃৎস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকলে এই সমস্যা সহজেই শনাক্ত করা যায়।



প্রসবের পর মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ

আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর এটি প্রধান কারণ। এই সমস্যা স্বাভাবিক প্রসব বা অস্ত্রোপচার, দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অতি দ্রুত বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে মায়ের জীবন রক্ষা করতে হয়। সাধারণত ২-১০ ব্যাগ রক্ত লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমনকি জরায়ু অপসারণ করেও মাকে বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কিংবা প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ বা নার্সের তত্ত্বাবধানে প্রসব হওয়া জরুরি।

নিরাপদ প্রসবের জন্য

প্রসবকালীন জটিলতার ৩টি বিশেষ কারণ মনে রাখতে হবে—

১. সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব।

২. স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছাতে বিলম্ব।

৩. চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্ব।

এই তিন কারণ মাথায় রেখে গর্ভবতী মা ও তাঁর পরিবার আসন্ন প্রসবের জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। একে বলা হয় প্রসব পরিকল্পনা। প্রসবকালীন ও প্রসব–পরবর্তী সময়ে মা ও নবজাতককে সুস্থ রাখাই এর লক্ষ্য।

প্রসব পরিকল্পনার প্রস্তুতি গ্রহণ

কোথায় প্রসব করাবেন, তা আগে থেকেই
স্থির করা।

চিকিৎসক ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।

জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে যাওয়ার
ব্যবস্থা রাখা।

হাসপাতালে সঙ্গে কে যাবেন, ঠিক করে রাখা।

যানবাহনের ব্যবস্থা রাখা। হাসপাতালের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম, যানবাহনের ধরন, ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি মাথায় রাখতে হবে।

রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা ও গ্রুপের রিপোর্ট
সঙ্গে রাখা।

রক্তদাতার টেলিফোন নম্বর রাখা। জরুরি প্রয়োজনে তাঁর হাজিরা নিশ্চিত করা।

টাকা বা অর্থের সংস্থান রাখা।

গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব–পরবর্তী বিপদ

১. রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেশার ১৪০/৯০ মিলিমিটার বা তার চেয়ে বেশি হওয়া।

২. পা, হাত, মুখ ও চোখে পানি আসা।

৩. তীব্র মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা।

৪. খিঁচুনি হওয়া, চোখ স্থির হয়ে থাকা।

৫. জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে ওঠা।

৬. ১২ ঘণ্টার বেশি প্রসববেদনা স্থায়ী হওয়া।

৭. প্রসবের সময় বাচ্চার মাথার পরিবর্তে হাত, পা কিংবা নাড়ি বের হয়ে আসা।

৮. গর্ভকালীন ও প্রসব–পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া।

৯. প্রসববেদনা শুরুর আগে পানি ভেঙে যাওয়া।

১০. প্রসব–পরবর্তী সময়ে গন্ধযুক্ত পানি যাওয়া ও শরীরে জ্বর আসা।

মা ও শিশুমৃত্যু রোধ ও তাঁদের সুস্থ রাখার জন্য প্রসব পরিকল্পনা ও প্রসবকালীন পরিচর্যা জরুরি। মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে পরিবারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ

গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগর্ভধারণের চার–পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত বমির ভাব বেশি দেখা যায়। সাধারণত সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর ব...
02/09/2025

গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ

গর্ভধারণের চার–পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত বমির ভাব বেশি দেখা যায়। সাধারণত সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর বমিভাব বা বমি বেশি হয়ে থাকে বলে একে মর্নিং সিকনেস বলে।

লেখা: ব্রি. জেনারেল (অব.) ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম

কোনো মাসে পিরিয়ড না হওয়াকেই গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়; কিন্তু অনেক সময় পিরিয়ডের হিসাব রাখা সম্ভব হয় না বা পিরিয়ড নিয়মিত হওয়া সত্ত্বেও অনেকে গর্ভধারণ করেন। এ ছাড়া এ সময় শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন ও লক্ষণ দেখা দেয়।

বমি বমি ভাব বা গা গোলানো গর্ভধারণের প্রথম দিকের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। গর্ভধারণের চার–পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত বমির ভাব বেশি দেখা যায়। সাধারণত সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর বমিভাব বা বমি বেশি হয়ে থাকে বলে একে মর্নিং সিকনেস বলে।

গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে অথবা তারপর থেকে স্তন ফুলে যাওয়া, ভারী হওয়া অথবা স্তনে ব্যথা অনুভূত হওয়া;

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ। সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য এমন হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংক্রমণের কারণেও এমন হতে পারে।

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। সাধারণত গর্ভধারণকালে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে সর্দি, কাশি বা অন্যান্য রোগের সংক্রমণেও শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হওয়া। শরীরে বিভিন্ন হরমোনের তারতম্য, ক্ষুধামান্দ্য ও কম খাওয়ার কারণে এই দুর্বলতা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কখনো কখনো অনিয়মিত রক্তপাত, স্পটিং ও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এসব লক্ষণ অনেক সময় গর্ভপাত, অ্যাক্টপিক প্রেগন্যান্সি ও মোলার প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ক্ষুধামান্দ্য ও অরুচির সমস্যায় ভোগেন অধিকাংশ নারী। পছন্দের খাবারও অনেকে স্বাভাবিকভাবে খেতে পারেন না। সাধারণত শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই এ ধরনের সমস্যা হয়।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব করেন অনেকে। গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় কিডনি অধিক পরিমাণে তরল নিঃসরণ করতে শুরু করে। অন্যদিকে জরায়ুর আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাবের থলির ওপর চাপ পড়ে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য। শরীরে হরমোনের প্রভাবে পরিপাক কাজে ধীরতা, অপর্যাপ্ত পানি, শাকসবজি ও খাদ্য গ্রহণ অন্যতম কারণ।

মাথাব্যথা অনুভূত হওয়া। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে রক্ত সঞ্চালন ও হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে এমন হতে পারে।

করণীয় কী
গর্ভধারণের লক্ষণ দেখা দিলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হোন।

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন ও নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ নিন।

অল্প মাত্রার লক্ষণ ঘরোয়া উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করুন।

খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনুন, যেমন কাঁচা ও কম সেদ্ধ খাবার, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন। ধূমপান, অতিরিক্ত চা ও কফি পান, মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।

লক্ষণগুলোর তীব্রতা বেশি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ব্রি. জেনারেল (অব.) ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব রোগবিশেষজ্ঞ সার্জন, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর ৬, ঢাকা

গর্ভাবস্থায় শরীরে পানি জমলে কী করবেনলেখা:ডা. এ টি এম রফিকগর্ভাবস্থায় শরীরে পানি আসা বা বিভিন্ন অঙ্গে পানি জমা অস্বাভাবিক...
01/09/2025

গর্ভাবস্থায় শরীরে পানি জমলে কী করবেন
লেখা:ডা. এ টি এম রফিক

গর্ভাবস্থায় শরীরে পানি আসা বা বিভিন্ন অঙ্গে পানি জমা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাধারণত ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর এ সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় কোষে অতিরিক্ত তরল জমার কারণে এই ফুলে যাওয়া বা ইডিমা হয়।

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে প্রায় ২৫ শতাংশ ওজন বাড়ে। এ সময় শরীরের যেকোনো অংশ ফুলে যেতে পারে। তবে হাতে–মুখে পানি আসা, অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া, বাড়তি রক্তচাপ, প্রস্রাবে আমিষ বা প্রোটিনের আধিক্য থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

কারণ
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে রক্তে প্রোজেস্ট্রেরন হরমোনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। শরীরে পানি জমার এটি অন্যতম কারণ। শিশুর আকার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মায়ের শরীরে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি রক্ত ও তরল উৎপাদিত হয়।

চতুর্থ মাসের শুরু থেকে জরায়ুর আকার বাড়তে থাকে। গর্ভের শিশু যখন বড় হয়, তখন তার মাথার চাপে মায়ের নিম্নাঙ্গের যে শিরাগুলো দিয়ে রক্ত হৃৎপিণ্ডে প্রবাহিত হয়, সেগুলোতে রক্তের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে নিম্নাঙ্গ থেকে হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। শিরা থেকে তরল বের হয়ে শরীরের টিস্যুতে জমতে থাকে। এতে পায়ে পানি আসে বা ফুলে যায়।

গর্ভাবস্থার আগে থেকেই বা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ড বা কিডনিতে অসুখ থাকলেও পায়ে পানি আসতে পারে।

অনেকক্ষণ কাজ করলে, খাবারে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকলে, অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলেও পানি জমার পরিমাণ বাড়ে।

কখন সতর্ক হবেন
হঠাৎ করে হাতে, মুখে অনেক বেশি পানি আসা। সঙ্গে মাথাব্যথা। চোখে ঝাপসা দেখা। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও কাশি।

এক পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া, সঙ্গে ব্যথা। গর্ভের শিশুর নড়চড়া কমে যাওয়া (১২ ঘণ্টায় অন্তত ১০-১২ বার নড়া স্বাভাবিক)।

অতিরিক্ত বমির কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ব্যায়ামের ফলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে ও অতিরিক্ত তরল ঘাম হিসেবে বেরিয়ে যায়। তবে কোন ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় উপযোগী, তা জেনে নিতে হবে।

ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক কাপড় পরার চেষ্টা করুন; যাতে শরীরে চাপ না পড়ে।

পায়ের ওপর ভর দিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা ভালো। একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে না থেকে কিছুক্ষণ পরপর কিছু সময়ের জন্য বসুন। বসার সময় পা টুলজাতীয় কিছুর ওপর তুলে রাখতে পারেন।

আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন।

লবণ কম খাবেন। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন কলা, কমলা, মিষ্টি আলু, বিট ইত্যাদি খাবেন।

প্রচুর পরিমাণে পানি খান। শরীরের অতিরিক্ত পানি কমানোর জন্য পানি খাওয়া আশ্চর্যের মনে হলেও গর্ভাবস্থায় উপকারী। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে, তেমনি অতিরিক্ত তরল প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। তবে চিনিসমৃদ্ধ পানীয়, যেমন সোডা বা প্যাকেটজাত জুস না খাওয়াই ভালো।

ডা. এ টি এম রফিক, নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল

গর্ভাবস্থায় আপনি কী খাচ্ছেন, তার প্রভাব পড়বে শিশুর বুদ্ধিতেগর্ভধারণকালে মায়ের স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের ধরন শিশুর স্নায়ুবিক...
01/09/2025

গর্ভাবস্থায় আপনি কী খাচ্ছেন, তার প্রভাব পড়বে শিশুর বুদ্ধিতে

গর্ভধারণকালে মায়ের স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের ধরন শিশুর স্নায়ুবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রকের কাজ করে। মা ও শিশুদের নিয়ে ফিনল্যান্ডের টুরকু বিশ্ববিদ্যালয় ও টুরকু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও খাদ্যাভ্যাস শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত স্নায়ুবিকাশে প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও মায়ের শরীরের অধিক চর্বি শিশুর স্নায়ুবিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। মা যদি নিয়মিত ভালো খাবার খায় এবং মাছ খাওয়ার পরিমাণ যদি বেশি থাকে, তাহলে তাদের শিশুদের বোধশক্তি এবং ভাষার দক্ষতা ভালো হয়। গবেষকেরা বলছেন, অধিক ওজন ও স্থূল মায়েরা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে চললে তাদের শিশুরা সুফল পেতে পারে।

ফিনল্যান্ডের ও যুক্তরাষ্ট্রের এগারো জন গবেষক এ কাজে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের গবেষণাপ্রবন্ধ ৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য সাময়িকী পেডিয়াট্রিক রিসার্চের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। সাময়িকীটি আমেরিকান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন এবং ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক রিসার্চের প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশনা।

পরিকল্পিত গর্ভধারণের কোনো বিকল্প নেই। গর্ভকালে সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। গবেষণা বলছে, গর্ভকালে মাছ খেলে শিশুর জন্য ভালো। আমরা সেই অভ্যাস করতে পারি।
রেজাউল করিম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক
প্রবন্ধের শুরুতে গবেষকেরা বলেছেন, কয়েক দশক ধরে স্থূলতা বৈশ্বিক বোঝা হিসেবে আলোচনায় আছে। স্থূলতা সন্তান জন্মদানে সক্ষম এমন মায়েদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ফিনল্যান্ডের ৪২ শতাংশ গর্ভবতী নারী স্থূল বা তাঁদের ওজন অত্যধিক। যেসব নারীর ওজন বেশি বা যাঁরা স্থূল তাঁদের বিপাক সমস্যা দেখা দেয়। তাঁরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং স্বাভাবিক ওজনের নারীদের তুলনায় সন্তান জন্মদানকালে তাঁদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। এমন মায়েদের গর্ভের সন্তান বিরূপ পরিবেশে পড়ে এবং তার প্রভাব পড়ে স্নায়ুবিকাশে।

বাংলাদেশে এ ধরনের গবেষণা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তবে একাধিক গবেষণা বলেছে, দেশে নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের গর্ভবতী নারীদের ১৪ থেকে ১৯ শতাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া নারীদের মধ্যে স্থূলতার হারও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিনল্যান্ডের গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের জন্য অপ্রাসঙ্গিক নয়।

গবেষণায় ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৪৩৯ জন নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁরা ছিলেন গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে। গবেষণায় শেষ পর্যন্ত ছিল ২৪৩টি শিশু ও তাদের মায়েরা। গবেষকেরা গর্ভকালের পুরো সময়টা মায়েদের ওপর নজর রাখেন। পরবর্তী সময়ে মা ও শিশু উভয়ের ওপর নজর রাখা হয়।

গবেষকেরা মায়ের ওজন পরিমাপ করা, ডায়াবেটিস দেখা, মায়েরা প্রতিদিন কী খাচ্ছেন এসব তথ্য রাখার পাশাপাশি বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাসও দেখার চেষ্টা করেন। মায়েরা পুষ্টি জাতীয় কী খাবার খাচ্ছেন, শক্তি বৃদ্ধি করে এমন খাদ্য কী পরিমাণ খাচ্ছেন, তা জানার চেষ্টা করেন। মাছ খাওয়ার ব্যাপারে আলাদা নজর ছিল। অন্যদিকে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে শিশুদের বোধশক্তি, ভাষা ও মটর বা সঞ্চালক পেশির কার্যকারিতা দেখার চেষ্টা করেন। গবেষকেরা বলছেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শিশুর স্নায়ুবিকাশে প্রভাব ফেলে, গর্ভকালে স্থূলতা শিশুর স্নায়ুবিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। একইভাবে প্রভাব ফেলে বা বাধাগ্রস্ত করে গর্ভকালে মায়ের খাদ্যাভ্যাস। গবেষকেরা প্রতিটি ক্ষেত্রে নম্বর বা পয়েন্ট ব্যবহার করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালে ডায়াবেটিস নেই, এমন মায়ের শিশুদের ভাষার দক্ষতা গর্ভকালে ডায়াবেটিস থাকা মায়েদের শিশুদের চেয়ে ভালো। তবে কেন এমন হয়, তা গবেষকদের কাছে স্পষ্ট নয়। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, যেসব মায়ের শরীরে জমে থাকা চর্বির পরিমাণ তুলনামলকভাবে কম, তাঁদের শিশুদের বোধশক্তি চর্বি জমে থাকা মায়েদের শিশুদের চেয়ে বেশি। ভাষার দক্ষতা ও পেশি চলাচলের ক্ষেত্রেও পার্থক্য বেশি। স্থূলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস থাকা মায়েদের শিশুদের স্নায়ুর বিকাশ স্থূলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস না থাকা মায়েদের শিশুদের চেয়ে কম দেখা দেছে।

গবেষকেরা দেখেছেন, যেসব মা গর্ভকালে সার্বিকভাবে ভালো খাবার খেয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের স্নায়ুবিকাশ পরিস্থিতি সার্বিকভাবে ভালো খাবার না খাওয়া মায়েদের সন্তানদের চেয়ে ভালো। বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে দেখার চেষ্টা হয়েছে মাছ খাওয়ার অভ্যাস পর্যালোচনা করে। গর্ভকালে নিয়মিত মাছ খাওয়া মায়েদের শিশুদের ভাষা ব্যক্ত করার দক্ষতা তুলনামূলকভাবে বেশি।

উপসংহারে গবেষকেরা বলছেন, মায়ের গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিস্থিতি শিশুর স্নায়ুবিকাশকে প্রভাবিত করে। গর্ভকালে সঠিক খাবার খাওয়া, খাদ্যতালিকায় মাছের স্থান করে দেওয়া, স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ মেনে চলা শিশুর স্নায়ুবিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

ফিনল্যান্ডের গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিকল্পিত গর্ভধারণের কোনো বিকল্প নেই। গর্ভকালে সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। গবেষণা বলছে, গর্ভকালে মাছ খেলে শিশুর জন্য ভালো। আমরা সেই অভ্যাস করতে পারি।’

গর্ভাবস্থায় কী কী ওষুধ খেতে পারব আর কী কী খেতে পারব নালেখা: ডা. শিমু আক্তারগর্ভাবস্থায় একটুখানি অসতর্কতায়ও ঘটে যেতে পারে...
31/08/2025

গর্ভাবস্থায় কী কী ওষুধ খেতে পারব আর কী কী খেতে পারব না
লেখা: ডা. শিমু আক্তার

গর্ভাবস্থায় একটুখানি অসতর্কতায়ও ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ। এ সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে হবে, যেন অসুস্থ হয়ে পড়ে ওষুধ খেতে না হয়। কারণ, যেকোনো ওষুধেরই রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পর নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই সময় যত দূর সম্ভব, কম ওষুধ সেবন করতে হবে। সাধারণ সমস্যায় ওষুধ বদলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও প্রতিরোধব্যবস্থার দিকে জোর দিতে হবে। আগে থেকে যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এসব ওষুধ সেবন করা যাবে কি না বা নিরাপদ কি না, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নেবেন।

গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এবং হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে সাধারণ মানুষের চেয়ে সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা বা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায়। সাধারণ অবস্থায় এসব সমস্যার জন্য আমরা হরহামেশা যে ওষুধগুলো খেয়ে থাকি, এ অবস্থায় সেসব ওষুধ সেবনও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সুতরাং এ সময় সাধারণ সমস্যায় কী কী ওষুধ খেতে পারব আর কী কী খেতে পারব না, জানাটা অতি জরুরি।

সর্দি

গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ, নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যায়। সঙ্গে লবঙ্গ দিয়ে গরম পানি কুলকুচি উপকারী। এ ছাড়া শুধু গরম পানির অথবা মেন্থল দিয়ে গরম পানির ভাপও নেওয়া যেতে পারে।

কাশি

বাজারে যেসব কাশির সিরাপ পাওয়া যায় তা খাওয়া যাবে, কিন্তু গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে কোনো কাশির সিরাপ খাওয়া উচিত নয়।

মাথাব্যথা

এ সময় কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া ঝুঁকির কারণ হতে পারে, তবে তীব্র ব্যথা হলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে।

বুক জ্বালাপোড়া

মাতৃত্বকালীন অবস্থায় সবচেয়ে সাধারণ যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, বুক জ্বালাপোড়া ও অ্যাসিডিটি। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ওষুধের চেয়ে যে জিনিসটি কাজে লাগে তা হলো, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। যেমন অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, ঝাল, মসলা-জাতীয় খাবার ও বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ওষুধ হিসেবে তরল অথবা ট্যাবলেট আকারে বাজারে যে অ্যান্টাসিড পাওয়া যায়, তা খাওয়া যাবে। গ্যাসের অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খেতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্যর সমাধান হিসেবে বেশি বেশি শাকসবজি-জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজন হলে ইসবগুল এবং বাজারে যে সিরাপ পাওয়া যায়, তা খাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস অথবা ১২ সপ্তাহ কোষ্ঠকাঠিন্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা লাগবে। কারণ, কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এ সময় গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বিজ্ঞাপন
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যা গর্ভপাতের কারণ, আবার কিছু অ্যান্টিবায়োটিক নবজাতক শিশুর জন্মত্রুটির কারণ হতে পারে
বমি বা বমি বমি ভাব

বমির ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। তবে যদি কিছু নিয়ম মানা যায়, তাহলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যেমন অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে এবং শুকনা খাবার খেতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার

যেহেতু গর্ভাবস্থায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাই সংক্রমণের প্রবণতাও বেড়ে যায়। এ জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। কারণ, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যা গর্ভপাতের কারণ, আবার কিছু অ্যান্টিবায়োটিক নবজাতক শিশুর জন্মত্রুটির কারণ হতে পারে। আর কিছু অ্যান্টিবায়োটিক গর্ভাবস্থার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাওয়া যায় না, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর খাওয়া যায়। সুতরাং অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে সচেতন হতে হবে।

ঘুমের সমস্যা

গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে বেশির ভাগ মাকেই ঘুমের সমস্যায় পড়তে হয়। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করতে হবে। নিজে নিজে কোনো ঘুমের ওষুধ খাওয়া যাবে না।

প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা | নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য থাকুন সচেতনগর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূ...
31/08/2025

প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা | নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য থাকুন সচেতন

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময় প্রতিটা মেয়েই তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখে! কিন্তু এই গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সময়ে শরীরে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বাড়ে অথবা কমে, এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু হরমোন লেভেল নরমাল রেঞ্জে না থাকলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা বেশ কমন, এই হরমোনের মাত্রা ঠিক না থাকলে গর্ভের শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। এমনকি হতে পারে অকাল জন্ম, গর্ভপাত অথবা মৃতপ্রসব। প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ে আজকের ফিচার।

থাইরয়েড কী?
প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা কেন হয় বা এর প্রতিকার কী, এসব কিছু জানার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে থাইরয়েড জিনিসটা আসলে কী! থাইরয়েড ক্ষুদ্র ও প্রজাপতি আকৃতির একটি গ্রন্থি যা গলার দুইদিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি উৎপাদন করে থাইরয়েড হরমোন এবং এই হরমোন শরীরের বৃদ্ধি, বিকাশ ও অন্যান্য কাজে সহায়তা করে থাকে। এটি হৃদস্পন্দনকে প্রভাবিত করতে পারে, এছাড়াও বিপাক প্রক্রিয়াতেও এর প্রভাব আছে।

থাইরয়েড

কখনও কখনও এই থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন খুব বেশি অথবা খুব কম পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে থাকে, আর তখনই ঘটে যায় বিপত্তি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একজন মহিলার থাইরয়েডের সমস্যা গর্ভাবস্থার আগে থেকেই থাকতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই প্রথমবারের মতো থাইরয়েডের সমস্যা হয়। তবে এ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। চিকিৎসা নিলে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড বাড়লে বা কমলেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে হরমোনের মাত্রা যেন স্বাভাবিক রেঞ্জে থাকে, সেটা মনিটর করতে হবে।

প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা
কাদের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের ঝুঁকি বেশি থাকে, জেনে নিন তাহলে-

১. গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকেই যেসব মহিলারা হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন সেসব মহিলারা এক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকে।

২. পূর্বের প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েড প্রবলেম ছিল, এই অবস্থায় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এমন মা-ও ঝুঁকিতে থাকে।

৩. হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজমের ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকলেও ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম

হাইপারথাইরয়েডিজম
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে গেলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হয়ে থাকে। প্রেগনেন্সিতে হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলো কী কী সেটা দেখে নিন তাহলে-

অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
মারাত্মক বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
মেজাজ খিটখিটে থাকা
হালকা কাঁপুনি
ঘুমের সমস্যা
সাধারণ গর্ভাবস্থায় যে ওজন থাকা উচিত তারচেয়ে ওজন হ্রাস পাওয়া বা কম ওজন থাকা
হাইপোথাইরয়েডিজম
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ কমে গেলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়ে থাকে। হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলো কী কী সেটা দেখে নিন তাহলে-

অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্ত লাগা
স্বাভাবিকের থেকে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য
কোনো কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া
প্রায়ই ভুলে যাওয়া
শারীরিক মিলনে অনীহা
ক্ষুধা কমে যাওয়া
প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা হলে করণীয়
প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা

এই ধরনের লক্ষণ যদি আপনারও থাকে, তাহলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্টের সাথে কথা বলুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হোন আপনার থাইরয়েড লেভেল ঠিক আছে কিনা। রক্তে TSH, T3 ও T4 এর পরিমাণ থেকেই বোঝা যাবে এটা।

হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে
যেসব মায়েরা গর্ভকালীন অবস্থায় হাইপারথাইরয়েডিজমের সমস্যার ভুগছেন, তাদের জন্য অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই অ্যান্টিথাইরয়েড ড্রাগ থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন কন্ট্রোল করে। প্রেগনেন্সিতে ডাক্তারের পরামর্শে মেডিসিন নিতে হবে। ডোজ কেমন হবে, কতদিন মেডিসিন কন্টিনিউ করতে হবে, সবই আপনাকে ডাক্তার জানিয়ে দিবেন। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মেডিসিন নিলে অবশ্যই থাইরয়েড কন্ট্রোলে আসবে।

হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে
লিভোথাইরক্সিন

হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে লিভোথাইরক্সিন নামে হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শমতো ডোজ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু গর্ভকালীন অবস্থায় ভিটামিন, আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট শরীরে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণকে বাধা দিতে পারে, তাই লিভোথাইরক্সিন গ্রহণের ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে এই ধরনের ট্যাবলেট খাওয়া উচিত না।

হাইপো বা হাইপার, দুই ধরনের ভারসাম্যহীনতাই মেডিসিনের মাধ্যমে ব্যালেন্স করা যায়। প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা হলে দ্রুত ট্রিটমেন্ট নিন, ৩ মাস পর পর ব্লাড টেস্ট করিয়ে থাইরয়েড লেভেল চেক করুন। ভয়ের কিছু নেই, তবে সচেতনতা জরুরি। থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ভালো রাখতে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। রান্নাতে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত সয়াসস, প্রসেসড ফুড এগুলো এড়িয়ে চলবেন। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতার লক্ষ্মণ ও ঝুঁকি
30/08/2025

গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতার লক্ষ্মণ ও ঝুঁকি

Address

Dhaka
1216

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Pregnancy and Child Care posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram