19/06/2025
আমার শহর, আমার উঠান
আমরা ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠেই শুনতাম উঠানে ঝাড়ু দেওয়ার শব্দ।
জানতাম—উঠান পরিষ্কার করা হচ্ছে।
সেই পরিচ্ছন্ন উঠান ছিল দিনের সতেজ শুরু,
ছিল শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবোধের প্রথম শিক্ষা।
উঠান মানেই ছিল ঘরের এক অংশ—যেখানে মাটি স্পর্শ করতাম, খেলতাম, অতিথি আপ্যায়ন হতো, আর সকালের রোদটুকুও আমাদের প্রাকৃতিক ঔষধ হয়ে উঠত। আমরা শিখেছি, উঠান পরিষ্কার মানেই ঘর পরিষ্কার, মন পরিষ্কার।
কিন্তু সময় বদলেছে। এখন অনেক বাড়িতেই আর আগের মতো উঠান নেই।
গ্রাম বদলে গেছে শহরে।
শহরে এসে উঠানের সেই পরিচিত দৃশ্য নেই।
তবে উঠান হারিয়ে যায়নি—
এখন তার নতুন রূপ হয়েছে—রাস্তা, ফুটপাত, বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট এলাকা, অফিস প্রাঙ্গণ।
আমাদের এই শহরটিই এখন আমাদের সম্মিলিত উঠান।
তবে দুঃখজনকভাবে শহরের এই উঠান আজ আবর্জনায় পরিপূর্ণ।
এক সময় যেখানে পরিচ্ছন্নতা ছিল দৈনন্দিন রুটিনের অংশ,
আজ সেখানে অনিয়ম ও অবহেলাই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ময়লা ফেলা,
চলন্ত বাস বা জানালা থেকে প্লাস্টিক, প্যাকেট, কাগজ ছুড়ে ফেলা,
ডাস্টবিন ব্যবহারে অনীহা,
পানির নিষ্কাশনের পথ আটকে দেওয়া পচা আবর্জনা—
এসবই আমাদের শহরের উঠানকে ধীরে ধীরে দূষণের কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
এইসব ছোট ছোট অনিয়ম জমে গড়ে তুলেছে বড় বিপদ—
পচে যাওয়া বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ,
বাতাসে মিশে যাচ্ছে বিষাক্ত কণা ও জীবাণু,
বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হচ্ছে মশার প্রজনন ক্ষেত্র,
প্লাস্টিক ও আবর্জনায় বন্ধ হচ্ছে ড্রেনেজ সিস্টেম।
এতে বাড়ছে বায়ুদূষণ ও পানিদূষণ,
আর সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও বিভিন্ন মারাত্মক সংক্রামক রোগ।
এখানেই শেষ নয়—
এই শহরের আরেকটি নীরব দূষণ হলো শব্দদূষণ।
অতিরিক্ত হর্ন বাজানো, নির্মাণকাজের অবিরাম শব্দ, লাউডস্পিকারে উচ্চস্বরে গান বা প্রচার—
এসব শব্দ শুধু বিরক্তিই নয়,
দীর্ঘমেয়াদে সৃষ্টি করে শ্রবণ সমস্যাসহ উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, উদ্বেগ ও মানসিক অস্বস্তি।
শিশু,গর্ভবতী মা, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের ওপর শব্দদূষণের প্রভাব হয় আরও বেশি বিধ্বংসী।
আজ আর আগের মতো বিশুদ্ধ বাতাস কিংবা শান্ত পরিবেশ পাওয়া যায় না—
কারণ আমরা নিজেরাই আমাদের চারপাশকে অশান্ত ও অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছি।
একটি শহর যত আধুনিক হোক, যত উন্নত ভবন বা রাস্তা থাকুক না কেন—
পরিচ্ছন্নতা, নীরবতা ও পরিবেশবান্ধব আচরণ না থাকলে
তা কখনোই প্রকৃত অর্থে বাসযোগ্য হতে পারে না।
আমরা কী করতে পারি?
✅ নিয়মিত নিজের বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা
✅ ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত ডাস্টবিন ব্যবহার করা
✅ চলন্ত গাড়ি বা জানালা থেকে কোনো আবর্জনা না ফেলা
✅ যত্রতত্র থুথু ফেলা বা খাবার ফেলার অভ্যাস ত্যাগ করা
✅ বাসা বা অফিসে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প ব্যবহার করা
✅ রাস্তার ম্যানহোল বা ড্রেনজে আবর্জনা না ফেলে পানি নিষ্কাশন সচল রাখা
✅ অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানো বন্ধ করুন—ব্যবহার করুন নম্র ও সহনীয় শব্দের হর্ন।
✅ লাউডস্পিকার ব্যবহারে সচেতন থাকা এবং শব্দের মাত্রা সীমিত রাখা
✅ স্কুল, মসজিদ, ক্লাব বা অফিসে পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা/কর্মশালা আয়োজন করা
✅ পরিবেশ-সচেতন নাগরিক গড়ে তুলতে শিশুদের শুরু থেকেই শেখানো
স্মরণে রাখুন:
“একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে ওঠে তখনই, যখন প্রতিটি নাগরিক নিজেকে দায়িত্ববান মনে করে।”
আমার শহর, আমার উঠান—এই বোধ থেকে শুরু হোক পরিবর্তন।
আজই হোক আমাদের সচেতনতার প্রথম দিন। 🌿
৫ই জুন ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
সবাইকে পরিবেশ দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আসুন, আমরা সবাই মিলে পরিবেশকে ভালোবাসি, রক্ষা করি এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি।