09/07/2025
ফলাফলের দিন ও মানসিক বিপর্যয়: আত্মহত্যা, হতাশা এবং অভিভাবকের দায়িত্ব..
১০ জুলাই ২০২৫। বাংলাদেশে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ।
এই দিনটি প্রতিবছরই নানা আবেগ, উত্তেজনা ও প্রত্যাশার সঙ্গে হাজির হয়। হাজারো শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার একসাথে এক অনিশ্চিত যাত্রায় অংশ নেয় — কেউ আনন্দিত, কেউ উদ্বিগ্ন, আর কেউ চুপচাপ ভেতরে ভেঙে পড়ছে।
ফলাফল প্রকাশের আনন্দঘন পরিবেশের মাঝেই সংবাদপত্র বা সামাজিক মাধ্যমে চোখে পড়ে বেদনাদায়ক কিছু খবর, ফলাফলে অখুশি হয়ে কিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
এই ঘটনা নিছক কোনো সংবাদ নয়, বরং সমাজের একটি গভীর ও অবহেলিত সমস্যা, যা আমাদের সকলের মনোযোগ ও পদক্ষেপ দাবি করে।
ফলাফল যখন যন্ত্রণার কারণ হয়ে ওঠেঃ
শিক্ষাজীবনের এই ধাপটি এমনিতেই কিশোর বয়সীদের জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পারিবারিক ও সামাজিক চাপ। বাংলাদেশে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলকে প্রায়শই জীবনের একমাত্র সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যে শিক্ষার্থী প্রত্যাশিত ফল পায় না, সে কেবল একাডেমিকভাবে নয়, নিজের আত্মমর্যাদার জায়গায়ও বড় এক ধাক্কা খায়। অনেকে ভয় পায় — অভিভাবক কী বলবে? সমাজ কী ভাববে? কেউ কেউ এই চাপে ভেঙে পড়ে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, বরং এমন একটি মানসিক কাঠামোর ফল, যেখানে নম্বরই সকল কিছুর মানদণ্ড।
অভিভাবকদের ভূমিকা: ভালোবাসা না প্রত্যাশার চাপ?
অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু অনেক সময় তারা না বুঝেই এমন প্রত্যাশার ভার চাপিয়ে দেন, যা শিশুর পক্ষে বহন করা অসম্ভব।
আমরা সন্তানকে জিজ্ঞেস করি —
“কত পেলি?”
কিন্তু বলি না —
“মন খারাপ কর না, আমি আছি।”
এই একটিমাত্র ভরসা বদলে দিতে পারে সন্তানের মানসিক অবস্থা।
একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি নম্বর নয়
ফলাফল জীবনের একটি অংশ মাত্র। এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি ধাপ, কিন্তু সেটিই জীবনের সবকিছু নয়। অনেকে স্কুলে গড়পড়তা ফল করলেও ভবিষ্যতে অসাধারণ কিছু করেছে। আবার অনেক উজ্জ্বল ছাত্রও জীবনের চাপে পিছিয়ে পড়েছে।
আমরা ভুলে যাই যে, প্রত্যেক শিশুর আলাদা পথ আছে, আলাদা গতি আছে।
হতাশা ও বিষণ্নতার লক্ষণ চিনুন:
সবসময় বিষণ্নতা চোখে পড়ে না। অনেকে স্বাভাবিক থাকার ভান করে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সতর্ক হওয়া জরুরি —
# হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে যাওয়া
# আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
# ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত ক্লান্তি
# রেগে যাওয়া বা অকারণে কেঁদে ফেলা
# ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে না চাওয়া
এমন সময় শুধু ভালোভাবে শুনে পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হতে পারে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য:
আত্মহত্যা কখনোই দুর্বলতা নয়। এটি দীর্ঘদিনের অব্যক্ত মানসিক যন্ত্রণা ও অবহেলার ফল। যেমন শরীরের ক্ষত চিকিৎসা ছাড়া খারাপ হতে পারে, তেমনই untreated মানসিক যন্ত্রণাও ভয়ানক হতে পারে।
আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জানাতে পারি — “তুমি যা-ই হও, আমি পাশে আছি” তাহলেই অনেক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কী করতে পারেন অভিভাবকেরা?
# ফলাফল নিয়ে নয়, সন্তান কেমন আছে তা নিয়ে কথা বলুন
# অন্যদের সঙ্গে তুলনা বন্ধ করুন
# প্রচেষ্টাকে উৎসাহ দিন, কেবল নম্বর নয়
# একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে শিশু কথা বলতে পারে
# প্রয়োজনে কাউন্সিলরের সাহায্য নিন — এটি কোনো লজ্জার বিষয় নয়
# আপনার ভালোবাসা শর্তহীন — সেটা তাদের বুঝতে দিন
টক হোপ-এর পক্ষ থেকে একটি বার্তা:
টক হোপ বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধ, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা চাই, প্রতিটি কিশোর-কিশোরী জানুক — তাদের কথা বলার, শুনবার, সাহায্য চাওয়ার অধিকার আছে।
আপনি, আপনার সন্তান, অথবা পরিচিত কেউ যদি মানসিক চাপে ভুগে থাকেন — আমরা পাশে আছি।
উপসংহার:
প্রিয় অভিভাবকগণ,
আপনার সন্তান কোনো প্রজেক্ট নয়। তারা একজন অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ, যাদের পাশে থাকার দায়িত্ব আপনার।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
তোমরা তোমাদের নম্বর নও। জীবন অনেক বড়, অনেক সুন্দর। ভুল বা ব্যর্থতা হতেই পারে — তোমাদের পাশে আমরা আছি।
সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করুন:
টক হোপ — আত্মহত্যা প্রতিরোধ প্ল্যাটফর্ম
🌐 ওয়েবসাইট: https://www.talkhope.life
📘 ফেসবুক: https://www.facebook.com/talkhope.bd
আসুন, ফলাফলের দিনটিকে হতাশার দিন নয়, বরং সহানুভূতি ও সমর্থনের দিনে পরিণত করি — সব শিক্ষার্থীর জন্য।
-
Md Saddam Hossain Roni
প্রতিষ্ঠাতা, Talk Hope— আত্মহত্যা প্রতিরোধ প্ল্যাটফর্ম | মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী
Read in Medium: https://medium.com/.h.roni0705/result-day-blues-depression-suicide-and-the-urgent-role-of-parents-32fe57293813
, , , , , , ,