
12/05/2025
গরমকালে হিট স্ট্রোক (Heat Stroke) একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে গেলে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
১. প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা :
* ঘাম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আর ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। তাই ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করা জরুরি।
* শুধু পানি ছাড়াও ডাবেরপানি, শরবত, ফলের রস, ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান করতে পারেন।
* চা, কফি বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে আরও ডিহাইড্রেটেড করতে পারে।
২. হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা :
* হালকা রঙের পোশাক তাপ শোষণ কম করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
* ঢিলেঢালা পোশাক বাতাস চলাচল করতে দেয়, যা ঘাম শুকিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
* সুতির (Cotton), লিনেন (Linen), সিল্ক (Silk) বা হেম্প (H**p) কাপড়ের পোশাক গরমের জন্য আরামদায়ক।
৩. দিনের বেলায় রোদ এড়িয়ে চলা (Avoid the Sun Between 11am and 3pm):
* দিনের এই সময়টাতে সূর্যের তেজ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই সম্ভব হলে এই সময়টাতে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন।
* যদি বাইরে বেরোতে হয়, তাহলে ছাতা, টুপি বা ক্যাপ ব্যবহার করুন।
* সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, কারণ সানবার্ন ত্বকের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং শরীরকে ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কমপক্ষে SPF 15 যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর পুনরায় লাগান।
৪. ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা :
* যদি বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার থাকে, তাহলে তার ব্যবহার করুন।
* যদি এয়ার কন্ডিশনার না থাকে, তাহলে দিনের বেলায় জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন এবং রাতে যখন তাপমাত্রা কমে যায় তখন খুলে দিন।
* পাখা ব্যবহার করুন, তবে খুব বেশি গরমের সময় শুধু পাখা যথেষ্ট নয়। ভেজা কাপড় গায়ে দিয়ে বা স্প্রে বোতলে পানি ভরে শরীরে স্প্রে করে পাখার বাতাস নিন।
* শপিং মল বা অন্য কোনও ঠান্ডা পাবলিক প্লেসে কিছু সময় কাটান।
* ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে নিন।
৫. শারীরিক কার্যকলাপ সীমিত করা:
* গরমের সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
* যদি ব্যায়াম বা অন্য কোনও শারীরিক কাজ করতেই হয়, তাহলে দিনের ঠান্ডা সময়ে (সকালের আগে অথবা সন্ধ্যার পরে) করুন।
* কাজের সময় ঘন ঘন বিশ্রাম নিন এবং ছায়াযুক্ত স্থানে বসুন।
৬. কিছু ঔষধের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা :
* কিছু ওষুধ শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করতে পারে বা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধা দিতে পারে। আপনি যদি এমন কোনও ওষুধ খান, তাহলে গরমের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৭. তাপমাত্রার পূর্বাভাস সম্পর্কে অবগত থাকা:
* আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস জেনে নিন এবং তাপমাত্রা বেশি থাকলে সেই অনুযায়ী নিজের কাজকর্ম পরিকল্পনা করুন।
৮. ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা :
* গরমের সময় বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন। তাদের হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
হিট স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা। যদি কারও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা যায় (যেমন - উচ্চ তাপমাত্রা, ত্বক লাল ও শুকনো, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, দ্রুত হৃদস্পন্দন, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া), তাহলে অবিলম্বে তাকে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান, জামাকাপড় ঢিলা করে দিন এবং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।