13/11/2019
আমরা কি সারা জীবন ভর পাশবিক - জৈবিক জীবনই যাপন করবো?
এটাতো ঠিক যে, পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষই এমন একটা জীবন কাটাতে চায় যেখানে নাওয়া - খাওয়া - বিনোদন - ইত্যাদি হলেই - তাদের সব পাওয়া হয়ে যায়। এই চাওয়াগুলো অর্জন করাই তাদের কাছে অনেক কঠিন এবং তাদের জীবন যাপন এসব চাওয়া অর্জন করা কেন্দ্রিক।
আমরা বলতে চাইছি না যে, যারা এমনটা ভাবছে তারা ভুল। তবে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, জীবনটা কি শুধু এসব কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য? আমাদের কি আর কিছুই ভাবার, বলার, করার নেই? তাহলে, পৃথিবীর অন্য একটি স্বল্পবুদ্ধির প্রাণী ও পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষের মধ্যে জীবন যাপন গত কি পার্থক্য রইলো?
একটা পাখিও তো ঘর বানায় - বাসা বাঁধে, খাবার জোগার করে, সঙ্গী খুঁজে, বাচ্চা পালন করে, কেউ কেউ সুন্দর কন্ঠে ডাকে, কেউ ঘুরে বেড়ায় - খেলা করে অন্যদের আনন্দ দেয়। একই ভাবে পৃথিবীর সব প্রাণীই জৈবিকতা ভিত্তিক এই কাজগুলো তার মতো করে করে।
এমনকি পৃথিবীর সকল প্রাণীদের মধ্যে কারো কারো মধ্যে সাংগঠনিক ও সামাজিকতার কিছু নিদর্শণও দেখা যায়। একটা পিপঁড়ার কথা আমরা খেয়াল করেছি বা একটি কাক? তারাও কিভাবে দলবদ্ধ হয়, এক সাথে কাজ করে, সামাজিকতা পালন করে।
আর আমরা মানুষ। নিজের জীবনটা জৈবিকতায় সীমাবদ্ধ করে নিজেদের প্রাণীদের সমতূল্য করে তুলছি। এই বিষয়ট নিয়ে কি একটু ভাবার প্রয়োজন আছে? নিজেকে কীভাবে নিছক জৈবিক জীবন যাপন থেকে একটু মানবিক জীবন যাপন করায় উত্তীর্ণ করা যায়?
নাকি, আছি তো। খাচ্ছি দাচ্ছি ফূর্তি করছি, সঙ্গী বানাচ্ছি, বাচ্চা বড় করছি তারপর একদিন টুক করে মরে যাচ্ছি। আহা! এই তো জীবন। বেশ ভাল আছি। বেশ দিন কেটে যাচ্ছে।
কিন্তু, আমাদের মতো অন্য যেসব মানুষও আমাদের চারপাশেই ঘুরছে, চলছে এবং যাদের আমাদের মতো- মানুষের মতো একটা দেহ আছে কিন্তু, সে ভাল নেই। সে হয়তো শত কষ্ট করেও দু’বেলা খাবার যোগার করতে পারছে না, তার হয়তো দিন শেষে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই নেই। তার হয়তো একটি সঙ্গীও নেই - কারণ তার নিজের জীবনটাই ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় ভরা, সে হয়তো আরেকটি মানব সন্তানকে পৃথিবীতে আনার কথা ভাবতেও পারছে না, সে অসুস্থ হলে হয়তো ধুঁকে ধুঁকে বিনা চিকিতসায় মারা যাবে পথের পাশে।
আমরা খুব সহজ একটা উত্তর দিয়ে দায় এড়াতে পারি - এটা কি আমার কাজ? আর আমি একা কি-ই বা করতে পারি?
সত্যি, দায় এড়ানোর জন্য খুব সত্যি? কিন্তু, সাথে সাথে কি আমরা মনুষ্যত্বও এড়িয়ে যাচ্ছি। আমি বা আপনি একা একা অনেক কিছু করতে পারবো না। কিন্তু, আমরা কি চেষ্টা করছি এই অবস্থাতা পরিবর্তনের জন্য কিছু করতে? একটা পরিবর্তন?
করছি না, কারণ, আমরা ভাবছি আপনি ঠিক তো জগত ঠিক। আমি ভাল আছি, আমি বেশ আছি, জগতের সব কিছু যেভাবে ইচ্ছে চলুক। যার যা ইচ্ছে করুক। যে যেভাবে পারে বাঁচুক।
কিন্তু, কাল যখন, একা একা রাস্তায় চলার সময় ছিনতাইকারী আমার বা আমার কোন প্রিয়জন এর সর্বস্ব কেড়ে নেবে বা ছুড়ি মেরে দেবে বা বন্দুক দিয়ে গুলি করে বসবে? তখন তো, সব সরকারের দোষ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দোষ এবং গণতন্ত্রহীনতার কারণে হবে, তাই না?
অথচ, আমরা কোন না কোনভাবে ঠিকই অংশীদার সবকিছুর। এবং আমাদের মতোই কেউ না কেউ নিজেদের দায়িত্বটুকু ঠিকমতো পালন না করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াতে ব্যাপারগুলো ঘটলো।
সরকার, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বা গণতন্ত্রের ধারক বাহকরা কি আকাশ থেকে আসা ফেরেস্তা নিয়ে তৈরী হয়? হয় না। সব জায়গাতেই, আমরা, আমরাই। আমাদের মধ্যেই কেউ না কেউ কোন কোন না দায়িত্ব পালন করছে।
কোন খারাপ ব্যাপার ঘটলে যেমন আমরা সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্ব যার তাকে দোষারোপ করতে পিছপা হই না। তেমনি, মানুষ হিসেবে আমরা যদি জৈবিক জীবনে সীমাবদ্ধ না থেকে একটু মানবিক দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি তাহলে পৃথিবীতে মানবিকতার কোন সংকট থাকে না।
নিজে নিজের দায় এড়িয়ে, সীমাবদ্ধ জৈবিক জীবন যাপন করে, মানবিক দায়িত্ব পালন না করে- চিরকাল বেশ থাকা যায় না, ভাল থাকা যায় না - নিজে কোনমতে বেশ আছি- ভাল আছি এই ভাবে দিনগুলো কাটিয়ে গেলেও নিজের সন্তানকে কোন অস্থিতিশীল দোজখে রেখে যাচ্ছেন সেটা কি একটু বিবেচনা করবেন না?
আমরা শুধু আমাদের ভাবনার কথা আপনাকে বলতে পারৰ, আপনাকে আহবান জানাতে পারবো, আপনি হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলে আপনার হাত ধরে একসাথে এগিয়ে চলার চেষ্টা করতে পারবো। এই টুকু বিরাট কিছু নয়, বরং খুব ক্ষুদ্র আর সামান্য। তবুও এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, সামান্য কাজ টুকুতো অনেকেই করছে না। নাকি?